৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৫ম অধ্যায় সমাধান : আদর্শকে আরবিতে ‘উছওয়া’ বলে। মানুষের সামগ্রিক জীবন সুন্দর ও সফল করতে যেসব মনীষীদের জীবনকর্ম অনুসরণ করা হয় তা-ই হলো জীবনাদর্শ।
আদর্শ জীবনাদর্শ বলতে ইসলাম শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে এমন কিছু ব্যক্তির জীবন সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যাদের জীবন আদর্শ জীবন এবং যাদের জীবন থেকে আমাদের শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে।
৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৫ম অধ্যায় সমাধান
যেমন- মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.), হযরত ইসমাঈল (আ.), উম্মুল মু’মুনিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.), হযরত উমর (রা.), খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) প্রমুখ ব্যক্তিদের জীবন আদর্শ জীবন।
এসব মহান ব্যক্তিদের জীবনাদর্শ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। আমরা এসব মহান ব্যক্তিদের জীবনাদর্শ সম্পর্কে জানব এবং তাদেরকে অনুসরণ করব।
দলগত কাজ
বাড়ির কাজ, শ্রেণির কাজ, অনুশীলনমূলক কাজ ইত্যাদি।
এই সেশনের শুরুতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তাদের জীবনের দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষটির নাম-পরিচয় জানতে চেয়ে চিন্তা করার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেবেন। শিক্ষার্থীরা চিন্তা করে তাদের নামগুলো লিখবে। এক্ষেত্রে তারা যেই নামই লিখুক না কেন তাকে নিরুৎসাহিত না করে বরং তাকে উৎসাহ দিবেন। শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষের নাম লেখা শেষে শিক্ষক তাদের নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো বা তার অনুরূপ প্রশ্ন করতে পারেন।
তোমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষটি কে?
তাকে তোমার কাছে কেন সবচেয়ে ভালো মানুষ মনে হয়?
তিনি কী কী কাজ করেন যেগুলোকে তোমার ভালো কাজ মনে হয়।
এর মাধ্যমে প্রথম সেশন শেষ হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীদের জবাব নিম্নরূপ হতে পারে। আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষটি হলো-
১. আমার বাবা
২. আমার মা
৩. আমার শিক্ষক
৪. আমার মসজিদের ইমাম
৫. আমার বড় ভাই
৬. আমার বড় বোন
৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৫ম অধ্যায়
দ্বিতীয় সেশনে শিক্ষার্থী তার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষটির ভালো হওয়ার কারণ লিখবে। নিচে একটি নমুনা দেওয়া হলো-
আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষ
১. আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষ হলেন আমার শিক্ষক।
২. তিনি শিক্ষার্থীদের খুব ভালোবাসেন।
৩. তিনি আমাদের অত্যন্ত সুন্দর করে গল্প ও উদাহরণের মাধ্যমে পড়া বুঝিয়ে দেন।
৪. আমরা একবারে না বুঝলে তিনি তা বারবার আমাদের বুঝিয়ে দেন।
৫. কোনো অবস্থাতেই তিনি বিরক্ত না হয়ে হাসিমুখে আমাদের সবকিছু পরিচালনা করেন।
৬. তিনি আমাদের প্রত্যেকের নিকট গিয়ে পড়ালেখার বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
৭. তিনি কখনো আমাদের বকাঝকা করেন না এবং রাগ করেন না।
৮. আমাদের কেউ অসুস্থ হলে বা দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকলে তিনি আমাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন।
৯. আমাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমরা তার সহযোগিতা পাই।
তৃতীয় সেশনে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় মানুষগুলোর ভালো দিকগুলোর একটি দলগত তালিকা তৈরি করবে।
চতুর্থ সেশনে সকল দলের তালিকা একত্রিত করে বড় একটি তালিকা তৈরি করে তা পোস্টারে লিখে দেয়ালের একটি স্থানে লাগিয়ে রাখবে যাতে সবাই দেখতে পায়। এই পোস্টারকে কেন্দ্র করেই পরবর্তী সেশনগুলো পরিচালিত হবে।
বাড়ির কাজ (মূল বই: পৃষ্ঠা ১১০)
শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে মহানবি (সা.)-এর ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা আমানতদারিতা প্রভৃতি গুণাবলি সম্পর্কে আলোচনা করবে এবং নিজেদের মধ্যে এসব গুণের অনুশীলনের চেষ্টা করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ১১০)
সমাধান (নমুনা উত্তর) : নিচে মহানবি (সা.)-এর ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আমানতদারিতা প্রভৃতি গুণাবলি সম্পর্কে দলভিত্তিক আলোচনা করা হলো-
১. মহানবি (সা.) তাঁর জন্মের পূর্বে তাঁর পিতাকে এবং শৈশবে তাঁর মা ও দাদাকে হারান। এরপরও তিনি ধৈর্যহারা হননি।
২. ইসলামের দাওয়াত দিলে মহানবি (সা.)-এর আত্মীয়স্বজন এবং মক্কার লোকেরা তাঁর ওপর চরম অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছিল। এসময় তিনি চরম ধৈর্যধারণ ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের ওপর কোনো প্রতিশোধ নেননি।
৩. শুধু মহানবি (সা.)-কে নয়, তাঁর সঙ্গী-সাথিদেরও কাফিররা চরম নির্যাতন করেছিল। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কষ্ট দেওয়া, প্রহার করা, লৌহদন্ড গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাগ দেওয়া, প্রখর মরুভূমিতে চিৎ করে শুইয়ে বুকে পাথর দেওয়াসহ এমন কোনো অত্যাচার নেই যা তারা করেনি। এরপরও মহানবি (সা.) এবং তার সঙ্গী-সাথিরা কাফিরদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
৪. ইসলাম প্রচারে রাসুল (সা.)-এর অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে। কাফিরদের অত্যাচারে জর্জরিত আপনজনদের তিনি আবিসিনিয়া পাঠিয়ে দেন।
৫. কাফিরদের এরূপ অত্যাচারের পরও তারা রাসুল (সা.)-এর পরিবারের ওপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে এবং নির্জন পার্বত্য এলাকায় আবি তালিব গুহায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। সেখানে তাদের খাদ্য-পানীয়ের চরম সংকট ভীষণ দুঃখ-কষ্টে দিন কাটে। তিন বছর পর তাদের মুক্তি মিলে। এরূপ ত্যাগ ও কষ্টের পরও রাসুল (সা.) ধৈর্য হারাননি।
৬. নবুয়তের দশম বছরে মহানবি (সা.)-এর শক্তি, সাহায্যকারী, পরামর্শদাতা হযরত খাদিজা (রা.) ও চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। এরপর রাসুল (সা.) তায়েফে ইসলাম প্রচারে গেলে তায়েফবাসীরা তাঁর ওপর চরম অত্যাচার চালায় এবং পাথরের আঘাতে রক্তে রঞ্জিত করে। পর পর তিনটি দুঃখজনক ঘটনায় রাসুল ভীষণ কষ্ট পান। এরপরও তিনি তায়েফবাসীদের বদদোয়া করেননি, বরং তাদের ক্ষমা করে দেন। তিনটি ঘটনার সান্ত¡নাস্বরূপ আল্লাহ তাঁর প্রিয়নবি (সা.)কে মিরাজের রাতে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে যান।
৭. রাসুল (সা.) ছিলেন শ্রেষ্ঠ আমানতদার। মক্কার কাফিররা যখন তাকে হত্যা করার জন্য তাঁকে ঘেরাও করে তখনো তাদের সম্পদ তাঁর নিকট গচ্ছিত ছিল এবং তিনি হযরত আলী (রা.)-কে তা ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
বাড়ির কাজ (মূল বই: পৃষ্ঠা ১১৪)
শিক্ষার্থীরা হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর উত্তম গুণাবলি সম্পর্কে পরস্পর আলোচনা করবে এবং একটি পোস্টার তৈরি করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ১১৪)
সমাধান (নমুনা উত্তর) : নিচে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর উত্তম গুণাবলি উল্লেখ করা হলো। শিক্ষার্থীরা এসব গুণাবলির আলোকে একটি পোস্টার তৈরি করবে-
১. হযরত ইসমাঈল (আ.) ছিলেন চরম ধৈর্যশীল। নিশ্চিত মৃত্যু বলা হতো। জানার পরও তিনি ধৈর্য হারাননি। মাত্র তেরো বছর বয়সে যখন পিতা ইবরাহিম তাঁকে বললেন, ‘আমি আল্লাহর নির্দেশে তোমাকে জবাই করবো, তখন তিনি নিশ্চিন্তে তাতে সায় দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আপনি আল্লাহর নির্দেশ পালন করুন আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।’
২. পবিত্র কুরআনে হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে সৎ, ধৈর্যশীল, সহনশীল, ওয়াদা পালনকারী, সালাতের হিফাজতকারী, পরিবারকে সালাতের নির্দেশকারী, আল্লাহর ইবাদাতের দিকে মানুষকে আহ্বানকারী ইত্যাদি গুণের অধিকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩. তিনি ছিলেন বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল আরবি ভাষী।
৪. মহানবি (সা.) বলেন, হযরত ইসমাঈল ছিলেন স্পষ্ট আরবি ভাষা ব্যবহারকারী। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
৫. হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে ‘আবুল আরাব’ বা আরবদের পিতা বলা হতো।
৬. তিনি ছিলেন যথার্থ ওয়াদা পালনকারী। তিনি একবার একজন লোকের সহিত একটি নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষা করার অঙ্গীকার করেন। লোকটি কথা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে না আসলেও তিনি তিনদিন সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করেন।
৭. কুরআনে আল্লাহ তাঁকে সাদিকুল ওয়াদ বা অঙ্গীকার পালনকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
৮. তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুল ও নবি।
৯. তিনি তাঁর পিতার সহিত পবিত্র কাবা নির্মাণ করেছিলেন।
১০. হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর প্রশংসায় নয়টি সূরায় ২৫টি আয়াত বর্ণিত হয়েছে।
বাড়ির কাজ (মূল বই: পৃষ্ঠা ১১৭)
শিক্ষার্থীরা হযরত আয়েশা (রা.)-এর চরিত্রের উত্তম গুণাবলি ও মর্যাদা সম্পর্কে একটি পোস্টার তৈরি করবে। (ইসলাম শিক্ষা বই: পৃষ্ঠা ১১৭)
সমাধান : হযরত আয়েশা (রা.)-এর চরিত্রের উত্তম গুণাবলি ও মর্যাদা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তথ্য প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এসব তথ্যের আলোকে একটি পোস্টার করবে-
হযরত আয়েশা (রা)-এর গুণাবলি:
১. হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ, বুদ্ধিমতি, অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারিণী।
২. তিনি ছিলেন নারীদের মধ্যে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী। তার বর্ণিত হাদিস সংখ্যা ২২১০টি। অসংখ্য সাহাবি এবং তাবেয়ী তাঁর নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা করেন।
৩. তিনি ছিলেন অনুপম চরিত্র ও মাধুরে্যর অধিকারী।
৪. তিনি ছিলেন তীক্ষè মেধাশক্তিসম্পন্ন, বিদুষী, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, তেজস্বিনী, যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী, গৃহকর্মে সুনিপুণা, শিক্ষয়িত্রী এবং সত্যের সাধক।
৫. তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল, মধুর আলাপী, আদর্শ স্ত্রী ও জ্ঞানতাপস।
৬. তিনি সর্বদা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতেন।
৭. তাঁর সতীত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে আয়াত নাযিল করেন।
৮. মহান আল্লাহ তাঁর উসিলায় তায়াম্মুমের বিধান চালু করেন।
৯. তিনি বছরের অধিকাংশ সময়ই রোযা রাখতেন এবং রাতের বেলায় আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকতেন।
১০. তিনি দান-সাদকা করতে পছন্দ করতেন। অসহায় ফকির- মিসকিনকে দান করতে পারলে তিনি তৃপ্তি পেতেন।
১১. তিনি দানশীলতা, মিতব্যয়িতা, পরোপকারিতা, ধর্মপরায়ণতা, দয়াসহ সর্বপ্রকার গুণে গুণান্বিত ছিলেন।
হযরত আয়েশা (রা.)-এর মর্যাদা:
১. বনু মুসতালিক যুদ্ধে কতিপয় মুনাফিক তাঁর চরিত্র নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিলে আল্লাহ সূরা নূরের ১০টি আয়াত নাযিল করে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করেন এবং তাঁকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেন।
২. হযরত আয়েশা (রা.) মহানবি (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেন।
৩. তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবি (সা.) বলেন, নারী জাতির ওপর আয়েশা (রা.) মর্যাদা তেমন, যেমন খাদ্যসামগ্রীর ওপর সারিদের মর্যাদা। সারিদ হলো আরবের একটি শ্রেষ্ঠ খাদ্য যা রুটি, গোশত ও ঝোলের সমন্বয়ে তৈরি হয়।
৪. রাসুল (সা.) আরও বলেন, আয়েশা (রা.) হলেন মহিলাদের সাহায্যকারিণী।
৫. একবার আমর বিন আস (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আপনার নিকট প্রিয়তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আয়েশা (রা.)। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে, তিনি বললেন, তাঁর বাবা। অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রা.)।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা সব অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৫ম অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post