৫ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) এর চরিত্রে সততার গুণটি পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিল। তিনি রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার করতেন এবং কোনো প্রকার অন্যায় কাজ হলে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিতেন। ছোট-বড়, আপন-পর, ধনী-দরিদ্র সকলের জন্য তিনি সমান বিচার করতেন এবং তাঁর বিচারে কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব হতো না। তিনি রাতের অন্ধকারে ছদ্মবেশে মদিনার অলিতেগলিতে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিতেন এবং তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতেন। মদিনার এক দরিদ্র মহিলার সৎ কন্যার সততায় মুগ্ধ হয়ে হযরত ওমর (রা) তার যোগ্য ও স্নেহের পুত্রকে তার সাথে বিয়ে দেন।
৫ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
ঙ. বর্ণনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর:
১. আমরা কোন কোন মন্দ আচরণ থেকে দূরে থাকব?
উত্তর: আমরা যেসব মন্দ আচরণগুলো থেকে দূরে থাকব তা হলো:
১. আমরা কখনো মিথ্যা কথা বলবনা।
২. ঝগড়া-বিবাদ করব না।
৩. হিংসা করবনা।
৪. চুরি-ডাকাতি করবনা।
৫. ধূমপান করবনা।
৬. কটু কথা বলবনা।
৭. দেশের ও জনগণের ক্ষতি করবনা।
৮. আল্লাহর ইবাদত করতে ভুলবনা।
২. আমরা কীভাবে মানুষের সেবা করব?
উত্তর: আল্লাহর ইবাদতের পর আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা। আমরা বিভিন্ন উপায়ে মানুষের সেবা করব। যেমন: ক্ষুধার্তকে খাদ্য দিয়ে, বস্ত্রহীনদের বস্ত্র দিয়ে, রোগীদের সেবা করে, আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দিয়ে, পাড়া-প্রতিবেশীদের কারো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানের চেষ্টা করে, অভাবী ও দুঃখীজনদের সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা মানুষের সেবা করব। মহানবি (স) বলেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা কর এবং বন্দীকে মুক্তি দাও। তাছাড়াও বেকার লোকদের কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী বিপদে পড়লে সাহায্য-সহযোগিতা করা একান্ত কর্তব্য।
৩. কী কী উপায়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়?
উত্তর: নিম্নোক্ত উপায়ে আমরা দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি:
১. দেশের সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করব, কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য করব।
২. গৃহপালিত পশুপাখির যত্ন নেব, তাদের কোনো কষ্ট দেবনা।
৩. বৃক্ষরোপণ করব, ফলমূলের গাছ লাগাব, গাছ নষ্ট করবনা, পাতা ছিঁড়বনা, ডাল ভাঙবনা।
৫. পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস অপচয় করবনা, জাতীয় সম্পদ রক্ষা করব।
৬. দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষকে ভালোবাসব, সুন্দর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
৪. মহানবি (স)-এর জীবনের ক্ষমার একটি আদর্শ কাহিনী উল্লেখ কর।
উত্তর: মহানবি (স) ছিলেন ক্ষমার মূর্ত প্রতীক। তাঁর সারা জীবনই আমাদের জন্য ক্ষমার উজ্জ্বল আদর্শ। মহানবি (স)-এর ওপর কাফিররা নির্মম অত্যাচার করত। তাঁকে মক্কা ছাড়তে বাধ্য করল। তিনি আল্লাহর নির্দেশে জীবন রক্ষার্থে এবং ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ গমন করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন পালিত পুত্র যায়িদ (রা)। তায়েফবাসী তাঁর ইসলাম প্রচার শুনল না। তারা তাঁকে লাঞ্ছিত করল, পাথরের আঘাতে তাঁকে এবং যায়িদ (রা) কে রক্তাক্ত করল। আল্লাহর রহমতে তাঁরা দুজনে রক্তাক্ত অবস্থায় তায়েফ থেকে ফিরে আসলেন। কিন্তু তবুও দয়ার নবি (স) তায়েফবাসীদের জন্য বদদোয়া করলেন না। তিনি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! তারা অবুঝ, তারা কিছুই বোঝে না। তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর।’ তাছাড়া মক্কা বিজয়ের পর শত্রুদের হাতের মুঠোয় পেয়েও ক্ষমা করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
৫. আমরা ভালো কাজে কীভাবে সাহায্য করব?
উত্তর: আমরা নানাভাবে ভালো কাজে সাহায্য করতে পারি। যথা:
১. গরিব ও দুস্থদের স্বাবলম্বনের জন্য তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বড়দের সাহায্য করব।
২. এলাকার জনগণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাস্তাঘাট, পুল ও সাঁকো নির্মাণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেব এবং এসব নির্মাণে বড়দের সাথে কাজ করব।
৩. ময়লা আবর্জনা ডাস্টবিন বা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলব এবং সকলকে ফেলতে বলব।
৪. সকলে মিলে গ্রামে বা মহল্লায় ছোটখাটো গ্রন্থাগার তৈরি করে নিজেরা বই পড়ব এবং অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করব।
৫. রাস্তার পাশে বা ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগাতে বড়দের সাহায্য করব।
৬. মন্দ কাজ সম্পর্কে মহানবি (স) কী বলেছেন?
উত্তর: মন্দ কাজ সম্পর্কে মহানবি (স) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কারো মন্দকাজ করতে দেখে তাহলে সে যেন নিজের শক্তি দিয়ে তাকে বাধা দেয়। আর যদি সে শক্তি দিয়ে বাধা দিতে অপারগ হয়, তাহলে সে উপদেশের মাধ্যমে তাকে সংশোধন করে। আর সে যদি তাও না পারে তাহলে সে যেন তার প্রতি ঘৃণা করে। আর এটিই দুর্বল ইমানের পরিচয়।”
৭. হযরত ওমর (রা)-এর সততার পরিচয় দাও।
উত্তর: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) এর চরিত্রে সততার গুণটি পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিল। তিনি রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার করতেন এবং কোনো প্রকার অন্যায় কাজ হলে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিতেন। ছোট-বড়, আপন-পর, ধনী-দরিদ্র সকলের জন্য তিনি সমান বিচার করতেন এবং তাঁর বিচারে কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব হতো না। তিনি রাতের অন্ধকারে ছদ্মবেশে মদিনার অলিতেগলিতে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিতেন এবং তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতেন। মদিনার এক দরিদ্র মহিলার সৎ কন্যার সততায় মুগ্ধ হয়ে হযরত ওমর (রা) তার যোগ্য ও স্নেহের পুত্রকে তার সাথে বিয়ে দেন।
৮. আমরা পিতামাতার খিদমত করব কেন?
উত্তর: যে কারণে আমরা পিতামাতার খেদমত করব তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. পৃথিবীতে পিতামাতার চেয়ে আপনজন আমাদের আর কেউ নেই।
২. পিতামাতার ওসিলাতেই আমরা দুনিয়াতে এসেছি।
৩. তাঁদের স্নেহ ও আদরে আমরা লালিতপালিত এবং বড় হয়েছি।
৪. পিতামাতার খেদমত করলে তাঁরা আমাদের ওপর খুশি হবেন।
৫. পিতামাতার খেদমত করলে আমরা দুনিয়ায় ও আখিরাতে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারব।
৯. মহানবি (স) চাকরদের সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর: আমাদের সমাজে যারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই হলো চাকর। মহানবি (স) চাকরদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘যারা কাজ করে তারা তোমাদের ভাই। নিজে যা খাবে তাদের তা খাওয়াবে, নিজে যা পরিধান করবে তাদেরও তা পরতে দেবে। কাজকর্মে তাদের সাহায্য করবে, বেশি কষ্ট দেবেনা। তাদের শ্রমের মর্যাদা দেবে’।
১০. প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা কী কী কৌশল অবলম্বন করব।
উত্তর: আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত কৌশলগুলো অবলম্বন করব তা হলো:
১. যথাসম্ভব উঁচু জায়গায় বসতভিটা, গোয়ালঘর ও হাঁস-মুরগির ঘর তৈরি করব।
২. ঘরের ভেতরে উঁচু মাচা তৈরি করে তার উপর খাদ্যশস্য ও বীজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করব।
৩. পুকুরের পাড় উঁচু করব। টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন যথাসম্ভব উঁচু স্থানে বসাব।
৪. শুকনো খাবার যেমন: চিড়া, মুড়ি, গুড় এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ঘরে মজুত রাখব এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সাঁতার শেখাব।
৫. বন্যার সময়ে যাতায়াতের জন্য নৌকা না থাকলে কলাগাছের ভেলা তৈরি করে নেব।
আরও দেখো—পঞ্চম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বহুনির্বাচনি, শূন্যস্থান এবং মিলকরণ
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের ৫ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও ইসলাম শিক্ষা বইয়ের বহুনির্বাচনি, শূন্যস্থান, বাম-ডান ইত্যাদি প্রশ্নোত্তরের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post