৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর : বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে আজ কিশোর-কিশোরীসহ অনেকের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিশোর-কিশোরী যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে।
অনেকে লেখাপড়া ছেড়ে দেয় ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। যেসব দ্রব্য সেবন করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে ও নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং এগুলোর প্রতি আসন্তি জন্মে, সেগুলোই হলো মাদকদ্রব্য।
৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর
মাদকদ্রব্য: যেসব দ্রব্য সেবন করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং আসক্তি জন্মে সেগুলোই মাদকদ্রব্য।
মাদকাসক্তি: মাদকাসক্তি হলো মানসিক ও শারীরিক ক্ষতিকর এক প্রক্রিয়া, যা সেবনকারী ও মাদকের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়।
ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে মাদকের পরিণতি: ১. মাদকদ্রব্য মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে; ২. মাদকদ্রব্য পারিবারিক ও সমাজজীবনে নানারকম যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে; ৩. মাদকদ্রব্য সেবন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধ্বংস করে এবং খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করে; ৪. মাদক এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-বি এর সংক্রমণের আশংকা বাড়িয়ে দেয়; ৫. মাদক গ্রহণ করলে খাদ্যনালী ও শ্বাসনালীর ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস ও ব্লাড প্রেসার হতে পারে; ৬. মাদক ক্রয়ে আর্থিক ক্ষতি হয়।
মাদকাসক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সমবয়সীদের প্রভাব: মাদকাসক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সমবয়সী বন্ধু, সহপাঠী ও সঙ্গী-সাথীদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সঙ্গী-সাথীদের কেউ যদি মাদকে আসক্ত হয়, তাহলে তার পরোচনায় সে ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
মাদকাসক্ত প্রতিরোধ: মাদকাসক্তি প্রতিরোধে করণীয়: ১. মাদকদ্রব্য ও এর অপব্যবহার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য মাদকবিরোধী সংগঠন ও ক্লাব গড়ে তোলা; ২. সামাজিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় অভিনেতা, শিল্পী এসব ব্যক্তিত্বের মাদকবিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ; ৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা; ৪. স্কুলকে ধূমপান ও মাদকমুক্ত প্রতিষ্ঠান ঘোষণার ব্যবস্থা করা; ৬. মাদকের কুফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার কিছু চিত্র পোস্টার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টাঙিয়ে জনগণকে সচেতন করা।
মাদক গ্রহণের চাপ মোকাবেলা: মাদকদ্রব্য গ্রহণের প্রস্তাব বা চাপ এড়ানো ও প্রত্যাখ্যানের উপায়- ১. মাদকদ্রব্য পাওয়া যায় এমন জায়গায় না যাওয়া; ২. কেউ কোনো ওষুধ দিলে তা গ্রহণ না করা; ৩. মাদকসেবীদের সাথে না মিশা; ৪. দোকানে বসে আড্ডা না দেওয়ার; ৫. মাদকদ্রব্য সেবনে ধর্মীয় নিষেধ মেনে চলে; ৬. দুঃখের সময় বা দুঃখজনক ঘটনায় নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল অটুট রাখা।
৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর
১. মাদক দ্রব্য কী? মাদক সেবনে শিশু কিশোররা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?
উত্তর: যেসব দ্রব্য সেবন করার ফলে মানুষের দৈহিক ও মানসিক অবস্থার উপর ক্ষতির প্রভাব পড়ে এবং আসক্তি জন্মে সেগুলোই মাদকদ্রব্য। যেমন: গাঁজা, হেরোইন, মদ, ভাং, চুরুট, তামাক, ফেনসিডিল ইত্যাদি। মাদক সেবনে শিশু-কিশোররা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে: মাদক গ্রহণের ফলে কোমলমতি শিশুদের জীবন নষ্ট হচ্ছে। মাদক সেবনে তারা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের প্রভাবে তাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন: খাদ্যনালি ও শ্বাসনালির ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস ইত্যাদি সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে তারা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
২. ব্যক্তি জীবনে মাদকের পরিণতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মাদকদ্রব্য মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই মাদকের প্রভাব সেবনকারীর শরীর-মন এবং পরিবার ও সমাজের উপর পড়ে। নিচে ব্যক্তি জীবনে মাদকের পরিণতি বর্ণনা করা হলো-
১. মাদকদ্রব্য মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। যেমন- শেখার ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস করে, আবেগের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। চাপ সহ্য করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। তাছাড়া মানসিক পীড়ন বাড়িয়ে দেয়।
২. এগুলোর ব্যবহার শারীরিক সুস্থথার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। মাদকদ্রব্য সেবন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধ্বংস করে, সূক্ষ্ম অনুভূতি কমিয়ে দেয় এবং খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করে।
৩. কিছু কিছু মাদক এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-বি এ সংক্রমণের আশংকা বাড়িয়ে দেয়।
৪. মাদক গ্রহণের ফলে এগুলোর ওপর সেবনকারীর শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা তৈরি হয়, যা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. মাদক গ্রহণ করলে যে সমস্ত জটিল রোগ হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যনালি ও শ্বাসনালির ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস ও ব্লাড প্রেসার।
৬. তামাক ও তামাকজাতীয় মাদক শরীরের ভেতর প্রতিটি রক্তনালিতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্ত চলাচল কমে যায়, কখনো রক্ত চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়, কখনো বা রক্তনালি ফেটে যায়। ফলে হার্ট এটাক ও ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে।
৭. এছাড়া যারা দীর্ঘসময় ধরে ধূমপান করে তাদের শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হয়।
৩. মাদকাসক্ত হওয়ার কারণগুলো আলোচনা কর।
উত্তর: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার দিন দিন অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উদ্বিগ্ন। দেশের শিশু-কিশোর-কিশোরী, ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ কেউই মাদকের সর্বনাশা ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। উদ্বেগজনকহারে মানুষের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার কারণগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
১. সমবয়সী মাদকাসক্ত ব্যক্তির প্রভাব: মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সব সময় মাদক সেবনের প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করতে এবং মাদক সেবনের আনন্দ উপভোগ করতে সঙ্গী খোঁজে। তাই তারা এলাকার সমবয়সীদের তাদের সঙ্গী হতে উৎসাহিত করে। তাদের উৎসাহে সাড়া দিয়ে এলাকার সমবয়সী শিশু-কিশোররা সহজেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
২. মাদকদ্রব্যের প্রতি কৌতূহল: শিশু-কিশোরদের যে কোনো অজানা, নতুন বিষয়ের প্রতিই কৌতূহল বেশি থাকে। তাই তারা মাদকসেবনকারীদের নিকট থেকে মাদকদ্রব্য সেবনের মাধ্যমে আনন্দ লাভের বিভিন্ন গল্প শুনে শুনে মাদকদ্রব্যের প্রতি কৌতূহল বোধ করে এবং কৌতূহল মেটানোর জন্য মাদকদ্রব্য সেবন করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
৩. পারিবারিক অশান্তি: যেসব পরিবারে সবসময় ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে, সেসব পরিবারের সদস্যরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং দুঃখ-কষ্ট, রাগ, অভিমান ভুলে থাকার জন্য মাদকদ্রব্য সেবন করে।
৪. মাদকদ্রব্যের সহজপ্রাপ্যতা: দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই অন্য দেশ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে আসতে পারে। তাছাড়া আমাদের দেশে ও বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য তৈরি হচ্ছে। মাদকদ্রব্যের এই সহজপ্রাপ্যতা মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
৪. মাদকাসক্তি কী? মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ সন্তানের মাদকাসক্তি হওয়ার জন্য কীভাবে দায়ী?
উত্তর: মাদকাসক্তি: মাদকাসক্তি বলতে মাদকদ্রব্যের প্রতি নেশা বা আসক্তিকে বোঝায়। মানুষ যখন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তখন সে মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শুধু তাই নয়-মাদকাসক্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি কমে যায়, জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পায় এবং এক সময় সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। আমাদের দেশে যেসব মাদকদ্রব্য ব্যবহৃত হয় সেগুলো হলো সিগারেট, বিড়ি, তামাক, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, চরস, ভাং, হেরোইন, ইয়াবা ইত্যাদি। কখনো কখনো ঘুমের বড়িও মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ সন্তানদের মাদকাসক্ত হওয়ার কারণ:
মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ সন্তানদের মাদক গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। কেননা মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদের জন্য তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়। মা-বাবার যথাযথ যতেœর অভাবে তারা বিপথগামী হয়ে জীবনে চরম দুঃখকষ্ট ডেকে আনে। তখন এসব দুঃখকষ্ট ভুলে থাকার জন্য তারা মাদকদ্রব্য সেবন করে চরম সর্বনাশের পথে পা বাড়ায়।
৫. মাদকাসক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সমবয়সীদের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে। আমাদের সমাজে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন পক্ষ থেকে এই অপূরণীয় ক্ষতি করার জন্য চাপ অনুভব করে। যেমন: একজন মাদক ব্যবসায়ী সব সময় অন্যদের মাদক সেবনে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে। এই প্রলোভনে পড়ে অনেকেই মাদকাসক্তি হয়ে জীবনে চরম সর্বনাশ ডেকে আনে। তাছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মাদক সেবন করার জন্য সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। তাই তারা তাদের পরিচিত জনদের তার সঙ্গে মাদকসেবন করতে উৎসাহিত করে।
তবে এক্ষেত্রে সমবয়সীরা সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। কেননা বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েরা দিনের অধিকাংশ সময়ই স্কুলে এবং বন্ধু বা সঙ্গী সাথীদের সাথে কাটায়। তাই সঙ্গী সাথীদের কেউ যদি মাদকাসক্ত হয় তাহলে তার প্ররোচনায় এবং নিজের কৌতূহলের কারণে অনেকেই মাদক সেবন করে এবং ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে চরম সর্বনাশের দিকে এগিয়ে যায়। তাই বন্ধু বা সাথীদের এ ধরনের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য মাদকদ্রব্য বিষয়ে সচেতন হব এবং দৃঢ় মনোবলে খারাপ সঙ্গীদের চাপ মোকাবিলা করব।
৬. মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবার ও সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে। কথাটি কি ঠিক? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবার ও সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে কথাটি পুরোপুরি সঠিক। কারণ মাদকাসক্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে সব সময় উগ্র আচরণ করে। নেশার টাকা যোগাড় করতে পরিবারে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে। কখনো কখনো মাদকদ্রব্য সেবনকারী টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের ওপর আক্রমণও চালায়। ফলে পারিবারিক শান্তি বিনষ্ট হয়। তাছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তির দেখাদেখি কৌতূহলবশত অন্য সদস্যরাও মাদকদ্রব্য সেবন করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার পুরো পরিবারটিকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি শুধু তার পরিবার নয়, যে সমাজে বসবাস করে সে সমাজেরও সে অশেষ ক্ষতি করে। মাদকদ্রব্য ক্রয়ের টাকা সংগ্রহ করার জন্য অনেক সময় মাদকদ্রব্য সেবনকারী রাস্তাঘাটে টাকা-পয়সা ছিনতাই করে এবং মালপত্র লুট করে। ফলে সমাজে অশান্তি দেখা দেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি একা একা মাদকদ্রব্য সেবন করে যে পরিমাণ আনন্দ পায়, দলবদ্ধভাবে মাদকদ্রব্য সেবনে উৎসাহিত করে। তার উৎসাহে অনেকে একবার মাদকদ্রব্যের স্বাদ গ্রহণ করতে গিয়ে সমাজের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এভাবেই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার পরিবার ও সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
৭. মাদকাসক্তি প্রতিরোধের উপায়গুলো বর্ণনা কর।
উত্তর: মাদকাসক্তি হলো মানসিক ও শারীরিক ক্ষতিকর এক প্রক্রিয়া, যা সেবনকারী ও মাদকের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। এক কথায় বলা যায়, মাদকের প্রতি নেশাকে মাদকাসক্তি বলে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি অভিশাপ স্বরূপ। অতি দ্রুত দেশ থেকে মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ধ্বংস অনিবার্য। তাই আমাদের মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে
১. মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে যুবসমাজ ও জনগণকে সচেতন করার জন্য পাড়া বা মহল্লায় মাদকবিরোধী প্রচার, প্রচারণা, র্যালি, সভা-সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে।
২. সমাজে বরেণ্য ব্যক্তি যেমন: কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, শিল্পী, ক্রীড়াবিদ- এদেরকে সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী প্রচারণা এবং অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। এছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন: মসজিদে, মন্দিরে ও গির্জায় প্রার্থনায় মাদকের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে।
৪. মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য হাট-বাজার ও ইউনিয়ন পরিষদের ভবনগুলোর দেওয়ালে পোস্টার টাঙিয়ে জনগণকে সচেতন করা যেতে পারে।
৫. মাদকের ছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করার জন্য তাদেরকে খোলাখুলা চিত্তবিনোদন ও শারীরিক প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রমে ব্যস্ত রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৮. মাদক গ্রহণের চাপ মোকাবিলার উপায় বর্ণনা কর।
উত্তর: মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে কীভাবে বিরত থাকা যায়, তার কৌশল জানা থাকলে সহজেই মাদকমুক্ত জীবন গড়ে তোলা যায়। মাদক দ্রব্য গ্রহণের প্রস্তাব বা চাপ এড়ানো ও প্রত্যাখ্যানের উপায় নিচে বর্ণনা করা হলো:
১. যেসব জায়গায় মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়, সেসব জায়গায় যাওয়া যাবে না। সেখানে বিভিন্ন ধরনের খারাপ লোক থাকে, তারা মাদক গ্রহণে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
২. পাড়া মহল্লায় বা স্কুলে যারাই মাদকদ্রব্য সেবন করবে, তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। কোনো বন্ধু দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার প্রস্তাব দিলে বিনয়ের সাথে না বলতে হবে।
৩. ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলা, অবসর সময়ে খেলাধুলা, ছোটখাটো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকার মাধ্যমে মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকা যায়।
৪. মানুষের জীবনে যে কোনো সময় দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে পারে। এর প্রতিকার মাদকগ্রহণ নয়, নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল অটুট রাখা।
৫. বন্ধুবান্ধব মিলে সমাজ সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করলে সমাজের উপকার হয়। নিজের মনে উদ্যম ও আনন্দের সঞ্চার হয় এবং মাদকমুক্ত থাকা যায়।
৯. শিশু-কিশোরদের মাদকাসক্ত থেকে মুক্ত রাখার উপায় বর্ণনা কর।
উত্তর: মাদকাসক্ত একটি সর্বনাশা বিষয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে। তাই আমাদের শিশু-কিশোরদের এই সর্বনাশা মাদকদ্রব্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। মাদকাসক্ত থেকে তাকে এজন্য তাদেরকে মাদকদ্রব্য কী এবং তা সেবনের কুফল ভালোভাবে বোঝাতে হবে। যেখানে মাদকদ্রব্য পাওয়া যায় সেখানে যাতে তারা না যেতে পারে বা কোনো মাদক ব্যবসায়ী যাতে তাদের মাদক সেবনে প্রলুব্ধ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। মাদকদ্রব্য সেবন ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ।
সুস্থ এবং সুন্দর জীবনযাপনে ধর্মীয় নিষেধ মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা তাদের নিকট তুলে ধরতে হবে। অবসর সময়ে তারা যাতে কোনো খারাপ লোকের সঙ্গে মেশার সুযোগ না পায় সেজন্য তাদের খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাতে হবে। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলে তাদেরকে সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। এতে সমাজের উপকার হবে, তাদের নিজের মনে উদ্যম ও আনন্দ সঞ্চার হবে এবং তারা মাদকমুক্ত থাকবে।
►► আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির অন্যান্য বিষয়ের শীট
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post