৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫ম অধ্যায় সমাধান : এবারে আমরা বন্ধুর সাথে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করব। বন্ধুর সাথে বেড়াতে যেতে কার না ভালো লাগে। নতুন নতুন অনেক কিছু একসাথে দেখা হয়, নতুন ধরনের খাবার খাওয়া হয়, অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা হয়।
কিন্তু এই মজার সবই মলিন হয়ে যেতে পারে যদি আমাদের যাওয়া এবং আসার পরিকল্পনাটি ঠিকমতো না হয়। যেমন ধরি, বেড়াতে যাওয়ার জন্য আমরা রওনা দিলাম ঠিকই, কিন্তু আমাদের যাওয়ার বাস/ট্রেন/লঞ্চটি সময়মতো ধরতে পারলাম না। তখন খুব মন খারাপ হবে।
এমনও হতে পারে, আমাদের বেড়াতে যাওয়াটাই আর হলো না। তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে সব সময় পরিকল্পনাটা ভালো করে নিতে হবে। আর এ শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা এটাই হাতেকলমে করব। আমরা বন্ধুর সাথে ভ্রমণের একটি পরিকল্পনা করব। কিছু ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়ে আমরা এই পরিকল্পনার দিকে এগিয়ে যাব।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫ম অধ্যায় সমাধান
এ শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা যা শিখব: নতুন কোনো জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে সবসময় পরিকল্পনা করে নিতে হবে। ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে গেলে কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়। শুধু ভ্রমণ পরিকল্পনাতেই যে ধাপে ধাপে কাজ হয় তা নয়। আমাদের আশেপাশে যে কাজই দেখি তার কিছু ধাপ থাকে এবং এই ধাপ মেনেই সকল কাজ হয়।
এই ধাপগুলোকে গণিতের ভাষায় অ্যালগরিদম বলে। অ্যালগরিদমের চিত্র রূপ হলো ফ্লোচার্ট। সমস্যা বিশ্লেষণের পরে তা সহজে বোঝানোর জন্য ফ্লোচার্ট কার্যকরী। অ্যালগরিদম ও ফ্লোচার্ট করতে পারলে খুব সহজেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা শেখা যায়। পুরো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে পারলে বড় হয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়া যাবে।
সেশন- ১: খেলতে খেলতে শ্রেণিতে ভ্রমণ
ভ্রমণ পরিকল্পনা করার আগে এই সেশনে আমরা একটি খেলা খেলব। খেলাটির নাম “খেলতে খেলতে শ্রেণিতে ভ্রমণ”। নাম শুনেই বোঝা যায় খেলাটি শ্রেণিকক্ষে খেলতে হবে, তবে চাইলে শ্রেণির বাইরেও খেলা যাবে। খেলাটি খেলার পদ্ধতি নিচের ঘরে দেওয়া হলো-
১। খেলার প্রথম কাজ হলো একজন সহপাঠী পছন্দ করা যে ভ্রমণসঙ্গী হবে।
২। ভ্রমণসঙ্গী নির্ধারণ হয়ে গেলে শিক্ষক যেখানে দাড়াতে বলবেন আমাদের সবাইকে সেখানে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
৩। এবারে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের সামনের দিকে অর্থাৎ যেখানে শিক্ষকের টেবিল থাকে সে বরাবর একটি দাগ দিবেন এবং শ্রেণিকক্ষের আর এক জায়গায় অপর একটি দাগ দেবেন। শ্রেণিকক্ষের প্রথম দাগটি হলো যাত্রা শুরুর দাগ এবং অন্য দাগটি হলো ভ্রমণ স্থান।
৪। আমাদের ভ্রমণসঞ্জীকে সাথে নিয়ে ভ্রমণের স্থানে যেতে হবে।
৫। আমরা ভ্রমণ শুরুর জায়গা থেকে খেলা শুরুর সময় জোরে বলব “শুরু এবং ভ্রমণ স্থানে পৌছানোর পর জোরে বলব শেষ?।
৬। যে জোড়া যত কম ধাপে ভ্রমণ স্থানে যেতে পারবে সে জোড়া বিজয়ী হবে।
খেলাটি থেকে আমরা কি কিছু বুঝতে পারলাম? হ্যাঁ, খেলাটি থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনাতেও কিছু ধাপ থাকবে এবং আমাদের তা চিহ্নিত করতে হবে। শুধু ভ্রমণ পরিকল্পনাতেই যে ধাপে ধাপে কাজ হয় ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়।
আমাদের আশপাশে যে কাজেই দেখি তার কিছু ধাপ আছে এবং এই ধাপ মেনেই সকল কাজ হয়। আমরা আমাদের আশপাশে সে সকল ডিজিটাল যন্ত্র দেখতে পাই, সে সকল যন্ত্রও কিন্তু এই ধাপ মেনে মেনে কাজ করে। ডিজিটাল যন্ত্র ছাড়াও আশপাশের সব কাজই ধাপ মেনে হয়। যেমন, বাড়িতে কোনো সদস্য রান্না করছে, রান্না করতে গিয়েও কিন্তু সে ধাপে ধাপে রান্না করছে।
রান্না করার সময় আগে চুলা জ্বালাতে হয়, তারপর হাঁড়ি বসাতে হয়, তারপর সেই হাঁড়িতে কিছু একটা রান্না করা হয়। আবার বাড়িতে হারমোনিয়াম বাজানোর সময় কিন্তু ধাপে ধাপে একটার পর একটা চাবিতে চাপ দিতে হয়, তা না হলে তো ঠিক সুরটাই বেজে উঠবে না। আবার রাস্তায় যে রিকশা চলে, তাতেও কিছু ধাপ আছে।
রিকশা চালানোর জন্য প্রথমে রিকশার হাতল ধরেন রিকশাচালক। তারপর রিকশায় বসেন, তারপর রিকশার প্যাডেল ঘোরান ইত্যাদি। তাহলে আমরা দেখি যে, আমাদের জীবনের প্রতিটা কাজই নির্দিষ্ট ধাপ মেনে হয়ে থাকে। একে গণিতের ভাষায় কী বলে আমরা কি জানি? একে বলে আযালগরিদম। আমাদের চারপাশে কিছু লক্ষ্য করলেই আমরা তা বুঝতে পারবো। আমাদের শুধু সবকিছু কীভাবে একটার পর একটা হচ্ছে তা বুঝতে হবে। তাতেই কিন্তু আমরা আযালগরিদম বিশেষজ্ঞ হয়ে যাব।
বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসার ধাপ : (মূলবই পৃষ্ঠা – ৬৩)
শুরু ➞ ঘুম থেকে ওঠা ➞ হাত মুখ ধোয়া ➞ বিদ্যালয়ের কাপড় পড়া ➞ ব্যাগ গোছানো ➞ বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় ওঠা ➞ বিদ্যালয়ের গেটে নামা ➞ শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করা ➞ শেষ।
সেশন- ২ : ধাপে ধাপে কাজ করি
সঠিক ভ্রমণ পরিকল্পনা করার জন্যও আমাদের জানতে হবে আমাদের কী কী কাজ ও মোট কয়টি কাজ। গত সেশনের “খেলতে খেলতে শ্রেণিতে ভ্রমণ” খেলাটি খেলার সময় আমরা বুঝতে পেরেছিলাম কোনো জায়গায় পৌছাতে হলে কিছু ধাপ পার করতে হয় বা কিছু কাজ করতে হয়।
আগের সেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের বাড়ির কাজ করে আনার কথা। এই বাড়ির কাজকে ভিত্তি করেই আমরা আমাদের এই সেশনের অনেক কাজ করব। আজকের সেশনে আমরা ধাপে ধাপে কাজ করাকে ভালোভাবে অনুধাবন করব।
আমরা তো প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আসি। দুই-একদিন হয়তো বিশেষ কোনো কারণে আমাদের বিদ্যালয়ে আসাটা হয়ে ওঠে না। বাসা থেকে বিদ্যালয়ে আসতে আমাদের প্রতিদিন কিছু কাজ করতে হয়, যা আমরা আগেই লিখেছি। চলো সহপাঠীর সাথে মিলে এবার নিচের গল্পটি পড়ি :
নিরা “মনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়” এর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে। বিদ্যালয়ে আসতে নিরার বড় ভাই নিহাদ নিরাকে খুব সাহায্য করে। একদিন নিরার মনে হলো যদি কোনো কারণে তার বড় ভাই নিহাদ কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে, তাহলে নিরার বিদ্যালয়ে যাওয়াই হবে না।
নিরা একথা তার ভাইকে জানাল। নিহাদ বলল, “ঠিক তো নিরা, তোমার তো সমস্যা হবে বিদ্যালয়ে যেতে আমি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে। এক কাজ করি, কাল বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ঘুম থেকে উঠে আমরা যা যা করি তার একটা লিস্ট করতে থাকব। তাহলেই আমি কোথাও ঘুরতে গেলে তুমি ওই লিস্ট দেখে বিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে”। নিরার বুদ্ধিটা খুব পছন্দ হলো। পরদিন নিরা ও নিহাদ মিলে যা যা করল তার একটা লিস্ট বানাল এবং প্রতিটা কাজ কীভাবে করতে হয় তা লিখে রাখল। অনেকটা এরকমভাবে লিখল,
সেশন- ৩: কার ধাপ কত বেশি
গত সেশনে আমাদের বিদ্যালয়ে আসার কাজগুলো আমরা ধাপ অনুযায়ী প্রবাহ চিত্র ব্যবহার করে লিখেছিলাম। এবারে আমরা দেখব “বিদ্যালয়ে আসার কাজটিতে” কার ধাপ কত বেশি। আমরা আমাদের ধাপগুলো গণনা করি এবং শিক্ষকের সাথে সংখ্যাটি বলি।
সবার বলা শেষ হলে আমরা খেয়াল করব বিদ্যালয়ে আসা এই একটি কাজের জন্য অনেকে অনেক ধাপ বলেছে আবার কেউ কেউ খুব কম ধাপ বলেছে। ঠিক আমাদের প্রথম সেশনের খেলার মতো। নিচের ঘরে ধাপের সর্বোচ্চ ও সর্বনিক্ন সংখ্যা লিখি।
এখন সহপাঠীর সাথে আলোচনা করি, উপরে যে ধাপগুলো লেখা হয়েছে, তার কোন ধাপগুলো না থাকলেও বিদ্যালয়ে আসা যায়। ওই ধাপগুলোর পাশে উপরের ঘরে (X) চিহ্ন দিই। কারণ আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করার সময় মাথায় রাখতে হবে অতিরিক্ত কাজ দিয়ে আমাদের ভ্রমণ যাত্রার পরিকল্পনা করলে আমাদেরই সময় নষ্ট হবে, যা আমাদের ভ্রমণের আনন্দ নষ্ট করে দিতে পারে। কোনো কাজকে যদি অনেকগুলো ধাপে ভাগ করা যায় তাহলে কীভাবে সবচেয়ে কম ধাপে কাজটি করা যায় সেটি জানাও জরুরি।
সেশন- ৪ : ধাঁধায় ধাঁধায় ভ্রমণ পরিকল্পনা
কাঠির গাড়িটি বানাতে বানাতে আমরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছি, আমরা যে ভ্রমণ পরিকল্পনা করব তার সম্পূর্ণ ধাপ আমাদের নির্ধারণ করতে হবে এবং সঠিকভাবে সময় নষ্ট না করে যেন আমরা কাজটি করতে পারি তার পরিকল্পনা করতে হবে। এই সেশনে আমরা আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার একটি খসড়া করব।
নিচের ঘরে ৩টি ভ্রমণ স্থান, মাঝে কোথায় বাহন পরিবর্তন করতে হবে এবং কোন ধরনের দূরপাল্লার বাহন দিয়ে আমরা সে স্থানে যাব তার তালিকা দেওয়া আছে। যেকোনো একটি স্থান ও দুটি বাহন সহপাঠীর সাথে আলোচনা করে পছন্দ করি এবং পাশে টিক দিই।
প্রথম বাহনটি দিয়ে আমরা এক জায়গায় যাব (সিলেট/খুলনা/চট্টগ্রাম-নিচে ছকে দেওয়া আছে), তারপর দ্বিতীয় বাহন দিয়ে সে জায়গা থেকে আমাদের ভ্রমণ স্থানে যাব।
এবারে আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় একটি ধাঁধা জুড়ে দেওয়া হলো
- প্রথম বাহন বন্ধ আমার
- ভিন্ন বাহনই উপায় যাবার
অর্থাৎ ভ্রমণের জন্য প্রথম যে বাহনটি আমরা পছন্দ করেছিলাম সেটি বন্ধ। এর অর্থ হলো আমরা এবার একটু ভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়েছি। আমরা প্রথমে যে বাহনটি পছন্দ করেছিলাম সেটি ধরা যাক কোনো কারণে বন্ধ। এখন তাহলে নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আগের লেখা ধাপগুলোতে আমরা পরিবর্তন আনব। এই শর্তটি যে ধাপে আসবে সে ধাপটি আমরা অন্য রকম প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে আকব। প্রবাহচিত্রটি কেমন হবে তা ছোট করে নিচের ঘরে দেওয়া আছে।
আরো দেখো: ৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫ম অধ্যায় সকল প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post