৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় : হাচ্চার কথা শুনে সবাই হাসতে লাগল! খুশি আপাও হাসিতে যোগ দিলেন। তারপর বললেন, বাহ্, আমরা তো দেশ-বিদেশের অনেক সামাজিক নিয়মের কথাই জানি! এবার চলো, এগুলো নিয়ে একটা মজার কাজ করি।
প্রত্যেকে নিচের ছকটা ব্যবহার করে আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে তারা কোন কোন সামাজিক নিয়ম মেনে চলে তার একটি তালিকা তৈরি করি। এসব নিয়ম-কানুন তারা কোথা থেকে জানতে পেরেছেন? নিয়ম না মানলে কী হতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তরও জেনে নিই।
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়
ছকটিতে উদাহরণ হিসেবে একটি সামাজিক নিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা যতগুলো খুঁজে পাবে সবগুলো এই তালিকায় যোগ করব আর প্রশ্ন করে উত্তরও জেনে নেব। আমরা আরও বেশি ঘর এঁকে যতগুলো সম্ভব সামাজিক নিয়ম এই তালিকায় যুক্ত করব।
আমরা যেসব সামাজিক নিয়ম মেনে চলি সেগুলো নিচের ছকে লিখি: (মূল বইয়ের ৮৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
সামজিক নিয়মের তালিকা:
১. বড়দের শ্রদ্ধা করা
২. বয়োঃজ্যেষ্ঠদের সালাম দেওয়া।
৩. ছোটদের স্নেহ করা।
৪. অসহায়দের সাহায্য করা
নিয়ম পালনের কথা কে বলে দিয়েছে?/কোথা থেকে জেনেছেন?
১. বাবা-মা, বয়স্ক আত্মীয়-স্বজন
২. বাবা-মা, বয়স্ক আত্মীয়-স্বজন, ধর্মীয় শিক্ষক।
৩. বাবা-মা, বয়স্ক আত্মীয়-স্বজন, শ্রেণি শিক্ষক।
৪. বাবা-মা, শ্রেণি শিক্ষক।
এই নিয়ম পালন না করলে কী হতে পারে?
১. সবাই অপছন্দ করবে। অভদ্র বলবে।
২. সবাই অপছন্দ করবে। অভদ্র বলবে।
৩. সবাই অপছন্দ করবে।
৪. সবাই অপছন্দ করবে, নিষ্ঠুর ভাববে।
কয়েক দিন পর শ্রেণিকক্ষে সবাই অনেকগুলো সামাজিক নিয়মের তালিকা নিয়ে হাজির হলো। খুশি আপা বললেন, অসাধারণ কাজ করেছ তোমরা! সবার উপস্থাপন শেষে বোঝা গেল:
- অধিকাংশ মানুষ সামাজিক নিয়ম-কানুনগুলো জেনেছে তাদের পরিবার, পাড়া-পড়শি এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে।
- সবাই জানে, এসব নিয়ম-কানুন মেনে না চললে আইন কোনো শাস্তি দেয় না। কিন্তু সমাজের অধিকাংশ মানুষ এসব নিয়ম-না-মানা মানুষদের অপছন্দ করে।
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সমাধান
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সমাধান
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম শ্রেণি ৫ম অধ্যায়
সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতিনীতি class 7
সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতিনীতি class 7 সমাধান
সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতিনীতির মধ্যে পার্থক্য
সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতিনীতি বলতে কি বুঝ
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়
ওপরের ছকটি ব্যবহার করে আমরা আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর দেই। যাদের কাছে জিজ্ঞেস করে আমরা তালিকাটি তৈরি করেছি, তাদেরকে এই প্রশ্নগুলো করে উত্তর জেনে নিই: (মূল বইয়ের ৮৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. তারা নিজেরা এসব নিয়ম-কানুনের বিষয়ে কী মনে করেন?
উত্তর: তারা নিজেরা এসব নিয়ম-কানুন মেনে চলেন এবং অন্যদেরও মেনে চলার পরামর্শ দেন। তারা মনে করেন, এসব নিয়ম-কানুন মেনে চললে সমাজে শৃঙ্খলা বজায় থাকে, সবার মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকে।
২. তারা কোথা থেকে নিয়মগুলো পেয়েছেন?
উত্তর: তারা তাদের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে এ নিয়মগুলো পেয়েছেন।
৩. এসব নিয়ম না মানলে কী হয়?
উত্তর: এ নিয়মগুলো মেনে না চললে প্রচলিত কোন শাস্তির বিধান নেই। তবে সমাজের অধিকাংশ মানুষই এসব নিয়ম-কানুন না মানা মানুষদের অপছন্দ করেন।
সামাজিক রীতি-নীতির বৈশিষ্ট্য
১. সামাজিকভাবে তৈরি হয়।
২. সামাজিক রীতি-নীতি সমাজের একটি অপরিহার্য অংশ।
৩. সামাজিক রীতি-নীতি ভালোও হতে পারে, মন্দও হতে পারে।
৪. একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন এলাকায়/দেশে আলাদা রকমের সামাজিক রীতি-নীতি হতে পারে।
৫. রীতি-নীতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু অলিখিত নিয়ম-কানুন।
৬. সমাজের অধিকাংশ মানুষ চেষ্টা করে সামাজিক রীতি-নীতি মেনে চলতে।
৭. সমাজে নির্দেশমূলক ও নিষেধমূলক এই দুই ধরনের রীতি-নীতি দেখা যায়। নির্দেশমূলক রীতি- নীতি মানুষকে কোনো কাজ করার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়। আর নিষেধমূলক রীতি-নীতি কোনো কেনো বিশেষ কাজ করেতে নিষেধ করে থাকে।
সমাজে সামাজিক রীতি-নীতির ভূমিকা
১. সমাজে মানুষের আচার ব্যবহার কেমন হবে তা ঠিক করে দেয়।
২. সমাজের যাতে সবকিছু ঠিকমতো কাজ করে তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করে।
৩. মানুষের সমাজ গড়ে তোলার যে মূল উদ্দেশ্য সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা, তা অর্জনে ভূমিকা রাখে। ৪. সবাই যদি সামাজিক রীতি-নীতি মেনে একই রকম আচার-ব্যবহার চর্চা করে, তাহলে সমাজের প্রতিদিন যে কাজগুলো হয় তা সুষ্ঠুভাবে হতে পারে।
৫. সমাজের মানুষের প্রতিদিনের কাজকর্ম যাতে কমবেশি একই রকম রুটিন অনুযায়ী চলে সে জন্য একটি সাধারণ মান ঠিক করে দেয়।
৬. সামাজিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ তৈরি করে।
৭. সামাজিক বিচারে সফলতার মানদণ্ড তৈরি করে মানুষের মাঝে সফলতার অনুভূতি তৈরি করতে সহায়তা করে।
মূল্যবোধ
পরদিন শ্রেণিকক্ষে এসে খুশি আপা বললেন, চলো আজ আমরা বই থেকে আরও কিছু ছবি দেখি। ক্লাসের সবাই মিলে নিচের ছবিগুলো দেখল। ছবি দেখা শেষ হলে খুশি আপা সবাইকে দলে বিভক্ত হয়ে ছবিগুলো থেকে কী বোঝা গেল তা আলোচনা করে দলগতভাবে উপস্থাপন করতে বললেন। সবাই তখন দলে বিভক্ত হয়ে নিচের ছক ব্যবহার করে তাদের চিন্তাগুলো সাজিয়ে সবার সামনে উপস্থাপন করল।
সবাই দলে বিভক্ত হয়ে নিচের ছক ব্যবহার করে চিন্তাগুলোকে সাজিয়ে সবার সামনে উপস্থাপন করি: (মূল বইয়ের ৮৯ নম্বর পৃষ্ঠা)
ছবির শিরোনাম:
১. চারপাশটা পরিচ্ছন্ন রাখি, সবাই মিলে ভালো থাকি।
২. পরিবারের সদস্যদের যত্ন রাখি, সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলি।
৩. রাস্তা পারাপারে অন্ধ ব্যক্তিদের সাহায্য করি, মানবিক সমাজ গড়ে তুলি।
৪. পশুদের যত্নে আন্তরিকত হই।
ছবি দেখে যা মনে হয়েছে:
১. সবাই মিলে সমাজের কাজগুলো করলে সবাই মিলে ভালো থাকা যায়।
২. পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তাকে সেবাশুশ্রুষা করতে হবে।
৩. সমাজে বসবাসকারী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি আমাদেরই একটা অংশ। তাই তাদের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
৪. পশুরাও ক্ষুদার্থ হয়। তাই তাদেরও খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে। আমরা এসব পশুদের খাবার দিয়ে সাহায্য করব।
সমাজস্বীকৃত ভালো কাজের নমুনা
এবার আমরা পরিবারে ও সমাজে ভালো কাজ হিসেবে মনে করা হয়- এমন কিছু কাজ চিহ্নিত করি এবং এসব ভালো কাজ করার পেছনে যে নীতিগুলো থাকে, সেগুলো খুঁজে বের করি: (মূল বইয়ের ৯০ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. বয়স্ক ব্যক্তিকে রাস্তা পার হতে সাহায্য করা। – পরোপকার
২. অন্যের মতামত মেনে নিতে না পারলেও শ্রদ্ধাসহ শোনা। – পরমতসহিষ্ণুতা
৩. অন্যের জিনিস অনুমতি ছাড়া না নেওয়া। – সততা
৪. বড়দের সম্মান করা এবং দেখা হলে সালাম দেওয়া। – আদব
৫. অন্য ধর্মের লোক হলেও বিপদে এগিয়ে আসা। – অসাম্প্রদায়িকতা
৬. অসহায়দের সাধ্যমত সাহায্য করা। – পরোপকার
৭. ছোটদের স্নেহ করা। – অমায়িকতা
৮. কেউ কারো প্রতি অবিচার করলে প্রতিবাদ জানানো। – ভ্রাভৃত্ববোধ
৯. রাস্তায় কোন অসুস্থ পশুকে দেখলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। – মমত্ববোধ
১০. সহপাঠীকে পড়া বুঝতে সাহায্য করা। – সহযোগিতাবোধ
এই মূল্যবোধগুলোর মাধ্যমে আমরা সমাজ কী গ্রহণ করবে ও করবে না সে সম্পর্কে জানাতে পারি। মূল্যবোধগুলো সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখে। সমাজ বিভিন্নভাবে মানুষকে এসব নীতির সাথে প্রতিনিয়ত পরিচিত করায়। নানা সমাজে গ্রহণযোগ্য মূল্যবোধগুলো আমরা সেখানকার প্রচলিত নানান কথা, ছড়া, প্রবাদ-প্রবচনে খুঁজে পাই। আফ্রিকার কিছু প্রবাদ শোনো-
আফ্রিকার প্রবাদ:
- যে নির্দেশ মানতে চায় না, সে নেতৃত্ব দিতেও পারে না।
- সংকটের সময় বুদ্ধিমানরা সীঁকো তৈরি করে আর বোকারা বানায় দেওয়াল।
- যদি দ্রুত যেতে চাও তাহলে একা হাঁটো, আর যদি দূরে যেতে চাও তাহলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে আগাও।
চীন দেশের কিছু প্রবাদ:
- যে ফুল উপহার দেয় তার হাতে কিছুটা সুগন্ধ লেগে থাকে।
- কাউকে একটা মাছ দেওয়ার মানে তুমি তাকে এক দিন খেতে দিলে, কাউকে মাছ ধরা শিখিয়ে দিলে তুমি তাকে সারা জীবন খাবার সুযোগ করে দিলে।
- তুমি যা করো তা যদি কাউকে জানতে দিতে না চাও, তাহলে সে কাজ কখন করো না।
আমাদের দেশেও এ রকম প্রবাদবাক্য আছে:
- দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।
- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
- সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়।
ওরা প্রবাদবাক্যগুলোর অর্থ এবং এর মধ্যকার মূল্যবোধ নিয়ে দলে আলোচনা করল। কোনোটায় পারস্পরিক সহযোগিতা, কোনোটায় সময়ানুবর্তিতার মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে। মিলি বলল, দারুণ মজার তো! আমরা যদি নানান দেশের প্রবাদবাক্যগুলো জানতে পারি, তাহলে সেই সমাজের মূল্যবোধগুলো সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে পারব।
বিভিন্ন দেশের প্রবাদবাক্যের অর্থ এবং এর মূল্যবোধ: (মূল বইয়ের ৯২ নম্বর পৃষ্ঠা)
প্রবাদবাক্য ও মূল্যবোধ:
- সংকটের সময় বুদ্ধিমানরা সাঁকো তৈরি করে আর বোকারা বানায় দেওয়াল। – পারস্পারিক সহযোগিতা
- তুমি যা করো তা যদি কাউকে জানতে দিতে না চাও, তবে সে কাজ কখনো করো না। – সততা
- দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ। – একাত্মতা
- যে নির্দেশ মানতে চায় না, সে নেতৃত্ব দিতেও পারে না। – অনুগত্য
- যদি দ্রুত যেতে চাও, তাহলে একা হাঁটো, আর যদি দূরে যেতে চাও, তাহলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে হাটো। – একতা
- যে ফুল উপহার দেয়, তার হাতে কিছুটা হলেও সুগন্ধ লেগে থাকে। – মহত্ততা, মহানুভবতা
- কাউকে একটা মাছ দেওয়ার মানে তুমি তাকে একদিন খেতে দিলে, কাউকে মাছ ধরা শিখিয়ে দিলে তুমি তাকে
- সারাজীবন খাবার সুযোগ করে দিলে। – উপকার
- সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। – সময়ানুবর্তিতা
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সবগুলো অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post