৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ১ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর : মানুষের দেহের সাথে মনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে দৈহিক উন্নতির সাথে সাথে ব্যক্তির মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক উন্নতিও সম্পৃক্ত হয়েছে। শারীরিক অজ্ঞাসঞ্চালন ও খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা অর্জন, চিত্তবিনোদন, শৃংখলাবোধ ও নেতৃত্দানের ক্ষমতা অর্জন করা যায়। দেহের উন্নতি ও মানসিক বিকাশ সাধন করে শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপনই হলো এর মূল লক্ষ্য।
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো
প্রাথমিক সমাবেশের নিয়মাবলি : বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যহ ক্লাস শুরু হওয়ার পূর্বে শৃঙ্খলার সাথে সারিবদ্ধভাবে বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে বা খোলা জায়গায় উপস্থিত হবে এবং ধারাবাহিকভাবে সমাবেশের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সমাবেশের ধারাবাহিক কার্যক্রম : ১. জাতীয় পতাকা উত্তোলন; ২. জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন; ৩. ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ; ৪. শপথ গ্রহণ; ৫. জাতীয় সংগীত গাওয়া; ৬. প্রধান শিক্ষকের ভাষণ; ৭. শরীর চর্চা অনুশীলন; ৮. স্ব-স্ব ক্লাসে গমন।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধির ধারণা : স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবনযাপনের জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষার পালনীয় বিধি বিধানই হলো স্বাস্থ্যবিধি। স্বাস্থ্য রক্ষায় যেসব বিধি মেনে চলতে হয় তা হলো : ১. শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্ন থাকা; ২. বাসগৃহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা; ৩. সঠিক নিয়মে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা; ৪. সময়োপযোগী পোশাক পরা; ৫. নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করা; ৬. সুঅভ্যাস গঠন করা।
শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রভাব : দৈনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং আনন্দলাভের জন্য নিয়মিতভাবে অঙ্গ চালনা করার নামই ব্যায়াম। ব্যায়াম দেহ ও মনকে বলিষ্ঠ এবং সংযত করে। ফলে শক্তি ও সহিষ্ণুতা বাড়ে, হৃৎপি- দৃঢ় হয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
অতিরিক্ত ব্যায়ামের কুফল : অধিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যেমন- শিশু ভারী জিনিস তোলার ব্যায়াম করলে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হবে। ৩০/৪০ মিনিটের বেশি ব্যায়াম করলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়বে। ভরাপেটে ব্যায়াম করলে পেটে ব্যথা ও বমি হবে। ব্যায়ামের মধ্যে বিরতি না দিলে শরীর অবশ হয়ে পড়বে। এলোমেলোভাবে ব্যায়াম করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো পরিশ্রান্ত হয়ে পড়বে।
সরঞ্জামবিহীন ব্যায়াম : সরঞ্জাম ছাড়া ব্যায়ামকে ‘ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ’ বলে। যেমন: লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি, ডিগবাজি ইত্যাদি।
সরঞ্জাম ব্যায়াম : সরঞ্জাম নিযে যে ব্যায়াম করা হয়, তাকে সরঞ্জামসহ ব্যায়াম বলে। যেমন- স্কিপিং রোপ, রোমান রিং ও ফ্রিজবি ইত্যাদি।
ব্রতচারী নৃত্য : ব্রতচারী নৃত্য বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগীতির মাধ্যমে যে লোকনৃত্য করা হয় তাকে ব্রতচারী লোকনৃত্য বলে।
এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিক্স : শরীর ও মনের সুসমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ব্যায়াম করা হয়, তাকে শিক্ষামূলক জিমন্যাস্টিক্স বলে। শিক্ষামূলক জিমন্যাস্টিক্স অনুশীলনের ফলে শিশু ক্রমান্বয়ে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক গুণাবলি অর্জন করতে পারে।
৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ১ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর
১. প্রাত্যহিক সমাবেশের কার্যক্রমগুলো ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ক্লাস শুরুর আগে বিদ্যালয়ের সামনে খোলা জায়গায় প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের সমবেত হওয়াকে প্রাত্যহিক সমাবেশ বলে। প্রাত্যহিক সমাবেশের ধারাবাহিক কার্যক্রম নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. জাতীয় পতাকা উত্তোলন : জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় সকলে সোজা অবস্থায় থাকবে। প্রধান শিক্ষক বা একজন সিনিয়র শিক্ষক পতাকা উত্তোলন করবেন।
২. জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন : সমাবেশ পরিচালনাকারীর নির্দেশে উপস্থিত সকলে একসাথে পতাকার উদ্দেশ্যে ডান হাত কপাল বরাবর তুলে অভিবাদন জানাবে।
৩. ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ : একজন শিক্ষার্থী সামনে এসে তার নিজ ধর্মগ্রন্থ থেকে নির্দিষ্ট অংশ পাঠ করবে ও অন্য শিক্ষার্থীরা মন দিয়ে শুনবে।
৪. শপথ গ্রহণ : একজন শিক্ষার্থী সামনে এসে ডান হাত কাঁধ বরাবর তুলে শপথবাক্য পাঠ করবে এবং সকল শিক্ষার্থী তাকে অনুসরণ করে সমস্বরে তার সাথে তা পাঠ করবে।
৫. জাতীয় সংগীত : শিক্ষকম-লী ও শিক্ষার্থী সকলে সোজা অবস্থায় এক সাথে জাতীয় সংগীত গাইবে।
৬. প্রধান শিক্ষকের ভাষণ : প্রধান শিক্ষক বা তার অনুপস্থিতিতে কোনো সিনিয়র শিক্ষক ভাষণ দিবেন।
৭. শরীরচর্চা অনুশীলন : শারীরিক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাপড়ে যেন ময়লা না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রেখে পাঁচ মিনিট সমবেত ব্যায়াম করাবেন।
৮. সমাবেশ শেষে শ্রেণিশিক্ষক বা শ্রেণির দলনেতার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে স্ব স্ব ক্লাসে চলে যাবে।
২. শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় পন্থা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : রোগের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য আমাদের শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্ন থাকা একান্ত প্রয়োজন। দেহ অপরিষ্কার বা অপরিচ্ছন্ন থাকলে রোগজীবাণু সহজে দেহে প্রবেশ করে। রোগমুক্ত সুস্থ জীবন যাপনের জন্য আমাদের সবাইকে পরিচ্ছন্ন থাকার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।
শারীরিক পরিচ্ছন্নতার নিয়মসমূহ :
১. নিয়মিত গোসল : শরীরকে জীবাণু হতে রক্ষা করার জন্য প্রতিদিন গোসল করা উচিত। দেহের ময়লা ও ঘামের গন্ধ দূর করতে গোসলের সময় সাবান মাখা ভালো।
২. দাঁত ও মুখ পরিষ্কার : সকালে ঘুম থেকে উঠে, আহারের পর ও রাতের শোয়ার আগে দাঁত পরিষ্কার করা উচিত। দাঁত না মাজলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে মুখে দুর্গন্ধ ছড়ায় ও দাঁতের ক্ষতি করে।
৩. চুলের যত্ন : শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয় বরং দেহের পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রত্যহ চুলের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। চুলে যেন ময়লা না জমে তার জন্য প্রত্যহ চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ানো ভালো। সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন চুলে সাবান দেওয়া উচিত।
৪. নখ কাটা : হাতের নখ একটু বড় হলেই কেটে ফেলা উচিত। কারণ নখের মধ্যে জমে থাকা ময়লা আহারের মাধ্যমে পেটে প্রবেশ করলে পেটের অসুখ হয়।
৫. হাত পরিষ্কার করা : হাত পরিষ্কার না করে সেই হাত দিয়ে খাবার খাওয়া ঠিক নয়। খাবারের আগে ও পরে প্রতিবারই হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।
৬. মলমূত্র ত্যাগ : সকালে শয্যাত্যাগের পর মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস করা ভালো। মলমূত্র ত্যাগের বেগ কখনো দমন করা উচিত নয়।
উল্লিখিত নিয়মগুলো মেনে চলার মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রেখে সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন গড়ে তোলা সম্ভব।
৩. স্বাস্থ্যবিধি বলতে কী বোঝায়? স্বাস্থ্যরক্ষায় লক্ষ্যে খাদ্য গ্রহণের নিয়মগুলো লেখ।
উত্তর : স্বাস্থ্যবিধি : স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষার পালনীয় বিধি-বিধানই হলো স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানগুলোকে ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং সুস্বাস্থ্য অর্জন করা সম্ভব।
খাদ্য গ্রহণের নিয়ম : খাদ্য গ্রহণে নিচের নিয়মগুলো পালন করা ভালো-
১. নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে।
২. পচা, বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। যে খাদ্য সহজে হজম হয়, তেমন খাবার খাওয়া উচিত।
৩. খাবার চিবিয়ে ও ধীরে ধীরে খেতে হবে।
৪. বেশি না খেয়ে পরিমিত খাবার খেতে হবে।
৫. সব ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৬. খাবারে শাকসবজির পরিমাণ বেশি থাকতে হবে।
৪. সুঅভ্যাস গঠনের প্রয়োজনীয় পন্থা বর্ণনা কর।
উত্তর : ‘মানুষ অভ্যাসের দাস’ তবে কিছু অভ্যাস আছে যা পরিত্যাগ করতে হবে। একবার অভ্যাস খারাপ হয়ে গেলে তা সংশোধন করতে সময় লাগে। সেজন্য সব সময় খারাপ অভ্যাস যাতে গড়ে না ওঠে সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সুঅভ্যাস গঠনে মনোযোগী হতে হবে। সুঅভ্যাস গঠনে প্রয়োজনীয় পন্থাসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো :
১. অধিক রাত পর্যন্ত জেগে না থাকা।
২. সূর্য ওঠার পরও ঘুমিয়ে না থাকা।
৩. নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া।
৪. যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ না করা।
৫. অযথা সময় নষ্ট না করা।
৫. শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রভাব বর্ণনা কর।
উত্তর : দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং আনন্দলাভের জন্য নিয়মিতভাবে অঙ্গ চালনা করার নামই ব্যায়াম। ব্যায়াম দেহ ও মনকে বলিষ্ঠ এবং সংযত করে। ফলে শক্তি ও সহিষ্ণুতা বাড়ে, হৃৎপি- দৃঢ় হয়, হজম শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরের শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়ামের বিষয় নির্বাচন করতে হবে। পরিমিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সহায়ক। পরিমিত ব্যায়াম দ্বারা দেহের অস্থি, মাংসপেশি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সুষম বৃদ্ধি ঘটে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যায়ামের কর্মসূচি সহজ থেকে ক্রমশ কঠিন হবে। ব্যায়াম অনুশীলনের সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যায়ামের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখতে হবে। যেমন : মাথা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে পা পর্যন্ত এসে শেষ করতে হবে।
অনিয়মিত, অসময়, যথেচ্ছা এবং বিরতিহীন ব্যায়াম করা উচিত নয়। ব্যায়ামের অনুশীলনের কর্মসূচিতে দীর্ঘ বিরতি থাকবে না। কারণ এসবগুলো ব্যায়ামের উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিতে সহায়ক।
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য ব্যায়াম প্রয়োজন। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ব্যায়াম ও খেলাধুলা বেশি প্রয়োজন। এ সময় ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক গঠন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শারীরিক কাঠামো সুদৃঢ় হয়।
৬. অতিরিক্ত ব্যায়ামের কুফল বর্ণনা কর।
উত্তর : আমাদের জীবনের সকল কর্মকা-ের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এই সীমার বাইরে অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। অধিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়ামও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নিচে অতিরিক্ত ব্যায়ামের কুফল বর্ণনা করা হলো :
১. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি : শিশুদের কখনোই মাত্রাতিরিক্ত ভারী জিনিস তোলার ব্যায়াম অনুশীলন করা উচিত নয়। এরূপ ব্যায়াম অনুশীলনে শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়।
২. শরীরের ক্লান্ত ভাব : শিশুরা ৩০/৪০ মিনিটের বেশি ব্যায়াম অনুশীলন করলে তাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
৩. দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা : সঠিক নিয়মে ব্যায়াম অনুশীলন না করলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন : ব্যায়াম অনুশীলনের পূর্বে ওয়ার্মিং আপ করে শরীর গরম করে না নিলে ব্যায়াম অনুশীলনের সময় মাংসপেশির টিস্যুগুলো ছিঁড়ে যায়।
৪. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরিশ্রান্ত ভাব : ব্যায়াম অনুশীলনের ধারাবাহিকতা (সহজ ব্যায়ামগুলো অনুশীলন করে ক্রমান্বয়ে কঠিন ব্যায়ামের দিকে যাওয়া) মেনে না চললে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে।
৫. পেটের অসুখ : ব্যায়াম অনুশীলনের নিয়ম না মেনে সম্পূর্ণ খালি পেটে বা খাওয়ার পরপরই ভরাপেটে ব্যায়াম করলে বিভিন্ন রকম পেটের অসুখ দেখা দেয়।
৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ১ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর
৭. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশ্রাম ও ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শরীর সুস্থ না থাকলে মন ভালো থাকে না। ফলে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় না। কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন এবং স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন নিজেকে সুস্থ রাখা। শুধু ব্যায়াম করলেই শরীর সুস্থ রাখা যায় না। আমাদের দেহে খাদ্য ও পানির যেমন প্রয়োজন, তেমনি বিশ্রাম ও ঘুমেরও প্রয়োজন রয়েছে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের পর শরীর ও মনের বিশ্রাম এবং ঘুমের প্রয়োজন। চলাফেরা, কাজকর্ম ও ব্যায়ামের পর শরীর পরিশ্রান্ত হয়, শরীরের জীবকোষগুলো ক্ষয় হতে থাকে। তখন আমরা অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ি।
শরীরের জীবকোষগুলোর ক্ষয়পূরণ ও পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার জন্য বিশ্রাম প্রয়োজন। বিশ্রামে শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়। বিশ্রাম ও ঘুমের পরিবেশ শান্ত ও নির্জন হলে ভালো ঘুম হবে এবং দেহ ও মনের বিকাশ অব্যাহত থাকবে। ঘুমের সময় দেহের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থির হয়ে পূর্ণ বিশ্রামে থাকে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস ও হজমশক্তির কাজ সুশৃঙ্খলাভাবে চলতে থাকে।
৮. সরঞ্জামবিহীন ব্যায়ামের ধারণা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সরঞ্জাম ছাড়া নানা ধরনের ব্যায়াম করা যায়। সরঞ্জাম ছাড়া ব্যায়ামকে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা ‘মুক্ত হস্তে ব্যায়াম’ বলে। লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি, ডিগবাজি, হেডস্ট্যান্ড, পিটি বা সমবেত ব্যায়াম এসবই সরঞ্জামবিহীন ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত। সরঞ্জামবিহীন ব্যায়ামের কয়েকটা উদাহরণ নিচে দেয়া হলো :
১. দম : খেলাধুলা করতে দমের প্রয়োজন হয়। দম না থাকলে শরীরে শক্তি পাওয়া যায় না। ফলে তখন কোনো খেলা ঠিকমত অনুশীলন করা যায় না এবং সফলতাও আসে না। বিরতিহীন এক ঘণ্টা ধীরগতিতে দৌড়ালে বা একটানা দ্রুত হাঁটলে দম বৃদ্ধি পায়।
২. কব্জি ও কোমরের ব্যায়াম : র্যাকেট, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, হকি ইত্যাদি খেলার জন্য কব্জি ও কোমরের শক্তির প্রয়োজন হয়। কব্জি ও কোমরের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যায়াম প্রয়োজন। বিভিন্নভাবে হাত ঘুরিয়ে কব্জির ব্যায়াম করা যায়। মাটিতে দুহাত রেখে শরীরের উপরে নিচে তুললেও কব্জি তথা হাতের শক্তি বাড়ে। চিন আপ, পুশ আপও কব্জির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কোমরের ব্যায়াম করতে হলে শরীর বিভিন্নভাবে অর্থাৎ ডানে বামে ঘুরিয়ে কোমরের ব্যায়াম করতে হয়। পিঠে কাউকে তুলে নিয়ে শরীর আপ ডাউন করলেও কোমরে শক্তি বাড়ে।
৩. কনুই ভেঙে বসে ব্যায়াম : মাটিতে পা সামনে সোজা রেখে বসতে হবে। হাত দুটি শরীরের দুপাশ মাটির উপর থাকবে। এরপর হাতের উপর ভর দিয়ে শরীর উপরে তুলতে ও নামতে হবে। শরীর উপরে নিচে ওঠানামা করার সময় পা দুটো একত্রে ও সোজা থাকবে।
৯. স্কিপিং কী? স্কিপিং করার নিয়ম বর্ণনা কর।
উত্তর : স্কিপিং : স্কিপিং রোপের মাধ্যমে যে ব্যায়াম করা হয় অর্থাৎ লাফানো হয় তাকে স্কিপিং বলে।
স্কিপিং করার নিয়মাবলি:
ক. ৮/১০ জন এক লাইনে দাঁড়িয়ে স্কিপিং করতে করতে দৌড়িয়ে সামনে যাবে ও ফিরে আসবে।
খ. এক জায়গায় দাঁড়িয়ে স্কিপিং করা যায়। একটানা ৫ মিনিট সবাই স্ব স্ব জায়গায় দাঁড়িয়ে স্কিপিং করবে।
গ. আবার ৬টি স্কিপিং রোপ ১০ ফুট অন্তর অন্তর দুজন দুমাথা টেনে ধরবে। প্রথমটি ২ ফুট উঁচুতে, পরেরটি ৩ ফুট উঁচুতে এভাবে পর পর স্কিপিং রোপ ধরতে হবে। শিক্ষার্থীরা ফাইলে দাঁড়াবে। একজন একজন করে দৌড়ে প্রথমটির উপর দিয়ে লাফ দিয়ে পার হয়ে এবং পরেরটির নিচ দিয়ে এভাবে স্কিপিং রোপ অতিক্রম করতে হবে। যে অল্প সময়ে স্কিপিং রোপগুলো ক্রস করে ফিরে আসতে পারবে তার শক্তি ও শরীরের নমনীয়তা ভালো বলে গণ্য হবে।
১০. রোমান রিং কী? ব্যায়ামের ক্ষেত্রে রোমান রিং এর ব্যবহার বর্ণনা কর।
উত্তর : রোমান রিং: দুটি রাশির সাথে দুটি লোহার রিং ঝুলানো থাকে একে রোমান রিং বলে।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে রোমান রিং -এর ব্যবহার : রোমান রিং -এর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রকার ব্যায়াম করা যায়। গ্রামের স্কুলগুলোতে গাছের ডালের সাথে বেঁধে অথবা বাঁশ দিয়ে আড়া বানিয়ে সেখানেও রোমান রিংয়ের রশি বেঁধে ব্যায়াম করা যায়। যেমন :
ক. দুই হাত দিয়ে সুইং করে বিভিন্ন কায়দায় দোল খাওয়া যায়।
খ. রিং ধরে দুই পা সামনে একত্রে করে পায়ের ‘এল পজিশন’ করা।
গ. রিং ধরে হাতের উপর ভর করে মাথা নিচের দিকে এনে হ্যান্ড স্ট্যান্ড করা ইত্যাদি।
১১. ঝুমুর নৃত্যের কলাকৌশল বর্ণনা কর।
উত্তর : ঝুমুর নৃত্যু ব্রতচারী নৃত্যের অন্তর্ভুক্ত। চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যোন্নতি করাই এ ধরনের নৃত্যের মূল উদ্দেশ্য। নিচে ঝুমুর নৃত্যের কলাকৌশল বর্ণনা করা হলো :
ক. শিক্ষার্থীরা দুই সারিতে দাঁড়াবে এক সারিতে কম সংখ্যক এবং অপর সারিতে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীরা থাকবে। ছোট সারিটি বড় সারির বাম দিকে দাঁড়াবে।
খ. প্রথম সংকেত হওয়ার সাথে সাথে সকলে লাফ দিয়ে পা জোড়া ও কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াবে।
গ. দ্বিতীয় সংকেতে দুই সারির সকলে দৌড় অবস্থায় বাম দিকে ঘুরতে ঘুরতে দুটি বৃত্ত বানাবে। ছোট বৃত্তের বাইরে বড় বৃত্তটি থাকবে।
ঘ. তৃতীয় সংকেত পাওয়ামাত্র বৃত্তের ভেতরের দিকে মুখ করে নিজ জায়গায় দাঁড়াবে। বাদ্যের তালে পা ওঠা-নামা করতে থাকবে। হাত দুটি প্রসারিত করে দূরত্ব ঠিক করে নিবে।
ঙ. চতুর্থ সংকেতে পায়ের ওঠা-নামা থামাবে এবং সাথে সাথে হাত দুই পাশে চলে আসবে।
চ. পঞ্চম সংকেত দুই হাত কোমরে দিয়ে বৃত্তের বাম দিকে ১ থেকে ৭ স্টেপ ফেলবে। তিন গণনায় দুই হাত সামনে- নিচে আসবে। এভাবে দুইবার করতে হবে।
ছ. ষষ্ঠ সংকেত শোনামাত্র বাম হাত মাথার বাম পাশ দিয়ে ১ থেকে ৭ স্টেপ ফেলবে ও তিন গণনায় হাত নিচে চলে আসবে।
জ. সপ্তম সংকেত ডান হাত মাথার ডান পাশ দিয়ে ১ থেকে ৭ স্টেপ ফেলবে। প্রত্যেকবার তিন গণনার সময় হাত নিচে আসবে।
ঞ. অষ্টম সংকেত দ্ইু হাত মাথার উপরে আসবে ও ১ থেকে ৭ স্টেপ ফেলবে। এভাবে বাজনার তালে তালে নৃত্য এগুতে থাকবে।
১২. এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিক্স বলতে কী বুঝ? এর উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর : এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিক্স : আধুনিক জিমন্যাস্টিক্সের সূচনা হয় জার্মানিতে। এর লক্ষ্য ছিল শুধু বলিষ্ঠ দেহ গঠন। কিন্তু শরীর ও মনের সুসমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ব্যায়াম করা হয় তাকে এডুকেশনাল বা শিক্ষামূলক জিমন্যাস্টিক্স বলে।
এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিক্সের কয়েকটি ব্যায়ামের উদাহরণ হলো : সম্মুখ ডিগবাজি, পিছনে ডিগবাজি, পার্শ্ব ডিগবাজি, ডাইভ রোল ইত্যাদি এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিক্সের উদ্দেশ্যসমূহ :
১. এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিক্স অনুশীলনের ফলে শিশু ক্রমান্বয়ে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক গুণাবলি অর্জন করতে পারে।
২. বিদ্যালয়েই শিশুর নৈতিক গুণাবলি অর্জিত হয়।
৩. এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিক্সের অনুশীলনগুলো পরিকল্পনামাফিক হয় বলে বাস্তব জীবনে এর প্রভাব পড়ে।
১৩. যে কোনো দুই প্রকার ডিগবাজির বর্ণনা দাও।
উত্তর : এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিক্সের অন্তর্ভুক্ত হলো সম্মুখ ডিগবাজি, পিছনে ডিগবাজি ও পার্শ্ব ডিগবাজি। এ ধরনের ব্যায়াম শরীর ও মনের সুসমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে করা হয়। নিম্নে সম্মুখ ডিগবাজি ও পিছনে ডিগবাজির বর্ণনা দেওয়া হলো :
সম্মুখ ডিগবাজি : দ্ইু হাঁটু ভাঁজ করে দুই পায়ের পাতা ও দুই হাতের তালুর উপর ভর করে থাকতে হবে। এরপর কোমর উপরের দিকে তুলে ঘাড় ও মাথা দুই হাতের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে সামনে গড়িয়ে পড়তে হবে। মেঝেতে পা স্পর্শ করার সাথে সাথে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। ডিগবাজি খাওয়ার সময় মাথা যাতে মাটিতে বা ম্যাটে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পিছনে ডিগবাজি : যে দিকে ডিগবাজি দেওয়া হবে সেদিক পিছন ফিরে দাঁড়াতে হবে। তারপর শরীরটা ক্রমাগত নিচু করে এবং শরীরের
পিছনের অংশ অর্থাৎ নিতম্ব মেঝেতে বা ম্যাটে লাগার সাথে সাথে দুই হাতে তালু কাঁধ বরাবর ম্যাটের দুই পাশে রাখতে হবে এবং শরীরটা পিছনে ঘুরিয়ে নিতে হবে। কোমর থেকে শরীরের উপর অংশ তুলে দাঁড়াবার জন্য পা মাটি ছোঁয়ার সাথে সাথে হাতের তালু দিয়ে মাটিতে ধাক্কা দিতে হবে এবং সোঁজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
►► আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির অন্যান্য বিষয়ের শীট
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণি শারীরিক শিক্ষা ১ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post