৭ম শ্রেণির গণিত ৭ম অধ্যায় সমাধান : এসো একটি অনুমানের খেলা খেলি। খেলাটি হলো প্রিয় বই, প্রিয় বিখ্যাত ব্যক্তি বা প্রিয় সিনেমার নাম অনুমান করতে হবে। নিয়মটা বলে দিই। লটারি করে ক্লাসের সামনে একজন যাবে এবং প্রিয় কোন বই, বিখ্যাত ব্যক্তি বা সিনেমার নাম মনে করে যাবে।
সহপাঠিরা সবাই প্রশ্ন করে তার থেকে সঠিক উত্তরটি বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে। কিন্তু কয়েকটি শর্ত আছে। প্রশ্নগুলোর কোনটির উত্তরই সে মুখে বা ইশারায় বলতে পারবে না, তার হাতে একটি টর্চ বা লাইটের সুইচ থাকবে, তাকে উত্তর দিতে হবে সেই আলো জ্বালিয়ে প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে একবার আলো জ্বালাবে। যদি না হয় তবে আলো জ্বালাবে না।
৭ম শ্রেণির গণিত ৭ম অধ্যায় সমাধান
আচ্ছা, খেয়াল করেছো যে খেলাটির মাঝে তোমরা একটি সংকেত ব্যবহার করেছো? হ্যাঁ বলতে হলে আলো জ্বালিয়েছো আর না হলে আলো বন্ধ রেখেছো। এমন সংকেতের মাধ্যমে কেবল হ্যী আর না ব্যবহার করে বেশ কঠিন একটি সিদ্ধান্ত তোমরা নিতে পেরেছো।
আরেকটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে দেখো, তোমাদের লাইট বাল্ব বা টর্চের বাল্বে সুইচ টিপে বিদ্যুতের উপস্থিতি নিশ্চিত করলে আলো জ্বলে। সুতরাং, বিদ্যুতের উপস্থিতি মানে হ্যাঁ, আর অনুপস্থিতি মানে না। এখন আমরা যদি গাণিতিকভাবে হ্যাঁ হলে ১ আর না হলে ০ ধরে নিই, তাহলে বিদ্যুতের উপস্থিতি মানে ১, আর অনুপস্থিতি মানে ০ দাঁড়ায়।
সেই অর্থে তোমরা কেবল ১ বা০ ব্যবহার করে করে সঠিক প্রশ্নের উত্তর বের করে নিয়ে আসতে পেরেছো এবং একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছো। অনেকটা সময় হয়তো লেগেছে কিন্তু হ্যাঁ অথবা না ছাড়া আর কিছুই কিন্তু জানার বা বোঝার প্রয়োজন হয় নাই।
এবার তোমাদের এখন একটা মজার ব্যাপার বলি। তোমাদের চারপাশে কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর এরকম যত জিনিস দেখছো এরা সবাই আসলে এই অনুমানের খেলার মতো করেই কাজ করে। তারমানে শুধুমাত্র হাঁ আর না অর্থাৎ ১ আর ০ ব্যবহার করেই সব কাজ করে।
অবাক ব্যাপার তাই না। এই যন্ত্রগুলির আসলে বিদ্যুতের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির সংকেত ব্যবহার করেই আমরা কম্পিউটারে ভিডিও গেইম খেলি, সিনেমা দেখি, লেখালেখি করি। কিন্তু সেই সংকেত তখন কেবল একটি হ্যী বা একটি না এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।
বাইনারি সংখ্যার গল্প
অনেকগুলো হ্যী এবং না, অর্থাৎ ১ আর ০ মিলিয়ে বড় একটি সংকেত তৈরি করা হয়। কিন্তু তার মাঝে এই দু’টি ছাড়া অন্য আর কোন সংকেত থাকে না। আচ্ছা, আমরা সাধারণত গণনা করতে বা সংখ্যা লিখতে কয়টি সংকেত বা অঙ্ক ব্যবহার করি সেগুলো লিখে নিচের সারণিটি পূরণ করো:
আমরা যেমন গণিত বা গণনা করতে গিয়ে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত দশটি অঙ্ক দিয়ে তৈরি দশ ভিত্তিক বা দশমিক সংখ্যাপদ্ধতি ব্যবহার করি। কম্পিউটার বা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের ক্ষেত্রে এমন নয়। কিন্তু কী আর করা, বেচারার সব কাজ ঐ ০ আর ১ দিয়েই করতে হয়।
দশমিক পদ্ধতিতে আমরা ০-৯ পর্যন্ত চিহ্নগুলোকে অঙ্ক বা digit বলি। তাই বাইনারি’র ০ এবং ১-কে বাইনারি অঙ্ক বা Binary Digit বলা হয়। বার বার Binary Digit না বলে Binary হতে Bi আর 121010-এর t মিলিয়ে সংক্ষেপে বলা হয় Bit. বাংলায় আমরা একে বিট লিখি।
দুই-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিতে o আর ১ ছাড়া আর কোন অঞ্্ব নিই। এমন কিন্তু আরো অনেক সংখ্যা পদ্ধতি আছে। তুমি কি ব্রাজিলের পিরাহা উপজাতির কথা শুনেছো? তাদের বসবাস হলো আমাজন বনের গহীনে, সভ্যতার সাথে ওদের সম্পর্ক নেই মোটেই। জ্ঞান-বিজ্ঞান তো দূরের কথা, তাদের বর্ণমালা, ভাষার শব্দ এবং গণনাপদ্ধতিও খুবই সীমিত। তারা ১ এবং ২ এর বেশি গণনা করতে পারে না। ২-এর বেশি যে কোন সংখ্যাকে তারা বলে ‘অনেক”! মজার না?
তো কেমন হয় আমরা যদি দুই-ভিত্তিক পদ্ধতিতে গণনা করা শিখতে পারি? একটা কথা তোমাদের আগেভাগেই জানিয়ে রাখি, দুই-ভিত্তিক পদ্ধতিটি ভালো করে বুঝলে কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে সেটিও বুঝতে পারবে। শুধু তাই নয়, কম্পিউটারের অনেক সমস্যা তুমি নিজেই বুঝে সমাধান করতে পারবে। তাহলে চলো পরিচিত হয়ে নিই দুই-ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতির সাথে।
খেলার শুরুতে তোমরা যেকোনো চারজন ক্লাসের সামনে গিয়ে অন্যদের মুখোমুখি দীড়াও। তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকবে একটি করে বড় কার্ড। এবার প্রথম জনের কার্ডে একটি ডট এঁকে দাও। এভাবে দ্বিতীয় জনের কার্ডে দুইটি আর তৃতীয় জনের কার্ডে চারটি ডট আঁক।
কার্ডের খেলার সব শর্ত জানা শেষ। এবার এসো আমরা ধাপে ধাপে গণনা করা শিখি। ধারাবাহিকভাবে বসিয়ে অন কার্ডে যে কয়টি ডট পাওয়া যাবে সেটিই আমাদের গণনার ফলাফল। নিচের ছবিটি দেখো- মোট ২টি অন কার্ড আছে, বাকিগুলো সব অফ। প্রথম কার্ডে একটি ডট; দ্বিতীয় কার্ডটি অফ; তৃতীয় কার্ডে ৪টি ডট; এবং চতুর্থ কার্ডটি অফ। একই কার্ড একবারের বেশি ব্যবহার করতে পারবে না। অর্থাৎ, মনে করো ২ ডটের কার্ডটি তোমার দুই বার ব্যবহার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। সেটি চলবে না। ২ ডটের কার্ড তোমার কাছে একটিই রয়েছে।
- খেয়াল করে দেখো, আমাদের কাছে ৫টি ডট আছে এমন কোন কার্ড নিই।
- ৫টি ডট বানাতে হলে আমাদের একাধিক কার্ড ব্যবহার করতে হচ্ছে।
- সে জন্যে ৫ এর থেকে বড় সংখ্যার ডট আছে ৮টি।
- কিন্তু ৮টি ডট দিয়ে আমরা ৫ বানাতে পারবো না।
- সে ক্ষেত্রে ৮ এর থেকে কম সংখ্যক ডট আছে 8টি, অর্থাৎ ৩য় কার্ডে। সেটি নিলাম।
- এবার চিন্তা করে দেখো ৫ বানাতে 8 এর সাথে আর কয়টি ডট লাগবে।
- একটি, ঠিক না? একটি ডটের কার্ড তো আমাদের আছে- ১ম কার্ডটি।
- তাহলে ৫ বানাতে ৩য় আর ১ম কার্ডটি অন রাখলেই আমার চলছে।
- বাকি সবগুলি অফ করে দিলেও কোন সমস্যা থাকছে না। সেই কাজটিই করা হয়েছে।
তাহলে, আমরা ধাপে ধাপে চিন্তা করে বের করলাম কোন কোন কার্ড অন বা অফ করলে মোট ডটসংখ্যা ৫ হবে। এভাবে ধাপে ধাপে কোন সমস্যার সমাধান করার পদ্ধতিকে আ্যালগোরিদম( Algorithm) বলে।
এবার তাহলে দশমিক সংখ্যা ৩-কে বাইনারিতে কীভাবে প্রকাশ করা যায়, কার্ড এবং ডটের সাহায্যে তা বের করে দেখাও। নিচের ছকটি ব্যবহার করতে পারো। তোমার ডট বসানোর সুবিধার জন্য কার্ড গুলো ফাঁকা রাখা হয়েছে। সঠিক কার্ডে সঠিক সংখ্যক ডট বসাও এবং কার্ডের নিচে অবস্থিত ফাঁকা ঘর পূরণ করো।
তোমরা ইতিমধ্যেই Binary digit বা Bit অর্থাৎ বাইনারি অঙ্কের বিষয়ে জেনেছো। কার্ডের খেলাটিতে একটি কার্ড দিয়ে এক বিট বোঝানো যায়। যেহেতু আমরা মোট চারটি কার্ড নিয়ে কাজ করেছি। তাহলে, প্রথম কার্ডটি প্রথম বিট, দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বিট এভাবে চারটি কার্ড দিয়ে ৪টি বিটকে বোঝানো যায়।
দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে যেমন ২৪৩৫ একটি 8 অঙ্কের সংখ্যা। তেমনি বাইনারি সংখ্যাপদ্ধতিতে এই চারটি কার্ডের অবস্থা (অন বা অফ অর্থাৎ ১ বা ০) দিয়ে বাইনারি 8 অঙ্কের সংখ্যা বোঝানো যায়। যেমন দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির ৫ হচ্ছে একটি ১- অঙ্কেরর সংখ্যা। আর ৫ এর বাইনারি প্রকাশ ০১০১ হচ্ছে একটি বাইনারি 8 অঙ্কের সংখ্যা বা 8 বিট সংখ্যা।
কার্ড ব্যবহার না করে বাইনারি সংখ্যা গণনা
কার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দেখেছো যে ডট দেখা গেলে ১ আর না দেখা গেলে ০ ধরা হচ্ছে, এবং প্রতিটি কার্ডের ডটের সংখ্যা আগের কার্ডটিতে থাকা ডটের সংখ্যার দ্বিগুণ। তা-ই যদি হয়, তাহলে আমরা ডট ব্যবহার না করে কেবল অন বা অফ ধরি।
আর অন-অফ বুঝানোর ক্ষেত্রে লাইট বান্তবের থেকে ভালো কী আছে? তাহলে এসো, এবার ডট বাদ দিয়ে একই গণনা করা যায় কিনা দেখি। নিচের ছবিতে দেখো, কার্ডের বদলে বাল্ব ব্যবহার করে অন করে রাখা হয়েছে এবং ডটের সংখ্যার বদলে সরাসরি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে। উপরের ছবিটিতে ১ম থেকে ৪র্থ সব কয়টি অবস্থানই অন আছে। এবার ছবিটি দেখে একটু দাগ দাও।
দলগত কাজ
তোমরা 8 জনের দল তৈরি করে ০ থেকে ১৫ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর বাইনারি মান কার্ড এবং বান্বের সাহায্যে নির্ণয় করো। আরেকটু ভেবে দেখিঃ তুমি যদি বিভিন্ন বিট সংখ্যার জন্য সর্ববামের কার্ডে ডটের সংখ্যা এবং এ সংখ্যক বিট দিয়ে সর্বোচ্চ সম্ভব সংখ্যা নির্ণয় করতে পারো, তবে আগের পৃষ্ঠার সমস্যাগুলো সমাধান করা তোমার জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে।
উপরের ছকটি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করো। এবার বলো, যে কোন একটি বিট সংখ্যা ও তার জন্য সর্বোচ্চ কোন দশমিক সংখ্যা তৈরি করা সম্ভব এদের মধ্যে কি কোন সম্পর্ক আছে? কোন সূত্র বানাতে পারবে সহজেই বিট সংখ্যা থেকে সর্বোচ্চ দশমিক সংখ্যা বের করার জন্য?
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির গণিত সকল অধ্যায়ের সমাধান
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ৭ম শ্রেণির গণিত ৭ম অধ্যায় সমাধান ২০২৪ সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post