৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান : সম্প্রীতি হলো সদ্ভাব। অর্থাৎ সকলের সাথে মিলেমিশে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রেখে চলাই সম্প্রীতি। মানুষের মধ্যে সব ধর্মের লোকই অন্তর্ভুক্ত।
জাতি, বর্ণ, নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, পারস্পরিক সংহতি ও সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করাই ধর্মীয় সম্প্রীতি। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সব ধর্মেরই মূলকথা শান্তি। প্রত্যেকটা ধর্মেই সকলের সাথে মিলেমিশে সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান
ইসলাম ধর্মের মৌলিক বাণীই হলো সম্প্রীতি। মানবজাতিকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে একে অপরের কল্যাণ সাধন করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের লক্ষ্য। ইসলাম জাতি, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, আরব-অনারব, সাদা-কালো, ধনী-গরিব সকল ভেদাভেদ ভুলে সকলের সাথে উদার ও মানবীয় আচরণের শিক্ষা দেয়।
আমাদের মহানবি (সা.) আমাদের জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে চলার বেশকিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত আমাদের দেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাথে সম্প্রীতি বজায় রেখে জীবনযাপন করা।
ছবি বা কমিক্স অঙ্কন, অঙ্কিত চিত্র বিশ্লেষণ, কাজ
নির্দেশনা : এই সেশনের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা কয়েকটি ছবি বা কমিক্স আঁকবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী ছবি আকার জন্য দুটি করে কাগজ পাবে। প্রত্যেকটি কাগজে চার ঘরবিশিষ্ট একটি বক্স থাকবে এবং সে বক্সে কিসের ছবি আঁকতে হবে তা বলে দেওয়া হবে।
প্রথম কাগজে থাকবে নওয়াব বেগম ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর নাম এবং তিনি মানুষের উপকার করেছেন তার কিছু উদাহরণ। দ্বিতীয় কাগজে থাকবে মাদার তেরেসার নাম এবং তাঁর পরোপকারের কিছু উদাহরণ। প্রতিটি কাগজে চারটি বক্স থাকবে। একটি বক্সে একজন মনীষীর নাম থাকবে এবং বাকি তিনটি বক্সে দুইটি করে মোট ছয়টি তাঁর পরোপকারের কথা থাকবে। শিক্ষার্থী প্রতিটি বক্সে তাঁর উপকার বোঝাতে এমন এটি ছবি অঙ্কন করবে যাতে তার উপকারের কাজটি বোঝা যায়। কিন্তু সেখানে ইসলামি বিধানে কোনো মানুষ বা প্রাণীর ছবি যেন না থাকে।
অঙ্কিত চিত্র বিশ্লেষণ : এখানে দুইটি সেশন হবে। প্রথম সেশনে শিক্ষার্থীদের দুটি দলে ভাগ করা হবে। একটি দল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করবে এবং দ্বিতীয় দল মাদার তেরেসার কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। আলোচনা শেষে প্রতিটি দলকে একটি পোস্টার দেওয়া হবে। তাতে তারা যে কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে সেগুলো দ্বারা মানুষ কীভাবে উপকার পেয়েছে তা তারা পোস্টারে লিখবে।
দ্বিতীয় সেশনে শিক্ষার্থীরা একদল অন্য দলের পোস্টারগুলো দেখবে এবং অন্য দলের পোস্টারে নতুন কিছু পেলে তা নিজেদের পোস্টারে অন্তর্ভুক্ত করবে।
কতিপয় প্রয়োজনীয় তথ্য
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর পরোপকারমূলক কাজ
১. দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন।
২. দুস্থ মানুষের চিকিৎসায় অর্থ দান।
৩. বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
৪. ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
৫. রাস্তাঘাট নির্মাণ।
৬. দিঘি, পুকুর খনন।
মাদার তেরেসার কল্যাণমূলক কাজ দ্বারা মানুষ যেভাবে উপকার পেয়েছে:
১. তাঁর সেবা ও চ্যারিটির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়েছে।
২. বস্তি এলাকার শিশুরা শিক্ষা পাঠ থেকে বর্ণিত ছিল। তার উদ্যোগে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণে শিশুরা শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছে।
৩. অনাথ বা এতিম শিশুদের জন্য আশ্রম তৈরি ও পরিচালনায় তারা একটা নিরাপদ আশ্রয় লাভ করেছে।
৪. শিশুদের জন্য খাবার পরিবেশনে তারা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে।
৫. এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ¥া রোগীদের নিকট কেউ যেতে চায় না এবং কেউ তাদের সেবা করতে চায় না, ফলে তারা ধুকে ধুকে মারা। যায়। মাদার তেরেসা তাদের সেবা দিয়ে তাদের কে সুস্থ করে তোলেন।
মাদার তেরেসার পরোপকারমূলক কাজ:
১. ক্লিনিকে অসুস্থ মানুষের সেবা।
২. মিশনারিজ অব চ্যারিটি স্থাপন।
৩. বস্তি এলাকায় শিশু বিদ্যালয় পরিচালনা।
৪. অনাথ আশ্রম পরিচালনা।
৫. শিশুদের জন্য খাবার পরিবেশন।
৬. এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ¥া রোগীদের সেবা।
৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৬ষ্ঠ অধ্যায়
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর কল্যাণমূলক কাজ দ্বারা মানুষ যেভাবে উপকার পেয়েছে:
১. দাতব্য চিকিৎসালয়ে মানুষ বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা পেয়েছে।
২. দুস্থ মানুষ তার কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পেয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়েছে।
৩. শিক্ষায় অনগ্রসর নারীরা শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছে।
৪. রাস্তাঘাট নির্মাণে মানুষ সহজে চলফেরার সুযোগ পেয়েছে শহরের সাথে গ্রামের সংযোগ তৈরি হয়েছে।
৫. ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মানুষ ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে এবং সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণের যোগ্যতা লাভ করেছে।
৬. দিঘি, পুকুর খননে মানুষ সুপেয় পানি পান করে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ পেয়েছে।
বিশেষ লক্ষণীয় : যেহেতু পাঠ্যবই এ নওয়াব বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী এবং মাদার তেরেসার জীবনী উল্লেখ নেই তাই এই অংশের পাঠ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন শিখন পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখানো, গল্প বলা, শিক্ষক সহায়িকা থেকে পড়ে শুনানো ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। মূলকথা হলো শিক্ষার্থীরা যাতে এই দুইজন ব্যক্তির জীবনের মানবকল্যাণমূলক কাজগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করে সেই সুযোগ তাদের জন্য সৃষ্টি করে দিতে হবে। আর সেই সুযোগ সৃষ্টির জন্য যা যা কাজ করতে হয় তার সবগুলোই করতে হবে।
সম্প্রীতি/ ধর্মীয় সম্প্রীতি:
সম্প্রীতি অর্থ সম্ভাব। অর্থাৎ সবার সাথে মিলেমিশে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রেখে চলা। সপ্তম শ্রেণির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ও এ শিক্ষার্থীদেরকে, যে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাটি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটি হলো ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে সকলের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা। এর আলোকে নওয়াব বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী এবং মাদার তেরেসার জীবন ও কাজের কিছু অংশ তুলে আনা হয়েছে যেগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারবে যে সকল ধর্মেরই মূল প্রতিপাদ্যগুলো একটি হলো জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনসেবা ও পরোপকার করা এবং সকলের সাথে সম্প্রীতি বজায় রাখা। যেহেতু মূলবইয়ে এই দুইজন মনীষীর জীবনী ও মানবকল্যাণমূলক কাজের বিবরণ নেই তাই শিক্ষার্থীদের জানার সুবিধার্থে তাঁদের জীবনী দেওয়া হলো-
নওয়াব বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী:
জন্ম : নওয়ার বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ১৮৩৪ সালে কুমিল্লার হোমনাবাদ পরগনা যা এখন লাকসাম উপজেলা, তার পশ্চিমগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
সেবামূলক কাজ : নওয়াব বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ছিলেন বাংলাদেশের মুসলমান নারী জাগরণের পথিকৃৎ। বাংলাদেশের নারী সমাজ যখন অবহেলিত তখন তিনি ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে নিজ গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি একটি কলেজে রূপান্তরিত হয় যার নাম দেওয়া হয় নওয়াব ফয়জুন্নেছা কলেজ।
১৮৯৩ সালে পর্দানশীল এবং দরিদ্র নারীদের চিকিৎসার জন্য তিনি নিজ গ্রামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। এছাড়া তিনি ‘ফয়জুন্নেছা জেনানা হাসপাতাল’ নামে একটি চিকিৎসালয়ও স্থাপন করেন। শিক্ষা বিস্তারেও তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইংরেজি শিক্ষার জন্য ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় স্থাপন করেন। দুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নির্মাণে ও অন্যান্য জনহিতকর কাজে অর্থ দান করেন। এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, দীঘি-পুকুর খনন প্রভৃতি জনহিতকর, কল্যাণকর কাজে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর সমস্ত ভূসম্পত্তি জাতির সেবায় দান করে যান।
পুরস্কার : নওয়াব বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ছিলেন, অত্যন্ত পরোপকারী। তার এসব মহৎ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ব্রিটেনের মহারানী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে তাকে নওয়াব উপাধিতে ভূষিত করেন। মহারানী ভিক্টোরিয়া ‘নওয়াব’ উপাধি সংবলিত সনদ ও হীরকখচিত মূল্যবান পদক তাকে প্রদান করেন। তৎকালীন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মিস্টার ডগলাস আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে এই পদক প্রদান করেন।
মৃত্যু : নওয়াব বেগম ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নিজ জেলায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা সব অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post