৭ম অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : বাংলায় মুঘল শিল্পকলার বিস্তারের ক্ষেত্রে শায়েস্তা খানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঢাকার লালবাগের কেল্লা তার স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে ইব্রাহিম খানের শাসনকালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। লালবাগ দুর্গের ভেতরে রয়েছে শায়েস্তা খানের কন্যা বিবি পরীর সমাধি সৌধ।
৭ম অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : বার্ষিক পরীক্ষা শেষে সজীব বগুড়া বেড়াতে যায়। সেখানে সে সোনালি রঙের গিলটির কারুকার্যখচিত একটি মসজিদ ঘুরে দেখে। এর স্থাপত্য ও নির্মাণ কৌশল তাকে মুগ্ধ করে।
ক. বড় সোনা মসজিদের আরেক নাম কী?
খ. কৌলীন্য প্রথা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত স্থাপত্যশিল্পের বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের স্থানের মতো আরও অনেক মুসলিম শাসনামলের স্থাপত্যকর্ম রয়েছে— কথাটি সঠিক কি না পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : বাহাউদ্দিন গ্রাম্য মঞ্চে অনুষ্ঠিত মধ্য যুগের মুসলিম সমাজের আচার-অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে রচিত একটি প্রামাণ্য অনুষ্ঠান দেখছেন। এতে তিনি দেখতে পান, মুসলমানগণ একটি ঈদের জামাতে ঈদগাহে সবাই শামিল হয়েছে। নামাজ শেষে তারা একে অপরের মধ্যে কোলাকুলি করছে।
ক. মধ্যযুগে মুসলমানদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
খ. মধ্যযুগে মুসলমানদের পোশাক কেমন ছিল?
গ. বাহাউদ্দিনের দেখা অনুষ্ঠানটি মধ্যযুগে মুসলিম সমাজের কোন দিকের ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমাজ ব্যবস্থার শ্রেণিবিভাজন বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : রফিক ও শফিক দুই বন্ধু। রফিক বলল, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। শফিক বলল, শুধু কৃষিতেই নয়, বাংলাদেশ পোশাক শিল্পেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে বেগবান করেছে।
ক. খলজি মালিকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কে?
খ. নবাবি আমল বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে রফিকের কথায় মধ্যযুগের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের পোশাক শিল্প যেন মধ্যযুগেরই প্রতিচ্ছবি – উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : গ্রীষ্মের ছুটিতে মহিব তার মামার বাড়িতে বেড়াতে যায়। তার মামা ইছাপুর গ্রামের একজন সমৃদ্ধশালী ব্যবসায়ী। মামা মহিবের জন্য মাছের কাবাব, মুরগির রেজালা, ডিমের কোর্মাসহ বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরি করেন। বিকালে গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে মহিবের চোখে পড়ে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের জীবন সংগ্রাম ও দুর্দশা। বিষয়টি মহিবকে ব্যথিত করে।
ক. কোন শাসনামলে বাংলায় পাট ও রেশমের চাষ শুরু হয়?
খ. মধ্যযুগে কৃষককে সেচের পানির জন্য বৃষ্টির ওপর নির্ভর করতে হতো কেন?
গ. মধ্যযুগের সমাজ ব্যবস্থার মানদণ্ডে মহিবের মামার অবস্থান ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উদ্দীপকে মধ্যযুগের বাংলার অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছে? মূল্যায়ন করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : বাঙালি জাতির সংস্কৃতির ধারাকে এক অভিনবত্বে এনে দিয়েছিল ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বরে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা। এ বছর বাংলা একাডেমির ৬০ বছরপূর্তি উৎসব পালন করা হয়। এ উৎসবে সাহিত্য বিষয়ক আলোচনায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার বলেন যে, বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগে শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক সাহিত্য রচিত হয়, যা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়া স্যার বলেন যে, এ যুগের কবিরাও সাহিত্যের বিকাশে অনবদ্য অবদান রেখেছেন।
ক. মধ্যযুগে বাংলায় ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের নিকট কোন জল ছিল অত্যন্ত পবিত্র?
খ. ‘মধ্যযুগে বাংলায় ধর্মপ্রীতি মুসলমান সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল’ – বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোন বিষয়ের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত সময়ে শিক্ষার ক্ষেত্র বিকশিত হয়েছিল— মতামত দাও।
এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো
মধ্যযুগে বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন : মধ্যযুগে বাংলার সমাজ ব্যবস্থায় হিন্দু ও মুসলমান এ দুটো ধর্মের প্রভাব বিদ্যমান ছিল। বস্তুত এ দুটো ধর্মকে কেন্দ্র করেই মধ্যযুগে বাংলার সামাজিক রীতি-নীতি গড়ে উঠেছিল-
মুসলমান সমাজ : মধ্যযুগে বাংলায় মুসলমান শাসনকালে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা হিসেবে শাসক ছিলেন সমাজজীবনে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। হিন্দুরাও শাসকের এ অপ্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক মর্যাদা ও প্রাধান্য মেনে নিয়েছিল। মুসলমান সমাজ ব্যবস্থায় তখন উচ্চ, মধ্যম, ও নিম্ন-এ তিনটি পৃথক শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল। সৈয়দ, উলেমা প্রমুখ শ্রেণি সমাজে যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন। ধর্মপরায়ণ ও শিক্ষিত ব্যক্তিগণকে জনগণ যথেষ্ট শ্রদ্ধা করত। মুসলমান শাসকগণও তাদেরকে বিশেষ শ্রদ্ধা করতেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে ভাতা এবং জমি বরাদ্দ করা হতো।
হিন্দু সমাজ : মধ্যযুগে বাংলার মুসলমানদের প্রভাব, রীতিনীতি ও ভাবধারা হিন্দু সমাজে অনুপ্রবেশ করেছিল। তথাপি হিন্দু সমাজের মূল নীতিগুলো এবং সাধারণের সমাজব্যবস্থায় তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। এ যুগেও হিন্দু সমাজে জাতিভেদ প্রথা প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন পেশাকে ভিত্তি করেই এ প্রথার সৃষ্টি। ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈশ্য ও শূদ্র-সমাজে এ চারটি উল্লেখযোগ্য বর্ণ ছিল। এ চারটি বর্ণের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা ছিল না। বর্ণপ্রথা কঠোরভাবে পালিত হতো। ফলে এক বর্ণের সহিত অন্য বর্ণের বিবাহ বা আদান-প্রদান নিষিদ্ধ ছিল।
মধ্যযুগে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্য : নদীমাতৃক বাংলার ভূমি চিরদিনই প্রকৃতির অকৃপণ আশীর্বাদে পরিপুষ্ট। এখানকার কৃষিভূমি অস্বাভাবিক উর্বর ছিল। এ কারণে বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল উৎস ছিল কৃষি। কৃষি প্রধান দেশ বলে বাংলার অধিবাসীর বৃহত্তর অংশ ছিল কৃষক। বাংলার মাটিতে কৃষিজাত দ্রব্যের প্রাচুর্য ছিল। ফলে উদ্বৃত্ত বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হতো। এ ব্যবসায়িক তৎপরতা কালক্রমে শিল্পের ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়। মুসলমান শাসনকালে বঙ্গে বস্ত্র শিল্প, চিনি শিল্প, নৌকা নির্মাণ কারখানা ইত্যাদি গড়ে উঠেছিল।
বাংলার কৃষি ও শিল্প পণ্যের প্রাচুর্য এবং বিদেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদার ফলে বিদেশের সাথে বাংলার বাণিজ্যিক তৎপরতা মুসলমান শাসন আমলে অভূতপূর্ব প্রসার লাভ করেছিল।
স্থাপত্য ও চিত্রকলা : মুসলমান শাসকগণ ইসলামের গৌরবকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং নিজেদের রাজ্য জয় ও শাসনকালকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে অনেক প্রাসাদ, মসজিদ, কবর, দরগাহ ইত্যাদি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদ নির্মাণকে মুসলমান শাসকগণ অতিশয় পূণ্যের কাজ বলে বিবেচনা করতেন। সুলতানি আমলের নির্মাণ কার্যের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে এখনও অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
মধ্যযুগে বাংলার ধর্মীয় অবস্থা : বর্তমানকালের মতো সে যুগেও হিন্দুরা বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি-নীতি ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। আড়ম্বর ও জাঁকজমকের সাথে হিন্দুরা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করত। এদের মধ্যে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, শিব, শিবলিঙ্গ, চন্ডী, মনসা, বিষ্ণু, কৃষ্ণ, সূর্য, মদন, নারায়ণ, ব্রহ্ম, অগ্নি, শীতলা, ষষ্ঠী, গঙ্গা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মুসলমানরা বর্তমান সময়ের মতোই মধ্যযুগেও বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি-নীতি ও আচার অনুষ্ঠান পালন করত। ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা মুসলমান সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হতো। ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রই পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখত। এছাড়াও শব-ই-বরাত ও শব-ই-কদরের রাতে ইবাদত বন্দেগি করত। এ যুগে ধর্মপ্রীতি মুসলমান সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। এছাড়া তারা নিয়মিত কুরআন ও হাদিস পাঠ করতেন। সমাজে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হতো।
মধ্যযুগে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ও উন্নতির জন্য সুলতানি ও মুঘল শাসনকালের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে প্রথমেই যার নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন তিনি হলেন ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ (১৩৯৩-১৪১১ খ্রিষ্টাব্দ)।
বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক সাহিত্য রচনার পথ প্রদর্শক হিসেবে মুসলমানদের অবদান অবিস্মরণীয়। ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক মুসলমান কবি এ সময় বিজয় কাব্য রচনা করেছেন।
সুলতানি যুগে হিন্দু কবিরাও সাহিত্য ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখে গেছেন। এক্ষেত্রে মুসলমান শাসকবর্গের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা হিন্দুদিগকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ও বিকাশ হুসেন শাহের শাসনকালকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। তার উদার পৃষ্ঠপোষকতা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি সাধন করেছে। এ যুগের বিখ্যাত কবি ও লেখকগণের মধ্যে রূপ গোস্বামী, সনাতন গোস্বামী, মালাধর বসু, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস ও যশোরাজ খান উল্লেখযোগ্য ছিলেন।
মধ্যযুগের বাংলায় শিক্ষা ব্যবস্থা : বাংলার মুসলমান শাসন কেবল রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। মুসলমান শাসনের পূর্বে বাংলার হিন্দু সমাজে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া অধিকার ছিল। মুসলমানদের শাসন-ব্যবস্থায় মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু সমাজের সকল শ্রেণির জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়।
SSC শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post