৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ২য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর : স্কাউট ও গার্ল গাইড বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক সমাজসেবামূলক যুব আন্দোলন। বৃটিশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ১৯০৭ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কাউটিং এবং ১৯১০ সালে গার্ল গাইডের ধারণা প্রবর্তন করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কাউটিং কার্যকম আরম্ভ করার আগে স্কাউটিংয়ে অংশ নিতে পারে, এমন কিছু বই প্রকাশ করেন।
তার মধ্যে স্কাউট শাখার জন্য ১৯০৮ সালে “স্কাউটিং ফর বয়েজ’ এবং গার্ল গাইড আন্দোলনের জন্য “গার্ল গাইডিং’ ও “দি ব্লু বার্ড বুক’ অন্যতম। আন্তর্জাতিক স্কাউট আন্দোলনের সাথে সংগতি রেখে বাংলাদেশেও বাংলাদেশ স্কাউটস ও গার্ল গাইডের কর্মকাণ্ডের সূচনা হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে স্কাউটিং ও গার্ল গাইডিং-এর কার্যকম শুরু হয়।
দুঃস্থ মানবতার সেবা, নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন, সুসমন্বিত শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, ধর্মীয় সহনশীলতা প্রভৃতি গুণাবলি অর্জনের সহায়ক শক্তি হিসেবে স্কাউটিং ও গার্ল গাইডিং আন্দোলন বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশও এই কার্যক্রমে গর্বিত অংশীদার হিসেবে ইতোমধ্যে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো
স্কাউটিং ও গার্ল গাইডিং : স্কাউট ও গার্ল গাইড বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক সমাজসেবামূলক যুব আন্দোলন। দুস্থ মানবতার সেবা, নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন, সুসমন্বিত শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, ধর্মীয় সহনশীলতা প্রভৃতি গুণাবলি অর্জনের সহায়ক শক্তি হিসেবে স্কাউটিং ও গার্ল গাইডিং আন্দোলন বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে।
স্কাউট ও গার্ল গাইডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ছিলেন স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯২০ সালে বিশ্ব স্কাউট সংস্থা গঠিত হয়। বিশ্ব স্কাউট সংস্থার প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় অবস্থিত। ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকায় দেশের স্কাউট নেতাদের এক সাধারণ সভায় বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি গঠিত হয়।
গার্ল গাইড কর্মসূচী : গার্ল গাইডের আট দফা কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচিগুলো হলো- ১. চরিত্র গঠন, ২. নিজেকে জানা, ৩. সৃজনশীল ক্ষমতা অর্জন, ৪. পরস্পরকে জানা, ৫. সেবাব্রতে প্রস্তুত থাকা, ৬. গৃহকর্মে নিপুণতা অর্জন, ৭. বাইরের জগৎ থেকে আনন্দ লাভ, ৮. শারীরিক উপযুক্ততা লাভ।
উপদল পদ্ধতি : ছয় থেকে আটজন স্কাউট ও গাইড নিয়ে একটি উপদল গঠিত হয়। উপদল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রত্যেক উপদল থেকে দক্ষ উপদল নেতা নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেক উপদলের আলাদা নাম, চিহ্ন, পরিচয়ের ডাক এবং কার্যক্রম পরিচালনার স্থান থাকে।
দক্ষতা ব্যাজ ও গাইড নৈপুণ্যসূচক ব্যাজ : দক্ষতা ব্যাজ প্রদান করা হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের উপর দক্ষতা অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ। দক্ষতা ব্যাজ হলো চারটি- ১. সদস্য ব্যাজ, ২. স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ, ৩. প্রোগ্রেস ব্যাজ ও ৪. সার্ভিস ব্যাজ।
গাইড নৈপুণ্যসূচক ব্যাজ : ১. রাঁধুনী, ২. ঘর কন্যা, ৩. প্রাথমিক চিকিৎসা, ৪. মালিনী, ৫. স্বাস্থ্য প্রতীক, ৬. গৃহনিপুনা, ৭. অতিথি সেবিকা, ৮. বুনন প্রতীক, ৯. রজকী, ১০. সূচী শিল্পী, ১১. হাঁস-মুরগী পালন, ১২. শুশ্রুষাকারী, ১৩. সেলাই, ১৪. কৃষি, ১৫. স্যানিটেশন, ১৬. ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপী।
পারদর্শিতা ব্যাজ : বিভিন্ন বিষয়ের উপর পারদর্শিতা অর্জনের স্বীকৃতি প্রদানের নিদর্শন হলো পারদর্শিতা ব্যাজ। বর্তমানে বিশেষ তিনটি ব্যাজ গ্রুপসহ মোট ১৩টি গ্রুপে পারদর্শিতা ব্যাজের সংখ্যা ১২৬টি।
প্রাথমিক চিকিৎসা/প্রতিবিধান : প্রাথমিক চিকিৎসা বা প্রতিবিধান চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি অংশ। যেকোনো আকস্মিক দুর্ঘটনায় প্রথম শুশ্রƒষা এবং সংক্ষিপ্ত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা/প্রতিবিধান বলা হয়।
৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ২য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ স্কাউট ও গার্ল গাইডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখ।
উত্তর : স্কাউট ও গার্ল গাইড বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক সমাজসেবামূলক যুব আন্দোলন। লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল এই স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। স্কাউটিং পদ্ধতিতে ইংল্যান্ডের বালকদের চরিত্রের বিভিন্ন গুণাবলির উন্নতি দেখে তিনি সারা বিশ্বে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেন। ১৯২০ সালে বিশ্ব স্কাউট সংস্থা গঠিত হয়। বিশ্ব স্কাউট সংস্থার প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় অবস্থিত। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ঢাকায় পূর্ববঙ্গ স্কাউট সমিতি গঠন করা হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এদেশের স্কাউট আন্দোলন এক নতুন রূপ নেয়। ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকায় দেশের স্কাউট নেতাদের এক সাধারণ সভায় বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালের ১ জুন বিশ্ব স্কাউট সংস্থা বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতিকে বিশ্ব স্কাউট কনফারেন্সে ১০৫ তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন ৫ম কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতির নাম বদল করে। বাংলাদেশ স্কাউট রাখা হয়।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কাকরাইলে এর প্রধান কার্যালয়। জেলা শহর গাজীপুরের অদূরে মৌচাকে স্কাউটের জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অবস্থিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদ গার্ল গাইড এ্যাসোসিয়েশনকে একটি জাতীয় সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস করে। ১৯৭৩ সালে এই সংগঠন বিশ্ব গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বেইলী রোডে গার্ল গাইডের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ গার্ল গাইডের কর্মসূচি সম্পর্কে লিখ।
উত্তর : গার্ল গাইড হলো বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক এবং সমাজসেবামূলক যুব আন্দোলন। এই আন্দোলন কিছু নির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাদের কর্মসূচিগুলো হচ্ছে-
১. চরিত্র গঠন।
২. নিজেকে জানা।
৩. সৃজনশীল ক্ষমতা অর্জন।
৪. পরস্পরকে জানা।
৫. সেবাব্রতে প্রস্তুত থাকা।
৬. গৃহকর্মে নিপুণতা অর্জন।
৭. বাইরের জগৎ থেকে আনন্দলাভ।
৮. শারীরিক উপযুক্ততা লাভ।
উপরোক্ত কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে গার্ল গাইডের সদস্যরা নিজেদেরকে উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। এগুলো সুমাতা, সুনাগরিক, স্রষ্টার প্রতি ভক্তি এবং অপরের মঙ্গলার্থে নিজের স্বার্থত্যাগের মনোবৃত্তি জাগিয়ে তোলে। স্বাস্থ্যসম্মত ও আনন্দদায়ক কাজকর্মের মাধ্যমে গাইডিং মেয়েদের মানসিক গুণাবলি বিকাশ ও চিন্তাশক্তির উৎকর্ষ সাধনে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ উপদল পদ্ধতি বর্ণনা কর।
উত্তর : লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল সর্বপ্রথম ভারতে উপদল পদ্ধতি চালু করেন। তারপর এই পদ্ধতি পৃথিবীর সব স্কাউট ও গাইড দলের মধ্যে প্রচলন করা হয়। উপদল পদ্ধতিতে ছয় থেকে আটজন স্কাউট ও গাইড নিয়ে একটি উপদল গঠিত হয়। উপদল কার্যক্রম পরিচালনা, উপদল পতাকা বহন ও উপদল সদস্যদের বিভিন্ন কাজে সাহায্যের জন্য প্রত্যেক উপদল থেকে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও নেতৃত্বদানে সক্ষম স্কাউট/ গাইডকে নিয়ম মোতাবেক উপদল নেতা নিয়োগ করা হয়।
উপদলের অন্য সদস্যদের বিভিন্ন দায়িত্ব থাকে। প্রত্যেক উপদলের আলাদা নাম, চিহ্ন, পরিচয়ের ডাক এবং কার্যক্রম পরিচালনার স্থান থাকে। উপদলের বিভিন্ন কার্যাবলি পরিচালনার সুবিধার জন্য সবার নাম ঠিকানা এবং অন্য পরিচিতি মনে রাখতে হয়। মনে রাখার সুবিধার জন্য ডাইরি বা নোট বুকে সবার নাম ঠিকানা লিখে রাখতে হয়। আত্মনির্ভরশীল এবং নিজ পরিবার ও সমাজ সম্পর্কে দায়িত্বশীল হতে উপদল পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ টেন্ডারফুট ব্যাজ এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর : টেন্ডারফুট ব্যাজ : টেন্ডারফুট ব্যাজের মোট চারটি রং থাকে যথা : সবুজ, হলুদ, লাল ও সাদা।
সবুজ : আমাদের দেশের জাতীয় পতাকার রং থেকে নেওয়া হয়েছে। এই রং এর অর্থ তারুণ্যের উদ্দীপনা, সজিবতা। এই রং আমাদের চারিপাশে গাছপালার মধ্যে ছড়িয়ে আছে।
হলুদ : সোনালি আঁশ থেকে নেওয়া হয়েছে।
লাল : রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে যে নতুন সূর্যের উদয় হয়েছে এটা তার প্রতীক।
চারটি সাদা স্তবক : এর অর্থ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলের চারটি মূলনীতি। বুদ্ধি, হাতের কাজ, স্বাস্থ্য ও সেবা। সাদা রঙের অর্থ পবিত্র, নির্মল ও ভ্রাতৃত্বের চিহ্ন। গাইডও এই রঙের মতো পবিত্র, নির্মল ও একে অপরের ভগ্নি।
ত্রিপত্র : তিনটি পাপড়ি হলুদ রঙের অর্থ গাইডের প্রতিজ্ঞার তিনটি অংশ।
ডাটা : এর অর্থ একতাবদ্ধ কাজ করা।
ঢেউ : স্নেহ, মায়া, মমতা ও ভালবাসা।
এই ব্যাজের উপর অন্য কোনো ব্যাজ লাগানো যাবে না টেন্ডারফুট ব্যাজকে প্রতিজ্ঞা ব্যাজ বলে। টেন্ডারফুট পরীক্ষায় পাস করার পর এবং দীক্ষাপ্রাপ্ত হওয়ার পর ফুল ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় শুধু এ ব্যাজ পরা যায়। শাড়িতে ব্যাজ লাগাতে অসুবিধা হলে ব্লাউজের কলারের বাম দিকে ব্যাজ লাগানো যায়। আর যদি টাই থাকে তাহলে টাইয়ের মাঝখানে ব্যাজ পরতে হয়।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ দক্ষতা ব্যাজ কী? বিভিন্ন প্রকার দক্ষতা ব্যাজ পরার নিয়ম লেখ।
উত্তর : দক্ষতা ব্যাজ প্রদান করা হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের উপর দক্ষতা অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ। দক্ষতা ব্যাজ হলো চারটি-
১. সদস্যা ব্যাজ
২. স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ
৩. প্রোগ্রেস ব্যাজ
৪. সার্ভিস ব্যাজ।
নিচে এই ব্যাজগুলো পরার নিয়ম বর্ণনা করা হলো :
১. সদস্য ব্যাজ : সদস্য ব্যাজ স্কাউট শার্টের বাম পকেটের মাঝখানে সেলাই করে পরতে হয়।
২. স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ : স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ শার্টের বাম হাতের ভাঁজের ওপর কনুই ও কাঁধের মাঝ খানে সেলাই করে পরতে হয়।
৩. প্রোগ্রেস ব্যাজ : প্রোগ্রেস ব্যাজ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজের স্থলে লাগাতে হয়।
৪. সার্ভিস ব্যাজ : সার্ভিস ব্যাজ প্রোগ্রেস ব্যাজ সরিয়ে তার স্থানে সেলাই করে পরতে হয়।
►► আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির অন্যান্য বিষয়ের শীট
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ২য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post