৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ১ম অধ্যায় সমাধান : ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং প্রধান হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালকের সত্তাবাচক নাম। সর্বোচ্চ সম্মান, প্রশংসা এবং ইবাদাত পাওয়ার তিনি একমাত্র অধিকারী।
তিনি চিরঞ্জীব, অনাদি এবং অনন্ত । এক এবং অদ্বিতীয়, সর্বাপেক্ষা মহান। আল্লাহর ওপর ইমান আনার অর্থ হলো, তার অস্তিত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। কোনো সন্দেহ ছাড়া তাকে একমাত্র রব, উপাস্য (মা’বুদ) হিসেবে গ্রহণ করা এবং তার গুণবাচক নামগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ১ম অধ্যায় সমাধান
ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে ‘মালাইকা’ বা ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস। ফেরেশতাগণ আল্লাহর আজ্ঞাবহ জ্যোতির্ময় সত্তা। তারা নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র। তারা নূরের তৈরি। সর্বদা আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন থাকেন।
ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে আসমানি কিতাব। নবি-রাসুলগণ আল্লাহ তা’আলার নিকট থেকে যেসব কিতাব বা গ্রন্থ লাভ করেছেন সেসব ধর্মগ্রন্থই আল্লাহর কিতাব।
এগুলোকে আসমানি কিতাব বলা হয়। এসব আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ইমানের অঙ্গ। মোট আসমানি কিতাবের সংখ্যা ১০৪ খানা। এর প্রধান চারখানা কিতাব হলো- তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও আল-কুরআন।
বাড়ির কাজ, একক কাজ, দলীয় কাজ ও প্রতিবেদন
প্রিয় শিক্ষার্থী, বছরের প্রথম ক্লাসটিতেই শিক্ষক তোমাদের নিয়ে বিদ্যালয়ের অথবা এলাকার কোনো পাঠাগারে অথবা বইয়ের দোকানে, মসজিদ পাঠাগারে বা মাদ্রাসার পাঠাগারে নিয়ে যাবেন। সেখানে গিয়ে তোমরা কুরআন-হাদিসসহ বিভিন্ন ইসলামি বই হাতে নিয়ে দেখবে, খুলে পড়বে, কিছু কিছু বোঝার চেষ্টা করবে এবং শেষসময় পর্যন্ত দেখার চেষ্টা করবে, এরপর তোমরা নিজ ক্লাসে ফিরে আসবে। আজকের জন্য তোমাদের এই সেশন শেষ।
দ্বিতীয় সেশনে শিক্ষক তোমাদের গত সেশনে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে গিয়ে ইসলামি বই দেখার ওপরে বিভিন্ন প্রশ্ন করবেন। যেমন-
১. পাঠাগার ভ্রমণ করে তোমাদের কেমন লাগছে?
২. সেখানে তোমরা কী কী বই দেখেছো?
৩. কোনো বই খুলে পড়েছো কি? পড়ে থাকলে কোন বইটি?
৪. তোমাদের বাড়িতে এ ধরনের কোনো বই আছে? এর আগে এই বইগুলো তোমরা কখনো দেখেছো?
এর সম্ভাব্য উত্তর হচ্ছে :
১. পাঠাগার ভ্রমণ করে আমাদের খুব ভালো লেগেছে।
২. সেখানে আমরা কুরআন, হাদিস, অনেক ইসলামি বই, রাসুল (সা.) ও অন্যান্য নবিদের জীবনী, সাহাবাদের জীবনী, হাদিসের অনুবাদমূলক বই, কুরআনের তাফসির, ইসলামের বিধিবিধান ইত্যাদি বই দেখেছি।
৩. হ্যাঁ, রাসুল (সা.)-এর জীবনী বিষয়ক একটি বই পড়েছি। বইটির নাম আর রাহিকুল মাখতুম।
৪. হ্যাঁ, আমাদের বাড়িতে এ ধরনের কিছু বই আছে। এর আগে এই বইগুলোর কিছু দেখেছি, তবে সবগুলো দেখিনি।
এরকম আরও কিছু প্রশ্ন করে শিক্ষক তোমাদেরকে ইসলামের মৌলিক উৎস কুরআন-হাদিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করবেন।
তৃতীয় ও চতুর্থ সেশনে শিক্ষার্থীরা প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনে কুরআন- হাদিস সম্পর্কে যে ধারণা লাভ করেছে তা নিজেদের খাতায় লিখে জোড়ায় জোড়ায় বা দলীয়ভাবে আলোচনা করবে এবং আলোচনা শেষে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
শ্রেণিশিক্ষক প্রদত্ত সম্ভাব্য কাজ
প্রশ্ন: পাঠাগার থেকে অর্জিত ধারণা
সমাধান : পাঠাগার থেকে শিক্ষার্থীরা যে ধারণা লাভ করবে, তার আলোকে নিচে একটি নমুনা উত্তর দেওয়া হলো । পাঠাগারে যেসব বই দেখেছি সেগুলো হলো-
১. পবিত্র কুরআন
২. সহিহ বুখারি
৩. সহিহ মুসলিম
৪. সুনানে নাসায়ী
৫. জামে তিরমিযি
৬. মোস্তফা চরিত
৭. মহানবি (সা.)-এর জীবনী
৮. নবিদের জীবনী
৯. হযরত ঈসা (আ.)-এর জীবনী
১০. হযরত মূসা (আ.)-এর জীবনী
পাঠাগারে আমি কিছু হাদিসের বই খুলেছি- যেখানে ইমান, সালাত, সাওম, যাকাত ইত্যাদির কথা বর্ণিত রয়েছে। হাদিসে মহানবি (সা.) আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করতে বলা হয়েছে যাতে আমরা পথভ্রষ্ট না হই।
বাড়িতেও আমি কিছু ইসলামি বই খুলেছি এবং পড়ে দেখেছি। যেমন-
১. তাফসিরে মা’আরিফুল কুরআন
২. সুনানে ইবনে মাজাহ
৩. সুনানে আবু দাউদ
৪. মুআত্তা মালিক
৫. মুসান্নাফে ই বনি আবি শাইবা
৬. মুআত্তা আহমাদ
৭. সাহাবাদের জীবনী
৮. দশজন জান্নাতি সাহাবার জীবনী
৯. উম্মাহাতুল মুমিনিনদের জীবনী
১০. চার খলিফার জীবনী
১১. আর রাহিকুল মাখতুম (রাসুল (সা.)-এর জীবনী)
এর মধ্যে তাফসিরে মা’আরিফুল কুরআন পড়েছি যেখানে আল্লাহ আমাদের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি ইমান এনে নেক আমল করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। সকল পাপ বর্জন করে সালাত কায়েম এবং যাকাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেছেন। এক আল্লাহর আনুগত্য করার সাথে সাথে তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মুআত্তা মালিক পড়ে অযু, গোসল, সালাত ইত্যাদি আদায়ের নিয়ম জেনেছি। সেখানে সাওম, ঈদ, জুমা, বিবাহ, তালাক, বিচার, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদির আলোচনা দেখেছি।
সম্ভাব্য বাড়ির কাজ (মূল বই: পৃষ্ঠা ১)
ইমানের মৌলিক বিষয়গুলো খাতায় লিখে আনবে এবং দলীয়ভাবে আলোচনা করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ১)
সমাধান : শিক্ষার্থীরা ইমানের মৌলিক বিষয়সমূহ বাড়ি থেকে খাতায় লিখে আনবে এবং এগুলো দলীয়ভাবে আলোচনা করবে। ইমানের মৌলিক বিষয়গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. আল্লাহর প্রতি ইমান।
২. ফেরেশতাদের প্রতি ইমান।
৩. আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি ইমান।
৪. নবি-রাসুলগণের প্রতি ইমান।
৫. আখিরাতের প্রতি ইমান।
৬. তাকদিরের ভালোমন্দের প্রতি ইমান।
৭. মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিতকরণের প্রতি ইমান।
সম্ভাব্য দলীয় কাজ (মূল বই: পৃষ্ঠা ২)
সম্ভাব্য কাজ ও দলীয় আলোচনা: মহান আল্লাহর পরিচয় পয়েন্ট আকারে লিখে তা শ্রেণিতে দলগতভাবে আলোচনা করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ২)
সমাধান : শিক্ষার্থীরা মহান আল্লাহর পরিচয় লিখবে এবং তা শ্রেণিতে দলগতভাবে আলোচনা করবে। নিচে আল্লাহর পরিচয় পয়েন্ট আকারে লিখে দেখানো হলো-
১. মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরিক নেই। (সুরা ইখলাস, আয়াত : ১-৪)
২. তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা।
৩. সর্বোচ্চ সম্মান, প্রশংসা ও ইবাদাত পাওয়ার একমাত্র অধিকারী তিনিই।
৪. তিনি সর্বশক্তিমান, অসীম জ্ঞান ও বিচক্ষণতার অধিকারী।
৫. তাঁর অনুরূপ কিছুই নেই, তাঁর তুলনা স্বয়ং তিনি নিজেই।
৬. ‘আল্লাহ’ শব্দটি মহান আল্লাহর ‘ইসমে জাত’ বা সত্তাবাচক নাম। এটি এমন একটি শব্দ যার অনুবাদ, প্রতিশব্দ, সমার্থক শব্দ, লিঙ্গান্তর, বহুবচন ইত্যাদি নেই।
৭. আল্লাহ শব্দটি সর্বদা একবচন, একক, অবিভাজ্য, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়।
৮. মহান আল্লাহর অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর গুণবাচক নাম আছে সে নাম ধরেও আমরা তাঁকে ডাকতে পারি।
৯. আল্লাহ এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী, মালিক, অধিপতি, প্রতিপালক এবং একমাত্র উপাস্য।
১০. মহান আল্লাহ সকল দোষত্রুটি মুক্ত, সকল সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতার আধার, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদর্শী, তিনি বিধানদাতা, নির্দেশদাতা ও হিদায়েত দাতা।
১১. সকল সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই, তিনি সকল শক্তির উৎস, অধিকারী। অপরিসীম রহমতের অধিকারী তিনি মহাবিজ্ঞান, পরাক্রমশালী, নিরাপত্তা ও শান্তিদাতা, অমর ও অবিনশ্বর।
১২. তিনিই অতীব সূক্ষ¥দর্শী, অক্ষয়, অবিনশ্বর, অনন্ত, অসীম, পরম সুন্দর, পরম পবিত্র, ক্লান্তি ও তন্দ্রামুক্ত। তিনি জীবন ও মৃত্যুদাতা, সমগ্র মহাবিশ্বের মালিক, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় এবং সুমহান।
১৩. সর্বশেষ কথা হলো আল্লাহর গুণাবলি কখনো লিখে বা বলে শেষ করা যায় না।
সম্ভাব্য বাড়ির কাজ (মূল বই: পৃষ্ঠা ৩)
ইমান আনা বলতে কী বোঝানো হয়? বিষয়টি লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন কর। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ৩)
সমাধান : ইমান আনা বলতে কী বোঝায়, শিক্ষার্থীরা বিষয়টি লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। ইমান বলতে কী বোঝায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. ইমান আনার অর্থ হলো আল্লাহর অস্তিত্বে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা ।
২. কোনোরূপ সন্দেহ ছাড়া আল্লাহ একমাত্র প্রতিপালক, উপাস্য হওয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
৩. আল্লাহর কর্তৃত্বে বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এ মহাবিশ্ব পরিচালনায় তাঁর কোনো অংশীদার বা সহযোগী নেই।
৪. আল্লাহই একমাত্র উপাস্য হওয়ায় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নেই।
৫. আল্লাহর সিফাতসমূহে বিশ্বাস করা। আল্লাহর অসংখ্য গুণবাচক ও গুণাবলি রয়েছে সেগুলোতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।
সম্ভাব্য দলীয় কাজ (মূল বই: পৃষ্ঠা ৩)
আল্লাহর প্রতি ইমান আনা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা দলীয়ভাবে আলোচনা কর। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ৩)
সমাধান : আল্লাহর প্রতি ইমান আনা কেন গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়টি শিক্ষার্থীরা দলীয়ভাবে আলোচনা করবে। আল্লাহর প্রতি ইমান আনার গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো-
১. আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
২. তিনি আমাদের রব, মালিক ও সৃষ্টিকর্তা। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছু ঘটে না। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
৩. তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনন্ত, তিনি পরম সুন্দর ও পবিত্র।
৪. ক্লান্তি, তন্দ্রা, নিদ্রা তাকে কোনোকিছুই স্পর্শ করতে পারে না। তিনি কারও ওপর নির্ভরশীল নন, সবাই তার ওপর নির্ভরশীল।
৫. আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সবকিছুই তাঁর।
৬. তিনিই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, সবকিছুর মালিক, তিনি জীবন ও মৃত্যুদাতা, সকল গৌরব তাঁরই।
৭. তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, সর্বোচ্চ ও সুমহান। উপরিউক্ত কারণেই আমরা আল্লাহর প্রতি ইমান আনা গুরুত্বপূর্ণ।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা সব অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ১ম অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post