৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ নমুনা ৬ : তিশার দাদির কাছে একটা পুরাতন সিন্দুক আছে। সেই সিন্দুক সবসময়ে তালা দিয়ে আটকানো থাকে। সিন্দুকের চাবি গেছে হারিয়ে; তাই বহুদিন ধরে ওটা খোলা হয় না। তিশা ওর দাদিকে গিয়ে বলল, “দাদি, এই সিন্দুকের ভেতরে কী আছে?” দাদি অবাক চোখে তিশার দিকে তাকালেন। তারপর তিশাকে পাশে বসালেন। বললেন, “এর মধ্যে আমার শাশুড়ির, আমার, আর তোমার মার অনেক গয়না আছে। চাবি দিয়ে তালা খোলার পর সব দেখতে পাবে।” এই বলে তিনি বাজার থেকে চাবি বানানোর লোক আনালেন। তিশার জন্য সিন্দুক খোলা হলো।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ নমুনা ৬
কিছু শব্দ অন্য শব্দের পরে বসে বাক্যটিকে সম্পর্কিত করে। উপরের অনুচ্ছেদ থেকে এ ধরনের শব্দ খুঁজে বের করো এবং নিচের খালি জায়গায় লেখো: (মূল বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠা)
উত্তর: দিয়ে, দিকে, এই, থেকে, জন্য, পাশে, মধ্যে, পর।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখা শেষ হলে তোমার বন্ধুদের সাথে মিলিয়ে নাও। তাদের সাথে উত্তরের পার্থক্য হলে তা নিয়ে আলোচনা করো।
১. অনুসর্গ কাকে বলে?
উত্তর: ‘অনু’ অর্থ পশ্চাৎ বা পরে। ‘সর্গ’ অর্থ অবস্থান। ‘অনুসর্গ’ কথাটির অর্থ হল পশ্চাৎ বা পরে অবস্থান যার। বাংলা ভাষার যে সকল শব্দ বা অব্যয় বাক্যের মধ্যে অবস্থিত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের পরে আলাদাভাবে বসে শব্দ বিভক্তির কাজ করে তাদের অনুসর্গ বলে। এই পদগুলি বাক্যে বিভিন্ন পদের পরে স্বাধীন ভাবে অবস্থান করে। বাংলা ভাষায় অনেক অনুসর্গ রয়েছে। যেমন- দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক, হতে, হইতে, থেকে, চেয়ে, সঙ্গে, পক্ষে, পাছে, জন্যে, জন্য, পরে, মাঝে, নামে, পানে, তরে, সহকারে, বিহনে, ভিন্ন, ব্যতীত, ভিতর, ভেতর, প্রতি, বিনা, অপেক্ষা, সহ, ওপর, অবধি, হেতু, বই, পর্যন্ত, মতো, নিকট, অধিক, ইত্যাদি।
২. অনুসর্গ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর: অনুসর্গ কোন ধরনের পদের পরে বসে এই পদকে অন্যান্য পদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে, তার উপর ভিত্তি করে অনুসর্গকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায় যেমন-
বিশেষ্য অনুসর্গ: যে সকল অনুসর্গ শব্দের প্রথমে বসে অনুসর্গের বাক্যের পূর্ণতা প্রকাশ করে, তাকে বিশেষ্য অনুসর্গ বলে। যেমন-
(i) বই সহ বিদ্যালয় এসো।
(ii) আম দিয়ে আচার তৈরি করলাম।
এই দুটি উদাহরণের মধ্যে দিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ‘বই’ এবং ‘আম’ এই দুটি বিশেষ্য পদ। এবং ‘সহ’ এবং ‘দিয়ে’ এই দুটি অনুসর্গ দিয়ে বাক্যের পূর্ণতা প্রকাশ করেছে।
সর্বনাম অনুসর্গ: যে সকল অনুসর্গ সর্বনাম পদের পরে বসে এবং অন্যান্য পদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে এবং বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে সেই সকল অনুসর্গকে সর্বনাম অনুসর্গ বলে। যেমন –
(i) আমার চেয়ে সে বুদ্ধিমান ।
(ii) তার কাছে টাকা আছে।
অর্থাৎ, এই দুটি উদাহরণের মধ্যে ‘আমরা’ এবং ‘তার’ এই দুটি সর্বনাম পদ। ‘চেয়ে’ এবং ‘টাকা’ এই দুটি অনুসর্গ দিয়ে বাক্যের পূর্ণতা প্রকাশ করেছে।
বিশেষণ অনুসর্গ: যে সকল অনুসর্গ বিশেষণ অনুসর্গের পদের পরে বসে এবং অন্যান্য পদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে এবং বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে সেই সকল অনুসর্গকে বিশেষণ অনুসর্গ বলে। যেমন
(i) মন্দের চেয়ে একটু ভালো।
(ii) খারাপের মধ্যে খারাপ।
এখানে, বাক্যের দোষ এবং গুণের আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘মন্দ’ এবং ‘খারাপ’। তাই এই দুটি বিশেষণ পদ। এবং ‘চেয়ে’ এবং ‘মধ্যে’ এই দুটি অনুসর্গ দিয়ে বাক্যের পূর্ণতা প্রকাশ করেছে।
৩. অনুসর্গের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তর: নিচে অনুসর্গের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:
১. অনুসর্গ অব্যয় পদ এবং এগুলোর নিজস্ব অর্থ আছে।
২. অনুসর্গ শব্দের পরে বসে সংশ্লিষ্ট শব্দের সঙ্গে পরবর্তী শব্দের অর্থবোধক সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
৩. বিভক্তি দিয়ে যেমন কারক চেনা যায়, তেমনই অনুসর্গ দিয়েও কারক চেনা যায়।
৪. অব্যয়গুলোর নিজস্ব অর্থ থাকায় সেগুলো পৃথকভাবে ব্যবহৃত হলে অনুসর্গ হয় না।
৫. অনুসর্গের পূর্ব পদটি বিশেষ্য হলে সেটি বিভক্তিযুক্ত হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। কিন্তু সর্বনাম হলে অবশ্যই বিভক্তিযুক্ত হবে।
৬. অনুসর্গ বিভক্তির মতো কাজ করে।
৭. কতকগুলো অনুসর্গ শব্দ-বিভক্তির মতো কারক নির্ণয়ে সাহায্য করে। এগুলো : হইতে, হতে, চেয়ে, দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক ইত্যাদি।
৮. ক্ষেত্রবিশেষে অনুসর্গের ব্যবহার সাধু ও চলিত ভাষায় ভিন্ন হতে পারে।
৪. অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: বাক্য গঠনে অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিচে অনুসর্গের প্রয়োজনীয় দিকগুলো তুলে ধরা হলো:
- অনুসর্গ নির্দেশ করে বাক্যের অর্থগত শৃঙ্খলা।
- অনুসর্গগুলো বাংলা ভাষায় বিভক্তির কাজ করে।
- অনুসর্গগুলো বাক্য গঠনে সহায়তা করে।
- পাশাপাশি পদসমূহের অন্বয় সাধনে অনুসর্গের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
- অনুসর্গ ছাড়া কারকের অর্থ প্রকাশ পায় না।
- অভাব, তুলনা ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করার জন্য অনুসর্গের প্রয়োজন।
পাঠ থেকে অনুসর্গ খুঁজি
“চিঠি বিলি ছড়া ও “সুখী মানুষ’ নাটক থেকে অনুসর্গ শব্দ খুঁজে বের করে তার একটি তালিকা তৈরি করো: (মূল বইয়ের ৩৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
- ‘চিঠি বিলি’ থেকে পাওয়া: ধরে।
- ‘সুখি মানুষ’ থেকে পাওয়া: দিয়ে, মধ্যে, লেগে, মতো, থেকে, আছে, সামনে, জন্য।
অনুচ্ছেদ লিখে অনুসর্গ খুঁজি
কোনো একটি বিষয় নিয়ে ১০০ শব্দের মধ্যে একটি অনুচ্ছেদ লেখো। লেখা হয়ে গেলে অনুসর্গ শব্দগুলোর নিচে দাগ দাও: (মূল বইয়ের ৩৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
সত্যকে কখনও মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। কারণ, মিথ্যার চেয়ে সত্যের শক্তি অনেক বেশি। যে ব্যক্তি সদা সত্যি কথা বলেন, তাঁকে সবাই ভালোবাসে। তার পক্ষে সকলের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন অনেক সহজ হয়ে যায়। অপরদিকে সত্যবাদী অপেক্ষা মিথ্যাবাদি অন্যদের কাছে কম গ্রহণযোগ্য। তার সকল কাজের ওপর মানুষ সন্দেহ করে। তাকে কেউ বিশ্বাস করে না। সত্যবাদী ব্যক্তির ভিতরে আল্লাহর ভয় থাকে। ফলে তিনি কখনোই খারাপ কাজ করতে পারেন না। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদী ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করেন না, তিনি তার হীন স্বার্থের জন্যে খারাপ কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। আমরা সর্বদা সত্যি কথা বলব, যথাসম্ভব মিথ্যা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করব। এতে আমরা ইহকালে মানুষের কাছে পছন্দীয় হব এবং পরকালেও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারব।
আরো দেখো: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ নমুনা ৬ সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post