৮ম অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজদের সহায়তায় মীর কাশিম বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। ক্ষমতারোহণের পর দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনচেতা মীর কাশিমের সাথে ইংরেজদের বিরোধ শুরু হয়। ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে তিনি ইংরেজদের কাছে পরাজিত হলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য ২০০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়।
৮ম অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : রাশেদ সাহেব উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। পরিবার-পরিজন নিয়ে শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। তার বাড়িওয়ালা জামান সাহেব কম লেখাপড়া জানা সাদাসিধে মানুষ। পিতৃ পুরুষের অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। নিজে পরিশ্রম। করে গড়েননি বলে সম্পত্তি রক্ষায় অতটা তৎপর নন। সুচতুর রাশেদ সাহে এক সময়ে জামান সাহেবকে বোঝালেন, তিনি চাইলে বাড়ির কিছুটা অংশ রাশেদ সাহেবের কাছে বিক্রি করতে পারেন। মতলব বুঝতে পেরে জামান সাহেবের ছেলে সিরাজ সে কাজে বাধ সাধলেন।
ক. ইউরোপীয় দেশসমূহ সমুদ্রপথে ভারতীয় উপমহাদেশে আসার জন্য অভিযান শুরু করে কেন?
খ. ওলন্দাজরা তাদের সকল বাণিজ্যকেন্দ্র গুটিয়ে ভারতবর্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হন কেন?
গ. উদ্দীপকের জামান সাহেবের কর্মকাণ্ড ও চিন্তাচেতনার সাথে বাংলার নবাবদের চিন্তাচেতনা, কর্মকাণ্ডের কী বৈপরিত্য লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উদ্দীপকের সিরাজ বাংলার নবাব মীর কাশিমের প্রতিনিধিত্ব করে? মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : সজল ও প্রিতম টিভিতে একটি টকশো দেখছিল। টকশোতে চীনের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য দুই ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সজল বলল, বাংলায় এক সময় শাসন ব্যবস্থায় দ্বৈত নীতি প্রচলন করা হয়েছিল। প্রিতম বলল যে, এ ধরনের ব্যবস্থার ফলে বাংলার নবাব পরিণত হয় ক্ষমতাহীন শাসকে এবং দেশের মানুষ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়।
ক. কথিত অন্ধকূপ হত্যায় কতজনের মৃত্যু হয়?
খ. ‘ইংরেজ শাসনের সূচনায় দেওয়ানি লাভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা’— ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সজলের বক্তব্যে কোন ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত হয়েছিল? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে প্রিতমের বক্তব্যের যথার্থতা নিরূপণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : তমা একটি পত্রিকা পড়ে জানতে পারে যে, ইতিহাসে এমন একটি ব্যবস্থা চালু হয়েছে যেখানে নির্দিষ্ট রাজস্ব পরিশোধের বিনিময়ে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার জমিদারদের নিজ নিজ জমির ওপর স্থায়ী মালিকানা দান করে। পরবর্তীতে ওই ব্যবস্থার বিভিন্ন সুবিধা ও ত্রুটি লক্ষ করা যায়।
ক. দিনেমাররা শ্রীরামপুরে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে কত সালে?
খ. দ্বৈত শাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যবস্থার পটভূমি বিশ্লেষণ করো।
ঘ. “উক্ত ব্যবস্থার কিছু ত্রুটি লক্ষ করা যায়” —উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : আজিম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। বড় ভাই নজরুল চেয়ারম্যানের আসনে উপবিষ্ট হন। অর্থনৈতিক সব দায়িত্ব থাকে তার হাতে। অন্যদিকে ছোট ভাই ইমরুল কর্মচারীদের কাজ দেখভালের দায়িত্ব পান। হাতে পর্যাপ্ত টাকা পয়সা না থাকায় তিনি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এক পর্যায়ে বড় ভাইয়ের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে ইমরুল মালিকানাচ্যুত হয়।
ক. ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল কে হন?
খ. বাংলার ইতিহাসে কোন ঘটনা ‘অন্ধকূপ হত্যা’ নামে পরিচিত?
গ. উদ্দীপকের ঘটনা পলাশির যুদ্ধ পরবর্তী বাংলার ইতিহাসের কোন ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উক্ত ঘটনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব পলাশির যুদ্ধের চেয়েও বেশি’ –উক্তিটি মূল্যায়ন করো ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : ইমরান তার দাদির কাছে জমিদার সারদা সুন্দরীর বীরত্বের কাহিনি শুনছিল। গল্পের একপর্যায়ে ইমরান দাদিকে জমিদার সম্পর্কে প্রশ্ন করলে দাদি উত্তরে বলেন, মধ্যযুগে এক ইংরেজ বাংলার জমিদারদের ভূমির ওপর চিরদিনের জন্য অধিকার প্রদান করেন এবং তাদের ওপর বাৎসরিক কর নির্দিষ্ট করে দেন। জমিদারির স্থায়ী মালিকানা পাওয়ায় জমিদাররা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়।
ক. কে প্রথম ভারতবর্ষে আসার জলপথ আবিষ্কার করেন?
খ. দ্বৈত শাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. ইমরানের দাদির বর্ণনায় কোন ঐতিহাসিক ঘটনায় পরিচয় পাওয়া যায়? উক্ত ঘোষণার বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত ঘটনা এদেশের মানুষের জন্য সার্বিকভাবে কল্যাণকর? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো
বাংলায় ইংরেজ শক্তি : পণ্যের আকর্ষণে অনেকেই এদেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে এসেছে। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও উপমহাদেশে এসেছিল ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। পরবর্তী সময়ে তারা এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়। এদেশে আগত অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে পরাজিত করে এবং স্থানীয় শাসকদের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে ইংরেজ ব্যবসায়ী কোম্পানি এ অঞ্চলে ইংরেজ শাসনের সূচনা করে।
পলাশী যুদ্ধ : ইতিহাসের যেসব ঘটনা একটি দেশের জনগণের ভাগ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাতে পারে, পলাশীর যুদ্ধ এ অঞ্চলের জনগণের জন্য তেমনি এক ঘটনা ছিল। এ যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর কাছে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও মৃত্যু বাংলায় প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসনের পথ সুগম করে। এ যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী পরিণতি ছিল সমগ্র উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা। এভাবেই এ যুদ্ধের ফলে বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা সূর্য ভুলুণ্ঠিত হয়।
বক্সারের যুদ্ধ : ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত বক্সারের যুদ্ধে মীরকাশিমের পরাজয় শুরু নবাবী আমলেরই পরিসমাপ্তি ঘটায়নি, মুঘল সম্রাটের দুর্বলতাও ইংরেজদের কাছে পরিষ্কার করে দেয়। ফলে ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে দ্রুতগতিতে ইংরেজদের আত্মপ্রকাশ ঘটতে থাকে।
কোম্পানির দেওয়ানি লাভ : বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলায় ইংরেজ শাসনের পথ সুগম হয়। এ সময়ে ইংরেজ কোম্পানি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার রাজস্ব আদায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব অর্থাৎ দেওয়ানি লাভ করে। ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর প্রকৃতপক্ষে ইংরেজরাই বাংলার সত্যিকার শাসকরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
দ্বৈত শাসন : রবার্ট ক্লাইভ দেওয়ানি সনদের নামে বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনের একচেটিয়া ক্ষমতা লাভ করে। দিল্লি কর্তৃক বিদেশি বণিক কোম্পানিকে এই অভাবিত ক্ষমতা প্রদানে সৃষ্টি হয় দ্বৈত শাসনের। অর্থাৎ যাতে করে কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা, নবাব পরিণত হন ক্ষমতাহীন শাসকে। অথচ নবাবের দায়িত্ব থেকে যায় ষোলআনা। ফলে বাংলায় এক অভূতপূর্ব প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়, যার চরম মাসুল দিতে হয় এদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : লর্ড কর্নওয়ালিসকে কোম্পানির শাসন দুর্নীতিমুক্ত ও সুসংগঠিত করতে ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও সেনা প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। তিনি ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা স্থায়ী ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ঐ বছর ২২ মার্চ নির্দিষ্ট রাজস্ব পরিশোধের বিনিময়ে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার জমিদারগণকে নিজ নিজ জমির ওপর স্থায়ী মালিকানা দান করে যে বন্দোবস্ত চালু করা হয় তাকেই ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ বলা হয়।
SSC শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post