৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান : শওকত ওসমানের জন্ম ১৯১৭ সালে এবং মৃত্যু ১৯৯৮ সালে। তিনি অনেক গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে “জননী”, “ক্রীতদাসের হাসি”, “জাহান্নম হইতে বিদায়” ইত্যাদি। ছোটোদের জন্য লেখা তাঁর বইয়ের মধ্যে আছে ‘ওটন সাহেবের বাংলো”, “মসকুইটো ফোন’ ইত্যাদি। নিচে শওকত ওসমানের একটি গল্প দেওয়া হলো।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান
গল্পটি প্রথমে নীরবে পড়ো। এরপর সরবে পড়ো।
গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ
অসোয়াস্তি: খারাপ লাগা।
উপযাচক: যে যেচে কিছু করে।
উর্দি: সৈনিকদের পোশাক।
কাফেলা: পথিকের দল।
কুঁচোঃ ছোটো।
খাবি খাওয়া: অসুবিধা বোধ করা।
গারো পাহাড়: নেত্রকোণা জেলায় অবস্থিত পাহাড়ের নাম।
চাঙারি: বাঁশ বা বেতের তৈরি ছোটো পাত্র।
চিক্কর: চিৎকার।
জয়িফ: অতি বৃদ্ধ।
জালা: মাটির তৈরি পেট মোটা বড়ো পাত্র।
নাজেহাল: অতিশয় ক্লান্ত।
নিমেষে: চোখের পলকে।
পঁচিশে মার্চ: ১৯৭১ সালের পচিশে মার্চ। এই তারিখ রাতে পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে।
পাঞ্জাবি মিলিটারি: মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাধারণ নাম।
প্রৌঢ়: মধ্যবয়সী।
গল্প বুঝি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। উপরের গল্পে কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১৫১ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘তোলপাড়’ গল্পটির রচয়িতা কে?
উত্তর: শওকত ওসমান।
২. ‘তোলপাড়’ গল্পটি কোন প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত?
উত্তর: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে।
৩. সাবুর মায়ের নাম কী?
উত্তর: জৈতুন বিবি।
৪. কারা ঢাকা শহরে গুলি করে মানুষ মারছে?
উত্তর: পাঞ্জাবি মিলিটারি।
৫. সাবু মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারে না কেন?
উত্তর: শহরে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবর শুনে সাবু আতঙ্কিত ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তার শরীর থরথর করে কাঁপে। এজন্য সে চাইলেও মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারে না।
৬. ঢাকা শহর থেকে গাবতলী গ্রামের দূরত্ব কত?
উত্তর: পঞ্চাশ মাইল।
৭. কত তারিখে পাঞ্জাবি মিলিটারি মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে?
উত্তর: পঁচিশে মার্চের রাতে।
৮. সাবুদের বাড়ির পাশ দিয়ে কোন সড়ক গেছে?
উত্তর: জেলা বোর্ডের সড়ক।
৯. শহর থেকে ছুটে আসা মানুষদের গন্তব্য কোথায়?
উত্তর: কুমিল্লা, নোয়াখালি এবং ময়মনসিংহসহ গারো পাহারের কাছাকাছি নানা এলাকা।
১০. কীভাবে রাস্তার ধারেই দু’তিনজন শেষ হয়ে গেল?
উত্তর: তৃষ্ণায় বুক ফেটে।
১১. শহর থেকে ছুটে আসা মানুষদের খাওয়ার জন্য জৈতুন বিবি কী দেন?
উত্তর: মুড়ি ভেজে দেন।
১২. সাবুর লজ্জা লাগে কেন?
উত্তর: সাবু খালি গায়ে ছিল। এছাড়াও তার পরনে হাফপ্যান্ট, তাও ময়লা। এজন্য সে লজ্জিত অনুভব করছিল।
১৩. প্রৌঢ় নারী সাবুকে কত টাকা দিতে চাইলেন?
উত্তর: পাঁচ টাকা।
১৪. সাবু কেন টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানাল?
উত্তর: তার মা বকবে এবং বাড়ি থেকে বের করে দেবে, তাই।
১৫. প্রৌঢ় নারীর প্রকৃত পরিচয় কী?
উত্তর: তার নাম মিসেস রহামান, তিনি ঢাকার লালমাটিয়া ডি ব্লকে থাকেন।
বলি ও লিখি
‘তোলপাড়’ গল্পটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো। (মূল বইয়ের ১৫২ নম্বর পৃষ্ঠা)
তোলপাড় গল্পে আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারের বিভিন্ন দৃশ্য দেখতে পাই। পঁচিশে মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি মিলিটারী ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত হামলা চালায়। সাধারণ মানুষ জীবন বাঁচাতে শহর ত্যাগ করে এবং যে যার মত পালিয়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যায়।
সাবুদের গ্রাম গাবতলীতে শহর থেকে পালিয়ে আসা এসব মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব সবাই গ্রামের দিকে ছুটে চলছে জীবন বাঁচাতে। প্রচ- রোদের মধ্যে ক্ষুধার্ত মানুষের সাহায্যের জন্য সাবুর মাসহ গ্রামবাসী তাদের সামর্থ অনুযায়ী ছুটে আসে। সাবু তার মায়ের ভেজে দেওয়া মুড়ি ক্ষুধার্ত মানুষদের খেতে দেয়। প্রতিদিনই শহর থেকে আসা এই জনস্রোত চলতেই থাকে। শহরে পাঞ্জাবি মিলিটারি নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে।
এই নির্মমতার কথা শুনে সাবুর মন আঁতকে ওঠে। সে কল্পনায় দেখতে পায়, কতগুলো খাকি উর্দি পরা সিপাই তার সামনে দাঁড়িয়ে। সে তাদের ফুটবলের মত লাথি দিয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অসীম আক্রোশে তার রক্ত ফুটতে থাকে। সাবুর এই গভীর আক্রোশ এবং তোলপাড় এদেশের বহু মুক্তিযোদ্ধার তোলপাড়। দীর্ঘ নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা জীবন বাজি রেখে এদেশ স্বাধীন করেছিলেন।
জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজি
তোলপাড়’ গল্পের সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কিনা, তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৫৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
আমাদের বাড়ি থেকে পাঁচ ছয় বাড়ি পরে তাদের বাড়ি। একদিন বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে হঠাৎ তাদের বাড়ির বারান্দায় আগুন লেগে যায়। মুহূর্তেই আগুন সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আমাদের বাড়ির সবাই আগুন নেভানোর জন্য দৌড়ে ছুটে যায় সেই বাড়িতে।
তারপর যে যেভাবে পারি বালতিতে করে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হই না। এর আগে আমরা জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য চাই কিন্তু ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সেই স্থানে পৌঁছাতে প্রায় অনেকটা সময় লেগে যায়। এর মধ্যে পুরো বাড়ি ও বাড়ির সব জিনিসপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আর সেই বাড়ির মানুষগুলো হঠাৎই হয়ে পড়ে অসহায়।
তখন তাদের সকলকে তাড়াতাড়ি আমরা বাড়িতে নিয়ে আসি। সে সময় তাদেরকে সান্তনা দেওয়ার ভাষাও আমরা হারিয়ে ফেলি। তাও খানিকটা সান্ত¡না দিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কারণ তখন তাদের সবাই মানসিকভাবে ছিলেন বিপর্যস্ত। প্রথমে আমরা তাদের সবাইকে পানি খেতে দেই, এরপর তাদের গোসল ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করি এবং কোন দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করি।
তাদের বাড়ির কাপড়সহ সব জিনিসপত্র পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল। তাদের পরনের কাপড় ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই ছিল না। তাই তাদেরকে আলমারি থেকে ধোয়া পরিষ্কার কাপড় বের করে দেই সেই দিনটি পড়ার জন্য। পরে তাদের গোসল খাওয়া দাওয়া ও বিশ্রাম হয়ে গেলে তাদেরকে আমাদের বাড়ি থেকে যাবার অনুরোধ করি, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের বাড়ি মেরামত করে বসবাসের উপযুক্ত না হয়। এইভাবেই সেদিন আমি ও আমাদের বাড়ির সকলে মিলে সেই অসহায় মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলাম।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post