৭ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর : পরিস্থিতি ১: আজ তুমি ও তোমার সহপাঠী সবার আগে ক্লাসে চলে এসেছ। ক্লাসরুম একটু আগেই বাড়ু দেওয়া হয়েছে এবং মেঝে পানি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে, যা তুমি খেয়াল করোনি। ভেজা মেঝেতে তোমার জুতার ছাপ পড়ায়, বিদ্যালয়ের পরিহন্নতাকর্মী ওই জায়গাগুলোতে আবার মুছে দিতে থাকলেন। এ অবস্থায় তুমি তাকে কী বলবে এবং কীভাবে বলবে?
পরিস্থিতি ২: বিশেষ প্রয়োজনে মাকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যেতে হবে, যেখানে আগে কখনো যাওনি। সেই আত্মীয়রা থাকে তোমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে। ওই জায়গায় কীভাবে যাবে, আর ঠিকমতো পৌছানোর পর কার কার সাথে যোগাযোগ করবে?
৭ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
পরিস্থিতি ৩: বিদ্যালয়ে আসার পথে জানতে পারলে তোমাদের স্কুলের একজন শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে বন্ধুরা মিলে আলোচনা করলে এবং সিদ্ধান্ত হলো যে তোমরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে। এখন বন্ধুরা মিলে কার কার সাথে যোগাযোগ করবে ও কী বলবে?
পরিস্থিতি ৪: বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী নতুন ভর্তি হয়েছে। সে ও তার পরিবার এ এলাকায় কিছুদিন আগে এসেছে। তোমার বিদ্যালয় এবং এলাকা সম্পর্কে তাকে কীভাবে পরিচিত করবে?
পরিস্থিতি ৫: একটি বিষয় নিয়ে তোমার দুই বন্ধুর মধ্যে মতের পার্থক্য হয়েছে এবং তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে এ অবস্থা চলায় তুমি এগিয়ে গেলে এবং তাদেরকে শান্ত করতে চাইলে। তোমার ভূমিকা ও কথা কী হবে?
পরিস্থিতি ৬: তোমার কাছাকাছি এলাকায় আগুন লেগেছে। এ রকম জরুরি অবস্থায় কার কার সাথে কিংবা কোন সেবাসংস্থার সাথে যোগাযোগ করবে এবং কীভাবে যোগাযোগ করবে।
ভাষায় মর্যাদার প্রকাশ
মানুষের সাথে কথা বলার সময়ে বয়স ও মর্যাদা অনুযায়ী সর্বনাম ব্যবহার করতে হয়। তুমি, আপনি, তুই, সে, তিনি, ও-এগুলো সর্বনাম শব্দ। সর্বনাম মূলত তিন ধরনের:
১. সাধারণ সর্বনাম
২. মানী সর্বনাম
৩. ঘনিষ্ঠ সর্বনাম
তুমি করে বলা যায় ভাই-বোনের সঙ্জে, ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে, বাবা-মার সঙ্গে, বন্ধুর সঙ্গে। এগুলো সাধারণ সর্বনাম। আপনি করে বলতে হয় শিক্ষকের সঙ্গে, বয়সে বড়ো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে, অপরিচিত লোকের সঙ্গে। এগুলো মানী সর্বনাম। তুই করে বলা হয় কারো সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতা থাকলে। আবার কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলার সময়েও তুই ব্যবহার করা হয়। এগুলো ঘনিষ্ঠ সর্বনাম। মর্ষাদা অনুযায়ী সর্বনামের যেমন পরিবর্তন হয়, ক্রিয়ারও তেমন পরিবর্তন হয়। নিচে সর্বনাম অনুযায়ী ‘করা” ক্রিয়ার কয়েকটি রূপ দেখানো হলো। এখানে সর্বনামের একবচন ও বহুবচন দুটি রূপই দেওয়া আছে।
মর্যাদা অনুযায়ী সর্বনাম ও ক্রিয়ার প্রয়োগ
সর্বনাম ও ক্রিয়াশব্দগুলো মর্যাদা অনুযায়ী ঠিক করে নিচের খালি জায়গায় লেখো।
আমার নানা একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে নিয়ে আমার বড়ো মামা জেলা সদরের হাসপাতালে গেল। হাসপাতালের ডাক্তার বলেছিল, কয়েকদিন রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হবে। ওই সময় নানা তিন-চার দিন হাসপাতালে ছিল। মা হাসপাতালে থেকে নানার সেবা করত। একদিন বিকালে আমি বড়ো মামার সাথে হাসপাতালে গিয়েছিলাম নানাকে দেখতে। এত বড়ো হাসপাতাল আমি আগে দেখিনি জরুরি বিভাগের সামনে একটু পরপরই রোগী আসছে। আর সেখানকার “তোমরা এখানে ভিড় করবেন না।”
নানা আমাকে দেখে খুব খুশি হলো। তবু তিনি বলল, “তুই আবার আসতে গেলে কেন?” নানা আমাকে আদর করে তুই করে বলে। আমি ছোটবেলায় নানাকে তুমি করে বলতাম। এখন তাকে আপনি করে বলি। আমি নানার কথার উত্তরে বললাম, “নানাভাই, আপনি দ্বুত সুস্থ হয়ে যাবে”
খানিক বাদে একজন নার্স এসে নানাকে ওষুধ খাইয়ে গেল। সে বললেন কাল নানাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেবে। সন্ধ্যার আগে আগে বড়ো মামা যাওয়ার জন্যে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর বলল, ‘চলো, এবার যাই; কাল সকালে আবার আসিস।” আমি বললাম “চলো, মামা।”
ভাষিক যোগাযোগ অভাষিক যোগাযোগ
আমরা যখন অন্যের সাথে কথা বলি, সেটা একধরনের যোগাযোগ। চিঠি বা পত্র লিখেও আমরা যোগাযোগ করি। আবার, ইশারা বা আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমেও আমরা যোগাযোগ করি। বিভিন্ন ছবি বা সংকেতের মাধ্যমেও আমাদের যোগাযোগ বা ভাব-বিনিময় হয়। মানুষ নানা প্রয়োজনে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে। যোগাযোগ মূলত দুইভাবে হয়:
১. ভাষিক যোগাযোগ
২. অভাষিক যোগাযোগ
ভাষিক যোগাযোগ: ভাষিক যোগাযোগের প্রধান রূপ চারটি-শোনা, বলা, পড়া ও লেখা। এর মধ্যে বলা ও শোনার কাজে মুখ ও কানের ভূমিকা প্রধান। যন্ত্র থেকে তৈরি শব্দও আমরা কান দিয়ে শুনে থাকি। অন্যদিকে লেখা ও পড়ার কাজে হাত ও চোখ প্রধান ভূমিকা রাখে। যন্ত্রে লেখা শব্দও আমরা চোখ দিয়ে পড়তে পারি। কথা বলা, বই পড়া, ফোনে আলাপ করা ও বার্তা পাঠানো, রেডিও-টেলিভিশন শোনা ও দেখা, কাগজে লেখা বা কম্পিউটারে টাইপ করা ইত্যাদি ভাষিক যোগাযোগের উদাহরণ। এছাড়া শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য রয়েছে ইশারা ভাষা এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য রয়েছে ব্রেইল ভাষা।
অভাষিক যোগাযোগ: যোগাযোগের ক্ষেত্রে কথা বলা ও লেখার পাশাপাশি কিছু অভাষিক কৌশলও কাজে লাগানো হয়। তখন মুখভঙ্গি ও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, হাত ও চোখের ইশারা, হাতের স্পর্শ, ছবি ও সংকেত ইত্যাদির ব্যবহার হয়।
প্রাসঙ্গিক কথা অপ্রাসঙ্গিক কথা
কোনো কিছু নিয়ে কথা বলার সময়ে বিষয়ের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হয়। বিষয়ের মধ্যে থেকে কথা বলাকে প্রাসঙ্ভিক কথা বলে। আর বিষয়ের বাইরের কথাকে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে। প্রস্গের মধ্যে থেকে যোগাযোগ করতে পারা একটি দরকারি যোগ্যতা। দুজন বা কয়েকজন মিলে আলাপের সময়ে বক্তা কিংবা শ্রোতাকে প্রসঙ্গের মধ্যে ধরে রাখতে হয়।
প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা খুঁজি
একজন শিক্ষার্থী লালবাগের কেল্লা ঘুরতে গিয়েছিল। সে লালবাগ কেল্লা ঘুরে এসে নিচের মতো করে লিখল:
অনেকদিন থেকেই ইচ্ছা ছিল পুরাতন কোনো এতিহাসিক জায়গা ঘুরতে যাব। বাবার মুখে অনেকবার লালবাগ কেল্লার কথা শুনেছি। ঠিক করা হলো সবাই মিলে সেখানে যাব। আমাদের যাওয়ার কথা শুনে আমার মামাতো বোনও যেতে চাইল। ওর নাম শেফালি। শেফালিকে নিয়ে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। একবার যেমন, আমার মামা ওকে বলেছিলেন, ‘শেফালি, তুমি কি আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে আনতে পারবে?” শেফালি কী বুঝল কে জানে! একটা ডিম ফাটিয়ে ভাজি করার প্রস্তুতি নিতে লাগল। তা দেখে আমার মামি হাসতে লাগলেন। শেফালি অনেক লজ্জা পেয়েছিল সেদিন।
শেফালি লালবাগ কেল্লা দেখতে চায় শুনে বাবা হেসে বললেন, “ঠিক আছে।’ আমরা টিকিট কেটে কেল্লার ভিতরে ঢুকলাম। ওখানে যেতে যেতেই বাবা বলেছিলেন, লালবাগের কেল্লা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি মোগল আমলে তৈরি করা একটি দুর্গ। ১৬৭৮ সালে মোগল সুবেদার আজম শাহ দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। আজম শাহ ছিলেন সম্রাট আওরঙ্াজেবের পুত্র। বাবা আরও বলেছিলেন, দুর্গের কাজ শেষ হওয়ার আগেই আজম শাহকে দিল্লি চলে যেতে হয়। এরপর ১৬৮০ সালে সুবেদার শায়েস্তা খা দুর্গ তৈরির কাজ আবার শুরু করেন। কিন্তু ১৬৮৪ সালে শায়েস্তা খীর কন্যা পরীবিবি হঠাৎ মারা যান। শায়েস্তা খী তখন দুর্গের কাজ থামিয়ে দেন।
উপস্থিত বক্তৃতা
তোমরা একটি করে বিষয় লিখে শিক্ষকের কাছে জমা দাও। বিষয় হতে পারে যে কোনো কিছু, যেমন-আমার প্রিয় খেলা, রেলগাড়ি, বর্ষাকাল ইত্যাদি। শিক্ষক সেগুলো থেকে লটারির মাধ্যমে একেক জনকে একেকটি বিষয় নিয়ে বলতে দেবেন। কথা বলার সময় অন্যরা খেয়াল করবে কোন কথাগুলো প্রাসঙ্গিক, আর কোন কথাগুলো প্রাসঙ্গিক নয়।
উপস্থিত বন্তুতার সময়ে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারো:
ক. প্রথমে বিষয় অনুযায়ী বক্তব্য গুছিয়ে নিয়ে কথা শুরু করতে হয়;
খ. উপস্থিত বক্তৃতায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করা যায় না;
গ. বিষয়টির ধারণা পরিষ্কার করার জন্য উদাহরণ, ব্যাখ্যা ইত্যাদির প্রয়োজন হতে পারে;
ঘ. বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হয়;
ঙ. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে হয়;
চ. বক্তৃতার ভাষা প্রমিত হতে হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই অধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তর শীঘ্রই কোর্সটিকায় প্রকাশ করা হবে।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post