৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ বিশ্লেষণমূলক লেখা : বিবরণমুলক লেখায় কোনো বন্তু, বিষয় বা ঘটনার বিবরণ থাকে। আর তথ্যমূলক লেখায় কোনো বিষয়ের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে বিবরণ ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে মত প্রকাশ করা হয় যেসব রচনায়, তাকে বিশ্লেষণমূলক লেখা বলে।
নিচে একটি বিশ্লেষণমূলক লেখা দেওয়া হলো। এটি আনিসুজ্জামানের লেখা। আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২০ সালে মারা যান। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে আছে “মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য” ‘স্বরুপের সন্ধানে” ‘বিপুলা পৃথিবী” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ বিশ্লেষণমূলক লেখা
পড়ে কী বুঝলাম? (কত কাল ধরে-আনিসুজ্জামান)
ক. এই রচনাটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা?
উত্তর: রচনাটি বাঙালি জাতির ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে লেখা।
খ. এই লেখা থেকে কয়েকটি বিশ্লেষণমূলক বাক্য খুঁজে বের করো।
উত্তর: এই লেখা থেকে কয়েকটি বিশ্লেষণমূলক বাক্য নিচে উল্লেখ করা হল:
১) আলো-আধারের খেলায় অনেক পুরানো কথা ঢাকা পড়েছে।
২) লোকজন নিজেরাই যুক্তি পরামর্শ করে কাজ করত, চাষ করত, ঘর বাঁধত, দেশ চালাত।
৩) কত লোক-লক্কর বহাল করা হলো কত ব্যবস্থা, কত নিয়মকানুন দেখা দিলো।
৪) মৌর্য-গুপ্ত, পাল-সেন, পাঠান-মুঘল, কোম্পানি-রানি এদের কাল শেষ হয়েছে।
৫) একজন লিখছেন সমৃদ্ধির কথা, বিলাসের কথা, আনন্দের কথা। আরেকজন ছবি আকছেন নিদারুণ অভাবের, জ্বালাময় দারিদ্রের, অপরিসীম বেদনার!
গ. বিবরণমুলক লেখার সাথে এই লেখার কী কী মিল-অমিল আছে?
উত্তর: বিবরণমূলক লেখার সাথে এই লেখার মিল ও অমিল দুইই আছে। বিররণমূলক লেখায় যেমন বর্ণনা থাকে এখানেও সেই বর্ণনা আছে। বিবরণমূলক লেখায় যেখানে তথ্য থাকে এখানেও নানা তথ্যের সমাবেশ রয়েছে। তবে, অমিল হলো এই জায়গায় যে, বিবরণমূলক লেখায় বিশ্লেষণ থাকে না, আর এই লেখাটা হচ্ছে বিশ্লেষণধর্মী।
ঘ. তথ্যমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?
উত্তর: তথ্যমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে- দুই ধরনের লেখাই বিবরণের মাধ্যমে লিখিত। আবার তথ্যমূলক লেখায় যেথানে তথ্যই প্রধান, এলেখায়ও নানা রকম তথ্য দেওয়া আছে। তবে, অমিল এই জায়গায় যে, তথ্যমূলক লেখায় যেখানে তথ্যই দেওয়া থাকে, এই লেখায় তথ্যের পাশাপাশি তথ্যের বিশ্লেষণও রয়েছে।
ঙ. এই লেখার ওপর তোমার মতামত দাও।
উত্তর: এই লেখাটি একটি বিশ্লেষণমূলক লেখা। এই লেখায় আমরা বাঙালি জাতির ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির নানা পরিচয় পাই। এই লেখার মাধ্যমে আমরা বিশ্লেষণাত্মক ভঙ্গিতে ইতিহাসের ধারা পরিবর্তন, সমাজের বিকাশ এবং সংস্কৃতির বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে জানতে পারি।
এই পরিচ্ছেদের শব্দের অর্থ
গর্দান যাওয়া: মাথা কাটা।
ঘোড়াচুড়: এক ধরনের খোপার নাম।
ডুলি: ছোটো পালকি।
তাগা: বাহুতে পরার অলংকার।
তারঞ্জ: কানে পরার অলংকার।
তিলপল্পব: তিলগাছের কচি পাতা।
নিরানন্দ: আনন্দহীন।
পদ্মবৃন্ত: পদ্ম ফুলের বৌটা।
বদৌলতে: কারণে।
মাকড়ি: একপ্রকার দুল।
লোক-লঙ্কর: সশস্ত্র লোক ও তাদের সহযোগী।
শীর্ণ: রোগা।
সামন্ত: জমিদার।
সুবর্ণকুল: সোনার দুল।
স্বানস্লিদ্ধ কেশ: ধোয়া চুল।
বলি ও লিখি
‘কত কাল ধরে’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো। (মূল বইয়ের ৯৯ নম্বর পৃষ্ঠা)
ইতিহাস বলতে শুধু রাজা-বাদশাদের কথা বোঝায় না, সব মানুষের কথা বুঝায়। এই রচনায় বাঙালির গত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে। রাজা-মন্ত্রী-সামন্ত-সৈন্য সকল মানুষের জীবনের কথা। কীভাবে এদেশের মানুষ দেশ চালাত, কাজ করত, ঘর বাঁধত, কাপড় পরত, খাওয়া-দাওয়া করত-এই সকল কথা।
লেখকের বর্ণনামতে, হাজার বছর আগে এদেশের পুরুষরা ধুতি পরত, মেয়েরা শাড়ি পরত। শুধু যোদ্ধারা জুতো ব্যবহার করত, সাধারণ লোকের তা সামর্থের বাইরে ছিল। তবে তারা পায়ে খড়ম পরত। এছাড়া সাজ-সজ্জার দিকে ঝোঁক ছিল বাঙালির। নারী ও পুরুষরা নানা বাহারের চুল রাখত।
মেয়েরা নানা রকম প্রসাধনী ব্যবহার করত। নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও অলংকার ব্যবহারে চল ছিল। তবে ধনী-গরীবের অলংকারে পার্থক্য ছিল। ভাত ছিল বাঙালির প্রিয় খাবার; নানা রকম তরকারি দিয়ে প্রতিদিন অন্নভোজন হত! ভাত আর মাছ ছিল প্রিয় খাবার। শুটকির চলও সেকালে ছিল। ছাগল, হরিণ ও পাখির মাংসও সবাই খেত! ফল-ফলাদির মধ্যে আম-কাঁঠাল, তাল-নারকেল ইত্যাদি ছিল প্রিয়।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ বিশ্লেষণমূলক লেখা
সেকালের মানুষ মাটির পাত্রে রান্না করত। পুরুষরা শিকারপ্রিয় ছিল। নারী ও পুরুষের মধ্যে নানা রকম খেলাধুলার চল ছিল। ধনী ও গরিবের খেলাধুলা ও শখের কাজে পার্থক্য ছিল। গানবাজনার জন্য নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছিল। সেকালে যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল নৌকা। ধনী লোকের জন্য ছিল হাতি ও ঘোড়ার গাড়ি আর সাধারণ লোকের জন্য গরুর গাড়ি। পালকির ব্যবহার সেকালে ছিল।
ধনী লোকের বাড়ি-ঘর ইট-কাঠের হলেও বেশির ভাগের বাড়িই ছিল কাঠ-খড়-সাটি-বাঁশের। এভাবে সেকালে মানুষে মানুষে পার্থক্য ছিল সমাজের সকল ক্ষেত্রে। কবিদের বর্ণনাতেও সে পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু সে যুগ আর নেই: অর্থাৎ রাজা-বাদশার দিন শেষ হয়ে গেছে তবু মানুষের মধ্যে সে পার্থক্য রয়ে গেছে। একদিকে সমৃদ্ধির, আরেকদিকে দারিদ্র্যের।
লেখা নিয়ে মতামত
‘কত কাল ধরে’ রচনায় যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।
‘কত কাল ধরে’ রচনায় যা আছে: নানা রকম সূক্ষ্ম পাটের ও সুতোর কাপড়ের চল ছিল।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা: আজ থেকে হাজার বছর পূর্বে তো কোন উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। তবে তখন কীভাবে সূক্ষ্ম পাটের ও সুতোর কাপড় তৈরি হত? এ বিষয়ে আমার জানার প্রবল আগ্রহ রয়েছে।
‘কত কাল ধরে’ রচনায় যা আছে: মেয়েরা তো বটেই, ছেলেরাও সে যুগে অলংকার ব্যবহার করত।
‘কত কাল ধরে’ রচনায় যা আছে: ছেলেরা সাধারণত অলংকার পরে না। তাহলে তখন ছেলেরা কেন অলংকার ব্যবহার করত? এ বিষয়ে মনে কৌতুহল জাগছে।
তথ্য বিশ্লেষণ
“কত কাল ধরে? লেখাটির প্রায় পুরো অংশে লেখক এ অঞ্চলের প্রাচীন যুগের সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছেন। নারী ও পুরুষ কোন ধরনের পোশাক ও অলংকার পরত, এখানকার মানুষ কোন ধরনের খাবার খেতো, তাদের পছন্দ-অপছন্দের বিষয় কী ছিল, এগুলোর বিবরণ লেখক দিয়েছেন। এই বিবরণ দিতে গিয়ে লেখককে বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়েছে।
উপাত্ত বিশ্লেষণ
ছক বা সারণিতে যেসব সংখ্যা বা বিষয় থাকে, সেগুলোকে বলে উপান্ত। উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায়। নিচের ছকে কিছু উপাত্ত আছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচারে বিপুল সংখ্যক মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। আশ্রয় নেওয়া মানুষকে শরণারী বলে। তাদের জন্য বহু সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ছকে উপাত্ত হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্র ও শরণার্থীর সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।
উপাত্ত বিশ্লেষণ
ছকের (মূল বইয়ের ১০১ নম্বর পৃষ্ঠায়) উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরো কয়েকটি বাক্য রচনা করো:
১. ছকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের ৭টি ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে কতগুলো শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল এবং কেন্দ্রগুলোতে শরণার্থীর সংখ্যা কত ছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে।
২. সবচেয়ে বেশি আশ্রয়কেন্দ্র ছিল পশ্চিমবঙ্গে এবং সংখ্যাটি হলো ৪৯২।
৩. সবচেয়ে বেশি শরণার্থী ছিল পশ্চিমবঙ্গে।
৪. সবচেয়ে কম আশ্রয়কেন্দ্র ছিল উত্তর প্রদেশে এবং সংখ্যাটি হলো ১।
৫. সবচেয়ে কম শরণার্থী ছিল উত্তর প্রদেশে।
৬. পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা সম্মিলিতভাবে বাকি ছয়টি প্রদেশে এর চেয়ে বেশি।
৭. আসামে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বিহারের ৩ গুণেরও বেশি ছিল।
৮. আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে কম শরণার্থী ছিল বিহার প্রদেশে।
৯. ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেকের বেশি হলেও শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ।
১০. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন প্রদেশে শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে ভারত বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে উদাহরণ স্থাপন করেছে।
উপরের লেখা বিশ্লেষণমূলক বাক্যগুলোর ভিত্তিতে একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করো। লেখার শুরুতে একটি শিরোনাম দাও।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সাহায্য
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ভারত ছিল অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধকালে ভারত সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দেয়। ভারতের ৭টি প্রদেশে সর্বমোট ৮২৫টি শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ও মধ্যপ্রদেশে প্রধান প্রধান আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১ কোটি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। পশ্চিমবঙ্গের বেশি সংখ্যক শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল ত্রিপুরায়। অন্যদিকে মধ্য প্রদেশে ৩টি শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। উত্তর প্রদেশে সবচেয়ে কম সংখ্যক শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। মধ্য প্রদেশের আশ্রয়কেন্দ্রের তুলনায় শরণার্থীর সংখ্যা অধিক ছিল।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ বিশ্লেষণমূলক লেখা শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post