৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ : মামুনুর রশীদ ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে আছে “ওরা কদম আলী”, “এখানে নোঙর”, ‘মানুষ’ ইত্যাদি। নিচে মামুনুর রশীদের একটি নাটক দেওয়া হলো। নাটকটি প্রথমে মনে মনে পড়ো। এরপর শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী একেক জন একেকটি চরিত্রের সংলাপ পাঠ করো।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ
গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ
অনুসরণ করা: লক্ষ রাখা।
অবশ হয়ে আসা: চলার শক্তি হারিয়ে ফেলা।
ফেরি করা: পথে পথে ঘুরে জিনিস বিক্রি করা।
এক্ষুনি: এখনই।
মতলব: ফন্দি।
ওয়ার্নিং বেল: সতর্ক করার জন্য বাজানো ঘণ্টা।
শালিক: পাখির নাম।
চন্দনা: পাখির নাম।
স্কুল কামাই করা: স্কুল ফাঁকি দেওয়া।
নাটকের চরিত্র
এই নাটকে যেসব চরিত্র আছে, তাদের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখ। (মূল বইয়ের ১৭৫ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. সাবু—সাবু আরজুর বন্ধু। সাবু আর আরজু একই ক্লাসে পড়ে। আরজুর পায়ে ব্যথা থাকায় সে বেশিক্ষণ হাঁটতে পারে না। ফলে তাদের স্কুলে যেতে দেরী হয়। আর এজন্য সাবু প্রায়ই স্যারের কাছে বকা খায়।
২. আরজু—‘সেই ছেলেটি’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র আরজু। তাকে কেন্দ্র করেই এই নাটকের ঘটনাগুলো এগিয়ে চলে।
৩. আইসক্রিমওয়ালা—তিনি আইসক্রিম বিক্রি করেন। আইসক্রিম বিক্রির সময়ে তিনি আরজুকে পথের পাশে বসে থাকতে দেখে তাকে জানান যে, স্কুল ফাঁকি দেওয়া ভালো না। কারণ স্কুল ফাঁকি দেওয়ার কারণেই আজ তিনি আইসক্রিম বিক্রি করছেন।
৪. লতিফ স্যার—লতিফ স্যার সাবু এবং আরজুদের শ্রেণিশিক্ষক। তিনি প্রায়ই লক্ষ্য করেন যে আরজু ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। পরে তিনি আরজুর সমস্যার কথা জানতে পেরে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।
৫. সোমেন—সাবুর মত মোমেনও আরজুর বন্ধু। তারা একই শ্রেণিতে পড়ে। তবে পায়ের ব্যথার কারণে আরজু পথে বসে পড়লে মোমেন তাকে পথে রেখেই স্কুলে চলে যায়। যদিও পরে সে তার ভুল বুঝতে পারে।
৬. হাওয়াই মিঠাইওয়ালা—তিনি গ্রামে ঘুরে ঘুরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন। তার হাওয়াই মিঠাই ওজনে অনেক হালকা আর ঠিক সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে হয়। কারণ, ঠিক সময়ের মধ্যে বিক্রি না হলে হাওয়াই মিঠাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর তাই তিনি আরজুর কথায় সাড়া দিতে চান না। পাছে তার সময় নষ্ট হয়ে যায়।
নাটক বুঝি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। ‘সেই ছেলেটি’ নাটকে কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১৭৬ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘সেই ছেলেটি’ কোন ধরনের রচনা?
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ একটি নাটক।
২. ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের রচয়িতা কে?
উত্তর: মামুনুর রশীদ।
৩. স্কুলে যাওয়ার পথে বন্ধুরা আরজুকে রেখে চলে যায় কেন?
উত্তর: আরজুর পায়ে ব্যথা হওয়ায় সে পথে বসে পড়ে। এদিকে ক্লাসে যেতে দেরী হওয়ায় বন্ধুরা আরজুকে রেখেই স্কুলে চলে যায়।
৪. আইসক্রিমওয়ালাকে কেন আইসক্রিম বিক্রি করতে হয়?
উত্তর: কারণ সে ছোটবেলায় স্কুল ফাঁকি দিত এবং ঠিকমত পড়াশোনা করত না।
৫. আরজুর পায়ে ব্যথার কারণ কী?
উত্তর: ছোটবেলার এক অসুখে আরজুর দু’পা চিকন হয়ে যায়। এর ফলে আরজু কিছুটা পথ হাটলেই পায়ে ব্যথা অনুভব করে।
৬. আরজু স্কুলে পৌঁছানোর জন্য কাদের সাহায্য চায়?
উত্তর: পাখি ও মেঘের।
বলি ও লিখি
‘সেই ছেলেটি’ নাটকটির কাহিনী প্রথমে গল্পের মত বলো, তারপর লেখো। (মূল বইয়ের ১৭৬ নম্বর পৃষ্ঠা)
মোমেন, সাবু আর আরজু একই শ্রেণীতে পড়ে। তারা একসাথে স্কুলে যায়। কিন্তু কিছুটা পথ হাঁটার পরেই আরজুর পা ব্যথা শুরু হয়ে যায়, তাই সে পথে বসে পড়ে। তখন মোমেন তাকে রেখেই চলে যায়। এদিকে সাবু ফিরে এসে আরজুকে পথে বসে থাকতে দেখে এবং কারণ জানতে চায়।আরজু তাকে বলে যে, ‘আমি আর হাঁটতে পারছি না।’ তখন সাবু তাকে বলে, রোজ রোজ তার জন্য স্যারের বকুনি খেতে হয়। সাবুও তখন আরজুকে ফেলে চলে যায়। আর আরজু পথে বসে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর আইসক্রিম ওয়ালার সাথে দেখা হয় আরজুর। আইসক্রিমওয়ালা আরজুকে বলে যে, স্কুল ফাঁকি দেওয়া মোটেই ভালো কোনো কাজ নয়। ছোটবেলায় সে স্কুল ফাঁকি দিত বলে আজ সে আইসক্রিম বিক্রি করছে। আইসক্রিমওয়ালার পরে আসে হাওয়াই মিঠাইওয়ালা। সেও আরজুর ডাকে সাড়া দিতে চায় না। কারণ তার সময় নষ্ট হলে হাওয়াই মিঠাইও নষ্ট হয়ে যাবে।
স্কুলের লতিফ স্যার লক্ষ্য করেন আরজু স্কুলে অনুপস্থিত। স্যার সাবুর কাছে জানতে চান, আরজু অনুপস্থিত কেন? সাবু জানায় যে আরজু মাঝপথে এসে থেমে যায় এবং তাদেরকে চলে আসতে বলে। আরজু মাঝে মাঝেই এমন করে। স্যার বুঝতে পারেন আরজুর নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে। তখন স্যার সাবু আর মোমেনকে নিয়ে আরজুর কাছে যাওয়ার জন্য রওনা দিলেন।
এদিকে আরজু স্কুলে যেতে না পেওে মন খারাপ করে বসে থাকে। সে মেঘ আর পাখির কাছে তাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার আবদার করে এবং বসে বসে কাঁদতে থাকে। এমন সময় লতিফ স্যার এসে উপস্থিত হন। স্যার আর্জুকে জিজ্ঞাসা করেন, আরজু তুমি কাঁদছো কেন? তোমার কি হয়েছে? তুমি স্কুলে যাওনি কেন?
আরজু তার পা দুটো স্যারকে দেখায়। স্যার দেখলেন আরজু রোগে ভুগছে, তার পা দুটো বেশ চিকন হয়ে গেছে। তখন স্যার আরজুকে চিকিৎসা করানোর আশ্বাস দেন এবং তার বন্ধুদের উপদেশ দেন তারা যেন আর আরজুকে ফেলে রেখে না চলে আসে। তখন আরজুর বন্ধুরা তাদের ভুল বুঝতে পারে।
জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজি
‘সেই ছেলেটি’ নাটকের সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৭৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘সেই ছেলেটি’ নাটকে আরজু একজন প্রতিবন্ধী শিশু। আমরা আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের দেখি। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় এই যে, এসব মানুষদের আমরা সহানুভুতিশীল দৃষ্টিতে দেখি না। বরং এদের সাথে খারাপ আচরণ করি আমরা। অথচ এরাও আমাদের মতই মানুষ। এদেরও ভালো লাগা বা মন্দ লাগা আছে।
আরজুর মত এমন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যেসব শিশু আমাদের চারপাশে আছে, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবহেলিত, অযত্নের শিকার। অনেকেই তাদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। অনেক সময় ক্লাসের সহপাঠিরাও তাদের সাথে বাজে আচরণ করে। কিন্তু এরকম কাজ একদমই করা উচিৎ নয়। আমাদের উচিৎ এদের পাশে থাকা।
আমরা আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের প্রতি খারাপ আচরণকারণীদের যেমন দেখি, তেমনি লতিফ স্যারের মত মহৎ হৃদয়ের মানুষদেরও দেখি; যারা প্রতিবন্ধীদের সেবায় এগিয়ে আসে। তাই আমাদের সকলের উচিৎ লতিফ স্যারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিবন্ধীদের প্রতি ভালো আচরণ করা এবং বিপদে তাদের পাশে থেকে সাধ্যমত সাহায্য করা। তাহলেই আমাদের এ পৃথিবী সবচেয়ে সুন্দর হয়ে উঠবে।
নাটকের বৈশিষ্ট্য খুঁজি
‘সেই ছেলেটি’ একটি নাটক। নাটকের সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো। (মূল বইয়ের ১৭৮ নম্বর পৃষ্ঠা)
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ছকভিত্তিক উদ্দীপকটি পিডিএফ উত্তরমালায় দেখো। )
সংলাপ লিখি
যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে দুটি চরিত্রের মধ্যে সংলাপ রচনা করো। (মূল বইয়ের ১৭৯ নম্বর পৃষ্ঠা)
নমুনা উত্তর: সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে সংলাপ।
বিজয় : প্রতিদিন কতজন লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তুমি জানো মুহিন?
মুহিন : আমার মনে হয় এর সঠিক হিসেব নেই, কারণ সব খবর তো পত্রিকা আর টিভিতে আসে না।
বিজয় : আমাদেরে দেশের কত মূল্যবান জীবন এভাবে শেষ হয়ে যায়। সতিই ভাবতে অবাক লাগে। এ নিয়ে কারো যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই।
মুহিন : বিজয়, তুমি ঠিকই বলেছ। এর একটা প্রতিকার হওয়া দরকার। আচ্ছা এসব দুর্ঘটনার পেছনে মূল কারণ কী তুমি বলতে পার?
বিজয় : আমার মনে হয়, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ প্রতিযোগিতার মনোভাব।
মুহিন : সেটা কেমন? কিসের প্রতিযোগিতা?
বিজয় : গাড়ি চালকরা কার আগে কে যাবে এই প্রতিযোগিতায় বেপরোয়াভাবে দ্রুত গাড়ি চালায়। এছাড়াও অনভিজ্ঞ চালক সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী।
মুহিন : হ্যা, লাইসেন্স নেই এমন অসংখ্য চালক রয়েছে যারা প্রশিক্ষণ না নিয়েই বড় গাড়ির চালক হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশ এদের ব্যাপারে কঠোর হলে এমনটা হতো না।
বিজয় : আইনের প্রয়োগ যেমন এক্ষেত্রে জরুরী তেমনি জনসচেতনতারও প্রয়োজন রয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গাড়িতে না উঠলেও আমরা পারি। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা সেই কাজটি করি।
মুহিন : আমরা একটা কাজ করতে পারি। আমাদের ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে একটি স্মারকলিপি তৈরি করে জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দিতে পারি।
বিজয় : ভালো চিন্তা করেছ। চলো আমরা এ বিষয়ে ক্লাসের সবার মতামত নেই।
নাটক কী? নাটক কাকে বলে?
সংলাপ-নির্ভর রচনাকে নাটক বলে। নাটক মূলত অভিনয়ের জন্য লেখা হয়। নাটকে একটি কাহিনি থাকে। কাহিনি ধীরে ধীরে পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। নাটকে এক বা একের বেশি দৃশ্য থাকে। নাটকের এক-একটি অংশকে দৃশ্য বলে। ‘সেই ছেলেটি” নাটকে তিনটি দৃশ্য আছে।
দৃশ্যগুলোর ঘটনা তিনটি জায়গায় ঘটেছে-১ম দৃশ্য: গ্রামের পাশের রাস্তা, ২য় দৃশ্য: সাবু, আরজুদের স্কুল, ৩য় দৃশ্য: আম বাগান। নাটকে সাধারণত কয়েকটি চরিত্র থাকে। ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের চরিত্রগুলোর মধ্যে আছে-আরত্বু, সাবু, আইসক্রিমওয়ালা ইত্যাদি। নাটকের চরিত্ররা যেসব কথা বলে, সেগুলোকে সংলাপ বলা হয়। ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের সংলাপ: সাবু বলছে- “কী হলো আবার?” আরজু বলছে- “আমি যে আর হীঁটতে পারছি না!”
যিনি নাটক লেখেন, তাঁকে বলা হয় নাট্যকার। যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদের বলা হয় অভিনেতা। নাটকের অভিনয় যিনি পরিচলনা করেন, তাঁকে বলা হয় পরিচালক বা নির্দেশক। সাধরণত মঞ্চে নাটক অভিনীত হয়। মঞ্চের সামনে বসে যাঁরা নাটক উপভোগ করেন, তাঁদের বলে দর্শক। টেলিভিশন ও অন্যান্য দৃশ্য-মাধ্যমে আজকাল নানা ধরনের নাটক অভিনীত হয়। রেডিওতেও নাটক শোনা যায়।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post