৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ : বিবরণমূলক লেখা বোঝাতে ব্যক্তি, বস্তু, ছবি, চিত্র, দৃশ্য ইত্যাদির সাধারণ বিবরণ ব্যবহৃত হয়। বিবরণমূলক লেখার কোনো নির্দিষ্ট নিয়মও নেই। এটি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেও বর্ণিত হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনাটি মূলত জীবনের বিশেষ এক মুহূর্তের অভিজ্ঞতা থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নয়াচীনের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিষয় বর্ণনার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো। (বাংলা মূলবই পৃষ্ঠা : ৬৯)
উত্তর:
লেখক চানের মিউজিয়ামে পৌঁছে অনেক নিদর্শন বন্ধু দেখেছেন, তবে পুরনো কালের স্মৃতি উল্লেখযোগ্য। তারপর সাংহাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো পাবলিক লাইব্রেরিতে গেলেন। খুব পুরনো এই লাইব্রেরিতে সব বয়সী লোকদের পড়ার ব্যবস্থা আছে। পাশে রয়েছে একটি মাঠ, সেখানে বসা ও পড়াশোনা করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে লেখক অ্যাকজিবিশন দেখতে যান। নতুন জীনের নতুন জিনিসপত্র দেখে হোটেলে ফিরে আসেন।
এক ঘণ্টা পর লেখক গেলেন নদী দেখতে, তারপর ছেলেদের খেলার মাঠে গিয়ে দেখেন ছাত্র-শিক্ষকরা সেখানে আছে। সেখানে লেখক অভ্যর্থনা গ্রহণ করে বিদায় নিয়ে বড়ো বাজার দেখতে যান, সেখানকার এক সাইকেলের দোকানে গিয়ে দেখেন চীনের তৈরি জিনিসের দাম বেশি এবং বিদেশি জিনিসের নাম কম। জানতে পারলেন এখানকার লোকেরা তাদের দেশীয় পণ্য ক্রয় করে নাম বেশি নিয়েও। সেখানে নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম বাড়ার সুযোগ নেই। সেখানকার সরকার ও জনগণ খুবই সচেতন।
বিবরণ লিখি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের বাইরে যাও। চারপাশ ভালো করে দেখো। লেখার জন্য এর মধ্য থেকে কোনো একটি বিষয় বাছাই করো। বিষয় হতে পারে গাছপালা, রাস্তা, নদী, মানুষ, প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য যেকোনো কিছু। এমনকি এ সময়ে দেখা কোনো ঘটনাও লেখার বিষয় হতে পারে। বাছাই করা বিষয়ের উপর ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণ লেখো।
পশু বা পাখি বিষয়ে ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো। (বাংলা মূলবই পৃষ্ঠা : ৭০)
উত্তর: বাংলাদেশের জাতীয় পাখির নাম ‘দোয়েল’। এটি অতি সাধারণ পাখি। পুরুষ দোয়েল পাখিটি খুবই পরিপাটি এবং সাদা-কালো রঙের হয়। এ পাখির লো সর্বদা উঁচু অবস্থায় থাকে।
কিন্তু দোয়েল পাখি গান করার সময়ে লেজটি ঝুলে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী দোয়েলের স্বভাব ভিন্ন প্রকৃতির হয়। পুরুষ দোয়েল পাখি বছরের অধিকাংশ সময় ঝোপঝাড়ের মধ্যে অবস্থান করে, শিস দেয় আর গান করে। এ পাখির গানের সুর খুবই মিষ্টি। তাই দোয়েল পাখির গান শুনলে আমাদের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আর এজন্য দোয়েল পাখিকে গানের পাখি বলা হয়। দোয়েল পাখির প্রধান খাদ্য হলো ‘কাটপতঙ্গ।
কিন্তু এ পাখি পাকা ফল এবং শিমুল ও মাদার ফুলের মধুও মাঝেমধ্যে খায়। দোয়েল পাখি অগভীর জঙ্গলে একাকী কিংবা যুগল বাস করে। মানুষের কাছাকাছিই দোয়েল পাখি দেখা যায়। স্ত্রী দোয়েল পাখি বছরের যেকোনো একটি সময়ে তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। এ ডিমের রং হালকা সবুজ এবং এতে লালচে বাদামি রঙের ছোপ দেখা যায়। এ পাখির মাধ্যমে আমাদের জাতীয় পরিচয় মেলে।
রাস্তা বিষয়ে ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো। (বাংলা মূলবই পৃষ্ঠা : ৭০)
উত্তর: ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে যশোর রোড অন্যতম ঐতিহাসিক একটি আন্তর্জাতিক সড়কপথ। এই সড়কপথটি কলকাতার শ্যামবাজার থেকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী যশোর জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য ১২৮ কিলোমিটার। যশোর রোড ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোরের সাথে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগের জন্য ব্রিটিশ সরকার নির্মাণ করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিমানবাহিনী আপানি আগ্রাসন রুখতে যশোর বিমানবন্দর নির্মাণ করে। এতে যশোর রোডের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রাস্তা দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। সেই সময় মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ নামে বিখ্যাত কবিতা রচনা করেন।
এই পথে ভারতে পাড়ি জমানো শরণার্থীদের করুণ অবস্থার কথা তিনি কবিতায় তুলে ধরেন। বর্তমানে যশোর রোড ভারতের দমদ থেকে বাংলাদেশের যশোর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সড়কের দুই পাশে অবস্থিত দৃশ্যনন্দন গাছগুলোর বয়স ১৭৪ বছর। সর্বোপরি বাংলাদেশের। ইতিহাসে যশোর রোড একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মহাসড়ক।
কাজ-৪ : নিচের ছবি দেখে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো। (বাংলা মূলবই পৃষ্ঠা : ৭০)
উত্তর:
চিত্র: বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা একটি সুপরিকল্পিত ধারণার রূপায়ণ। আয়তাকার এই পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০: ৬। জমিনের গাড় সবুজ বর্ণের মধ্যে একটি লাল বৃত্ত অঙ্কিত। লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ পতাকাটির দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ। পতাকার দৈর্ঘ্যের ডান দিক থেকে পাঁচ ইউনিট এবং বাম দিক থেকে চার ইউনিট রেখে একটি লম্ব টানতে হবে।
প্রস্থকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে একটি সমান্তরাল সরলরেখা টানলে উভয়ঃ রেখা যেখানে একটি অন্যটিকে ছেদ করে সেখানে বৃত্তটির কেন্দ্রবিন্দু হবে। জাতীয় পাতাকা অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন জাতীয় সম্পদ। দেশে- বিদেশে আমাদের জাতীয় মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে সগৌরবে ঘোষণা করে এই পতাকা।
তাই যেখানে সেখানে যখন তখন এই পতাকা ব্যবহার করা যায় না। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস এবং অন্য কোনো দিন সরকার বিজ্ঞপ্তি দিলে বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ওড়াতে হয়য়। শহিদ দিবস ও শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধ নমিত রাখতে হয়।
রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, আইন পরিষদের স্পিকার, মন্ত্রী, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাস প্রধান ব্যক্তিবর্গের সরকারি বাসভবনে জাতীয় পতাকা সমুন্নত থাকে। তাঁরা যানবাহনে জাতীয় পতাকা উড্ডীন রাখতে পারেন। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা থাকে।
গাছপালা নিয়ে একটি বিরমূলক লেখা লেখো। (বাংলা মূলবই পৃষ্ঠা : ৭০)
উত্তর: আমরা পৃথিবীতে বাস করি। সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীকে সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন। অপরূপ সৌন্দরে্যর প্রধান উপকরণ গাছপালা। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। প্রতিনিয়ত সে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমগ্র প্রাণিকূলকে সেবা দিয়ে চলছে। গাছ থেকে আমরা বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি অক্সিজেন পাই। আমাদের দেহ থেকে নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে যাওয়া বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গাছ গ্রহণ করে।
গাছ থেকে আমরা সমস্ত খাবারের জোগান পেয়ে থাকি। ধান, চাল, ডাল, গম, ফুল, ফল, সবজি অর্থাৎ আমাদের চারপাশে দেখা-অদেখা সকল খাদ্যই কোনো না কোনোভাবে গাছ থেকেই সংগৃহীত হয়। ঘরবাড়ির নানা আসবাবপত্র কাঠের তৈরি। কাঠ ছাড়া আধুনিক সভ্যতা অচল। নানা অণুজীবের সংক্রমণে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর প্রতিকারের মূল ওষুধ এই গাছপালা থেকেই আসে।
মাটির ক্ষয়রোধ, প্রাকৃতিক ঝড় প্রতিরোধ, নদীর ভাঙন রোধ, বৈশ্বায়িক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সূর্যের তীব্র তাপ প্রতিরোধ প্রভৃতি কারণে গাছ মানব সভ্যতার পরম হিতৈষী।
গাছপালার অভাবে ভূখ- ধীরে ধীরে মরুভূমিতে রূপান্তরিত হতে পারে। এজন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলেছেন মোট ভূমির ২৫% বনভূমি থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ১৬%। এটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এজন্যই বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পরিবর্তন দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, খরা, তীব্র শীত, বন্যা, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
গাছ লাগাতে হবে। সবাইকে সচেতন করে বৃক্ষরোপণ আন্দোলনকে জাতীয় রূপ দিয়ে এই পৃথিবীকে আনন্দময় বসবাসযোগ্যরূপে গড়ে তুলতে হবে। গাছপালা মানবজাতির অন্তহীন প্রশান্তির মূল উপকরণ। গাছপালা অবারিত শ্যামল ছায়া বিস্তার করে আমাদেরকে স্বর্গের কাছাকাছি রেখেছে। আমরা গাছপালার প্রতি যতœশীল হই, গাছ লাগাই, পৃথিবীকে সুশীতল রাখি।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন একজন বিখ্যাত মানুষ তাঁকে নিয়ে বিবরণমূলক একটি লেখা লেখো। (বাংলা মূলবই পৃষ্ঠা : ৭০)
উত্তর:
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন
জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম তমিজউদ্দিন আহমদ। তার মায়ের নাম জয়নাবুন্নেছা। তার নয় ভাই-বোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়ো। ছোটোবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন।
পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জয়নুল আবেদিন। জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণ কক্ষে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়। তিনি এটির প্রথম শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর একই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’। তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জয়নুল আবেদিনের প্রচেষ্টায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা হয়।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ছবি চিত্রমালার জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তার চিত্রকর্মের মধ্যে অন্যতম ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা। তার দীর্ঘ দুটি স্কুল ১৯৬৯-এ অঙ্কিত ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭৪-এ অঙ্কিত ‘মনপুরা ৭০ জননন্দিত দুটি শিল্পকর্ম। অনুমান করা হয় তার চিত্রকর্ম তিন হাজারেরও বেশি।
চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি ‘শিল্পাচার্য’ অভিধা লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রদের তরফ থেকে ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান লাভ করেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে চিত্র প্রদর্শনীতে তিনি নিখিল ভারত স্বর্ণপদক লাভ করেন। জয়নুল আবেদিন ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরো দেখো: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post