৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ নমুনা ৩ : নীল-সাদা স্কুলজামা পরে কয়েকটি মেয়ে স্কুল থেকে ফিরছিল। মেঠো পথের দুপাশে সবুজ ধানখেত। হঠাৎ সামনের মেয়েটি থমকে দাঁড়াল। বলল, “দ্যাখ দ্যাখ, কী সুন্দর একটা পাখি উড়ে যাচ্ছে!” পাশের মেয়েটি উপরে তাকিয়ে কোনো পাখি দেখতে পেল না।
নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে সে শুধু সাদা মেঘ ভেসে যেতে দেখল। অন্যরাও সেই পাখিটা খুঁজতে লাগল। কিন্তু ততক্ষণে উড়ন্ত পাখিটা চোখের আড়াল হয়ে গেছে। ধানখেত পার হতেই একটা বড়ো পুকুর। সেখানকার পানি টলটলে। পুকুরের ধারে একটা বড়ো আমগাছ। সেই আমগাছের দিকে তাকিয়ে একটি মেয়ে বলল, “আমার মনে হচ্ছে, এবার অনেক আম ধরবে!”
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ নমুনা ৩
সবাই তাকিয়ে দেখল, আমগাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। সাদা মুকুলে আমগাছের সবুজ পাতা ঢাকা পড়েছে। গাছের নিচে একজন বয়স্ক লোক পুরানো চেয়ারে বসে ছিলেন। তাঁর বয়স কম-বেশি সত্তর বছর। তিনি ওদের কথা শুনে বললেন, “ও ঠিকই বলেছে। যে বছর ধান ভালো হয়, সে বছর আমের ফলনও ভালো হয়।”
কিছু শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনোমর গুণ, দোষ, সংখ্যা, পরিমাণ, অবস্থা ইত্যাদি বোঝায়। উপরের নমুনা থেকে এ ধরনের শব্দ খুঁজে বের করো এবং নিচের খালি জায়গায় লেখো: (মূল বইয়ের ২৬ নম্বর পৃষ্ঠা)
উত্তর: নীল, সাদা, মেঠো, সবুজ, সুন্দর, উড়ন্ত, বড়ো, টলটলে, অনেক, প্রচুর, বয়স্ক, পুরানো, কম, বেশি, ঠিক ভালো।
বিশেষণ (মূল বই থেকে)
যে শব্দ দিয়ে বিশেষ্য ও সর্বনামের গুণ, দোষ, সংখ্যা, পরিমাণ, অবস্থা বোঝায়, তাকে বিশেষণ শব্দ বলে। যেমন: লাল ফুল, ভালো কথা, দশ টাকা, লক্ষ জনতা, টাটকা সবজি। এখানে দাগ দেওয়া শব্দগুলো বিশেষণ।
১. বিশেষণ কাকে বলে?
উত্তর: যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনোমর অবস্থা, দোষ, গুণ, সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি উল্লেখ করে, তাকেই বিশেষণ পদ বলে। যেমন- ভাঙা ঘর, অন্ধকার রাত, চলন্ত গাড়ি – এই উদাহরণগুলোর মধ্যে ভাঙা, অন্ধকার, চলন্ত এই পদগুলো বিশেষণ পদ। এগুলো ঘর, রাত, গাড়ি বিশেষ্য পদের পূর্বে বসে বিশেষ্য পদগুলোকে বিশেষিত করেছে। এ ধরনের উদাহরণগুলো হলো বিশেষ্যের বিশেষণ।
উল্লেখ্য, বিশেষণগুলি বিশেষ্যগুলিকে বিভিন্ন উপায়ে বর্ণনা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার হল বিশেষ্য এর গুণমান বা অবস্থা নির্দেশ করার জন্য একটি শব্দ যোগ করে সেটিকে পরিবর্তন করা।
২. বিশেষণ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর: বিশেষণ পদকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
- নাম বিশেষণ এবং
- ভাব বিশেষণ।
নাম বিশেষণকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- বিশেষ্যের বিশেষণ এবং
- সর্বনোমর বিশেষণ।
অন্যদিক থেকে আবার নাম বিশেষণকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
- রূপবাচক: কালো মেঘ, নীল আকাশ, সবুজ মাঠ।
- গুণবাচক: দক্ষ কারিগর, ঠা-া হাওয়া, চৌকস লোক।
- অবস্থাবাচক : মোটা মেয়ে, রোগা ছেলে, তাজা মাছ, খোঁড়া পা।
- সংখ্যাবাচক: শ টাকা, হাজার লোক, দশ দশা।
- ক্রমবাচক: পঞ্চাশ পৃষ্ঠা, অষ্টম শ্রেণি, প্রথমা কন্যা।
- পরিমাণবাচক: এক কেজি চিনি, তিন কিলোমিটার রাস্তা, বিঘাটেক জমি, দশ শতাংশ ভূমি, হাজার টনী জাহাজ।
- অংশবাচক: খোল আনা দখল, সিকি পথ, অর্ধেক সম্পত্তি।
- উপাদানবাচক: কাঠের দরজা, পাথরের ঘর, কালো মাটি।
- প্রশ্নবাচক: কেমন অবস্থা? কতদূর পথ?
- নির্দিষ্টতা জ্ঞাপক: এই মেয়ে, ষোলই ডিসেম্বর ইত্যাদি।
ভাব বিশেষণকে আবার চার ভাগে ভাগে করা যায়। যথা-
- ক্রিয়া বিশেষণ,
- বিশেষণের বিশেষণ,
- অব্যয়ের বিশেষণ এবং
- বাক্যের বিশেষণ।
৩. বিভিন্ন প্রকার বিশেষণের সংজ্ঞা উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর: নিচে বিভিন্ন প্রকার বিশেষণের সংজ্ঞা উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো:
ক. নাম বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ সাধারণত কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে, তাকেই বলা হয় নাম বিশেষণ। যেমন- সে সবুজ জামা পরেছে। অতি উত্তম কথা।
খ. বিশেষ্যের বিশেষণ: যে পদ বিশেষ্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ, ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে। যেমন – মেঘলা দিন, বুদ্ধিমান মানুষ, অসুস্থ লোক, অনেক মানুষ, ভালো ছাত্র-ছাত্রী।
গ. সর্বনোমর বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো সর্বনাম পদের গুণ, প্রকৃতি ইত্যাদি বোঝায় তাকে সর্বনোমর বিশেষণ বলে। যেমন – বোকা তুমি, তাই ওদের কথা বিশ্বাস করলে। মূর্খ তুই, এ কথা কী বুঝবি।
ঘ. ভাব বিশেষণ: যে পদ সাধারণত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদ ভিন্ন অন্য কোনো পদকে বিশেষিত করে তাকেই ভাব বিশেষণ বলে।
ঙ. ক্রিয়ার বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ ক্রিয়ার গুণ, অবস্থা ইত্যাদি নির্ণয় করে তাকে ক্রিয়ার বিশেষণ বলে। অথবা আমরা বলতে পারি, যে পদ ক্রিয়া সংগঠনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে, তাই ক্রিয়া বিশেষণ। যেমন- সে তাড়াতাড়ি লেখে। মিনতি আস্তে আস্তে লেখে। বাতাস ধীরে বইছে। সে খুব তাড়াতাড়ি হাটল। পরে একবার এসো।
চ. বিশেষণের বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ অন্য বিশেষণ পদের গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। অথবা আমরা বলতে পারি, যে পদ নাম বিশেষণ কিংবা ক্রিয়া বিশেষণকে সম্পূর্ণ রূপে বিশেষিত করে, তখন তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমন- খুব গরম দুধ। নিতান্ত ভালো মানুষ। অতি বড়ো নিন্দুকেও একথা বলতে পারবে না। সামান্য একটু দুধ দাও, অতিশয় মন্দ কথা। রকেট অতি দ্রুত চলে।
ছ. অব্যয়ের বিশেষণ: কোনো পদ যখন কোনো অব্যয় পদের গুণ, অবস্থা, সংখ্যা প্রভৃতি উল্লেখ করে, তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। অথবা আমরা বলতে পারি, যে ভাব বিশেষণ অব্যয় পদ বা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষিত করে, তখন তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেম – ঠিক নীচে, শত ধিক্, ঠিক ওপরে দেখতে পাবে। ধিক্ তারে, শত ধিক নির্লজ্জ যে জন।
জ. বাক্যের বিশেষণ: কখনও কখনও কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করে, তখন তাকে বাক্যে বিশেষণ বলা হয়। যেমন- দুর্ভাগ্যক্রমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের খুবই প্রয়োজন।
ঝ. বিশেষণের অভিশায়ন: বিশেষণ পদ যখন দুইবা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। যেমন – যমুনা একটি দীর্ঘ নদী, পদ্মা দীর্ঘতর, কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে তুলনায় সূর্য বৃহত্তম, পৃথিবী চন্দ্রের চেয়ে বৃহত্তর এবং চন্দ্র পৃথিবী অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।
পাঠ থেকে বিশেষণ খুঁজি
“চিঠি বিলি ছড়া ও “সুখী মানুষ’ নাটক থেকে বিশেষণ শব্দ খুঁজে বের করে তার একটি তালিকা তৈরি করো: (মূল বইয়ের ২৬ নম্বর পৃষ্ঠা)
- ‘চিঠি বিলি’ থেকে পাওয়া: বুজে, জবর, ঝলসে, দারুণ।
- ‘সুখি মানুষ’ থেকে পাওয়া: উজার, কঠিন, বড়ো, ধনী, অত্যাচারী, পাপী, বাজে, মূর্খ, অমর, নিষ্ঠুর, শান্ত, ভালো, সুখী, পেটুক, পাগল, মস্ত, মিছে।
অনুচ্ছেদ লিখে বিশেষণ খুঁজি
কোনো একটি বিষয় নিয়ে ১০০ শব্দের মধ্যে একটি অনুচ্ছেদ লেখো। লেখা হয়ে গেলে বিশেষণ শব্দগুলোর নিচে দাগ দাও: (মূল বইয়ের ২৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
আমার ছোট বোনের নাম মীনা। সে খুব মেধাবী ছাত্রী। সে নিয়মিত পড়াশোনা করে, স্কুলে যায়। পরীক্ষায়ও সে ভালো ফলাফল করে। পড়াশোনার পাশাপাশি সে বাড়িতে অনেক কাজ করে। তার প্রিয় শখ ফুলের বাগান করা। বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত জমিতে সে সুন্দর একটি ফুলের বাগান তৈরি করেছে। তার ফুলের বাগানে রয়েছে- গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, বেলি আর গন্ধরাজ ফুল। সে নিয়মিত এই ফুলগাছগুলোর ভালো যত্ন নেয়। তার যত্নে ফুলগাছগুলো সজীব ও প্রাণবন্ত থাকে। শুধু ফুলের বাগানই না, সে আমাদের ঘরটাকে পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে। অগোছালো কোন কিছু তার পছন্দনীয় নয়। তাই সে ঘরে দেওয়াল থেকে শুরু করে আসবাবপত্র সবকিছু সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে। আমি এমন লক্ষ্মী একটি বোন পেয়ে অনেক গর্বিত।
আরো দেখো: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ নমুনা ৩ সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post