ইবাদাত ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় সমাধান : ইবাদাত আরবি শব্দ। এর অর্থ আনুগত্য করা, দাসত্ব করা। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁর প্রেরিত রাসুলের দেখানো পথে জীবন পরিচালিত করাকে ইবাদাত বলে।
আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদাতের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়ত সমর্থিত যেকোনো উত্তম কাজই ইবাদাত।
৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় সমাধান
এ অধ্যায় পাঠের মাধ্যমে আমরা ইসলামের মৌলিক ইবাদাতসমূহের মধ্যে সালাত, সাওম ও যাকাত সম্পর্কে জানব। ইবাদাতসমূহের মাঝে সর্বোত্তম ইবাদাত এবং ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্য দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো সালাত।
কুরআন ও হাদিসে সালাতকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামের অন্যতম আরও দুটি স্তম্ভ হলো সাওম এবং যাকাত।
অভিজ্ঞতা-১ (মূল বই: পৃষ্ঠা ১৩)
আমরা কেন ইসলামের বিধিবিধান চর্চা করব? শিক্ষার্থীরা বিষয়টি দলীয়ভাবে আলোচনা করবে এবং আলোচনা শেষে উপস্থাপন করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ১৩)
সমাধান : ইসলামের অনেক বিধিবিধান রয়েছে। তার মধ্যে সালাত, সাওম, যাকাত ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এগুলো আমাদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে অবশ্যই চর্চা করতে হবে। কেননা-
১. সালাত, সাওম, যাকাত ইত্যাদি বিধান পালন করা আল্লাহর নির্দেশ। আমাদের পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা এবং রিযিকদাতা হিসেবে আল্লাহর নির্দেশ পালন করা আমাদের জন্য আবশ্যক। এটি তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
২. সালাত আমাদের অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
৩. সালাত আদায়ে মানুষের শারীরিক সুস্থতা, মানসিক স্থিরতা ও প্রশান্তি অর্জিত হয়।
৪. সালাত আদায়ে সমাজের মানুষের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে। ধনী- গরিব ভেদাভেদ দূর হয়।
৫. সালাতে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা পাওয়া যায়।
৬. সালাত মুমিনের জীবনে দৃঢ়তা ও স্থিরতা আনে। সালাতের মাধ্যমে রিযিক বৃদ্ধি পায়। সালাত হলো সর্বোত্তম আমল।
৭. সাওমের মাধ্যমে সমাজের লোকদের মাঝে সহানুভূতি ও সহমর্মিতার সৃষ্টি হয়। ধনীরা সাওম পালন করলে দরিদ্রদের অনাহার ও ক্ষুধার কষ্ট বুঝতে পারে এবং দান-খয়রাতে উৎসাহী হয়।
৮. সাওমের পুরস্কার মহান আল্লাহ নিজেই দেন। এ মাসে মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি পায়। অন্যকে ইফতার করিয়ে মুমিন প্রচুর সওয়াবের ভাগিদার হয়।
৯. সাওম পালনে মানুষের মন থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, পরনিন্দা, ধূমপান ইত্যাদি বদ অভ্যাস দূর হয়।
১০. যাকাত আদায়ে সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়। এতে কৃপণতা দূর হয়, দরিদ্ররা উপকৃত হয়।
১১. যাকাত আদায়ে সম্পদের সুষম বণ্টন হয়। সম্পদ কতিপয় মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
১২. যাকাত আদায়ে যেমন পুরস্কার রয়েছে। তেমনি যাকাত আদায় না করলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
১৩. যাকাত একটি আর্থিক ফরয ইবাদাত। এর অস্বীকারকারী কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে।
কাজেই বলা যায়, উপরিউক্ত কারণেই আমরা ইসলামের বিধিবিধান চর্চা করব।
অভিজ্ঞতা-২ (মূল বই: পৃষ্ঠা ১৫)
সালাতের উপকারিতা বাড়ি থেকে লিখে এনে শ্রেণিতে উপস্থাপন করো। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ১৫)
সমাধান : শিক্ষার্থীরা সালাতের উপকারিতা বাড়ি থেকে লিখে এনে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। নিচে সালাতের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা আলোচনা করা হলো-
সালাতের শারীরিক উপকারিতা
১. সালাত আদায়ে ফুসফুস, মস্তিষ্ক, মেরুদ-, মাংসগ্রন্থি, ঘাড় ইত্যাদি অঙ্গের রোগের উপকার পাওয়া যায়।
২. সালাতে সিজদার সময় মস্তিষ্কতন্ত্রী, চোখ ও মাথাসহ অন্যান্য অঙ্গে রক্ত প্রবাহ পরিমিত পর্যায়ে থাকার ফলে চোখের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় ও মস্তিষ্ক প্রখর হয়।
৩. সালাত আদায়ে স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও জোড়ার ব্যথা সেরে যায়। এটি চিকিৎসকেরও পরামর্শ।
সালাতের মানসিক উপকারিতা:
১. সালাতের মাধ্যমে যাবতীয় হতাশা, অস্থিরতা, অশান্তি দূর হয় কেননা সালাত আদায়ে মন প্রফুল্ল থাকে, পেরেশানি দূর হয়।
সালাতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপকারিতা:
১. মসজিদে সকলে একই কাতারে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের ফলে ধনী-গরিব, উঁচু-নীচু কোনো পার্থক্য থাকে না। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি হয়।
২. জামাআতে সালাত আদায়ের ফলে একে অন্যের খোজখবর নিতে পারে। একের বিপদে অন্যজন পাশে দাঁড়াতে পারে। এতে ইসলামি সমাজের বন্ধন দৃঢ় হয়।
৩. সালাত আদায়ে ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে এবং সমাজ থেকে অপসংস্কৃতি দূর হয়।
ধর্মীয় ও অন্যান্য উপকারিতা:
১. সালাত আদায়ে দুনিয়া ও আখিরাতে মহাসফলতা অর্জন করা যায়।
২. সালাত মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
৩. সালাত আদায়ে বান্দা দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা লাভ করে।
৪. সালাত মুমিনের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে দৃঢ়তা ও স্থিরতা নিয়ে আসে।
৫. সালাত আদায়ে রিযিক বৃদ্ধি পায়।
৬. সালাত হলো উত্তম যিকির এবং সর্বোত্তম আমল।
৭. মোটকথা সালাত আদায়ে বান্দা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। এবং তার প্রিয়পাত্র হয়।
অভিজ্ঞতা-৩ (মূল বই: পৃষ্ঠা ১৯)
শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে জামাআতে সালাত আদায়ের গুরুত্ব ও ফযিলত নিয়ে আলোচনা করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ১৯)
সমাধান : শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে জামাআতে সালাত আদায়ের গুরুত্ব ও ফযিলত আলোচনা করবে। নিচে সালাত আদায়ের গুরুত্ব ও ফযিলত আলোচনা করা হলো-
১. মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে জামাআতে সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
২. আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা রুকুকারীদের সহিত রুকু কর’। (সূরা বাকারা, আয়াত : ৪৩)
৩. জামাআতে সালাত আদায়ের ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে মহানবি (সা.) বলেন, জামাআতে সালাত আদায়ের ফযিলত একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি। (বুখারি ও মুসলিম)
৪. নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাআতে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া পাবেন।
৫. জামাআতে সালাত আদায়ের ফলে মুসল্লিদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব, মহব্বত, ঐক্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়।
৬. নিয়মিত দৈনিক পাঁচবার মসজিদে গেলে শরীর সুস্থ থাকে।
৭. ফজরের সময়ের ঠা-া বায়ু শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। অনেক রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
অভিজ্ঞতা-৪ (মূল বই: পৃষ্ঠা ২০ ও ২১)
শিক্ষার্থীরা ইমামের দায়িত্ব ও মুক্তাদির কর্তব্য বাড়ি থেকে লিখে এনে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ২০ ও ২১)
সমাধান : শিক্ষার্থীরা ইমামের দায়িত্ব ও মুক্তাদির কর্তব্য বাড়ি থেকে লিখে এনে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। নিচে ইমামের দায়িত্ব এবং মুক্তাদির কর্তব্য উল্লেখ করা হলো-
ইমামের দায়িত্ব
১. ইমামের মূল দায়িত্ব হলো সালাতে নেতৃত্ব দেওয়া। যাবতীয় দিক খেয়াল রাখা, কাতার ঠিক রাখা এবং সালাত যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করা। কারণ সালাতে বালক, বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোক থাকতে পারে।
২. ইমামকে সকলের আস্থাভাজন হতে হবে। মুসল্লিদের সালাত শুদ্ধ হচ্ছে কিনা তিনি তা খেয়াল রাখবেন।
৩. যারা সালাত পালন করে না, ইমাম সাহেব তাঁর সুন্দর আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদেরকে মসজিদে নিয়ে আসবেন।
মুক্তাদির কর্তব্য:
১. মুক্তাদি ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে অনুসরণ করবে। রুকু, সিজদা, বসা কোনোটিই সে ইমামের আগে করবে না।
২. ইকামত হওয়ার সাথে সাথে সালাতে দাঁড়িয়ে যাবে এবং ফরয সালাতের ইকামত হলে সুন্নাত পড়বে না।
৩. সালাতের সময় যদি ইমাম ভুল করেন, তবে নিকটবর্তী মুক্তাদি তা সংশোধন করে দেবেন। এক্ষেত্রে ‘আল্লাহ আকবার’ বলে ইমামকে সতর্ক করবেন অথবা শুদ্ধভাবে পড়ে তাকে সাহায্য করবেন।
অভিজ্ঞতা-৫ (মূল বই: পৃষ্ঠা ২৩)
শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে বিতর সালাত পড়ার নিয়ম অনুশীলন করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ২৩)
সমাধান : শিক্ষার্থীরা বিতর সালাত আদায়ের নিয়ম অনুশীলন করবে। নিচে বিতর সালাত পড়ার নিয়ম বর্ণনা করা হলো-
১. প্রথমে তিন রাকাআত বিতরের নিয়ত করবে।
২. অন্যান্য সালাতের ন্যায় তাকবিরে তাহরিমার পর প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা শেষে কিরআত পড়ে যথারীতি রুকু সিজদা করে বসে তাশাহহুদ পড়ে তৃতীয় রাকাআতের জন্য উঠে দাঁড়াবে।
৩. তৃতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ শেষে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে না গিয়ে দু’কান পর্যন্ত হাত উঠাবে।
৪. এরপর দোয়া কুনুত পড়ে যথারীতি রুকু সিজদা করে শেষ বৈঠক করবে।
৫. শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবে।
অভিজ্ঞতা-৬ (মূল বই: পৃষ্ঠা ২৪)
শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে জুমার সালাত আদায়ের নিয়ম অনুশীলন করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ২৪)
সমাধান : শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে জুমার সালাত আদায়ের নিয়ম অনুশীলন করবে। নিচে জুমার সালাত আদায়ের নিয়ম উল্লেখ করা হলো-
১. প্রথমে গোসল করে পবিত্র হয়ে গায়ে সুগন্ধী মেখে আযানের সাথে সাথে মসজিদে প্রবেশ করবে।
২. মজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাআত তাহিয়্যাতুল অযু ও দু রাকাআত দুখলুল মসজিদ নফল সালাত আদায় করবে।
৩. এরপর চার রাকাআত কাবলাল জুমা অর্থাৎ চার রাকাআত সুন্নাতে মুআক্কাদা পড়বে।
৪. এরপর ইমাম সাহেব খুতবা দিলে মনোযোগ সহকারে খুতবা শেষে ইমামের নেতৃত্বে দু’রাকাআত ফরজ সালাত আদায় করবে।
৫. ইমামের সাথে দু’রাকাআত ফরয সালাত শেষে চার রাকাআত বা’দাল জুমা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ সালাত পড়বে।
অভিজ্ঞতা-৬ (মূল বই: পৃষ্ঠা ২৬)
শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে জানাযার নামায আদায়ের নিয়ম অনুশীলন করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ২৬)
সমাধান : শিক্ষার্থীরা জানাযার সালাত আদায়ের নিয়ম অনুশীলন করবে। নিচে জানাযার সালাত আদায়ের নিয়ম উল্লেখ করা হলো-
১. জানাযার সালাতে ইমাম মৃত ব্যক্তির বুক বরাবর দাঁড়াবে এবং যুক্তাদিরা পেছনে কাতার করে দাঁড়াবে।
২. প্রথমে সকলে মনে মনে সালাতের নিয়ত করবে। এরপর আল্লাহু আকবার বলে দু’হাত কান বরাবর উঠিয়ে হাত বাঁধবে।
৩. এরপর আমরা সালাতে যে সানা পড়ি তা পড়বে। তবে ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা শেষে ‘ওয়া জাল্লা সানাউকা’ বাক্যটি অতিরিক্ত পড়বে।
৪. এরপর আবার আল্লাহ্ আকবার বলবে কিন্তু হাত উঠাবে না। অতঃপর আমরা সালাতে যে দরুদ পড়ি তা পড়বে।
৫. দরুদ পড়া শেষে আবার আল্লাহু আকবার বলবে এবং আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা….. দোয়াটি পড়ে আবার আল্লাহ্ আকবার বলে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবে।
৬. মনে রাখবে জানাযা সালাত ফরযে কিফায়া এবং এতে চারটি তাকবির দিতে হয়।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা সব অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post