৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৩য় অধ্যায় ৪র্থ সেশন : গত সেশনে আমরা খেলার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ খুঁজে পেয়েছি এবং ধারণা পেয়েছি। এখন বলি এই যে এত ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ আমাদের সামনে উম্মোচিত হলো, সেসব সম্পদ ব্যবহারের স্বার্থে আমাদের কী করা উচিত? আমরা আগেও এর উত্তরটি লিখেছি। আমাদের উত্তরটি নিচে লিখি। (মূলবই পৃষ্ঠা নং – ৩৭)
৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৩য় অধ্যায় ৪র্থ সেশন
সমাধান : বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহারের পূর্বে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের স্বত্বাধিকারীর অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিতে পারলে অন্তত ব্যবহারের সময় ঐ সম্পদের মালিকের নাম উল্লেখ করতে হবে। তাছাড়া ব্যবসার স্বার্থে হলে কিছু অর্থ প্রদান করতে হবে।
এবার চলো আমরা আরও একটি অনুশীলনী করি। এটি হবে, যদি আমরা স্বত্বাধিকারীর নাম না ব্যবহার করি তাহলে স্বত্বাধিকারী ব্যক্তির কী ক্ষতি হতে পারে। পাশে বসে থাকা সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিচের ঘরে আমরা আমাদের অনুমানগুলো লিখি। (মূলবই পৃষ্ঠা নং – ৩৮)
স্বতাধিকারীর ধরন: ক্ষতির ধরন
১. গায়ক – গায়ক গান গাওয়ার আগ্রহ হারাবেন। তিনি আর্থিকভাবে লোকসানের শিকার হবেন।
২. লেখক – লেখালেখির আগ্রহ হারাবেন। তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হবেন।
৩. গবেষক – গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ হবেন না। নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন।
৪. প্রোগ্রামার – ওয়েবসাইট তৈরি, অ্যাপ্লিকেশন, ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি কাজে আগ্রহ হারাবেন। আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন।
৫. প্রকাশক – তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
৬. ব্যবসায়ী – তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মূল পাঠ্যবই থেকে
মিতু মোবাইলের এমন একটি ত্যাপ্রিকেশন তৈরি করলো যেটি দিয়ে মানুষ খুব সহজেই তার আশপাশের পুলিশের অবস্থান বুঝতে পারবে এবং সবচেয়ে কাছে যে পুলিশটি আছে তার কাছে সহায়তা চাইতে পারবে। এই ত্যাপ্রিকেশন পরিচালনার জন্য মিতু আগে সরকারের কাছ থেকে একটি লাইসেন্স নিল যে এই ত্যাপ্রিকেশনটি মিতুর তৈরি।
অর্থাৎ সরকার মিতুকে স্বীকৃতি দিল যে মিতু এই ত্যাপ্রিকেশনটি বানিয়েছে। মিতুকে এই ত্যাপ্রিকেশনের স্বত্বাধিকারী বলা হবে। স্বত্বাধিকারী হিসেবে মিতুর সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই ত্যাপ্রিকেশনটি কে ব্যবহার করবে বা কে ব্যবহার করতে পারবে না, তা ঠিক করার পাশাপাশি অন্য কেউ মিতুর এই ত্যাপ্রিকেশনটি ব্যবহার করার আগে মিতুর অনুমতি লাগবে এবং কেউ যদি মিতুর ত্যাপ্রিকেশনটি আবার তৈরি করতে চায়, তাহলেও মিতুর অনুমতি লাগবে।
তবে এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, মিতুর ত্যাপ্রিকেশনের মতো করে হুবহু কেউ যদি কিছু বানাতে চায়, শুধু তাহলেই মিতুর অনুমতি লাগবে। কিন্তু কেউ যদি একই কাজ অন্যভাবে বানায় এবং কিছু অতিরিক্ত সহায়তা যোগ করে, যেমন: পুলিশের সঙ্গে ডাক্তার কোথায় আছেন তা-ও চিহ্নিত করা যাবে, তাহলে কিন্তু সে এটি বানাতে পারে।
এখন কথা হলো কেউ যদি মিতুকে না জিজ্ঞেস করে মিতুর বানানো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার করে, তাহলে মিতু কী করতে পারবে? মিতু প্রমাণ সংগ্রহ করে, মিতুর লাইসেন্স দেখিয়ে আদালতে মামলা করতে পারবে এবং সেই ব্যক্তির কাছ থেকে মিতুর বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ঢুরি করার দায়ে তাকে শান্তি দিতে পারে।
এখন বলো তো, আমরা যদি কারও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বা কোনো কিছু যা অন্য ব্যক্তি তৈরি করেছেন তা না বলে ব্যবহার করি বা নিজের নামে বা অন্য ব্যক্তির নামে চালিয়ে দিই তাহলে কী হবে? হ্যা আমাদেরও শাস্তি হতে পারে।
আবার মনে করি, জুয়েল একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ হিসেবে কবিতা বানাল। সেক্ষেত্রে জুয়েল তার অধিকার রক্ষার জন্য কী করতে পারে? জুয়েল তার সম্পদের সুরক্ষার জন্য তার খাতায় কবিতাটি লিখে রাখল, সেখানে জুয়েল তার নাম ও তারিখ লিখল না আবার কারও কাছে প্রকাশও করল না, সেক্ষেত্রে জুয়েল কিন্তু দাবি করতে পারবে না ওই কবিতাটি তার। কখনও যদি অন্য কেউ দাবি করে এটি তার কবিতা, তখন জুয়েল কিন্তু কিছু বলতে পারবে না কিংবা আইনের সহায়তাও নিতে পারবে না।
সুতরাং আমরা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের সুরক্ষা তখনই করতে পারব, যখন সম্পদটি প্রকাশ হবে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে না পারলেও বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের আওতায় আমরা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদটি রেজিস্টি করতে পারি।
তবে এত বড় প্রক্রিয়ায় তোমাদের এই ছোট বেলায় যাওয়া তো কঠিন, তো আমরা একটি বুদ্ধি বের করি, আমরা যখন একটি সম্পদের মালিক হবো অর্থাৎ যখন একটি ছবি তুলব, নাটিকা লিখব, কিংবা কবিতা লিখব সেটি আমরা আমাদের কয়েকজন বন্ধু বা বাবাকে মাকে ই-মেইল, এসএমএস বা চিঠিতে নিজের নাম ও তারিখ দিয়ে পাঠিয়ে রাখব। যদি কখনো কেউ ওই সম্পদ তার নিজের বলে দাবি করে, তখন আমরা প্রমাণ দেখাতে পারব তারও আগের একটি তারিখে এটি প্রকাশ করেছি।
এবার চলো আমরা আরও একটি অনুশীলনী করি। এটি হবে, যদি আমরা ন্বত্বাধিকারীর নাম না ব্যবহার করি, তাহলে স্বত্বাধিকারী ব্যক্তির কী ক্ষতি হতে পারে। পাশে বসে থাকা সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিচের ঘরে আমরা আমাদের অনুমানগুলো লিখি।
এবারে একটি নমুনা প্রতিবেদন দেওয়া হলো কীভাবে ন্বত্বাধিকারীর নাম লেখা যায় তা বোঝার জন্য নমুনা প্রতিবেদনে কিছু লেখা বেগুনি কালি করা আছে, যা মূলত কোনো নাম এবং সাল। এভাবেই প্রতিবেদনে স্বত্বাধিকারীর নাম লিখতে হয়।
তবে এই প্রতিবেদনে সব ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের জন্য কীভাবে স্বত্বাধিকারীর নাম লিখতে হয় তা আসেনি। কোনো কবিতা হলে কবির নাম, কোনো হাতে আকা ছবি হলে চিত্রকারের নাম, কোনো ফর্মুলা হলে বিজ্ঞানীর নাম, কোনো দেশের পণ্য বা জাতীয় সংগীত হলে সে দেশের নাম উল্লেখ করতে হয়।
পরবর্তী সেশনের জন্য প্রস্তুতি
এবার আমাদের প্রতিবেদনে যে সব জায়গায় স্বত্াধিকারীর নাম বসবে তা খুঁজে বের করি এবং গোল চিহ্ন দিই। এই যে আমরা আমাদের প্রতিবেদনটিতে যে জায়গাগুলো গোল চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করলাম সেসব জায়গায় সঠিক ন্বত্বাধিকারীর নাম খুঁজে নিজের প্রতিবেদনে তা লিখে নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রতিবেদনটি আবার লিখব। এবার প্রতিবেদনটি লেখার সময় নমুনা প্রতিবেদনটি খেয়াল করব কীভাবে স্বত্বাধিকারীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
তথ্যের সঠিক স্বত্বাধিকারীর নাম খুঁজে বের করতে আমরা আমাদের পরিবার, প্রতিবেশী, শিক্ষক, ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থী, ডিজিটাল মাধ্যম, ইউনিয়ন রিসোর্স সেন্টার বা যেকোনো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সহায়তা নিতে পারি। প্রতিবেদনটি আবার সঠিক করে স্বত্বাধিকারীর নাম ব্যবহার করে লেখার মাধ্যমে আমরা বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।
আরো দেখো: ৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৩য় অধ্যায় ৪র্থ সেশন সকল প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post