৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ : শামসুজ্জামান খানের জন্ম ১৯৪০ সালে এবং মৃত্যু ২০২১ সালে। প্রবন্ধ রচনায় ও লোকসাহিত্য গবেষণায় তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে “ফোকলোর চর্চা”, “বাংলা সন ও তার এতিহ্য” ‘গ্রাম বাংলার রঙ্গরসিকতা” ইত্যাদি। নিচে তাঁর লেখা একটি প্রবন্ধ দেওয়া হলো।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ
গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ
আবহমান: চিরকালীন।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা: সব বয়সের নারী-পুরুষ
ইলাহি সন: সমাট আকবরের চালু করা সাল।
ঐতিহ্য: গর্ব করার মতো পুরাতন বিষয়।
কবিগান: প্রতিযোগিতামূলক এক ধরনের লোকগান।
কারুপণ্য: কাঠ, বাঁশ, বেত ও মাটি দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র।
কীর্তন: রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক গান।
গম্ভীরা: অভিনয়-ভিত্তিক এক ধরনের লোকগান।
চান্দ্র হিজরি সন: চাঁদের হিসাবের সাথে মিল রেখে তৈরি হিজরি সন।
ছায়ানট: ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
জাতিসত্তা: জাতির নিজস্ব পরিচয়।
‘জোলুস: জঁকজমক।
ঝালর কাটা: নকশা করে কাটা।
ধুমধাম: আড়ম্বর।
ধূপধুনা: সুগন্ধি দ্রব্য।
নাগরদোলা: চত্রাকারে ঘোরার দোলনা।
নেকমরদ্: জায়গার নাম।
পরিপন্থী: বিরোধী।
পাকিস্তান আমল: ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট থেকে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ। অনুষ্ঠান।
পুতুল নাচ: কাপড় দিয়ে তৈরি করা পুতুল দিয়ে দেখানো নাচ।
পূর্ববাংলা: পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশ যে নামে পরিচিত ছিল।
প্রতীকধর্মী: যা কোনো বিষয়কে ইঙ্গিত করে।
প্রবর্তন করা: চালু করা।
ফুঁসে ওঠা: প্রতিবাদী হওয়া।
বর্ণাঢ্য: বিচিত্র রংযুক্ত।
বৈসাবি: বৈসুব, সাংগ্রাই ও বিজু নামের তিনটি অনুষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত নাম।
মঙ্গল শোভাযাত্রা: পহেলা বৈশাখে আয়োজিত আনন্দ মিছিল।
মুখর: কোলাহলপূর্ণ।
মুখ্যমন্ত্রী: পাকিস্তান আমলে পূর্ববাংলার সরকার-প্রধানের পদ।
যাত্রা: এক ধরনের লোকনাটক।
যুক্তস্রন্ট সরকার: ১৯৫৪ সালে পূর্ববাংলায় গঠিত একটি বহুদলীয় সরকার।
রমনা: ঢাকার একটি জায়গার নাম।
লুপ্ত হওয়া: হারিয়ে যাওয়া। সমকালীন: একই সময়ের। সমন্বয় করা: মিল করা।
প্রবন্ধ বুঝি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। উপরের প্রবন্ধে কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১৬৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘বাংলা নববর্ষ’ রচনাটির লেখক কে?
উত্তর: ‘বাংলা নববর্ষ’ রচনাটির লেখক শামসুজ্জামান খান।
২. ‘বাংলা নববর্ষ’ কোন ধরনের রচনা?
উত্তর: এটি একটি প্রবন্ধ।
৩. বাঙালিদের প্রধান জাতীয় উৎসব কোনটি?
উত্তর: ‘বাংলা নববর্ষ’
৪. কখন বাঙালিকে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বাধা প্রদান করা হয়?
উত্তর: পাকিস্তানি আমলে।
৫. কে এবং কখন বাংলা সন চালু করেন?
উত্তর: সম্রাট আকবর ১৫৫৬ সালে বাংলা সন চালু করেন।
৬. ‘সন’ বা ‘সাল’ শব্দ কোন ভাষার শব্দ?
উত্তর: ফারসি ভাষার শব্দ।
৭. কখন থেকে রমনা বটমূলে নববর্ষ উৎসব শুরু হয়?
উত্তর: ১৯৬৭ সাল থেকে।
৮. ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান কে চালু করেন?
উত্তর: ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান নবাব এবং জমিদারগণ চালু করেন।
৯. ‘জব্বারের বলী খেলা’ কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর: আবদুল জব্বার।
১০. ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাংলাদেশের কোন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের দিক।
বলি ও লিখি
‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো। (মূল বইয়ের ১৬৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
নমুনা উত্তর: পহেলা বৈশাখ বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন, পুরো জাতির জীবনেই আনন্দ-উৎসবের দিন, সবার জন্য কল্যাণ কামনারও দিন।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বাঙালির আনন্দ উৎসব ও নানা আচার অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। বাংলা নববর্ষ বর্তমানে আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব। কিন্তু পাকিস্তানি শাসনামলে বাঙালি জাতিকে এ উৎসব উদযাপন করতে দেয়নি তৎকালীন শাসকরা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ উৎসব উদযাপনের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো।সুতরাং বাঙালি জাতিসত্তার গঠন-প্রক্রিয়ার সাথে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন যুক্ত হয়ে যায়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করেন এবং দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। কিন্তু বাঙালির এই তাৎপর্যপূর্ণ দিন যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দিয়ে ও সামরিক শাসন জারি করে রুখে দেয়া হয়েছিল। তবুও বাঙালিরা পিছু হটেনি। ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে ছায়ানট নববর্ষের উৎসব শুরু করে।
বর্তমানে এটি দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার নববর্ষের দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাঙালিত্বের পরিচয়বাহী এবং সমকালীন সমাজ-রাজনীতির সমালোচনামূলক নানান ধরনের মুখোশ-কার্টুন বহন করা হয়।
বাংলা সনের ইতিহাস আলোচনায় দেখা যায়- মোগল সম্রাট আকবর চন্দ্র হিজরি সনের সাথে সৌরসনের সমন্বয় করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু করেন। বাংলা সন চালুর পর নববর্ষ উদযাপনের নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়। নবাব এবং জমিদারেরা চালু করেন ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান।
এই দিনে প্রজারা নবাব বা জমিদারের বাড়িতে আমন্ত্রিত হতেন। তাদের মিষ্টি মুখ করানো হতো, পান-সুপারির আয়োজন থাকতো। তবে মূল উদ্দেশ ছিল খাজনা আদায়। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পরে ‘পুণ্যাহ’ এর প্রচলন আর নেই। পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা।
হালখাতা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা নানা রঙের কাগজ দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠান সাজাতেন, গ্রাহকদের করানো হতো মিষ্টিমুখ। হালখাতাও এখন আর সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় না। বাংলা নববর্ষের আরেকটি প্রধান অনুষ্ঠান হলো বৈশাখী মেলা। এসব মেলা থেকেই গ্রামাঞ্চলের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখতো। মেলায় থাকতো কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, পুতুল নাচসহ নানা আনন্দ আয়োজন।
প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি
প্রবন্ধের সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো। (মূল বইয়ের ১৬৮ নম্বর পৃষ্ঠা)
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ছকভিত্তিক উদ্দীপকটি পিডিএফ উত্তরমালায় দেখো। )
যাচাই করি
প্রবন্ধ লেখা হয়ে গেলে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করো: (মূল বইয়ের ১৭০ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. প্রবন্ধটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা? (ইতিহাস, বিজ্ঞান, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্ম খেলাধুলা ইত্যাদি)
উত্তর: প্রবন্ধটি ইতিহাস নিয়ে লেখা। এখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
২. প্রবন্ধটির ধরন কী এবং কেন? (বিবরণমূলক, তথ্যমূলক বিশ্লেষণমূলক)
উত্তর: প্রবন্ধটি একটি তথ্যমূলক রচনা। এই প্রবন্ধে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট, ইতিহাস স্বীকৃতি সম্পর্কিত তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
প্রবন্ধ কী? প্রবন্ধ কাকে বলে?
প্রবন্ধ হলো এক ধরনের সুবিন্যস্ত গদ্য রচনা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ রচিত হয়; যেমন-ইতিহাস, বিজ্ঞান, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্ম, খেলাধুলা ইত্যাদি। এই বইয়ের “পিরামিড লেখাটি ইতিহাস বিষয়ক, “জগদীশচন্দ্র বসু’ লেখাটি বিজ্ঞান বিষয়ক, ‘কত কাল ধরে” লেখাটি সমাজ বিষয়ক এবং ‘বাংলা নববর্ষ লেখাটি সংস্কৃতি বিষয়ক। ধরন অনুযায়ী প্রবন্ধ নানা রকম হতে পারে; যেমন: বিবরণমূলক প্রবন্ধ, তথ্যমূলক প্রবন্ধ, বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ ইত্যাদি।
বিবরণমূলক প্রবন্ধে কোনো বিষয়ের বিবরণ দেওয়া হয়, তথ্যমূলক প্রবন্ধে মূলত তথ্য তুলে ধরা হয়, আর বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধে উপাত্ত ও তথ্যের বিশ্লেষণ করা হয়। যিনি প্রবন্ধ লেখেন, তাঁকে বলা হয় প্রাবন্ধিক বা প্রবন্ধকার। প্রবন্ধের মধ্যে সাধারণত আবেগের চেয়ে যুক্তি প্রাধান্য পায়। বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে প্রাবন্ধিক তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রবন্ধের প্রথম অংশ ভূমিকা নামে পরিচিত। ভুমিকায় মূল আলোচনার ইঙ্গিত থাকে। প্রবন্ধের শেষ অংশ উপসংহার নামে পরিচিত। উপসংহারে প্রাবন্ধিকের সমাপ্টিসূচক মন্তব্য থাকে।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post