৭ম শ্রেণি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় : অরিত্র আজ প্রথম স্কুলে যাবে। মা ওকে সকাল থেকে তৈরি করছেন আর নানা রকম উপদেশ দিচ্ছেন। বলেছেন স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়ির বড়দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সালাম দিতে। অরিত্র দাদিকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করার পর দাদি ওকে বিশ টাকার একটা নোট দিলেন।
আর বললেন, দোয়া করি, অনেক বড় হও। তখনি টিকটিকিটা টিকটিক করে উঠল। দাদি তখনই বললেন, ঠিকঠিকঠিক আর আঙুল দিয়ে টেবিলে তিনবার টোকা দিলেন। দাদিও অরিত্রকে উপদেশ দিলেন, স্কুলে ভদ্র আর শান্ত হয়ে থাকবে। কারো সঙ্গে ঝগড়া-মারামারি করবে না।
৭ম শ্রেণি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়
টিফিনের কৌটা ব্যাগে ভরতে ভরতে মা বললেন, বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে খেয়ো। জিনিসপত্র ডান হাত দিয়ে দেওয়া-নেওয়া করবে। বাম হাত দিয়ে কাউকে কিছু দিয়ো না। এতসব নিয়ম-কানুনের কথা শুনে অরিত্রর একটু ভয় ভয় করতে লাগল। বাবার সঙ্গে বের হওয়ার আগে অরিত্র সবাইকে বিদায় জানাল। দরজা থেকে বের হওয়ার সময় বাবা বললেন, ডান পা আগে দাও।
স্কুলে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বাবাও ওকে যতটা সম্ভব উপদেশ দিলেন। অরিত্রর ভয়টা আরও বেড়ে গেল। স্কুলের গেট দিয়ে ঢোকার সময় দারোয়ার চাচা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। ওর তক্ষুনি স্কুলটাকে খুব আপন লাগতে শুরু করল।
খুশি আপা বললেন, চলো, আমরা খুঁজে দেখি এই গল্পের মধ্যে কী কী রীতি-নীতি আর কী কী মূল্যবোধ খুঁজে পাই।
আমরা খুঁজে দেখি এই গল্পের মধ্যে কী কী রীতি-নীতি আর কী কী মূল্যবোধ আছে: (মূল বইয়ের ৯৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
রীতি-নীতি:
- বড়দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা।
- টিকটিকি টিকটিক করে ওঠায় টেবিলে আঙুল দিয়ে তিনবার টোকা দেওয়া।
- জিনিসপত্র ডান হাত দিয়ে দেওয়া-নেওয়া করা।
- বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ডান পা আগে দেওয়া।
মূল্যবোধ:
- স্কুলে শিক্ষককে সালাম দেওয়া।
- স্কুলে ভদ্র ও শান্ত হয়ে থাকা।
- কারো সঙ্গে মারামারি না করা।
- বন্ধুদের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া।
ছায়া সংসদে ‘পথের প্রাণী’ বিষয়ক আইন
কয়েকজন সংসদ সদস্য মিলে আলোচনার ভিত্তিতে “বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ক্লাব যে-কোনো গৃহহীন প্রাণীকে সাহায্য করবে, এমনকি যদি কোনো মানুষ তার পোষা প্রাণীর ঠিকমতো যত্ন না নেয়, সেক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেবে” এই মর্মে আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করল।
এরপর বিরোধী দলের একজন সদস্য আইনের খসড়াটি সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করল। সরকারী ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করল। সবশেষে স্পিকার মৌখিক ভোটের আয়োজন করল। কণ্ঠভোটে “হ্যাঁ” জয়যুক্ত হলো। আইনটি লিখিতভাবে পেশ করা হলে রাষ্ট্রপতির তাতে স্বাক্ষর করল। এভাবে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ক্লাবের একটি আইন তৈরি হলো।
আইনটি প্রণীত হওয়ার পর পথের কুকুর-বিড়াল কিংবা খাঁচার পাখি– কাউকে নিয়ে কাজ করতেই ওদের আর কোনো বাধা থাকল না। তবে আইনে একটি শর্তও রয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বড়দের পরামর্শ নিতে হবে এবং সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এরপর ওরা দলগতভাবে নিচের ছক ব্যবহার করে সারা বছর কী কাজ করবে তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করল
দলগতভাবে নিচের ছকটি পূরণ করি: (মূল বইয়ের ১০১ নম্বর পৃষ্ঠা)
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ছকভিত্তিক উদ্দীপকটি পিডিএফ উত্তরমালায় দেখো। )
সরকারের বিভাগসমূহ
নীলা বলল, আমরা তো সরকার গঠন করলাম, আইনও তৈরি করলাম, কিন্তু আইন যদি কেউ না মানে তাহলে কী হবে? খুশি আপা বললেন, সরকার তিনটি বিভাগের মাধ্যমে কাজ করে। খুশি আপা ওদের একটা পোস্টার দেখালেন।
- আইন বিভাগ: আইন তৈরি ও সংশোধন করে। দেশের সারা বছরের আয়-ব্যায়ের হিসাব করে বাজেট তৈরি করে।
- শাসন বিভাগ: রাষ্ট্রের মধ্যে আইনকে প্রয়োগ করে। রাষ্ট্রের স্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগ করে।
- বিচার বিভাগ: কেউ আইন ভঙ্গ করলে তার বিচার করে।
খুশি আপা এবার ওদের আর একটা পোস্টার দেখালেন। জানতে চাইলেন, কী দেখতে পাচ্ছ? “সরকার যেমন একটা প্রতিষ্ঠান, সে আবার আলাদা আলাদা তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করে। “সরকার নিজেও আর একটা প্রতিষ্ঠানের অংশ। সেটি হলো রাষ্ট্র বা দেশ। ” রূপা বলল। খুশি আপা বললেন, দারুণ বলেছ! খুশি আপা তখন ওদের আরও কিছু ছবি দেখিয়ে বললেন, একটা রাষ্ট্র তৈরি হতে গেলে এই উপাদানগুলো লাগে৷
রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য
- একটা রাষ্ট্র হতে হলে সরকারের সঙ্গে নির্দষ্ট ভূ-খণ্ড, জনগণ আর সার্ব (বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা) |
- রাষ্ট্র তার সব ইচ্ছা বা কাজ সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে।
- সাধারণভাবে রাষ্ট্রকে কোথাও দেখা যায় না।
- কিন্তু কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডে, যখন অন্য যে কোনো রাষ্ট্র বা শক্তির নিয়ন্ত্রণহীনভাবে জনগণের ওপর আইন প্রয়োগ করে বা জনগণের কল্যাণ করার জন্য বিভিন্ন কাজ করে তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।
- রাষ্ট্র একটি ভূখণ্ডের জনগণের সবার ইচ্ছায় গড়ে তোলা একটি সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক জনগণ।
সালমা বলল, কিন্তু আপা, টেলিভিশনের সংসদ অধিবেশনে আমরা দেখেছি সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরা কথা বলেন। আমাদের ছায়া-সংসদে তো কোনো সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ছিল না! খুশি আপা পাল্টা প্রশ্ন করলেন, সংসদে যদি কোনো মেয়েই না থাকত তাহলে কেমন হতো?
ওরা সবাই বলল যে, ব্যাপারটা মোটেও ভালো হতো না। “কেন ভালো হতো না?” খুশি আপার প্রশ্ন! ওরা বলল, কেবল ছেলেরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে, মেয়েরা পাবে না, এটা অন্যায়। ছেলে-মেয়ে সবারই সবকিছুতে সমান অধিকার আছে ইত্যাদি। “আমার তো মনে হয়, মেয়েদের ভোট দেওয়ার অধিকারই থাকা উচিত না” খুশি আপা বললেন, ৷
খুশি আপার কথা ওরা কেউ মেনে নিতে পারল না। সবাই মিলে তর্ক জুড়ে দিল। খুশি আপা জোড় দিয়ে বললেন, মেয়েরা ঘর-সংসার সামলাবে, দেশ কীভাবে চলবে সেটা দেখা তাদের কাজ না, তারা এতটা মেধাবীও না। তাদের রাজনীতিতে আসা একেবারেই উচিত না। ওরা খুশি আপার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল!
কীভাবে সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তিত হয়
কীভাবে সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তিত হয় আলোচনা কর
কীভাবে সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তিত হয় class 7
কীভাবে সামাজিক রীতি-নীতি পরিবর্তিত হয়?
সামাজিক রীতি-নীতি কীভাবে পরিবর্তন হলো, তার প্রক্রিয়াটি নিজের ভাষায় লেখো: (মূল বইয়ের ১০৮ নম্বর পৃষ্ঠা)
সমাজে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের ফলে উক্ত সমাজে বিভিন্ন প্রকার রীতিনীতি ও নিয়ম-কানুন সৃষ্টি হয়। এসব রীতিনীতি সমাজে বসবাসকারী সকলকে মেনে চলতে হয়। তবে একই রীতিনীতি যে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকবে, এমনটি নয়। সময়ের বিবর্তনে সমাজের স্বার্থেইঞ্জীসব রীতিনীতি পরিবর্তন হয়, কখনো কখনো সংস্কার হয়।
যেমন, আরব সমাজে কন্যাশিশুদের খুবই নীচু চোখে দেখা হত। কোনো কন্যাশিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হত। ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এই কু-প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাঁর একান্ত প্রষ্টোয় আরব সমাজ থেকে এই নির্মম প্রথা নির্মূল হয়ে যায়।
ভারতীয় হিন্দু সমাজে সতীদাহ নামে একটি কু-প্রথা চালু ছিল। এই প্রথা অনুযায়ী কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে তাকে তার স্বামীর সাথে একই চিতায় পুড়িয়ে হত্যা করা হত। রাজা রামমোহন রায় এর তীব্র বিরোধিতা করেন এবং তাঁর বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে একটা সময়ে ভারতীয় সমাজ থেকে এই রীতির সমাপ্তি ঘটে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের পক্ষে ছিলেন। তিনি তার নিজ পুত্রের সাথে এক বিধবা নারীর বিবাহ দিয়ে সমাজে বিধবা বিবাহের সূত্রপাত করেন।
আঠারো শতকের দিকে নারীদের পড়ালেখা ছিল গৃহকেন্দ্রিক। তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পেত না। তারা বাড়ি থেকে বের হওয়ার অনুমতিও পেত না। এটাই ছিল তৎকালীন সমাজের রীতি। কিন্তু বেগম রোকেয়া এ রীতির বিরোধিতা করেন। তিনি নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করেন। ফলশ্রুতিতে নারীরা শিক্ষার্জনের পথে আরো অগ্রগামী হয়।
ঠিক এভাবেই অসংখ্য মহাপুরুষ এবং সমাজ সংস্কারকগণ তাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সমাজ থেকে বাজে রীতিনীতির পরিবর্তন করেন। তাই বলা যায় যে, হঠাৎ করেই বা একক কোনো কারণে সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তন হয় না। কালের বিবর্তনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তন সাধিত হয়।
এ পর্যায়ে খুশি আপা বললেন, আচ্ছা চলো তাহলে আমরা এ বিষয়ে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করি। হর রে!! সবাই খুশি হয়ে উঠঠল। তারপর সবাই মিলে বির্তকের বিষয় ঠিক করল।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সবগুলো অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post