৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ : সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ সালে আসামের করিমগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৪ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। আফগানিস্তানের কাবুলে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে তীর কর্মজীবন শুরু হয়। এছাড়া মিশরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অধ্যাপনা করেন। তীর রচনার একটি বড়ো অংশ ভ্রমণকাহিনি। সরস ভাষায় ভ্রমণ-অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন “দেশে-বিদেশে’, “জলে ডাঙায়”। তীর রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে আছে ‘পঞ্চতন্ত্র’, “চাচা কাহিনী”, “ময়ুরকণ্ঠী” ইত্যাদি। নিচের লেখাটি সৈয়দ মুজতবা আলীর “জলে ডাঙায়” গ্রন্থ থেকে নেওয়া।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ
পড়ে কী বুঝলাম? (পিরামিড)
ক. লেখক এখানে কীসের বিবরণ দিয়েছেন?
উত্তর: লেখক এখানে পিরামিডগুলোর বিবরণ দিয়েছেন।
খ. পিরামিডগুলো কারা তৈরি করেছিলেন এবং কখন তৈরি করেছিলেন?
উত্তর: মিশরের ফারাওরা পিরামিডগুলো তৈরি করেছিলেন। ধারণা করা হয়, প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বছর পূর্বে এ পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছিল।
গ. পিরামিডগুলো কেন তৈরি করা হয়েছিল?
উত্তর: অনন্ত জীবনের প্রত্যাশায় ফারাওরা পিরামিডগুলো তোর করেছিলেন। ফারাওদের বিশ্বাস ছিল মানুষের লাশ পচে গেলে তারা অনন্ত জীবনের অধিকারী হতে পারে না। তাই মৃতদেহকে “মমি” বানিয়ে পিরামিডের ভিতরে রেখে দিলে অনন্ত জীবনের পথে আর বাধা থাকে না। কেননা শক্ত পিরামিডের ভিতরে ঢুকে কেউ “মমি’কে ছুঁতেও পারবে না। তাই তারা পিরামিড তৈরি করেন।
ঘ. পিরামিডগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
উত্তর: পিরামিডগুলো পাথরের তৈরি। পাথর কেটে পাথরের টুকরোর ওপর পাথরের টুকরো বসিয়ে পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছিল।
ঙ. পিরামিড একটি পূরাকীর্তি। বাংলাদেশের যেকোন একটি পুরাকীর্তির সাথে এর মিল-অমিল খুঁজে বের করো।
উত্তর: বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি পুরাকীর্তি হচ্ছে পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার। পিরামিডের মতো এটিও প্রাচীন স্থাপনা। তবে পিরামিডের প্রাচীনত্বের চেয়ে এর প্রাচীনত্ব কম। পিরামিড যেমন ফারাও রাজারা তৈরি করেছেন, সোমপুর বিহারও পাল রাজাদের কীর্তি। পিরামিড ত্রিকোণ-বিশিষ্ট, আর সোমপুর বিহারটি চতুষ্কোণ-বিশিষ্ট। পিরামিডের ভিতরে যেমন ছোটো ছোটো কুঠুরি রয়েছে, বিহারের ভিতরেও তাই। বিহারের দেয়ালে টেরাকোটা চিত্র থাকলেও, পিরামিডের দেয়ালে তেমন চিত্র নেই। তবে মিশরের পিরামিড ও সোমপুর বিহার দুটিই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।
বলি ও লিখি
‘পিরামিড’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা তোমার নিজের ভাষায় বলো এবং লেখো। (মূল বইয়ের ৮৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
পিরামিড পৃথিবীর একটি আশ্চর্য নিদর্শন এবং তা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। যুগ যুগ ধরে পিরামিডের ভিতর ও বাইরের রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করছে মানুষ। অনেকে পিরামিডের ভিতরে ঢুকতে চেয়েছে সম্পদের লোভে, কিন্তু মিস্ত্রীরা এমন কৌশলে তা বানিয়েছিল যে সহজে কেউ যেন প্রবেশের রাস্তা না পায়। মিশরের ভিতরে বাইরে আর পিরামিড থাকলেও গিজে অঞ্চলের তিন পিরামিডই জগৎ-বিখ্যাত।
লেখক এগুলোর কথাই তুলে ধরেছেন। পিরামিড তিনটি যেসব রাজা নির্মাণ করেছেন তাদের নাম, নির্মাণের কাল এবং পিরামিডগুলোরা উচ্চতা ও আকৃতির বর্ণনাও দিয়েছেন লেখক। এসব পিরামিড তৈরি হয়েছিল পাথর কেটে, পাথরের টুকরো দিয়ে। মোট লেগেছিল তেইশ লক্ষ টুকরো পাথর; এগুলো বানাতেও এক লক্ষ লোকের বিশ বহর সময় লেগেছিল; ব্যয় হয়েছিল প্রচুর অর্থের। পিরামিডগুলো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে মিশরের রাজারা তৈরি করেছিলেন। মূল লক্ষ্য ছিল অনন্ত জীবনের প্রত্যাশা।
ফারাওদের বিশ্বাস ছিল মানুষের লাশ পচে গেলে তারা অনন্ত জীবনের অধিকারী হতে পারে না। তাই মৃতদেহকে ‘মমি’ বানিয়ে পিরামিডের ভিতরে রেখে দিয়ে অনন্ত জীবনের পথে আর বাধা থাকে না। কেননা শক্ত পিরামিডের ভিতরে ঢুকে কেউ ‘মমি’কে ছুঁতেও পারবে না। কিন্তু তাদের সেই আশা পূর্ণ হয়নি। কারণ এরমধ্যে মানুষ মমিকে স্পর্শ করতে পেরেছে এবং তা স্থানান্তরিত করে জাদুঘরে রেখেও দিয়েছে।
লেখা নিয়ে মতামত
‘পিরামিড’ রচনায় যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো। (মূল বইয়ের ৮৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘পিরামিড’ রচনায় যা আছে:
১. এ তিনটি পিরামিড পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো কীর্তিস্তম্ভ
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা:
এ তথ্য সঠিক কি না তা যাচাই করতে হবে।
‘পিরামিড’ রচনায় যা আছে:
২. ভেবে কূল-কিনারা পাওয়া যায় না, সে সম্রাটের কতখানি ঐশ্বর্য আর প্রতাপ ছিল, যিনি আপন রাজধানীর পাশে লক্ষ লক্ষ লোককে বিশ বছর খাওয়াতে-পড়াতে পেরেছিলেন।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা:
শুনেছি আগেরকার রাজা-বাদশারা জোর করে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ধরে এনে দাস হিসেবে কাজ করাতো, যা অত্যন্ত অমানবিক ছিল। পিরামিড বানানোর সময়ে এধরনের কিছু ঘটেছিল কিনা জানতে হবে।
‘পিরামিড’ রচনায় যা আছে:
৩. জানো তো, পিরামিডের ঠিক মাঝখানে একটা কুঠুরিতে বিস্তর ধনদৌলত জড়ো করা আছে-তারই পথ অনুসন্ধান করছে পাকা সাড়ে ছ হাজার বছর ধরে।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা:
স্যতিই পিরামিডের ভেতরে কোনো ধন-সম্পদ আছে, নাকি এগুলো কেবলই কাল্পনিক গল্প মাত্র, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
‘পিরামিড’ রচনায় যা আছে:
৪. ফারাওরা (সম্রাটরা) বিশ্বাস করতেন, তাদের শরীর যদি মৃত্যুর পর পচে যায়, কিংবা কোনো প্রকার আঘাতে ক্ষয় হয় তবে তাঁরা পরলোকে অনন্ত জীবন পাবে না।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা:
ফারাওরা কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিল? তাদের ধর্মে কী পরকাল সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল? যদি থাকে তাহলে তা জানতে হবে।
বিবরণ লিখি
ষাট গম্বুজ মসজিদ
খুলনার বাগেরহাট জেলায় বাংলাদেশের অন্যতম পুরাকীর্তি ষাটগম্বুজ মসজিদ অবস্থিত। বিখ্যাত এ মসজিদটিতে ৮১ টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮.৫ ফুট পুরু। মসজিদ এলাকায় একটি জাদুঘর রয়েছে।
জনশ্রুতি আছে যে, হযরত খানজাহান (রঃ) ষাটগম্বুজ মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সুদূর চট্রগ্রাম, মতান্তরে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতাবলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। ইমারতটির গঠন-বৈচিত্রে তুঘলক স্থাপত্যের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ বিশাল মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার আছে। দক্ষিণ দিকের মিনারের শীর্ষে কুঠিরের নাম রোশনাই কুঠির এবং এ মিনারে উপরে উঠার সিড়ি আছে।
মসজিদটি ছোট ইট দিয়ে তৈরী, এর দৈর্ঘ্য ১৬০ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট, উচ্চতা ২২ফুট। মসজিদের সম্মুখ দিকের মধ্যস্থলে একটি বড় খিলান এবং তার দুই পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ মোট ২৬টি দরজা আছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর বিভাগ পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য এ ঐতিহাসিক মসজিদ এবং খানজাহান (রঃ) এর মাজার শরীফের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে । ইউনেস্কো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ বিবরণমূলক লেখা শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post