৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ কল্পনানির্ভর লেখা : মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখক। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালে। তিনি কিশোর উপযোগী প্রচুর সংখ্যক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন, যেমন: “দীপু নাম্বার টু” “আমার বন্ধু রাশেদ” ইত্যাদি। তার লেখা বইয়ের একটা বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি; যেমন: “কপোন্ট্রনিক সুখ দুঃখ” “ত্রিনিটি রাশিমালা, প্রজেক্ট নেবুলা” ইত্যাদি। নিচে তীর লেখা একটি গল্প দেওয়া হলো।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ কল্পনানির্ভর লেখা
পড়ে কী বুঝলাম? (আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা: মুহম্মদ জাফর ইকবাল)
ক. ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর: বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারণাকে কেন্দ্র করে লেখা কাল্পনিক গল্পকে ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী’ বলে।
খ. আগে আর কোন ধরনের কল্পকাহিনী তুমি পড়েছ?
উত্তর: এর আগে আমি রূপকথা, রাজা-রাণীর কাহিনী, দৈত্য-দানবের কাহিনী সম্পর্কিত কল্পকাহিনী পড়েছি।
গ. ‘আমড়া ও ক্র্যাক নেবুলা’ গল্পের কোন কোন ঘটনা কাল্পনিক?
উত্তর: ‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ গল্পে রঞ্জুর বলা ভালুক ও ময়ূরের ঘটনা, মহাকাশের আগন্তুকের ঘটনা, ফ্লাইং সসার থেকে বিদঘুটে প্রাণীর লেজারগান দিয়ে গুলি করার ঘটনা, রোবটের ঘটনা এবং ছাদে-আসা ফ্লাইং সসার ও কাঠির মতো মানুষদের ঘটনাগুলো কাল্পনিক।
ঘ. এই গল্পের কোন কোন ঘটনা বাস্তব?
উত্তর: এই গল্পে রঞ্জুর আব্বা, আম্মা ও বোন শিউলিরি সঙ্গে যেসব ঘটনা ঘটে তা বাস্তবের ঘটনা। যেমন রঞ্জুর বাবা-মার সঙ্গে ঘুমানো, শিউলির সঙ্গে একঘরে শুতে দেওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথন, রঞ্জুর চমৎকার চমৎকার গল্পফাঁদা, দোয়াত ভেঙে যাওয়ার ঘটনা, শিউলিকে দেওয়া রঞ্জুর হাতের আমড়া ইত্যাদি।
ঙ. রূপকথার সাথে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মিল-অমিল কোথায়?
উত্তর: রূপকথা ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির প্রধান মিল হচ্ছে দুটিই কল্পনা দিয়ে তৈরি। রাণী, ড্রাগন, রাক্ষস-খোক্ষস, পরী, মৎস্যকন্যা, ডাইনি ইত্যাদির গল্প; অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে থাকে উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর নানা কাহিনি ও চরিত্রের গল্প। যেমন, মহাকাশ অনুসন্ধান, সময়-ভ্রমণ, মহাবিশ্বের জীবন, রোবট, ফ্লাইং সসার ইত্যাদির গল্প। রূপকথা অনেকের সৃষ্টি, কিন্তু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ব্যাক্তিবিশেষের সৃষ্টি।
বলি ও লিখি
‘আমড়া ও ক্র্যাক নেবুলা’ গল্পটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো। (মূল বইয়ের ১১৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
চার বছর বয়সে রঞ্জু বানিয়ে বানিয়ে অদ্ভুত সব গল্প বলে। এমনভাবে বলে, মনে হয় সত্যিই ঘটনাটা ঘটেছে। রঞ্জুকে বড় বোন শিউলির ঘরে আলাদা বিছানা-বালিশ দেওয়া হয়েছে যেখানে আজ থেকে সে ঘুমাবে। কিন্তু মাঝরাতে বিভিন্ন অযুহাতে সে মা-বাবার কাছে ঘুমাতে যেত। বানিয়ে গল্প বলার অভ্যাস তার বেড়ে যেতে থাকে। তার বানিয়ে বলা গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- মহাকাশের কোনো এক আগন্তুক তাকে ব্ল্যাকহোলের গোপন রহস্যের কথা বলে গেছে।
ফ্লাইং সসার থেকে বিদঘূটে কোনো প্রাণি লেজার গান দিয়ে তাকে গুলি করার চেষ্টা করেছে। জারুল গাছের নিচে চতুষ্কোণ একটা উজ্জ্বল আলো দেখে উঁকি দিতেই ভিন্ন এক বিশ্বব্রহ্মা-ের একঝলক দেখতে পায় সে। শর্টকাট রাস্তায় আসতে আসতে হঠাৎ একটা রোবট বের হয়ে তাকে কুশল জিজ্ঞাস করে। এমন ধরনের বিচিত্র আজগুবি গল্প সে তার বোন শিউলিকে অবলীলায় বলে। একদিন সে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে কালির দোয়াত ভেঙে টুকরা-টুকরা হয়ে যায়। ফলে কালি ছড়িয়ে কার্পেটসহ সব জিনিস কালো হয়ে যায়। তাই রঞ্জুকে মায়ের কাছে বকা শুনতে হয়। বকা খেয়ে সে নির্জন ছাদে চলে আসে আর চাঁদের আলোয় মন শান্ত করে।
হঠাৎ বাতাসের শো শো আওয়াজ শুনে সে পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা মহাকাশযান ভাসছে। একটু পরে নীল আলোয় একটা আবছা ছায়াকে সে কিলবিল করতে দেখে। সেটি স্পষ্ট হতেই একজন শুকনো কাঠির মত মানুষ তার সাথে বাংলায় এমনকি চাটগাঁয়ের ভাষায় কথা বলে। তারপর তাদের ক্র্যাব নেবুলার একটা ফুটো সারানোর জন্য তার কাছে থাকা চুইংগামটা একটু চিবিয়ে দিতে অনুরোধ করে। ফুটোটা বন্ধ করে মানুষটা ক্র্যাব নেবুলার একটা ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি উপহার হিসেবে তার হাতে তুলে দিয়ে চলে যায়। সিড়ির আলোতে রঞ্জু আবিষ্কার করে যে, উপহারটা একটা আমড়া। শিউলি আপার জেরার এক পর্যায়ে সে আমড়াটি তাকে দেয়। তারপর তার প্রশ্নের উত্তরে বলে, সবাই যেখানে পায়, সেখানেই সে আমড়াটি পেয়েছে।
লেখা নিয়ে আমার মতামত
‘আমড়া ও ক্র্যাক নেবুলা’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্নে জেগেছে তা নিচের ছকে লেখো। (মূল বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘আমড়া ও ক্র্যাক নেবুলা’ রচনায় যা আছে:
১. গভীর রাতে আম্মা দেখেন রঞ্জু ঘুম থেকে উঠে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে এসেছে। রঞ্জু তার আব্বা-আম্মার মাঝখানে শুতে শুতে বলল, ভালুকটা ঘুমাতে দেয় না।
২. ব্যপারটা এইভাবে শুরু হয়েছে- প্রয়োজনে রঞ্জু চমৎকার গল্প ফেঁদে বসে। আব্বা বলেন, ছোট মানুষ সত্যি-মিথ্যে গুলিয়ে ফেলে। বড়ো হলে ঠিক হয়ে যাবে।
৩. বছরখানেক পরে রঞ্জুকে নিয়ে সমস্যা আরো বেড়ে গেল- কারণ হঠাৎ করে সে সায়েন্স ফিকশন পড়তে আরম্ভ করেছে। সায়েন্স ফিকশনের উদ্ভব কাহিনী পড়ে তার মাথাটা পুরোপুরি বিগড় গেল।
৪. রঞ্জুকে বকতে বকতে আম্মা তার বারোটা বাজিয়ে ছাড়লেন- এমন এমন কথা বললেন যে রঞ্জুন মনে হতে লাগল যে, বেঁচে থাকার বুঝি কোনো অর্থই হয় না।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ কল্পনানির্ভর লেখা
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা:
১. মাত্র চার বছরের কী ছেলে মা-বাবাকে ছেড়ে একা থাকতে পারে? তাই হয়তো সে কল্পিত একটা অযুহাতের আশ্রয় নিয়েছে।
২. বাবা কী রঞ্জুকে সমর্থন করে উৎসাহিত করলেন? নাকি মাকে সান্ত¦না দেওয়ার জন্য অভিনয় করলেন? নাকি ব্যাপারটাকে গুরুত্বই দিলেন না? মনে হয় শেষেরটাই ঠিক।
৩. রঞ্জুর কল্পনার জগৎটা এখন বিজ্ঞানমনস্ক জগতে পরিণত হয়েছে।
৪. আহা! বেচারা রঞ্জু। কিন্তু কোনো কারণ নেই, কিছু নেই হঠাৎ সে হোঁচট খেল কেন? বিষয়টা ভাবতে হবে।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি
চারপাশের যে জগৎ আমরা দেখতে পাই, তাকে বলে বাস্তব জগৎ। অনেক গল্পে বাস্তব জীবনের ঘটনার বর্ণনা থাকে। আবার এমন কিছু গল্প আছে যেগুলো বাস্তবের ঘটনার সাথে মেলে না। এগুলোকে কাল্পনিক গল্প বা কল্পকাহিনি বলে। তার মানে, বাস্তব জগতে বাস করেও গল্পকাররা কল্পনার জগৎ তৈরি করতে পারেন।
বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে লেখা এমন কাল্পনিক গল্পকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বলে। এসব কাহিনিতে থাকে মহাকাশের কাল্পনিক প্রাণী, তাদের যাতায়াতের জন্য ফ্লাইং সসার, মানুষের মতো আচরণকারী রোবট ইত্যাদি। তাছাড়া এমন কিছু বিষয় থাকে যা বিজ্ঞান হয়তো এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি, কিন্তু লেখকরা সেই বিষয়কেও গল্পে নিয়ে আসেন।
রূপকথাও এক ধরনের কল্পনানির্ভর লেখা। তবে এর সাথে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মিল যেমন আছে, তেমনি অমিলও আছে। রূপকথার ঘটনা ও চরিত্র অতীতের-আধুনিক প্রযুক্তি আসার আগেকার। অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বিষয় ও চরিত্র সময়ের বিচারে আধুনিক-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রসরতায় এর জন্ম।
রুপকথায় যে রাজপুত্র-রাজকন্যা বা দৈত্য-ডাইনি তুমি দেখতে পাও, বাস্তবের পৃথিবীতে তাদের দেখা যায় না। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে মহাকাশের কাল্পনিক প্রাণী কিংবা রোবট নিয়ে যেসব গল্প তৈরি হয়েছে, তার.কিছু কিছু ভবিষ্যতে সত্যি হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।
কল্পনানির্ভর রচনা লিখি
এবার তুমি একটি কল্পনানির্ভর গল্প লেখো। লেখাটি তুমি বানিয়ে লিখতে পারো, কিংবা সেটি তোমার আগে থেকে পড়া বা কারো কাছ থেকে শোনা গল্পও হতে পারে। লেখার শুরুতে একটি শিরোনাম দাও। (মূল বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
রাজকুমারী ও ব্যাঙ
রাজকুমারী সোনা দিয়ে বানানো একটা বল নিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করতো। যেখানেই যেত সেটা সে সঙ্গে করে নিয়ে যেত। একদিন পুকুরে গোসলের সময় বলটা মাটি থেকে গড়িয়ে পানিতে পড়ে যায়। রাজকুমারীর সে কি কান্না! তার অবস্থা দেখে পদ্মপাতায় বসে থাকা একটি ব্যাঙ এসে তাকে শান্ত করার জন্য কথা দিলো যে, সে ওই বলটি তার জন্য খুঁজে নিয়ে আসবে। কিন্তু ব্যাঙ একটি শর্ত রাখলো। বললো, সে ওই বলটি যদি খুঁজে আনতে পারে তাহলে তাকে প্রাসাদে থাকতে দিতে হবে।
সে রাজকুমারীর সঙ্গে খাবে এবং ঘুমাবে! রাজকুমারী ব্যাঙ-এর শর্তে রাজি হয়ে গেল। ব্যাঙ প্রায় সারাদিন ধরে ডুব-সাঁতার করে অনেক বড় আর গভীর পুকুর তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করলো রাজকুমারীর সোনার বল এবং রাজকুমারী বল নিয়ে খুশি মনে প্রাসাদে ফিরে গেল। সে বেমালুম ভুলে গেল তার প্রতিজ্ঞা! এবং অনেকদিন ধরে ব্যাঙ প্রাসাদের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো, কখনও যদি আবার রাজকুমারীর দেখা পায়!
ওই দিন প্রকা- ঝড়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে! অনেক বৃষ্টি আর ভয়ঙ্কর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ব্যাঙ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখনই পুকুরের টলমল পানিতে সাঁতারের আকাক্সক্ষায় রাজকুমারী রওনা হলো সে দিকে। দেখলো রাস্তায় ব্যাঙ পড়ে আছে। রাজকুমারীর মনে পড়ে গেল তার প্রতিজ্ঞার কথা! সে ব্যাঙকে নিয়ে গেল প্রাসাদে এবং অনেক সেবা করে ভালো করে তুললো। দু’জন দু’জনের খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল। সেই বন্ধুত্বের প্রভা ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র এবং এক গোলাপী রঙের প্রজাপতি এসে ছুঁয়ে দিলো, ব্যাঙ হয়ে গেল রাজকুমার!
ওরা চিরদিন বন্ধু হয়ে রইলো।
রাজকুমার আসলে এক বন্ধুর প্রতি অবহেলা করেছিল, আর কথা দিয়ে কথা রাখেনি বলে রাজকুমার ব্যাঙ হয়ে জীবন-যাপন করছিল। কিন্তু রাজকুমারীর বন্ধুত্ব ওকে সকল অভিশাপ থেকে মুক্তি দিলো। আমাদের কত রকম ভুল হয়! কত প্রতিজ্ঞা রাখি না! তাতে কি? আমাদের ভুলগুলো ঠিক করে ফেলবো। আর কোনো বন্ধুকে কথা দেবার আগে ভেবে নেবো! ভুলে হয়ে গেলে তো সরি বলা যায়, তাই না!
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ কল্পনানির্ভর লেখা লেখা শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post