ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা : দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে দেশ দুটি তাদের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, কৃষি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশই তাদের উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখছে। এ ধরনের চুক্তি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য পারস্পরিক কল্যাণ ও উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে।
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
রাহাতের নেপালি বন্ধু গোমেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। রাহাত বাংলাদেশ সরকারের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে নেপালের শিল্পকলা একাডেমিতে গান পরিবেশন করেন। রাহাত নেপালে অবস্থান কালে গোমেজের বাড়িতে বেড়াতে যান।
ক. আসিয়ানের পূর্ণরূপ কী?
খ. দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. নেপালে গিয়ে রাহাতের গান পরিবেশন করা সার্কের কোন ধরনের কাজ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত কাজটি ছাড়াও সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে কাজ করে—বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আসিয়ানের পূর্ণরূপ—Association of Southeast Asian Nations.
খ. দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বলতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সেই চুক্তিকে বোঝানো হয়, যা পারস্পরিক সহযোগিতা ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একে অপরকে সহায়তা করার জন্য গৃহীত হয়।
এই চুক্তির মাধ্যমে দেশ দুটি তাদের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, কৃষি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশই তাদের উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখছে। এ ধরনের চুক্তি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য পারস্পরিক কল্যাণ ও উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে।
গ. নেপালে গিয়ে রাহাতের গান পরিবেশন করা সার্কের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত কার্যক্রমের অংশ।
সার্কের অন্যতম লক্ষ্য হলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানো। সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশগুলোর জনগণ একে অপরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও কৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়, যা আঞ্চলিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।
রাহাত বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে নেপালের শিল্পকলা একাডেমিতে গান পরিবেশন করেছেন, যা দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি দৃষ্টান্ত। এটি শুধুমাত্র বিনোদনমূলক কার্যক্রম নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির একটি মাধ্যম। এছাড়া, রাহাত নেপালে অবস্থানকালে তার নেপালি বন্ধু গোমেজের বাড়িতে বেড়াতে যান, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে সম্পর্ক উন্নয়নেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
সার্কের এই সাংস্কৃতিক বিনিময়ের উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করে।
ঘ. শুধু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই নয়, সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে।
প্রথমত, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে, এটি দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা (SAFTA) চালু করেছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির আদান-প্রদান সহজ করতে সার্ক বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করেছে।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে, সার্ক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা বৃত্তি প্রদান এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে, যা দক্ষ জনশক্তি গঠনে ভূমিকা রাখে।
তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য খাতে, এটি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য উন্নয়ন, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এছাড়াও, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়, সার্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠন করেছে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমাতে কাজ করে। নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমনেও, সার্কের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এটি সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও মানব পাচার প্রতিরোধে যৌথ নীতিমালা তৈরি করেছে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও ঐক্য বৃদ্ধি করা হয়, যা পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও সুদৃঢ় করে।
সার্কের এসব উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ঝিনাইদহ জেলার দক্ষিণে রয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় ‘দক্ষিণ কালীগঞ্জ সহযোগিতা সংস্থা’ নামে একটি সংগঠন। এই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক সহযোাগিতা হলেও সংস্থাটি নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িত।
ক. দুটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার জন্য কোনটি করা হয়?
খ. আসিয়ান গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থার সাথে পাঠ্যবইয়ের কোন সংস্থার সাদৃশ্য বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূলপাঠের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তি সাক্ষরিত হয়।
খ. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্মিলিত উদ্যোগে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে কাজ করা। পেশাগত ও কারিগরি ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থার সাথে পাঠ্যবইয়ের সার্কের সাদৃশ্য বিদ্যমান। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সার্ক।
সার্কের পুরো নাম—South Asian Association for Regional Cooperation (SAARC)। এর বাংলা অর্থ হলো ‘দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা’। বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সার্ক গঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাড়া সার্কের অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো—ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভূটান ও আফগানিস্তান। এছাড়াও বর্তমানে মিয়ানমার পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে এ সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে। নেপালের রাজধানী কাঠমুণ্ডুতে সার্কের সচিবালয় অবস্থিত। উদ্দীপকেও দেখা যায়, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘দক্ষিণ কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা’ নামক একটি সংগঠন।
অতএব, নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, উদ্দীপকে গঠিত সংস্থাটি পাঠ্যবইয়ের সার্কের সাথে সম্পূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. নানারকম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সার্ক গঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সার্ক গড়ে তুলেছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন মিলে ‘দক্ষিণ কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা’ নামে একটি একটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। উক্ত সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হলো সহযোগী ইউনিয়নগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। শুধু তাই নয় এই সংস্থাটি নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িত।
তেমনিভাবে সার্কও সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যায়। যেমন—সার্কভুক্ত দেশগুলোর জনগণের জীবনযাত্রার মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য এবং কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা। এছাড়াও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে তোলা। এ সংস্থা উক্ত অঞ্চলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে। এছাড়াও সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিরাজমান বিরোধ ও সমস্যা দূর করে পারস্পরিক সমঝোতা সৃষ্টি করাও সার্কের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
পরিশেষে বলা যায় যে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর নানারকম অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানসহ নানাবিধ কর্মকা- করাই সার্কের অন্যতম উদ্দেশ্য।
সৃজনশীল প্রশ্ন—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সাদ্দামের দাদা একদিন বলেছিলেন, এক সময় মানুষ বলতো আমেরিকার গমের আটা না হলে রাশিয়ার চুলার আগুন জ্বলে না। আরবের তেল না পেলে আমেরিকার গাড়ির চাকা ঘোরে না। একথাগুলো একটা সময় বহুল প্রচলিত ছিল। তিনি মনে করেন, পৃথিবীর এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতা না থাকলে এখন আর টিকে থাকা সম্ভব নয়। একই অঞ্চলের অনেকগুলো রাষ্ট্র মিলে বিভিন্ন সহযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
ক. NAM-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. ‘উন্নত জীবনের জন্যে সহযোগিতা’—উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্পর্ক নির্ণয় কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর সার্ক এ ধরনের একটি পারস্পরিক সহযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠান? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post