৭ম শ্রেণি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় : ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন United Nation Convention on the Law of the Sea (UNCLOS) -১৯৮২ প্রণীত হয়। এর ৮ বছর পূর্বেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গোপসাগরের অপার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে স্বাধীনতার মাত্র ৩ বছরের মধ্যে “706 Territorial Waters and Maritime Zones Act, ১৯৭৪” প্রণয়ন করেন।
সে আইনে বাংলাদেশের উপকূলের বেজলাইন (Baseline) থেকে দক্ষিণে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অঞ্চলকে টেরিটোরিয়াল ওয়াটার এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অঞ্চলকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে দাবি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের এ দাবির বিরুদ্ধে ভারত ও মিয়ানমার আপত্তি জানায়।
৭ম শ্রেণি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায়
ফলে ৩৮ বছর যাবৎ পাশ্ববর্তী দুই দেশের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অমীমাংসিত রয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে জাতির পিতা বঙবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর ফলে ২০১২ সালের ১৪ মার্চ International Tribunal for the Law of the-এর রায়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তি হয়।
এরপর ২০১৪ সালের ৭ জুলাই Arbitral Tribunal-এর রায়ে ভারতের সাথেও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসা হয়। এ রায়সমূহের ফলে ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদের উপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ বিশাল সমুদ্র জয়ের ফলে বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির নব দিগন্ত উন্মোচিত হয়। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলাসমূহ পরিচালনায় বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম আ্যাফেয়ার্স ইউনিট এর সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল (অবঃ) খুরশেদ আলম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। এ অর্জনে সাচিবিক দায়িত্ব পালনসহ
সন্নিহিত অঞ্চলে বাংলাদেশের আর্থিক, অভিবাসন, দূষণ, শুস্ক ও কর সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রয়োগের অধিকার লাভ করে। বেজলাইন থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অঞ্চলকে “একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল” (Exclusive Economic Zone) বলা হয়। এ অঞ্চলে বাংলাদেশ সকল প্রকার প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদ আহরণ করার অধিকার রাখে।
বেজলাইন থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল অঞ্চলকে “মহীসোপান’” (Continental Shelf) বলা হয়। মহীসোপান অঞ্চলে বাংলাদেশ সকল প্রকার খনিজ সম্পদ আহরণের সার্বভৌম অধিকার রাখে। ফলে বাংলাদেশের পর্যটন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ, বাণিজ্য এবং জ্বালানি সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থলসীমার মোট ক্ষেত্রফল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গকিলোমিটার। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশের অর্জিত সমুদ্রসীমার ক্ষেত্রফল বিদ্যমান স্থলসীমার প্রায় সমআকৃতির।
সমুদ্রের কোন কোন অঞ্চলে আমরা কী কী অধিকার পেলাম তা নিচের ছকে লিখি (মূল বইয়ের ১৪৮ নম্বর পৃষ্ঠা)
সমুদ্র: সমুদ্রজয়ের ফলে এই অঞ্চলে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার প্রাণীজ ও খনিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশ সরকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
শুধু তাই নয়, উক্ত অঞ্চলে বাংলাদেশ সরকার আর্থিক, অভিবাস, দূষণ, শুল্ক ও কর সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রয়োগের অধিকার লাভ করে। একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার এবং তার জনগণ উক্ত এলাকার প্রাণীজ ও খনিজ সম্পদ আহরণের অধিকার লাভ করে।
মহীসোপান: সমুদ্রে জয়লাভের ফলে মহীসোপান অঞ্চলেও বাংলাদেশের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। এতে করে এ অঞ্চলের সকল প্রকার খনিজ সম্পদ আহরণের অধিকার লাভ করে বাংলাদেশ।
ভু-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার
পরের দিন ক্লাসে খুশি আপা এসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানালেন। তখন রনি বলল, আপা আমরা আমাদের পৃথিবীর উপরি ভাগের পানির উৎসগুলো দেখলাম, কিন্তু আমরা যে পানি পান করি তার অধিকাংশই তো আসে মাটির নিচ থেকে। তাহলে মাটির নিচের পানির জন্যেও কি কোনো সমস্যা তৈরি হচ্ছে?
মিলি বলল, রনি আমরা যদি যেকোনো সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করি তাহলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় তাই না আপা? খুশি আপা বললেন, ঠিক তাই মিলি, যেকোনো সম্পদের পরিমিত ব্যবহারই সেই সম্পদের স্থায়িত্ব বাড়াতে পারে৷
নিচের ছকের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখি: (মূল বইয়ের ১৫১ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. উপরে দেখানো ছবিতে পানির উৎসগুলো কোথায়?
উত্তর: উপরের দেখানো ছবিতে পানির উৎসগুলো ভিন্ন ভিন্ন। নলকূপ এবং সেচপাম্পের পানি ভূ-গর্ভ থেকে আসে। অপরদিকে কূপ এবং নদীর পানি বৃষ্টি থেকে আসে।
২. এই পানি সাধারণত আমরা কোন কোন কাজে ব্যবহার করি?
উত্তর: আমরা আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে এই পানি ব্যবহার করে থাকি। নিচের ছকে এই ব্যবহারগুলো উল্লেখ করা হলো:
- নলকূপ: প্রায় সকল কাজেই নলকূপের পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে খাবার এবং রান্না করার জন্য এ পানি বেশি ব্যবহৃত হয়।
- সেচপাম্প: ফসলের ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য সেচপাম্পের পানি ব্যবহার করা হয়।
- কূপ: কাপর ধোয়া, গোসল করা ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজের জন্য কূপের পানি ব্যবহার করা হয়। কূপের পানি খাওয়ার জন্যও ব্যবহার করা যায়।
- নদী: নদীর পানিতে জলযান চলে, নদীর পানিতে গোসল করা এবং কাপর ধোয়া যায়।
মেহবুব বলল আপা এগুলো তো সবই মাটির নিচের পানি যা আমরা সাধারণত পানীয় হিসেবে বা কৃষিকাজে ব্যবহার করে থাকি। তাই এগুলো তো কোনোভাবে বীধ দিয়ে আটকে রাখা সম্ভব নয়। মিলি বলল, তা হয়তো নয় কিন্তু বেশি বেশি তুলে নিলে আর নাও পেতে পারি। আনুচিং বলল আপা আমাদের গ্রামের বাড়ি অর্থ্যাৎ বান্দরবানে খাবার পানির খুব সংকট, অনেক দূরের ছড়া থেকে আনতে হয়, কিন্তু যখন বৃষ্টি কম হয় তখন ছড়াগুলো শুকিয়ে যায়, আমাদের তখন অনেক কষ্ট হয়।
খনিস সম্পদ জীবাশ্ম জ্বালানী
পৃথিবীর মানচিত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য পূরণের ছক: (মূল বইয়ের ১৫৯ নম্বর পৃষ্ঠা)
- কয়লা: এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা
- প্রাকৃতিক গ্যাস: এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা
- খনিজ তেল: এশিয়া
- ইউরেনিয়াম: এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকা
- বক্সাইট: এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া
- তামা: এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা
- স্বর্ণ: এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা
- রূপা: ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা
বাংলাদেশের মানচিত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য পূরণের ছক: (মূল বইয়ের ১৫৯ নম্বর পৃষ্ঠা)
- প্রাকৃতিক গ্যাস: গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বিয়ানীবাজার, কৈলাশটিলা, ফেঞ্চুগঞ্জ, জালালাবাদ, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুতুবদিয়া।
- খনিজ তেল: সিলেট জেলার হরিপুর।
- কয়লা: সুনামগঞ্জ, বড়পুকুড়িয়া, রংপুর, বগুড়া।
- পিট: ফরিদপুর, খুলনা, চরকাই।
- চুনাপাথর: সুনামগঞ্জ, জাফলং, সীতাকু-, সেন্ট মার্টিন, জয়পুরহাট।
- কঠিন শিলা: সিলেট, জাফলং।
- চীনামাটি: নওগা, রংপুর, দিনাজপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম।
সম্পদের টেকসই ব্যবহার
পরিবার, বিদ্যালয় এবং নিজেদের এলাকায় সম্পদের টেকসই ব্যবহারে ভূমিকা রাখে এমন কিছু কাজের তালিকা: (মূল বইয়ের ১৬২-১৬৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
পরিবারে সম্পদের টেকসই ব্যবহারমূলক কাজ
১. ব্যবহারের সময় ছাড়া পানির কল বন্ধ রাখা।
২. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ করা।
৩. বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা।
৪. প্লাস্টিকের বোতল ফেলে না দিয়ে তেল বা পানি রাখার জন্য ব্যবহার করা।
৫. প্লাস্টিকের ড্রাম বা কন্টেইনার ফেলে না দিয়ে সেগুলোতে গাছ লাগানো।
৬. কাঁচের বোতল ফেলে না দিয়ে কারুকার্য তৈরি করে গৃহসজ্জা করা।
৭. কোনো পোশাক পুরাতন হয়ে গেলে সেটি ফেলে না দিয়ে অসহায়-দরিদ্রদের দেওয়া, যাতে তারা ব্যবহার করতে পারে।
বিদ্যালয়ে সম্পদের টেকসই ব্যবহারমূলক কাজ
১. বিদ্যালয়ে যেখানে বর্জ্য উৎপাদন হয়, তা পর্যবেক্ষণ করা এবং যেখানে পুনর্ব্যবহার হতে পারে তা নোট করা।
২. শ্রেণিকক্ষ এবং বিদ্যালয়ের অন্যান্য এলাকায় আলো বন্ধ করে রাখা যখন সেগুলো ব্যবহার করা হয় না।
৩. শক্তি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার না করার সময় কম্পিউটারগুলো স্লিপ মোডে রাখতে সবাইকে অনুরোধ করা।
৪. যখন শ্রেণিকক্ষে কেউ থাকবে না, তখন বৈদ্যুতিক ফ্যানগুলো বন্ধ করে রাখা।
৫. শ্রেণিকক্ষের সবগুলো জানালা খুলে রাখা, যাতে করে প্রাকৃতিক আলো বেশি করে প্রবেশ করে এবং বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর প্রয়োজনীয়তা কম হয়।
৬. হোয়াইট বোর্ডে লেখার মার্কারের কালি শেষ হয়ে গেলে নতুন মার্কার না কিনে বরং রিফিল করে নেওয়া।
সমাজে সম্পদের টেকসই ব্যবহারমূলক কাজ
১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে পচনশীল ও অপচনশীল এবং দুই ধরনের বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় অনুরোধ পত্র প্রেরণ।
২. এলাকার পুকুর, খাল বা অন্যান্য পানির উৎসা যা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় অনুরোধ পত্র প্রেরণ।
৩. এলাকার পানি, গ্যাস বিদ্যুৎসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে সচেতনতামূলক পোস্টার বিলি করা।
৪. দিনের বেলায়ও যেসব সড়কে ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলে সেগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে যথযথ কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানানো।
৫. ফুটপাত যেন কেউ দখল করতে না পারে এবং ফুটপাত যেন সাধারণ জনগণ হাটার কাজে ব্যবহার করতে পারে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে যথযথ কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানানো।
৬. সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাই জনগণ যেন তাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারে, তাই কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানানো যাতে তারা যানজট নিরসনে সচেষ্ট হয়।
৭. স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে যেন প্রয়োজনের চেয়ে অধিক আলোকসজ্জা না করা হয়, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে যথযথ কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানানো।
৮. পতিত জমি ফেলে না রেখে সেখানে অতিরিক্ত ফসল বা সবজি চাষে জনগণকে সচেতন করা।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সবগুলো অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post