৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ : নিচে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে নিয়ে একটি লেখা দেওয়া হলো। এটি গোলাম মুরশিদের লেখা। গোলাম মুরশিদ ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা ভাষার একজন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে “আশার ছলনে ভুলি” “হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি” “বিদ্রোহী রণর্লান্ত” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ
পড়ে কী বুঝলাম? (জগদীশচন্দ্র বসু)
ক. জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে এ লেখায় কী কী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে?
উত্তর: এই লেখায় জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। যেমন, তাঁর জন্ম, পরিচয়, শিক্ষাদীক্ষা, চাকরিজীবন, কর্ম ও নানা আবিষ্কারের কথা রয়েছে। এমনকি তাঁকে সম্মান জানিয়ে ব্রিটিশ সরকার কাগজি মুদ্রার নোটে যে ছবি ছাপে তার তথ্যও প্রবন্ধটিতে রয়েছে।
খ. এই লেখা থেকে সাল-ভিত্তিক তথ্যগুলো ছকের আকারে উপস্থাপন করো:
১৮৫৮ – জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম।
১৮৭৯ – বিএ পাশ করেন।
১৮৮০ – ডাক্তারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে যান।
১৮৮৪ – প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ট্রাইপস ডিগ্রি করে।
১৮৯৪ – কলকাতা টাউন হলে তার আবিষ্কারের কয়েকটা জিনিস প্রকাশ্যে দেখান।
১৮৯৬- রেডিওর মাধ্যমে বিনাতারে যোগাযোগের মূল কৌশলটি আবিস্কার করেন।
গ. এই ধরনের জীবন-তথ্যমূলক আর কী কী রচনা তুমি পড়েছ?
উত্তর: এই ধরনের জীবন-তথ্যমূলক বিভিন্ন রচনা এর আগে আমি পড়েছি। যেমন- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইত্যাদি।
ঘ. এই লেখা থেকে জগদীশচন্দ্র বসুর কী কী আবিষ্কারের কথা জানতে পারলে?
উত্তর: এই লেখা থেকে জগদীশচন্দ্র বসুর যেসব আবিষ্কারের কথা জানতে পেরেছি তা হচ্ছে- বৈদ্যুতিক চুম্বক-তর, উদ্ভিদের প্রাণ আছে তার আবিষ্কার, উদ্ভিদের বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র ক্রেসকোগ্রাফ, রেডিওর মাধ্যমে বিনা তারে যোগাযোগের মূল কৌশল ইত্যাদি।
ঙ. বিবরণমূলক লেখার সাথে তথ্যমূলক লেখার মিল-অমিল খুঁজে বের করো।
উত্তর: বিবরণমুলক লেখায় থাকে কোনো কিছুর বর্ণনা এবং তথ্যমূলক লেখায় থাকে কোনো কিছু সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য বা তথ্যাদি। তবে বিবরণমুলক লেখায় যেমন নানা তথ্য থাকতে পারে, তেমনি তথ্যমূলক রচনা বিবরণমূলকও হতে পারে।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ তথ্যমূলক লেখা
বলি ও লিখি
‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো: (মূল বইয়ের ৯১ নম্বর পৃষ্ঠা)
জগদীশচন্দ্র বসু পৃথিবীর নামকরা একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। এমনই নামকরা যে চাঁদের একটি গর্তের নাম তাঁর নামানুসারেই হয়েছে। এই জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম বাংলাদেশে। জন্মেছিলেন একটি সাধারণ পরিবারে। তিনি দেশ-বিদেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। তিনি ক্যামব্রিজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেন। ছেলেবেলায়ই তাঁর প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পড়াশোনার আগ্রহ তৈরি হয়।
কর্মজীবনে জগদীশচন্দ্র বসু নিজেকে পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হচ্ছে বৈদ্যুতিক চুম্বক-তরঙ্গ, রেডিওর মাধ্যমে বিনা তারে যোগাযোগের মূল কৌশল ইত্যাদি। রেডিও-টেলিভিশন, ইন্টারনেট, মাইক্রোওয়েভ কুকার ইত্যাদি জগদীশ বসুর আবিষ্কারের উপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী হিসেবে উদ্ভিদের প্রাণ আছে এই তত্ত্ব ও উদ্ভিদের বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ আবিষ্কারও জগদীশচন্দ্রের বিশেষ কীর্তি। তাঁর বিশেষ কীর্তির জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিএসসসি ডিগ্রি প্রদান করে এবং তাঁকে সম্মান জানিয়ে ব্রিটিশ সরকার কাগজি মুদ্রার নোটে ছবিও ছাপে।
লেখা নিয়ে মতামত
‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো: (মূল বইয়ের ৯২ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনায় যা আছে
তিনি এক ঘরে বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে বিনা তারে অন্য ঘরে রাখা বারুদে আগুন লাগিয়ে দেন। বিনা তারে অন্য একটা ঘরে বেল অর্থাৎ ঘণ্টা বাজান।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা
সত্যিই কি বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবহারের মাধ্যমে কোন প্রকার তার ছাড়াই আগুন জ্বালান যায়? আর ঘণ্টাও কী কোনো প্রকার তারের সাহায্য ছাড়া বাজান সম্ভব? তা যাচাই করে দেখতে হবে।
২. ‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনায় যা আছে
জগদীশ ছিলেন পদার্থ-বিজ্ঞানী। তিনি পদার্থ-বিজ্ঞানের অনেকগুলো জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা
যেহেতু তিনি একজন বাঙালি বিজ্ঞানি ছিলেন, তাই তিনি আমাতের গর্ব। তাই তার সকল আবিষ্কার সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। সারাজীবনে তিনি কী কী আবিষ্কার করছেন এবং তার আবিষ্কারগুলো কী কী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে- তা জানা জরুরী।
তথ্যমূলক লেখার কৌশল
তথ্য পরিবেশন করা যেসব লেখার মুল লক্ষ্য, সেগুলোকে তথ্যমূলক লেখা বলে। এ ধরনের লেখায় তথ্য পরিবেশনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়। বইপত্র পড়ে, অনলাইনের মাধ্যমে কিংবা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য উপস্থাপনের সময়ে জানা তথ্যও নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে মিলিয়ে নিতে হয়। তথ্যমূলক রচনাকে আকর্ষণীয় করার জন্য নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা দরকার।
এ ধরনের লেখায় বিষয় অনুযায়ী একটি শিরোনাম থাকে। কোন তথ্যের পরে কোন তথ্য পরিবেশন করা হবে, তার একটি ধারাবাহিকতা রাখতে হয়। সাধারণত একই ধরনের তথ্য এক জায়গায় রাখা হয়। তথ্যমূলক লেখার মধ্যে ছবি, ছক, সারণি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
কোনো ব্যক্তির জীবনী, স্কুল বা কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি, বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা-নির্ভর বিবরণ ইত্যাদি নিয়ে তথ্যমূলক রচনা তৈরি করা যায়। তথ্যমূলক লেখার মূল উদ্দেশ্য পাঠককে তথ্য জানানো। তাই এ ধরনের লেখায় ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়া ঠিক নয়। যেমন, তুমি হয়তো বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীদের নিয়ে একটি তথ্যমূলক রচনা তৈরি করতে চাও। এক্ষেত্রে তোমার মোবাইল আছে কি নেই, মোবাইল ব্যবহার করতে ভালো না মন্দ লাগে, এ রকম কথা লেখার দরকার নেই। বরং বছর অনুযায়ী মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা, কোন ধরনের মোবাইল ব্যবহারকারী কত জন, এগুলো উল্লেখ করা জরুরি।
তথ্যমূলক রচনা লিখি
১. স্কুলের আশেপাশে কী কী ফলের গাছ আছে? কোন গাছ কতটি করে আছে?
২. স্কুলের আশেপাশে কী কী ফুলের গাছ আছে? কখন কোন ধরনের কুল ফোটে?
৩. তোমাদের এলাকায় কোন কোন পাখি বেশি দেখা যায়? কোন পাখির রং কেমন?
৪. তোমার এলাকায় কোন কোন পেশার মানুষ আছে? তারা কী ধরনের কাজ করেন?
৫. স্কুলের আশেপাশে কোন কোন ধরনের দোকান আছে? কোন দোকানে কী কী জিনিস পাওয়া যায়?
উপরের সংগ্রহ করা তথ্যগুলোর ভিত্তিতে একটি তথ্যমূলক রচনা নিচে লেখা হল:
পলাশডাঙ্গা সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়
প্রমত্তা কীর্তনখোলার তীর ঘেসে একটি স্কুল, নাম পলাশডাঙ্গা সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গ্রামীণ এ স্কুলটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। স্কুলের সামনেই রয়েছে প্রকা- এক খেলার মাঠ। যার পাশে লাগান সারি সারি ফলের গাছ। মাঠের পশ্চিম দিকে এক সাড়িতে ছয়টি নাড়িকেল গাছ রয়েছে। উত্তর দিকে পাঁচটি আমগাছ, তিনটি লিচুগাছ এবং তিনটি আমলকি গাছ রয়েছে। স্কুলের ঠিক পেছনেই রয়েছে আটটি চালতা গাছ। তবে কী শুধু ফল? অর্প্বূ এই স্কুলটির সৌন্দর্য্য আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে স্কুল প্রাঙ্গণে থাকা একটি ফুলের বাগান।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের খুশিমত বিভিন্ন ফুলগাছ রোপণ করে এই বাগানে। তারাই নিয়মিত পরিচর্যা করে গাছগুলোর। চমৎকার এ বাগানটিতে গোলাপ, কদম, বকুল, গন্ধরাজ এবং বেলী ফুলসহ আরো বেশকিছু প্রজাতির ফুল রয়েছে। বর্ষাকালে কদম-বকুল, হেমন্তে গন্ধরাজ আর বসন্তে বেলী ফুলের গন্ধ উপভোগ করে সবাই। আর সারা বছর জুড়েই ফুলের রাণী গোলাপের সৌন্দর্যে সবাই মোহিত হয়। স্কুলের আশেপাশে প্রচুর গাছ-গাছালী থাকায় এখানে অনেক পাখির সমারোহ চোখে পড়ে। দুপুর বেলা দোয়েরে শিশ সবাইকে মুগ্ধ করে। দোয়েল পাখির গায়ের রং সাদা কালো। শালিকও দেখা যায় অনেক। এদের ঠোঁটের রং গাঢ় কমলা-হলুদ এবং চোখের মণি হালকা হলুদ রঙের।
অন্যদিকে ঝুঁটি-শালিকও সাদা-কালো রঙের হয় কিন্তু এর মাথায় একটি ঝুঁটি রয়েছে। ছোট্ট দুষ্ট চড়ই পাখি এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে বেড়ায়। বাদামী-ধূসর মিশ্রিত এ পাখিটি দেখতে খুবই সুন্দর। গ্রামীণ জনপদ হওয়ায় এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষির সাথে জড়িত। তারা ক্ষেতে ধান চাষ করেন। কেউ বা শাক-সবজি চাষ করেন। কৃষির পাশাপাশি অনেক লোক ফেরী করে জিনিসপত্র বিক্রি করেন। কেউ ভ্যানগাড়ি চালান, কেউ নৌকা চালান। তবে এখন গ্রামে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই উৎপাদনশীল বিভিন্ন কাজে জড়িত হচ্ছেন।
স্কুলগেটের ঠিক সামনেই বেশকিছু দোকান রয়েছে। এটি একটি গ্রামীণ এলাকা হলেও এখানে প্রায় সব ধরনের জিনিসই কিনতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ছোটদের খাবার, খেলনা এবং ভাতের হোটেল রয়েছে এখানে। স্কুল বিরতিতে ছাত্ররা এসব দোকান থেকে বিস্কুট, চিপস, চকলেট ইত্যাদি কিনে থাকে। এছাড়াও ছুটির সময়ে অনেকে বিভিন্ন খেলনা কিনে বাড়ি ফেরে। পলাশডাঙ্গা গ্রামের মতই সুন্দর সাজানো গোছানো এ স্কুলটি। যা প্রতিবছরই শতশত মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি করছে।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ তথ্যমূলক লেখা শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post