৮ম শ্রেণির গণিত অনুশীলনী ১ সমাধান : নিচের প্রথম চিত্রের (মূল বইয়ে দেওয়া) টাইলস্গুলো লক্ষ করি । এগুলো একটি প্যাটার্নে সাজানো হয়েছে । এখানে প্রতিটি আড়াআড়ি টাইলস্ এর পাশের টাইলস্টি লম্বালম্বি সাজানো। সাজানোর এই নিয়মটি একটি প্যাটার্ন সৃষ্টি করেছে।
দ্বিতীয় চিত্রে কতগুলো সংখ্যা ব্রিতুজাকারে সাজানো হয়েছে। সংখ্যাগুলো একটি বিশেষ নিয়ম মেনে নির্বাচন করা হয়েছে। নিয়মটি হলো: প্রতি লাইনের শুরুতে ও শেষে ১ থাকবে এবং অন্য সংখ্যাগুলো উপরের সারির দুইটি পাশাপাশি সংখ্যার যোগফলের সমান । যোগফল সাজানোর এই নিয়ম অন্য একটি প্যাটার্ন সৃষ্টি করেছে।
৮ম শ্রেণির গণিত অনুশীলনী ১ সমাধান
প্যাটার্ন (Pattern) : গণিতে নির্দিষ্ট পন্থায় কোনো কিছু সাজানো, পরিবর্ধিত বা বিন্যস্ত করাকে প্যাটার্ন বলে। ১, ৩, ৫, ৭….. এটি হলো ক্রমিক স্বাভাবিক বিজোড় সংখ্যার প্যাটার্ন।
স্বাভাবিক সংখ্যা (Natural Number) : শূন্য থেকে বড় সকল ধনাত্মক অখণ্ড বা পূর্ণ সংখ্যাই স্বাভাবিক সংখ্যা। একে গণনাকারী সংখ্যা বলা হয়। সকল জোড়, বিজোড় ও মৌলিক সংখ্যা স্বাভাবিক সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত।
মৌলিক সংখ্যা (Prime Number) : ১ থেকে বড় যেসব সংখ্যার ১ ও সেই সংখ্যাটি ছাড়া অন্য কোনো গুণনীয়ক নেই সেগুলো মৌলিক সংখ্যা। যেমন : ২, ৩, ৫, ৭ ইত্যাদি।
ক্রমিক সংখ্যা (Serial Number) : যেকোনো সংখ্যার সাথে ১ যোগ করে তার পরবর্তী ক্রমিক সংখ্যা পাওয়া যায়। যেমন : ৫, ৬ ও ৭ ক্রমিক সংখ্যা।
ফিবোনাক্কি সংখ্যা (Fibonacci Number) : যে সংখ্যা ধারায় পরপর দুটি সংখ্যার যোগফল পরবর্তী সংখ্যার সমান হয় সেই সংখ্যা ধারাকে ফিবোনাক্কি সংখ্যা বলা হয়।
ম্যাজিক বর্গ (Magic Square) : একটি বর্গক্ষেত্রকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর সমান ভাগে ভাগ করে স্বাভাবিক সংখ্যাগুলো এমন একটি কৌশলে বসানো হয় যাতে সংখ্যাগুলোর পাশাপাশি, উপর-নিচ ও কোনাকুনি যোগফল সমান হয়। এ কৌশলই হলো ম্যাজিক বর্গ।
৩ ক্রমের ম্যাজিক বর্গ
(১) তিন ক্রমের ম্যাজিক বর্গ নির্ণয়ে বর্গক্ষেত্রকে ৩ X ৩ অর্থাৎ ৯টি ছোট বর্গক্ষেত্রে পরিণত করতে হবে।
(২) ছোট ছোট নয়টি বর্গক্ষেত্রে ১ম নয়টি স্বাভাবিক সংখ্যার প্রয়োজন।
(৩) ৩ ক্রমের ম্যাজিক সংখ্যা ১৫।
আবার, ১, ৪, ৭, ১০, ১৩, … সংখ্যাগুলোতে একটি প্যাটার্ন বিদ্যমান | সংখ্যাগুলো ভালোভাবে লক্ষ করে দেখলে একটি নিয়ম খুঁজে পাওয়া যাবে । নিয়মটি হলো, ১ থেকে শুরু করে প্রতিবার ৩ যোগ করতে হবে । অন্য একটি উদাহরণ : ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২, … প্রতিবার দ্বিগুণ হচ্ছে।
মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়
আমরা জানি যে, ১-এর চেয়ে বড় যে সব সংখ্যার ১ ও সংখ্যাটি ছাড়া অন্য কোনো গুণনীয়ক নেই, সেগুলো মৌলিক সংখ্যা । ইরাটোস্থিনিস ছাকনির সাহায্যে সহজেই মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্বাভাবিক সংখ্যাগুলো একটি চার্টে লিখি। এবার সবচেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যা ২ চিহ্নিত করি এবং এর গুণিতকগুলো কেটে দেই। এরপর ক্রমান্বয়ে ৩, ৫ এবং ৭ ইত্যাদি মৌলিক সংখ্যার গুণিতকগুলো কেটে দিই । তালিকায় যে সংখ্যাগুলো টিকে রইল সেগুলো মৌলিক সংখ্যা।
স্বাভাবিক ক্রমিক সংখ্যার যোগফল নির্ণয়
স্বাভাবিক ক্রমিক সংখ্যার যোগফল বের করার একটি চমতকার সুত্র রয়েছে । আমরা সহজেই সূত্রটি বের করতে পারি । মনে করি, ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ক্রমিক স্থাভাবিক সংখ্যাগুলোর যোগফল ক। অর্থাৎ ক- ১ + ২ + ৩ + ৪ + ৫ + ৬ + ৭ + ৮ + ৯ + ১০।
লক্ষ করি, প্রথম ও শেষ পদের যোগফল ১ + ১০ = ১১, দ্বিতীয় ও শেষ পদের আগের পদের যোগফলও ২ + ৯ = ১১ ইত্যাদি । একই যোগফলের প্যাটার্ন অনুসরণ করে ৫ জোড়া সংখ্যা পাওয়া গেল | সুতরাং যোগফল ১১ X ৫ = ৫৫ এ থেকে স্বাভাবিক ক্রমিক সংখ্যার যোগফল বের করার একটি কৌশল পাওয়া গেল ।
প্রথম দশটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল নির্ণয়
প্রথম দশটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল কত? ক্যালকুলেটরের সাহায্যে সহজেই যোগফল পাই, ১০০ । ১ + ৩ + ৫ + ৭ + ৯ + ১১ + ১৩ + ১৫ + ১৭ + ১৯ = ১০০। এভাবে প্রথম পঞ্চাশটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল বের করা সহজ হবে না। বরং এ ধরনের যোগফল নির্ণয়ের জন্য কার্যকর গাণিতিক সূত্র তৈরি করি । ১ থেকে ১৯ পর্যন্ত বিজোড় সংখ্যাগুলো লক্ষ করলে দেখা যায়, ১ + ১৯ = ২০, ৩ + ১৭ = ২০, ৫ +১৫ = ২০ ইত্যাদি ।
এরকম জোড়া সংখ্যা পাওয়া যায় যাদের প্রত্যেক জোড়ার যোগফল ২০। সুতরাং, সংখ্যাগুলোর যোগফল ৫ X ২০ = ১০০ । আমরা লক্ষ করি, ১ + ৩ = ৪, একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা।
১ + ৩ + ৫ = ৯, একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা । ১ + ৩ + ৫ + ৭৯১৬, একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা, ইত্যাদি। প্রতিবার যোগফল একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা পাচ্ছি। বিষয়টি জ্যামিতিক প্যাটার্ন হিসেবে সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়।
দেখা যাচ্ছে যে প্রথম দুইটি ক্রমিক বিজোড় সংখ্যার যোগের বেলায় প্রত্যেক পাশে ২টি করে ছোট বর্গ বসানো হয়েছে। আবার, প্রথম তিনটি ক্রমিক বিজোড় সংখ্যা যোগের বেলায় প্রত্যেক পাশে ৩টি ছোট বর্গ বসানো হয়েছে। সুতরাং, ১০টি ক্রমিক বিজোড় সংখ্যা যোগ করলে চিত্রের প্রত্যেক পাশে ১০টি ছোট বর্গ থাকবে । অর্থাৎ, ১০ X ১০ = ১০২ বা ১০০টি বর্গের প্রয়োজন হবে। সাধারণভাবে বলা যায় যে, ‘ক’ সংখ্যক ক্রমিক স্বাভাবিক বিজোড় সংখ্যার যোগফল ক২।
৩ ক্রমের ম্যাজিক বর্গ
একটি বর্গক্ষেত্রকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর তিন ভাগে ভাগ করে নয়টি ছোট বর্গক্ষেত্র করা হলো । প্রতিটি ক্ষুদ্র বর্গক্ষেত্রে ১ থেকে ৯ পর্যস্ত ক্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যাগুলো এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে পাশাপাশি, উপর-নিচ, কোনাকুনি যোগ করলে যোগফল একই হয় । এ ক্ষেত্রে ৩ ক্রমের ম্যাজিক সংখ্যা হবে ১৫।
সংখ্যাগুলো সাজানোর বিভিন্ন কৌশলের একটি কৌশল হলো কেন্দ্রের ছোট বর্গক্ষেত্রে ৫ সংখ্যা বসিয়ে কর্ণের বরাবর বর্গক্ষেত্রে জোড় সংখ্যাগুলো লিখতে হবে যেন কর্ণ দুইটি বরাবর যোগফল ১৫ হয়। কর্ণের সংখ্যাগুলো বাদ দিয়ে বাকি বিজোড় সংখ্যাগুলো এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যেন পাশাপাশি, উপর-নিচ যোগফল ১৫ পাওয়া যায় । পাশাপাশি, উপর-নিচ, কোনাকুনি যোগ করে দেখা যায় ১৫ হচ্ছে।
৪ ক্রমের ম্যাজিক বর্গ
একটি বর্ণক্ষেত্রকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর চার ভাগে ভাগ করে ষোলটি ছোট বর্ণক্ষেত্র করা হলো। প্রতিটি ক্ষুদ্র বর্গক্ষেত্রে ১ থেকে ১৬ পর্যন্ত ত্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যাগুলো এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে পাশাপাশি, উপর- নিচ, কোনাকুনি যোগ করলে যোগফল একই হয়। এ ক্ষেত্রে যোগফল হবে ৩৪ এবং ৩৪ হলো ৪ ক্রমের ম্যাজিক সংখ্যা । সংখ্যাগুলো সাজানোর বিভিন্ন কৌশল রয়েছে।
একটি কৌশল হলো সংখ্যাগুলো যেকোনো কোনা থেকে আরগ্ত করে ক্রমান্বয়ে পাশাপাশি, উপর-নিচ লিখতে হবে । কর্ণের সংখ্যাগুলো বাদ দিয়ে বাকি সংখ্যাগুলো নির্বাচন করতে হবে । এবার কর্ণের সংখ্যাগুলো বিপরীত কোনা থেকে লিখি । পাশাপাশি, উপর-নিচ, কোনাকুনি যোগ করে দেখা যায়, যোগফল ৩৪ হচ্ছে।
সংখ্যা নিয়ে খেলা
১। দুই অক্কের যেকোনো সংখ্যা নাও। সংখ্যার অঙ্ক দুইটির স্থান বদল করে প্রাপ্ত নতুন সংখ্যাটির সাথে আগের সংখ্যাটি যোগ কর । যোগফল কে ১১ ছারা ভাগ কর । ভাগশেষ হবে শূন্য।
২। দুই অঙ্কের যেকোনো সংখ্যার অঙ্ক দুইটির স্থান পরিবর্তন কর । বড় সংখ্যাটি থেকে ছোট সংখ্যাটি বিয়োগ করে বিয়োগফলকে ৯ দ্বারা ভাগ দাও । ভাগশেষ হবে শূন্য।
৩ । তিন অক্কের যেকোনো সংখ্যা নাও । সংখ্যার অঙ্কগুলোকে বিপরীত ক্রমে লিখ | এবার বড় সংখ্যাটি থেকে ছোট সংখ্যাটি বিয়োগ কর | বিয়োগফল ৯৯ ছারা ভাগ কর । ভাগশেষ হবে শুন্য ।
বিভাজ্যতা নির্ণয়
বিভাজ্যতা নির্ণয়ের এই কৌশলগুলো মনে রাখলে অনেক অঙ্কের সমাধান দ্রুত করা যায় এবং ভগ্নাংশ সহজে কাটাকাটি করা যায়।
১। ২ দ্বারা বিভাজ্য : কোনো সংখ্যার শেষ অঙ্ক বা এককের অঙ্ক যদি জোড় বা ০ হয়, তবে ঐ সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
২। ৩ দ্বারা বিভাজ্য : কোনো সংখ্যার অঙ্কগুলোর সমষ্টি ৩ দ্বারা বিভাজ্য হলে সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
৩। ৪ দ্বারা বিভাজ্য : কোনো সংখ্যার শেষ দুটি অঙ্ক দ্বারা গঠিত সংখ্যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য হলে উক্ত সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
৪। ৫ দ্বারা বিভাজ্য : কোনো সংখ্যার শেষে ০ বা ৫ থাকলে ঐ সংখ্যাটি ৫ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
৫। ৬ দ্বারা বিভাজ্য : সংখ্যাটি জোড় এবং সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল ৩ দ্বারা বিভাজ্য হলে উক্ত সংখ্যাটি ৬ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
৬। ৭ দ্বারা বিভাজ্য : কোনো সংখ্যার শেষ অঙ্ককে দ্বিগুণ করে প্রাপ্ত সংখ্যাকে ঐ সংখ্যার বাকী অংশ থেকে বিয়োগ করলে বিয়োগফল যদি ৭ দ্বারা বিভাজ্য হয় তবে সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন : একটি সংখ্যা ২৬৬।
- ২৬৬ সংখ্যাটির শেষ অঙ্ককে দ্বিগুণ করে পাই, ৬ X ২ = ১২
- এরপর সংখ্যাটির বাকী অংশ থেকে ১২ বিয়োগ করে পাই, ২৬ X ১২ = ১৪
- যেহেতু ১৪ সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য।
- সুতরাং ২৬৬ সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য।
৭। ৮ দ্বারা বিভাজ্য : কোনো সংখ্যার শেষ ৩টি অঙ্ক দ্বারা গঠিত সংখ্যা ৮ দ্বারা বিভাজ্য হলে উক্ত সংখ্যা ৮ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
৮। ৯ দ্বারা বিভাজ্য : কোনো সংখ্যার অঙ্কগুলোর সমষ্টি ৯ দ্বারা বিভাজ্য হলে উক্ত সংখ্যাটি ৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
৯। ১০ দ্বারা বিভাজ্য : কোনো সংখ্যা শেষ অঙ্ক যদি ০ হয় তবেই সংখ্যাটি ১০ দিয়ে বিভাজ্য হবে।
তোমাদের কৌতূহল
৭, ১১, ১৫, ১৯, …………… তালিকার সাধারণ রাশি কীভাবে ৪ক + ৩ আকারে নির্ণয় করা হয়?
উত্তর : কোনো প্যাটার্নের সাধারণ রাশি নির্ণয়ের জন্য নিম্নোক্ত ধাপসমূহ অনুসরণ করতে হবে :
১. তালিকার পাশাপাশি দুইটি পদের পার্থক্য একই আছে কিনা তা লক্ষ করতে হবে।
২. পার্থক্য একই হলে ঐ পার্থক্যকে ‘ক’ এর গুণিতক আকারে লিখতে হবে।
৩. এরপর তালিকার প্রথম পদটি মিলানোর জন্য যে অঙ্কটি দরকার তা ঐ পার্থক্যের সাথে যোগ বা বিয়োগ আকারে লিখতে হবে। আশা করি, সাধারণ রাশি নির্ণয়ের বিষয়টি এখন বুঝতে পেরেছো।
►► আরো দেখো: ৮ম শ্রেণির গণিত সকাল অধ্যায়ের সমাধান
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া Solution Sheet বাটনে ক্লিক করে ৮ম শ্রেণির গণিত অনুশীলনী ১ সমাধান ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post