৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় : শুক্রবারের সকালবেলায় স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা হবে। কে কে যাবে তাই নিয়ে ক্লাসে আলাপ হচ্ছিল। প্রায় সবাই যেতে চায়। হঠাৎ সুমন কাগজ দিয়ে একটা মস্ত গৌফ বানিয়ে গম্ভীরভাবে বলল, আমি যেখানে খুশি যেতে পারি, কারোর অনুমতি লাগে না।
ওর ভাবভঙ্গি দেখে বন্ধুরা সব হেসেই কুটিপাটি! সুমন ধমক দিয়ে বলল, এত হাসির কী হলো? ধমক শুনে ওরা আরও জোরে হেসে উঠল। তবে সবাই স্বীকার করল, সুমনকে দারুণ মানিয়েছে! গণেশ বলল, এ রকম গৌফ লাগিয়ে সত্যি সত্যি বাবার মতো বড় হওয়া গেলে আমিও লাগাতাম।
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায়
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এখানে গোলরক্ষকের অবস্থান কোথায়? আনাই জবাব দিল, গোলরক্ষকের অবস্থান নিজেদের গোলপোস্টের সামনে। খুশি আপা বললেন, আর সেন্টার ফরোয়ার্ডের অবস্থান? হাচ্চা বলল, সেন্টার ফরোয়ার্ডের অবস্থান বিপক্ষ দলের গোলপোস্টের কাছে। খুশি আপা বললেন, চমৎকার! এবার বলো, ফুটবল খেলায় গোলরক্ষকের ভূমিকা কী? মামুন বলল, বিপক্ষ দলকে গোল দিতে বাধা দেওয়া।
“বাহ্! সেন্টার ফরোয়ার্ডের ভূমিকা কী, বলো তো?” খুশি আপা আবার প্রশ্ন করলেন। মাহবুব বলল, গোল দেওয়া। এবারে খুশি আপা বললেন, যদি এমন হয়, খেলার সময় এরা যার যার অবস্থানে থাকল ঠিকই, কিন্তু হঠাৎ গোলরক্ষকের মনে হলো, “আর কত গোল ঠেকাব! এবার বরং একটা গোল দিই। ” অন্যদিকে সেন্টার ফরোয়ার্ডের মনে হলো, “সারা জীবন কি কেবল গোলই করে যাব! এবার বরং দএকটা গোল ঠেকাই। ” তারা তখন নিজেদের ভূমিকা বদলে ফেলল, তাহলে কেমন হবে? তিনি বোর্ডে একটা ছক আকলেন।
অদল-বদল
আমরা নিচের ছকটি পূরণ করে বুঝে নিই, ছেলে হিসেবে সুশীল-সবল কেমন ছিল আর বাবা হিসেবে তারা কেমন ছিল: (মূল বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
সুশীলচন্দ্র যখন ছেলে
১. পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়।
২. বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে, গাছে চড়তে ভালো লাগে।
৩. মিথ্যে বলে স্কুলে যেতে চায় না।
৪. কাজের সময় গোলমাল/বিরক্ত করে।
সুশীলচন্দ্র যখন বাবা
১. ছেলেকে পড়তে বসায়।
২. ছেলেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।
৩. ছেলের জন্য বাড়িতে মাস্টার রাখে।
৪. ছেলেকে জোর করে স্কুলে পাঠায়
সুবলচন্দ্র যখন ছেলে
১. পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়।
২. বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে, গাছে চড়তে ভালো লাগে।
৩. মিথ্যে বলে স্কুলে যেতে চায় না।
৪. কাজের সময় গোলমাল/বিরক্ত করে।
সুবলচন্দ্র যখন বাবা
১. ছেলেকে পড়তে বসায়।
২. ছেলেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।
৩. মিথ্যে বলে স্কুলে যেতে চায় না।
৪. কাজের সময় গোলমাল/বিরক্ত করে।
ছকটি পূরণ করা শেষে হলে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: (মূল বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. সুবলচন্দ্র আর সুশীলচন্দ্রের কী রকম বদল হয়েছিল?
উত্তর: ইচ্ছে ঠাকুরের ইচ্ছায় সুবল ও সুশীলের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়েছিল। সুবলের টাক মাথায় চুল গজিয়েছিল, পড়ে যাওয়া দাঁতগুলো গছিয়েছিল, মুখের দাঁড়ি-গোফগুলোও চলে গিয়েছিল। সুবল তার ছেলের মত বাচ্চাদের ন্যায় আচরণ করছিল। এদিকে সুশীলের মাথায় টাক পড়ে, দাঁত পড়ে, মুখে গোঁফ-দাড়ি গজায়। সে তার বাবার মত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ন্যায় আচরণ করতে শুরু করে।
২. যখন তারা বাবা তখন তাদের কাজ, আচরণ কেমন ছিল?
উত্তর: যখন তারা বাবা, তখন তারা ছেলেকে শাসন করতে চায়। ছেলে স্কুল ফাঁকি দিতে চাইলে শাসন করে, ছেলেকে বাসায় মাস্টার রেখে দেয়। অফিসে গিয়ে অর্থ উপার্জন করতে হয়। ছেলেকে শান্ত রাখতে গম্ভীরভাবে কথা বলে।
৩. যখন তারা ছেলে তখন তারা কেমন হয়?
উত্তর: যখন তারা ছেলে, তখন তারা খুব দুষ্টামি করে। স্কুল ফাঁকি দিতে চায়, গাছে চড়তে চায়, বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতে চায়।
৪. লোকজন ওদের ওপর বিরক্ত হয়েছিল কেন?
উত্তর: ইচ্ছে ঠাকুর বাবা-ছেলের ইচ্ছে অনুযায়ী তাদের বয়সের পরিবর্তন করে দেয়। তাদের শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন হয়। কিন্তু সমাজের মানুষ এই পরিবর্তনের বিষয়টি সম্পর্কে জানে না। তাই সমাজের মানুষ যখন দেখে- সুবল তার ছেলের মত আর সুশীল তার বাবার মত আচরণ করছে, তখন তাদের কা- দেখে তারা বিরক্ত হয়েছিল।
আলোচনা শেষে ওরা বুঝতে পারল, সুবলচন্দ্র ও সুশীলচন্দ্রের অবস্থান বদল হওয়ার পর তাদের ভূমিকারও বদল হয়েছে। বাবা হিসেবে সুবলচন্দ্র যা করতে পারে, ছেলে হিসেবে তা পারে না। যেমন গোলরক্ষকের অবস্থানে থেকে সেন্টার ফরোয়ার্ডের ভূমিকা পালন করা যায় না।
আবার সুশীলচন্দ্রের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্যি। বাবা ও ছেলের অবস্থান অনুযায়ী ভূমিকা পালনের কিছু সামাজিক রীতি-নীতি আছে। সেগুলো মেনে না চললে সমাজের লোকজন বিরক্ত হয়, তেড়ে আসে। ফুটবলের মাঠেও নিয়ম নীতি মেনে না খেললে এ রকম কাণ্ড ঘটে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অবস্থান ও ভূমিকার বদল হয় খুশি আপা বললেন, আমরা তো গল্পে দেখলাম বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অবস্থান বদলায় আর অবস্থান বদলালে ভূমিকাও বদলায়।
কিন্তু বাস্তবেও এ রকম হয় কি না, আমরা একটা অনুসন্ধানী কাজের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখতে পারি, ছোটবেলায় আর পরিণত বয়সে মানুষের অবস্থান ও ভূমিকা কেমন হয়। তথ্য সংগ্রহের জন্য নিজেদের পরিবারের লোকজনসহ আশপাশের পাঁচজন বড় মানুষের সাক্ষাৎকার নিতে পারি। আমরা বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থার মানুষের সঙ্গে কথা বলব। যত ভিন্ন ভিন্ন রকমের মানুষের সাক্ষাৎকার নিতে পারব, তত ভালোভাবে বিষয়টা বুঝতে পারব। সমাজের সব রকমের মানুষের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা সত্যি কি না, জানা যাবে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা
itihas o samajik biggan class 7 chapter 6
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায়
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম শ্রেণি ৬ষ্ঠ অধ্যায়
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায়
সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ওরা আলোচনার মাধ্যমে এ রকম একটা ছক তৈরি করল:
বিভিন্ন বয়সে আমার অবস্থান ও ভূমিকা
নাম : রবিউল ইসলাম
পেশা : চাকরিজীবি
বয়স : ৩০ বছর
লিঙ্গ : পুরুষ
স্কুলে পড়ার বয়সে আমি যা করতাম:
১. বিভিন্ন অযুহাতে স্কুল ফাঁকি দিতাম।
২. স্কুলের পড়া ঠিকমত পড়তাম না।
৩. প্রচুর চকলেট খেতাম।
৪. প্রচুর দুষ্টামো করতাম।
৫. বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতাম।
৬. বেশিরভাগ সময়ে বাড়ির বাইরে থাকতে পছন্দ করতাম।
৭. কোথাও বেড়াতে যেতে পছন্দ করতাম।
এখন আমি যা করি:
১. নিয়মিত অফিসে যাই।
২. বাড়িতে ছেলেমেয়েদের পড়তে বসাই।
৩. ছেলেমেয়েরা পড়তে না বসলে শাসন করি।
৪. ছেলেমেয়েরা যেন অতিরিক্ত দুষ্টামো না করে, সেদিকে খেয়াল রাখি।
৫. কোথাও বেড়াতে না গিয়ে বরং অবসর সময়ে নিজের কাজ এগিয়ে রাখতে পছন্দ করি।
ওরা দল তৈরি করে অনুসন্ধানী কাজটি করল। তারপর বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ফলাফল উপস্থাপন করল। আমরাও ওদের মতো অনুসন্ধানী কাজটি করি। উপস্থাপন শেষে ফ্রান্সিস বলল, আমরা যে ভাবছিলাম, বড় হলে খেলা দেখতে যেতে কারোর অনুমতি লাগবে না। কত স্বাধীনতা! কিন্তু আসলে বড়দের অবস্থানে যে ভূমিকা পালন করতে হয়, তাতে দায়িত্বও বেশি থাকে। পালন করতে হয়।
শিহান বলল, ছোটদের ক্ষেত্রেও সে কথা সত্যি। খুশি আপা বললেন, কথাটা আর একটু বুঝিয়ে বলবে? “বাড়িতে আমরা ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন ইত্যাদি অবস্থানে একাধিক ভূমিকায় থাকি, আবার স্কুলে এসে ছাত্র, বন্ধু– এসব অবস্থানে ভূমিকা পালন করি। ” শিহান জবাব দিল।
খুশি আপা আনন্দিত হয়ে বললেন, দারুণ বলেছ তো! আরও বললেন, এই যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বা যোগাযোগ করি, যে পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সেটা করি তাকে ‘সামাজিক প্রেক্ষাপট” বলে। আয়েশা বলল, আমরা বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করে দেখতে পারি, অবস্থান অনুযায়ী ভূমিকার কী রকম বদল হচ্ছে। সিয়াম বলল, আমরা কমিক স্ট্রিপ বানিয়ে বিষয়টা সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারি।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সবগুলো অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post