৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় : আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে এবং পাকিস্তানে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের আগ মুহুর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। ফলে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
এ যুদ্ধে অনেক দেশ আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে। আবার অনেক দেশ আমাদের বিরোধিতা করে। পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞে শরণার্থীর ঢল নামলে ভারত তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়। ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাছাড়া ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে সহযোগিতা করে।
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়
ভারত ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ আমাদের সাহায্য করে। তবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অনেক দেশ আমাদের বিরোধিতা করে। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন অন্যতম। তাছাড়া বিদেশি গণমাধ্যম, দেশি গণমাধ্যম, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম অবদান রাখে।
চলো আমরাও ওদের মতো করে অনুসন্ধানের মাধ্যমে যারা বিদেশি হয়েও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন তাদের কথা জেনে নিই। (ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই: পৃষ্ঠা ৬৭)
সমাধান : তোমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এমন কোনো ব্যক্তি, বিভিন্ন মাধ্যম ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে উপরের ছবির ব্যক্তিবর্গের তথ্য অনুসন্ধান করবে এবং জানবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান কী ছিল? তারপর নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে তা উপস্থাপন করবে। তোমাদের সুবিধার্থে নমুনা উত্তর তৈরি করে দেওয়া হলো
কাজ : আলোচনার মাধ্যমে তারা প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ের তালিকা তৈরি করল।
১. মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সংবাদিকদের ভূমিকা, (গণমাধ্যম)
২. মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনের ভূমিকা, (গণমাধ্যম)
৩. শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলায় মূল ভারবহনকারী দেশ ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ভূমিকা। (মানবিক সহায়তা)
৪. প্রবাসী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক। (রাজনীতি)
৫. মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন এবং বিজয় অর্জন পর্যন্ত তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্ব ও এতে দেশটির অবদান। (রাজনীতি)
৬. জাতিসংঘ ও অন্যান্য বিশ্বসংস্থার ভূমিকা। (কূটনীতি)
৭. সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য মিত্র দেশের ভূমিকা। (কূটনীতি)
৮. শিল্পী-সাহিত্যিকদের উদ্যোগ (সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র) (ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই: পৃষ্ঠা ৬৭)
সমাধান : তোমরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে উপরের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করবে। কোনো বিষয় বেশি জটিল মনে হলে সবাই মিলে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সমাধান খুঁজে বের করবে।
তোমাদের সুবিধার্থে নিচে নমুনা উত্তর তৈরি করে দেওয়া হলো-
১. মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সংবাদিকদের ভূমিকা, (গণমাধ্যম): ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক সংবাদকর্মী শহিদ হন। এরপরও অনেক সংবাদকর্মী নিজের জীবন বাজি রেখে বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সংবাদ সংগ্রহ করেছিলেন এবং তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। সেসব প্রতিবেদন, আলোকচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ কেবল বাংলাদেশের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেনি, সময়ের পরিক্রমায় সেগুলো মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সাংবাদিক হিসেবে সাইমন ড্রিং, মাইকেল লরেন্ট, অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, মার্কটালি, সিডনি শনবার্গ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
২. মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনের ভূমিকা, (গণমাধ্যম) : বিদেশি গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল যা বিশ্বজনমত গঠনে সহায়তা করেছিল। এ সকল গণমাধ্যমের দ্বারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির গণহত্যার চিত্র, নারীদের নির্যাতন, নৃশংস বর্বরতা, ধ্বংসযজ্ঞ, শরণার্থীদের দুর্ভোগ সম্পর্কে সংবাদ, আলোকচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ তুলে ধরা হয়েছিল। ফলে বিশ্ববাসী মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেছে এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছে। বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে কলকাতা আকাশবাণী, বিবিসি, লন্ডনের ‘দ্য অবজারভার’ ডেইলি টেলিগ্রাফ, টাইম সাময়িকী, নিউজউইক, ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেস, দ্য সানডে টাইমস, দ্য স্পেকটেটর, টরেন্টো টেলিগ্রাম, দ্য উইকলি নিউএজসহ আরও কিছু উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এছাড়াও রেডিওর বিভিন্ন খবর, কথিকা, গান, মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছিল যা বিজয়ের পথকে সুগম করেছিল।
৩. শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলায় মূল ভারবহনকারী দেশ ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ভূমিকা। (মানবিক সহায়তা) : মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ১ কোটিরও বেশি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারত সরকার সে সময়ে তাদের সাহায্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তারা বিভিন্ন দাতা সংস্থা এবং অন্যান্য দেশগুলোতে সাহায্যের আবেদন করেছিল এবং সাড়াও পেয়েছিল। যুক্তরাজ্য বা ব্রিটিশ সরকারও বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছিল। তারা বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করেছিল। এরপর সোভিয়েত রাশিয়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশ সাহায্য করেছিল।
৪. প্রবাসী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক। (রাজনীতি) : ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার গঠিত হয়। এ সরকার মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় গঠিত হয়। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে তাদের দায়িত্ব পালন সম্ভব ছিল না। তাই ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে এ সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে কার্যালয় স্থাপন করে দিক নির্দেশনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাই এ সরকার প্রবাসী সরকার নামে পরিচিত ছিল। এদিক বিবেচনায় প্রথম দিক থেকেই ভারত সরকার রাজনৈতিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
৫. মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন এবং বিজয় অর্জন পর্যন্ত তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্ব ও এতে দেশটির অবদান। (রাজনীতি) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি বিদেশি বন্ধু হিসেবে সর্বাত্মক সাথে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা, সংগঠন ও রাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা লাভ এবং সাড়া জাগাতে তিনি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সকল দেশে নিজে গিয়ে সমর্থন কুড়িয়েছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে ব্যাপক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। ৯ মাসব্যাপী এ যুদ্ধে তিনি প্রায় ১ কোটি বাঙালিকে শরণার্থী হিসেবে নিজের দেশে স্থান দিয়েছিলেন, তাদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
৬. জাতিসংঘ ও অন্যান্য বিশ্বসংস্থার ভূমিকা। (কূটনীতি): ১৯৭১ সালে তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন উথান্ট। জাতিসংঘ পাকিস্তানের গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়। তবে তিনি বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এর ফলে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ২৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার সংগ্রহ করে জাতিসংঘ বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য প্রদান করেন। এছাড়া ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিকে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ অধিবেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন হয়েছিল যা পরবর্তীতে বিজয়ের দ্বার উন্মোচন করেছিল। এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দাতা সংস্থা যেমন : ইউনিসেফ : সোভিয়েত ইউনিয়ন আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল।
৭. সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য মিত্র দেশের ভূমিকা (কূটনীতি) : মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল। তারা নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও আমেরিকার বিরোধিতা করেছিল। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে বঙ্গোপসাগরে নৌবহর প্রেরণ করলে সৌভিয়েত রাশিয়াও তাদের সুসজ্জিত নৌবহর বাংলাদেশের পক্ষে প্রেরণ করেছিল। এছাড়া মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে ভারত, পোল্যান্ড, নেপাল, ভুটান অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল।
৮. শিল্পী-সাহিত্যিকদের উদ্যোগ (সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র) : মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী সাহিত্যিকদের অবদান ব্যাপক। স্বাধীনতা ঘোষণার পর চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বেতার কার্যক্রম সরিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে অন্যত্র সরানো হয়। যা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল। এই বেতারের মাধ্যমে সংবাদ, সম্পাদকীয়, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরের খবর, তাৎক্ষণিকভাবে রচিত নাটিকা, সংগীত, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, নেতাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, কবিতা, গীতিনাট্য ইত্যাদি পরিবেশন করা হতো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা এসব পরিবেশন করতেন। ভারতের বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ প-িত রবিশংকর ও তার বন্ধু জর্জ হ্যারিসন শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের জন্য নিউইয়র্কে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। যার মাধ্যমে প্রায় ২,৫০,০০০ ডলার সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছিল এবং বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে পেরেছিল।
কাজ : শিক্ষার্থীরা আলোচনা করে অনুসন্ধানের প্রশ্নগুলো ঠিক করো :
১. মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল শরণার্থী কোথায় এবং কীভাবে আশ্রয় পেয়েছিল?
২. অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল?
৩. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে কারা সাহায্য করেছিল? এভাবে আমরা আরও প্রশ্ন তৈরি করব। প্রত্যেক দল নিজ নিজ বিষয়ভিত্তিক সম্ভাব্য প্রশ্নের তালিকা, তথ্যপ্রাপ্তির উৎসের তালিকা এবং প্রাপ্ত তথ্য যাচাইয়ের পদ্ধতি লিখব।
অনুসন্ধানের জন্য আরও প্রশ্ন :
৪. ভারত কীভাবে সামরিক সহযোগিতা করেছিল?
৫. মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম দেশগুলো কী ভূমিকা পালন করেছিল?
৬. সাধারণ মানুষ কিসের মাধ্যমে এবং কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের খবর ও তথ্য পেত?
১. মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল শরণার্থী কোথায় এবং কীভাবে আশ্রয় পেয়েছিল?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল শরণার্থী ভারতে আশ্রয় পেয়েছিল। যদিও সামান্য কিছু মানুষ মায়ানমারে আশ্রয় নিয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী নৃশংস গণহত্যা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিলে ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
শরণার্থীদের কোনো অর্থ ছিল না, খাবার ছিল না, গায়ে পোশাক ছিল না। তারা খোলা আকাশের নিচে খুব কষ্টে বসবাস করেছে। অনাহারে, অর্ধাহারে কেটেছে তাদের দিন। আবার দেখা দিয়েছে মহামারি রোগ। ভারতের সাহায্য ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় তারা কোনো রকম বেঁচেছিল। এ শরণার্থীদের অবর্ণনীয় কষ্ট বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল।
২. অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়। তবে এ সময় তরুণ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং বড় ঘটনার আঁচ করতে পেরে হোটেলে লুকিয়ে থাকেন। অতঃপর তিনি পাকিস্তানি সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকা রাস্তায় গণহত্যার ছবি সংগ্রহ করে ব্যাংকক পৌছান এবং সেখান থেকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেন।
অতঃপর তা দ্য ডেউলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হলে বিশ্ববাসী গণহত্যার কথা জেনে যায়। তাছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্র, টিভি ও রেডিওতে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত গণহত্যার খবর প্রকাশিত হলে বিশ্ববাসী তা জেনে যায়। বিবিসি, আকাশবাণীসহ নানা গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিশ্ববাসী গণহত্যার খবর জানতে পারে।
৩. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে কারা সাহায্য করেছিল?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার গঠিত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। বৈদ্যনাথতলার নতুন নাম মুজিবনগর নামানুসারে এ সরকার মুজিবনগর সরকার নামে বেশি পরিচিত। তাছাড়াও এ সরকার প্রবাসী সরকার নামেও পরিচিত।
মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিদেশি ব্যক্তি ও অনেক দেশ সাহায্য করে। যেসব দেশ মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্যতম। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।
৪. ভারত কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক সহযোগিতা করেছিল?
উত্তর : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারত শরণার্থীদের আশ্রয় শিবির খোলার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ও গোলাবারুদসহ অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল। এভাবে ভারতের সেনাবাহিনীও মুক্তিযুদ্ধের সাথে যুক্ত হয়ে যায়।
তারা গেরিলা যোদ্ধা, নিয়মিত বাহিনীর নতুন সদস্যদের সাহায্য, নৌ-কমান্ডোদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমাদের সম্মুখযুদ্ধের সময় নিয়মিত বাহিনীকে দূরপাল্লার কামান দিয়ে আক্রমণে সাহায্য করেছে। অতঃপর যুদ্ধের শেষপর্যায়ে যৌথ বাহিনী গঠিত হলে তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রায় চার হাজার ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।
৫. মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম দেশগুলো কী ভূমিকা পালন করেছিল?
উত্তর : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সৌদি আরবসহ মুসলিম অনেক দেশ বাংলাদেশকে সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। মুসলিম দেশগুলো মার্কিন বলয়ে ছিল বিধায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সুরে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে। তাছাড়া পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে প্রচার করলে মুসলিম দেশগুলো বিভ্রান্ত হয়ে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে।
প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ইরাক বাংলাদেশকে সমর্থন প্রদান করে। তবে অনেক মুসলিম দেশ প্রকৃত ঘটনা জেনে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়। আবার অনেক মুসলিম দেশের সরকার পাকিস্তানকে সমর্থন করলেও সে দেশের জনগণ বাংলাদেশকে সাহায্য করে।
৬. সাধারণ মানুষ কিসের মাধ্যমে এবং কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের খবর ও তথ্য পেত?
উত্তর : বর্তমান সময়ের মতো ১৯৭১ সালে যোগাযোগের আধুনিক মাধ্যম ছিল না। তখন টিভি আর রেডিও-এর সংবাদ ছিল মুক্তিযুদ্ধের খবর ও তথ্য জানার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। সাধারণ মানুষের হাতে তখন পত্রিকা পৌঁছাতো না। তারা ইংল্যান্ডের বেসরকারি বেতারকেন্দ্র বিবিসি, মার্কিন বেতার কেন্দ্র ভোয়া, ভারতের আকাশবাণীসহ রেডিওতে যুদ্ধের খবরাখবর পেত। সবাই মিলে যার বাড়িতে রেডিও রয়েছে তার বাড়িতে গিয়ে একসাথে বসে যুদ্ধের খবরাখবর শুনত। এতে তারা যুদ্ধের প্রতি অনেক উৎসাহ পেত।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সবগুলো অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় উত্তরসহ সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post