৬ষ্ঠ অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : ঈশা খান ছিলেন বাংলার বারোভূঁইয়াদের প্রধান। তার জন্ম ১৫২৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল পরগণায় । ঈশা খান মুঘলদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে সম্রাট আকবর তাকে মসনদ-ই-আলা উপাধি দেন। ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৬ষ্ঠ অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : জাফর সাহেব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তার বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এলাকায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করেন। মুসলমান হিসেবে তিনি শুধুমাত্র নিজ ধর্মের সুফী সাধকদেরকেই ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন না, অন্য ধর্মের বিশিষ্টজনদেরকেও তিনি শ্রদ্ধা করতেন। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি জাতি ধর্মের কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করেননি। যোগ্যতানুযায়ী তিনি সবাইকে সমান সুযোগ দেন। মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা প্রভৃতি তৈরিতে তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। এছাড়া সাহিত্যের উন্নতি ও বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং কবি সাহিত্যিকদেরকে উৎসাহ ও পুরস্কার প্রদান করেন।
ক. লক্ষণ সেন কে ছিলেন?
খ. কেন বাংলায় প্রথম নৌবাহিনী গঠন করা হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের জাফর সাহেবের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের হোসেন শাহি বংশের কোন শাসকের কর্মকাণ্ডের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উদ্দীপকে উক্ত শাসকের শাসনামলের সম্পূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে? বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : বারি সাহেব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি তার ইউনিয়নের উন্নয়নকল্পে বহু রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ করেন। বারি সাহেব জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে উৎপাদিত পণ্য অল্পদামে বিক্রির উদ্যোগ নেন। আরমান সাহেব একজন বড় ব্যবসায়ী। তিনি চট্টগ্রাম থেকে মালামাল এনে ঢাকায় বিক্রি করেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ করেন না। কর্মচারীদের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
ক. মামলুক তুর্কিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন কে?
খ. বখতিয়ার খলজিকে কেন ভাগ্যান্বেষী সৈনিক বলা হয়?
গ. বারি সাহেব মুঘল আমলের কোন সুবাদারের কর্মকাণ্ডকে অনুসরণ করে দ্রব্য বিক্রির উদ্যোগ নেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “আরমান সাহেবের কর্মকাণ্ডে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের কর্মকাণ্ডের আংশিক দিক ফুটে উঠেছে”– উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : মামুন খান ত্রয়োদশ শতকের শুরুতে এক শাসনের অবসান ঘটিয়ে নতুন আরেক শাসনের সূচনা করেন। তিনি ছিলেন জাতিতে তুর্কি। কর্মকুশলী হলেও শারীরিক গঠন আকর্ষণীয় না হওয়ায় চাকরি পেতে ব্যর্থ হন। অনেক চেষ্টার পর অন্য এলাকায় গিয়ে সেখানকার সৈন্য বিভাগে চাকরি পান। কিন্তু তাতে উচ্চাভিলাষী মামুন খান সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। তাই পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দখল করার জন্য কিছু সংখ্যক সৈন্য নিয়ে আক্রমণ চালান এবং সহজেই তা দখল করে নেন।
ক. বাংলাদেশের নাম বুলগাকপুর কে দিয়েছেন?
খ. শায়েস্তা খান স্মরণীয় হয়ে আছেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. মামুন খানের কর্মকাণ্ড মধ্যযুগের বাংলার কোন শাসকের সাথে সংগতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত শাসকই বাংলায় প্রথম ইসলাম ধর্মের সূচনা করেন— বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : চৌধুরী বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন কবির। তিনি রাজ্যের অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করে তার বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করেন। নিজ ধর্ম ও সুফি সাধকদের প্রতি তার আস্থার পাশাপাশি তিনি অন্য ধর্মেরও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি দীর্ঘ ২৬ বছর শাসন করেন। উদার ও ধর্ম নিরপেক্ষ মনোভাবের কারণে তার শাসনামলে বৈষ্ণব ধর্মমতের প্রবর্তন হয়।
ক. বাংলার কোন সুলতানের সাথে পারস্যের কবি হাফিজের পত্রালাপ হতো?
খ. রাজা গণেশ কীভাবে বাংলার ক্ষমতা দখল করেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসক কবির তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন শাসকের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ও বিকাশে উক্ত শাসকের অবদান অনস্বীকার্য’– বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : রাজা শাহ আবু কায়েস ক্ষমতায় এসে লক্ষ করলেন যে, একই ভাষাভাষী মানুষ দুটি ভূ-খণ্ডে বসবাস করে। তিনি দুটি ভূ-খণ্ডকে একত্রিত করে একটি বৃহত্তর ভূ-খণ্ডের সৃষ্টি করেন। তার আমলে এই বৃহত্তর ভূখণ্ডের মানুষেরা একটি জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই নতুন জাতীয়তাবোধ পরবর্তীতে একটি শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাজা শাহ আবু কায়েস এই নতুন জাতীয়তাবাদের নেতা হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন। তবে শাসক হিসেবে ধর্ম নিরপেক্ষ না থাকায় এবং রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা না থাকায় তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেননি।
ক. বাংলায় মধ্যযুগের সূচনা হয় কখন?
খ. গিয়াসউদ্দিন ইওজ খলজির সাথে দিল্লির সুলতানের সম্পর্ক কেমন ছিল?
গ. রাজা শাহ আবু কায়েসের কর্মকাণ্ডের সাথে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের কর্মকাণ্ডের কী মিল লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটিতে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের কর্মকাণ্ডের বিপরীত ছবিও তুলে ধরা হয়েছে— এ বাক্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো
বাংলায় তুর্কী শাসনের ইতিহাস : বাংলায় মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন বখতিয়ার খলজি। এ পর্বের প্রথম পর্যায় ছিল ১২০৪ থেকে ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এ যুগের শাসনকর্তাদের পুরোপুরি স্বাধীন বলা যাবে না। এদের কেউ ছিলেন বখতিয়ারের সহযোদ্ধা খলজী মালিক। আবার কেউ কেউ তুর্কী বংশের শাসক। শাসকদের সকলেই দিল্লির সুলতানদের অধীনে বাংলার শাসনকর্তা হয়ে এসেছিলেন।
বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমল (১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দ – ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) : দিল্লির সুলতানগণ ১৩৩৮ থেকে ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দুইশত বছর বাংলাকে তাদের অধিকারে রাখতে পারেননি। ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সোনারগাঁওয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খানের মৃত্যু হয়। বাহরাম খানের বর্মরক্ষক ছিলেন ‘ফখরা’ নামের একজন রাজকর্মচারী। প্রভুর মৃত্যুর পর তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ‘ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ’ নাম নিয়ে সোনারগাঁওয়ের সিংহাসনে বসেন। এভাবেই সূচনা হয় বাংলার স্বাধীন সুলতানি যুগের।
রাজা গণেশ ও হাবসি শাসন : সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, বাংলার ইতিহাসের দুইশত বছর (১৩৩৮-১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) মুসলমান সুলতানদের স্বাধীন রাজত্বের যুগ। তথাপি, এ দুইশত বছরের মাঝামাঝি অল্প সময়ের জন্য কিছুটা বিরতি ছিল। প্রথম ১৪১৫-১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজা গণেশ এবং পরবর্তীতে ১৪৮৭-১৪৯৩ বাংলায় হাবসিরা শাসন করে। হাবসি সুলতান মুজাফফর শাহের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে হাবসি শাসনের অবসান ঘটে।
আফগান শাসন : ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার স্বাধীন সুলতানি যুগের অবসান হলে একে একে বিদেশি শক্তিসমূহ গ্রাস করতে থাকে বাংলাকে। মুঘল সম্রাট বাবর ও তার পুত্র হুমায়ুন হুসেনশাহী যুগের শেষদিক থেকেই চেষ্টা করেছিলেন বাংলাকে মুঘল অধিকারে নিয়ে আসতে। কিন্তু, আফগানদের কারণে মুঘলদের এ উদ্দেশ্য প্রথম দিকে সফল হয়নি।
বার ভূঁইয়াদের ইতিহাস : বাংলার ইতিহাসে বার ভূঁইয়াদের আবির্ভাব ষোল শতকের মধ্যবর্তীকাল হতে সতের শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। আলোচ্য সময়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন, ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে তারাই ‘বার ভূঁইয়া’। সম্রাট আকবর সমগ্র বাংলার ওপর তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। বাংলার বড় বড় জমিদাররা মুঘলদের অধীনতা মেনে নেননি। জমিদারগণ তাদের নিজ নিজ জমিদারিতে স্বাধীন ছিলেন। এদের শক্তিশালী সৈন্য ও নৌবহর ছিল। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এরা একজোট হয়ে মুঘল সেনাপতির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। বাংলার ইতিহাসে এ জমিদারগণ ‘বার ভূঁইয়া’ নামে পরিচিত।
মুঘল শাসন (১৫৭৬-১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দ) : সুবাদারি ও নবাবি-এ দুই পর্বে বাংলায় মুঘল শাসন অতিবাহিত হয়। সুবাদার ইসলাম খান ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে বার ভূঁইয়াদের দমন করে সমগ্র বাংলায় সুবাদারি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। মুঘল প্রদেশগুলো ‘সুবা’ নামে পরিচিত ছিল। বাংলা ছিল মুঘলদের অন্যতম সুবা। সতের শতকের প্রথম দিক থেকে আঠার শতকের শুরু পর্যন্ত ছিল সুবাদারি শাসনের স্বর্ণযুগ।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের পর দিল্লির দুর্বল উত্তরাধিকারীদের সময়ে মুঘল শাসন শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এ সুযোগে বাংলার সুবাদারগণ প্রায় স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করতে থাকেন। মুঘল আমলের এই যুগ ‘নবাবি আমল’ নামে পরিচিত। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নবাবি আমলের অবসান ঘটে এবং বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনা ঘটে যা বাংলায় আধুনিক যুগেরও সূচনা ঘটায়।
SSC শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post