৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৪র্থ অধ্যায় : আমাদের জীবনে তথ্য আদান-প্রদানে নানা ঝুঁকি থাকে এবং এই ঝুঁকি কমানো ও ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের কাছে চলে যেতে পারে তাই গোপনীয়তা রক্ষা করা দরকার।
ব্যক্তিগত তথ্য হলো যে তথ্যের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির পরিচয় চিহ্নিত করা যায়। ব্যক্তিগত তথ্য যদি ভুল মাধ্যমে, ভুল জায়গায় বা ভুল ব্যক্তির কাছে চলে যায় তাহলে অনেক ধরনের বিড়ম্বনা বা ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৪র্থ অধ্যায়
এতে সামাজিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। তথ্য আদান-প্রদানের ঝুঁকি ডিজিটাল মাধ্যমে ও নন ডিজিটাল মাধ্যমেও হতে পারে। তাই ব্যক্তিগত তথ্যগুলো নিরাপদে রাখতে হবে। গোপনীয়তা লঙ্ঘন হলে ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সামাজিক ও আইনি কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
প্রথম সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ৪৩)
আগামী কয়েক দিন আবারও কিছু মজার কাজ করব। এই মজার কাজগুলোর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করার ঝুঁকি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি মোকারবলায় কী করা যায়, তার একটি কর্ম-পরিকল্লনা তৈরি করব এবং সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করার জন্য একটি মানববন্ধন করব। চলো, আমরা মানববন্ধনের প্রস্তুতি নিই।
আমাদের কি গত অভিজ্ঞতার কথা মনে আছে? যেখানে আমরা একটি বিদ্যালয় পত্রিকা বানিয়েছিলাম। গত কয়েকটি সেশনে আমরা একটি বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরি করেছি। বিদ্যালয় পত্রিকায় যেসব উপকরণ যুক্ত করেছিলাম, সেখানে তথ্য আকারে কী কী ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যবহার ছিল, তার একটি তালিকা নিচের ছকে লিখি।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের তালিকা :
১. সাহিত্য ও শিল্পকর্ম সম্পর্কিত সম্পদ : গান, কবিতা, নাটিকা।
২. শিল্পকারখানা সম্পর্কিত সম্পদ : কোম্পানির নাম, লোগো, মোড়কের ডিজাইন।
৩. ভৌগোলিক পরিচিতি : বাংলাদেশের ইলিশ, বাংলাদেশের পার্ট।
৪. বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন : করোনার টিকা, বিদ্যুৎ আবিষ্কার।
এই বিদ্যালয় পত্রিকা মুলত তথ্য আদান-প্রদানের এক ধরনের মাধ্যম। এ রকম আরও অনেক মাধ্যম ব্যবহার করেও আমরা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। সেই মাধ্যমগুলো ডিজিটালও হতে পারে আবার ডিজিটাল মাধ্যম ছাড়াও হতে পারে। আবার বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরি করতে আমরা ডিজিটাল মাধ্যম ও হাতে কলমে কাজ করেছি। নিচের ছকে সেগুলোর নাম দলে আলোচনা করে লিখব। আমাদের কাজটি ক্লাসের সবার উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করব।
তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম বা প্ল্যাটফর্ম
ডিজিটাল: মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট।
ডিজিটাল নয়/ এনালগ: খবরের কাগজ, হাতে আঁকা ছবি, ছড়া, মুদ্রিত বই, নিজস্ব লেখা।
ব্যক্তিগত তথ্য কী?
ব্যক্তিগত তথ্য: আমাদের বইয়ের শুরুতেই আমরা জেনেছি যে আমার নাম, বয়স, আমি কোন শ্রেণিতে পড়ি এসব হচ্ছে তথ্য। আবার এগুলোকে ব্যক্তিগত তথ্যও বলা যায়। যদি আমি আমার পরিচয় আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষককে দিতে চাই, তাহলে আমি তাকে কী কী তথ্য দেব?
আমার নাম, আমার বাবা-মা বা অভিভাবকের নাম, আমার বয়স, আমার বাড়ির ঠিকানা ইত্যাদি। অর্থাৎ এই তথ্যগুলোই হচ্ছে আমার পরিচয়, আর এগুলোই ব্যক্তিগত তথ্য। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে যে তথ্যের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির পরিচয় চিহ্নিত করা যায়, তা-ই হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য।
এছাড়া ফোন নম্বর, ই-মেইল এর ঠিকানা, আমার স্বাক্ষর, আমার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট, ব্যাংক আযাকাউন্ট নম্বর এসব ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে পড়ে। এসব তথ্য আমি নিজে জানাতে না চাইলে অন্য কারও জানার কথা নয় কিংবা জানতে হলে আমার অনুমতি নিয়ে জানবে।
ব্যক্তিগত তথ্যের তালিকা :
১. নিজের ছবি
২. নাম
৩. বয়স
৪. উচ্চতা
৫. বাড়ির ঠিকানা
৬. রক্তের গ্রুপ
৭. মোবাইল নম্বর
৮. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর
৯. ফেসবুক/ই-মেইল এর পাসওয়ার্ড
১০. স্বাক্ষর
১১. জন্ম নিবন্ধন
১২. ফিঙ্গার প্রিন্ট
দ্বিতীয় সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ৪৫)
১. কীভাবে তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?
উত্তর : ডিজিটাল কিংবা ডিজিটাল নয় যেকোনো মাধ্যমে তথ্য আদান- প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অনেক সময় আমাদের ভুল বা অসচেতনার জন্য তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় আমাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ আমাদের তথ্য চুরি করে থাকে যা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যে তথ্য চুরি করে তাকে হ্যাকার বলে এবং এই পদ্ধতিকে হ্যাকিং বলে।
২. কোন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?
উত্তর : যেসব ব্যক্তিগত তথ্য আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে-
● ফোন নম্বর
● ই-মেইল এর ঠিকানা এবং পাসওয়ার্ড
● ব্যাংক একাউন্ট নম্বর
● ব্যাংকের ATM কার্ডের পিন নম্বর
● জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট
● নিজের ছবি
৩. তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হলে কী কী ক্ষতি হতে পারে?
উত্তর : তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হলে আমাদের বিভিন্ন রকমের ক্ষতি হতে পারে। যেমন-
সামাজিক ক্ষতি : আমাদের কোনো ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হলে শুধু যে নিজের ক্ষতি হয় তাই নয়, সমাজেরও ক্ষতিসাধন হয়। যেমন- আমাদের কোনো ব্যক্তিগত ছবি জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়া।
আর্থিক ক্ষতি : মাঝে মাঝে এমন হয় আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য আদান- প্রদানের সময় তৃতীয় কোনো ব্যক্তি যে তথ্য চুরি করে নেয় এবং আমাদের কাছে টাকা দাবি করে এবং হুমকি দিয়ে থাকে।
মানসিক ক্ষতি : ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হলে সামাজিক বা আর্থিক ক্ষতির চেয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ব্যক্তির নিজের। যেমন: ব্যক্তিগত কোনো ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পরলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় এবং তার মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।
চতুর্থ সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ৪৯)
বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিচের ছকে লিখি।
১. ইন্টারনেটে তথ্য আদান প্রদানে কোনো ঝুঁকি রয়েছে কী?
বিশেষজ্ঞ : তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সামান্য অসাবধানতায় মারাত্মক ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত তরুণেরা এ ধরনের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও একই ঝুঁকি রয়েছে।
২. কোন কাজ থেকে বিরত থাকলে এসব ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকা যাবে?
বিশেষজ্ঞ : ঝুঁকি এড়াতে নিচের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে-
১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই লগ- আউট করতে হবে।
২. কাউকে অতি ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানে অধিক সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত।
৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অবাধ ব্যবহার পরিহার করা উচিত।
৪. না বুঝে কোথাও ফরম পূরণ না করা।
৫. ডিজিটাল মাধ্যমে দুর্বল ও সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা।
৩. তথ্য আদান-প্রদানে অভিজ্ঞ কারও সহায়তা নিতে পারি?
বিশেষজ্ঞ : তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষক, অভিভাবক, বড় ভাই কিংবা বড় আপুর সহায়তা নিতে পারবে।
আমরা ইতোমধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ঝুঁকি ও অপর দুটি কাজ করে ফেলেছি, আমরা একটি জরিপ পরিচালনা করেছি, আবার একজন বিশেষজ্ঞের মতামতও নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের অনেকগুলো ঝুঁকি শনাক্ত হয়ে গেছে। এবার প্রাপ্ত ঝুঁকিগুলোর আমরা একটি তালিকা তৈরি করব। তালিকায় আমরা ডিজিটাল মাধ্যমের ঝুঁকি এবং সাধারণ মাধ্যমের ঝুঁকি আলাদা করব।
পঞ্চম সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ৫১)
ডিজিটাল মাধ্যমের ঝুঁকি
১. এসএসসি পরীক্ষা সম্পর্কিত একটি ভুল খবর আমার অভিভাবকের ফোনে এল, আমি তা যাচাই না করে আমার সব বন্ধুর অভিভাবকের ফোনে পাঠিয়ে দিলাম।
২. আমি মোবাইল ফোনে গেমস খেলতে গিয়ে একটি জায়গায় আমার অভিভাবকের ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে দিলাম। আমার অভিভাবকের ই-মেইল ঠিকানায় একটি ই-মেইল এল যেখানে লেখা আপনি একটি লটারি জিতেছেন, এই লিংক-এ ক্লিক করে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিন। আমার অভিভাবক তার অ্যাকাউন্টের সব তথ্য দিয়ে দিলেন।
৩. ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইনে ফরম পূরণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দিলেন।
৪. ই-মেইলে ব্যক্তিগত তথ্য যোগ করে ভুল ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন।
৫. বিনামূল্যের ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় হ্যাকারদের কাছে তথ্য চলে যেতে পারে।
ডিজিটাল নয় বা সাধারণ মাধ্যমের ঝুঁকি
১. এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে একটি ভুল খবর আমি বিদ্যালয়ে আসার পথে জানতে পারলাম, আমি যাচাই না করে বিদ্যালয়ে এসে আমার সব বন্ধুকে জানিয়ে দিলাম।
২. ফটোকপির দোকানে আমার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ফটোকপি ফেলে এলাম।
৩. একাউন্টের চেকবই যেখানে-সেখানে ফেলে রেখেছিলাম।
৪. ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর, এটিএম (ATM) কার্ড এর পিন নম্বর ডায়রিতে লিখে রেখেছিলাম।
৫. নিজের ব্যক্তিগত ছবি ফোনের গ্যালারিতে রেখে ফোন আনলক রেখেছিলাম।
৬. ব্যক্তিগত ডায়েরি যেখানে-সেখানে রেখে দিয়েছিলাম।
ষষ্ঠ সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ৫৩)
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ঝুঁকি এবং কীভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয়েছে নিচের ছকে লিখ।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ক ঝুঁকি:
- অনুমতি ছাড়াই কারও ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
- কারও ব্যাপারে মিথ্যে তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে।
- সম্মতি ছাড়াই কারও ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কীভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয়েছে:
- অনুমতি ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি প্রকাশের কারণে নেতিবাচক কিংবা অশ্লীন মন্তব্যের সম্মুখীন হতে পারে।
- এক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয়েছে।
- সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্নের সম্মুখীন হতে পারেন। এক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগ গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে।
- ভয় দেখিয়ে কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে।
আরো দেখো: ৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৪র্থ অধ্যায় সকল প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post