৭ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ : রেলগাড়ি চলে রেললাইনের উপর দিয়ে। দেশে-বিদেশে যত রকম যানবাহন আছে, তার মধ্যে রেলগাড়ি সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয়। ছেলেবুড়ো সবাই এর কু-ঝিকঝিক শব্দ শুনে মুগ্ধ হয়। নদী-নালা, পাহাড়-পর্বতের পাশ দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে রেলগাড়ি ছুটে চলে। গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বাড়ালে মাঝে মাঝে দেখা যেতে পারে কুঁড়েঘর, ধানখেত, নীলাকাশ।
বাংলাদেশের রেলগাড়িতে অনেক সময়ে হকার দেখা যায়। তাঁরা ডিমসিদ্ধ, ঝালমুড়ি, চিড়াভাজা-সহ আরও কত কিছু যে বিক্রি করেন! অনেকে পত্র-পত্রিকা বিক্রির জন্যও রেলে ওঠেন। একবার একতারা হাতে একজনকে রেলগাড়িতে উঠতে দেখেছিলাম। তিনি পল্লিগীতি শুনিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন। তাঁর গান শুনে সবার সাথে আমিও হাততালি দিয়েছিলাম।
রেল-ভ্রমণের আনন্দ অনেক। রেলগাড়িতে না উঠলে তা ঠিক বোঝা যাবে না।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
নমুনা-১ থেকে আলাদা অর্থযুক্ত শব্দগুলো নিচের ছকে লেখা হল। (মূল বইয়ের ৩১ নম্বর পৃষ্ঠা)
রেলগাড়ি, রেললাইন, যানবাহন, জনপ্রিয়, ছেলেবুড়ো, কুঁড়েঘর, ধানখেত, ডিমসিদ্ধ, ঝালমুড়ি, চিড়াভাজা, একতারা, পল্লিগীতি।
সমাস কী?
সমাস শব্দগঠনের অন্যতম একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় নতুন শব্দ তৈরি করা যায়। যেসব শব্দের দুটো অংশই অর্থযুক্ত তাকে সমাস-সাধিত শব্দ বলে। যেমন-
ভাই + বোন = ভাই-বোন
ভালো + মন্দ = ভালোমন্দ
টাক + মাথা = টাকমাথা
হাত + ঘড়ি = হাতঘড়ি
আসা + যাওয়া = আসা-যাওয়া
আলু + সিদ্ধ = আলুসিদ্ধ
চৌ+ রাস্তা = চৌরাস্তা
কাজল + কালো = কাজলকালো
সমাস-সাধিত শব্দ তৈরি করি
ফুল + বাগান = ফুলবাগান
ফল + গাছ = ফলগাছ
গোলাপ + জল = গোলাপজল
জীব + বিজ্ঞান = জীববিজ্ঞান
প্রাণী + জগৎ = প্রাণীজগৎ
বই + খাতা = বইখাতা
পাঠ্য + পুস্তক = পাঠ্যপুস্তক
ঠেলা + গাড়ি = ঠেলাগাড়ি
আলু + ভর্তা = আলুভর্তা
অনুচ্ছেদ লিখে সমাস-সাধিত শব্দ খুঁজি
একদেশে ছিল এক রাজা। তার নাম বাহুবলী। তিনি ছিলেন শান্তিপ্রিয় এবং প্রজাদরদী একজন রাজা। তিনি রাজ্যের প্রজাদের অনেক ভালোবাসতেন। প্রজাদের যেকোন সমস্যা তিনি রাজদরবারে সমাধান করতেন। মানুষের উপকারকে তিনি দেশসেবার মত মহৎ কাজ বলে মনে করতেন। তিনি যেমনই ছিলেন দানবীর, তেমনই ছিলেন মহানুভব। রাজ্যাভিষেকের অল্প সময়ের মধ্যেই তার খ্যাতি রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রজারাও তাদের মহারাজকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। যার কারণে রাজ্যের যেকোন প্রয়োজনে রাজা বাহুবলী প্রজাদের পাশে পেতেন। একবার রাজ্যে বহিশত্রুর আক্রমণ হলে রাজা এবং তার প্রজারা মিলে দেশরক্ষায় শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রচুর প্রাণহানি এবং সম্পদহানী ঘটে। কিন্তু তারপরেও রাজা বাহুবলীর যোগ্য নেতৃত্ব এবং প্রজাদের অসীম সাহসিকতায় তারা জয়লাভ করেন। ফলে তাদের রাজ্য শত্রুমুক্ত হয়।
উপরে উল্লিখিত অনুচ্ছেদ সমাস-সাধিত শব্দ
শান্তি + প্রিয় = শান্তিপ্রিয়
প্রজা + দরদী = প্রজাদরদী
রাজ + দরবার = রাজদরবার
দেশ + সেবা = দেশসেবা
দান + বীর = দানবীর
রাজ্য + অভিষেক = রাজ্যাভিষেক
রাজ্য + জুড়ে = রাজ্যজুড়ে
মহা + রাজ = মহারাজ
বহি + শত্রু = বহিশত্রু
দেশ + রক্ষা = দেশরক্ষা
ক্ষয় + ক্ষতি = ক্ষয়ক্ষতি
প্রাণ + হানি = প্রাণহানি
সম্পদ + হানী = সম্পদহানী
জয় + লাভ = জয়লাভ
শত্রু + মুক্ত = শত্রুমুক্ত
৭ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
নমুনা-২
উপহার পেতে প্রত্যেকের ভালো লাগে। তবে প্রতিদিন তা পাওয়া যায় না। বিশেষ বিশেষ দিনে আমরা উপহার পাই। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে নিখাদ আনন্দ আছে। অচেনা অজানা লোকের উপহার সাধারণত আমরা গ্রহণ করি না। জয়-পরাজয়কে সামনে রেখে যে উপহার দেওয়া হয়, তাকে বলে পুরস্কার। পুরস্কার পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় বিশেষ অবস্থান পেতে হয়। বিশেষ কোনো সুকীর্তি বা অবদানের জন্যও মানুষকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার বা উপহার পাওয়ার ব্যাপারটি অবশ্যই সম্মানের এবং উপভোগ করার মতো। কোনো কোনো উপহার ও পুরস্কার মানুষ আজীবন মনে রাখে।
নমুনা-২ থেকে অর্থযুক্ত শব্দগুলো নিচের ছকে লেখা হল। (মূল বইয়ের ৩৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
নিঃসন্দেহ, নিখাদ, অচেনা, অজানা, পরাজয়, অবস্থান, সুকীর্তি, অবদান, উপভোগ, আজীবন।
উপসর্গ
যেসব শব্দের প্রথম অংশ সাধারণত কোনো অর্থ প্রকাশ করে না, কিন্তু দ্বিতীয় অংশের সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকে, সেসব শব্দকে বলা হয় উপসর্গ-সাধিত শব্দ। কোনো শব্দের আগে উপসর্গ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন, বেদখল শব্দের “বে” একটি উপসর্গ। যেমন-
অ+ গভীর = অগভীর
অধি + বাসী = অধিবাসী
অনু + রূপ = অনুরুপ
অব + রোধ = অবরোধ
আ + জীবন = আজীবন
উপ + গ্রহ = উপগ্রহ
অতি + মারি = অতিমারি
অনা + বৃষ্টি = অনাবৃষ্টি
অপ + কর্ম = অপকর্ম
অভি + জাত = অভিজাত
উৎ + ক্ষেপণ = উৎক্ষেপণ
কদ + বেল = কদবেল
উপসর্গ দিয়ে শব্দ তৈরি করি
বি + কাল = বিকাল
কু + বৃত্তি = কুবৃত্তি
সু + ফল = সুফল
বে + খেয়াল = বেখেয়াল
অ + শেষ = অশেষ
আ + কার = আকার
পরা + জয় = পরাজয়
প্র + জন্ম = প্রজন্ম
উপ + গ্রহ = উপযোগ
অনুচ্ছেদ লিখে উপসর্গ-সাধিত শব্দ খুঁজি
মীনা খুবই মেধাবী একজন ছাত্রী। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ভালো ফলাফল লাভের জন্য সে প্রতিদিন অনেক পরিশ্রম করে। সে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ ঘণ্টা সময় পড়ার পেছনে ব্যয় করে। তার মতে মানুষের অসাধ্য বলতে কিছুই নেই। সে জানে সুফল পেতে হলে আগ্রহ নিয়ে কাজ করতে হবে। তাই সে পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে চায়। তার ছোট ভাই রাজু অনেক অলস। সে মেধাবী হলেও সফল হওয়ার কোন প্রচেষ্টা তার মধ্যে নেই। সে তার পড়াশোনার প্রতি বেখেয়াল। তাদের বাবা চান, তার অবর্তমানে রাজু-মীনা তার পরিবারকে দেখে রাখবে। তাই তিনি তার দুই সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে চান।
অ + সাধ্য = অসাধ্য
সু + ফল = সুফল
আ + গ্রহ = আগ্রহ
প্র + চেষ্টা = প্রচেষ্টা
বে + খেয়াল = বেখেয়াল
অ + বর্তমানে = অবর্তমানে
নমুনা-৩
খেলার মাঠে আমরা রোজ খেলতে যাই। সেখানে মাঝে মাঝে এক চানাচুরওয়ালাকে দেখা যায়। তিনি চানাচুর বিক্রি করতে আসেন। লোকটার পরনে থাকে রঙিন জামা, তাতে অনেক রঙের ছোপ। জামাটা আলখেল্লার মতো লম্বা আর ঢোলা। তবে জামাটার হাতা খাটো, তাই তার হাত দেখা যায়। বেঢপ আকারের হলেও সেই জামাটা তার গায়ে দারুণ মানানসই লাগে। স্কুল গেটে দাঁড়ালে নিশ্চয় তার কাছ থেকে ছাত্র আর ছাত্রীরা চানাচুর কিনত। তবে, কখনো তাকে স্কুলের গেটে আমি দাঁড়াতে দেখিনি।
ওই চানাচুরওয়ালাকে নিয়ে একটা মজার ঘটনা বলি। একদিন তাঁর সামনে ছেঁড়া জামা পরা একটি ছেলে এসে দাঁড়াল। ছেলেটির বয়স সাত-আটের বেশি হবে না। তার হাতে একটা ভাঙা খেলনা। ছেলেটি সেই খেলনাটি দেখিয়ে চানাচুরওয়ালাকে বলল, ‘আমার কাছে পয়সা নেই। এই খেলনা নিয়ে আমাকে চানাচুর দেবেন?’ এই বলে ছেলেটি তার হাতের খেলনাটি চানাচুরওয়ালার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি দেখলাম, খেলনাটি হয়তো একসময়ে দামি ছিল, তবে এখন আর সেটা কেউ দাম দিয়ে কিনবে না। চানাচুরওয়ালা ছেলেটির কথা শুনে মধুর হাসি হাসল। চানাচুর বানিয়ে ঠোঙায় করে ছেলেটির হাতে দিলেন। তারপর বললেন, ‘তুমি তো বেশ বুদ্ধিমান!’
আমার কাছে চানাচুরওয়ালাকে দয়ালু মনে হলো। লোকটির সরলতায় আমি মুগ্ধ হলাম।
নমুনা-৩ থেকে অর্থযুক্ত শব্দগুলো নিচের ছকে লেখা হল। (মূল বইয়ের ৩৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
চানাচুরওয়ালা, মধুর, বুদ্ধিমান, মজার, খেলনা, দয়ালু।
প্রত্যয় কী?
যেসব শব্দের প্রথম অংশ অর্থযুক্ত এবং দ্বিতীয় অংশ অর্থহীন, সেসব শব্দকে বলা হয় প্রত্যয়-সাধিত শব্দ। প্রত্যয় শব্দগঠনের একটি প্রক্রিয়া। প্রত্যয়ের নিজের কোনো অর্থ নেই। অর্থযুক্ত কোনো শব্দের পরে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন, মধু + র = মধুর। এখানে ‘র’ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়েছে; তাই ‘র’একটি প্রত্যয়। কিন্তু বাড়ি + র – বাড়ির। এখানে ‘র’ যোগ হয়ে নতুন কোনো শব্দ তৈরি হয়নি; তাই এই ‘র’ কোনো প্রত্যয় নয়। উদাহরণ-
পড় + অ = পড়ো
পঠ + অক = পাঠক
দাপ + অট = দাপট
খেল + অনা = খেলনা
মান + অনীয় = মাননীয়
উড় + অন্ত = উড়ন্ত
সিল্ + আই= সেলাই
বাঘ + আ = বাঘা
ঢাকা + আই = ঢাকাই
প্রত্যয় দিয়ে শব্দ তৈরি করি
ঢাকা + আই = ঢাকাই
ফুল + ওয়ালা = ফুলওয়ালা
র্ক + অনীয় = করণীয়
দয়া + বান = দয়াবান
কলম + দানি = কলমদানি
দরিদ্র + তা = দরিদ্রতা
গুরু + ত্ব = গুরুত্ব
বুদ্ধি + মান = বুদ্ধিমান
চল্ + আ = চলা
পাহারা + দার = পাহারাদার
অনুচ্ছেদ লিখে প্রত্যয়-সাধিত শব্দ খুঁজি
গতবছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে ১লা জানুয়ারি আমি প্রথম মাধ্যমিক স্কুলে যাই। এটিই ছিল আমার মাধ্যমিক স্কুল জীবনের প্রথম দিন। স্কুলে প্রবেশের গেটেই দারোয়ানের সাথে আমার দেখা হয়। তিনি আমাকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর আমি শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করলাম। আমি দেখতে পেলাম সবাই নতুন শিক্ষার্থী। এদের কাউকেই আমি চিনি না। প্রথমদিন শ্রেণিশিক্ষক পরিচয়পর্ব শেষে অল্পকিছু পড়া দিলেন। এরপর থেকে আমি দৈনিক স্কুলে যেতাম। স্কুলে আমার অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হল। আমার বন্ধুরা বেশ দয়াবান ও বুদ্ধিমান। আমাদের স্কুলের মধ্যে রয়েছে বড় একটি বেলিফুল গাছ। যার সৌন্দর্য এবং গন্ধ আমাকে মাতাল করে তোলে। এখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। ফেলে আসা একটি বছর আমার স্মৃতিতে মধুর সময় হিসেবে জমা রয়েছে। আমি আমার স্কুলকে অনেক ভালবাসি।
দারো + আন = দারোয়ান
পড়্ + আ = পড়া
দিন + ইক = দৈনিক
বন্ধু + ত্ব = বন্ধুত্ব
দয়া + বান = দয়াবান
বুদ্ধি + মান = বুদ্ধিমান
সুন্দর + য = সৌন্দর্য
মাত্ + আল = মাতাল
মধু + র = মধুর
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post