প্রতি বছরের মতো কোর্সটিকায় এবারও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আজকে ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৪র্থ অধ্যায় সেশন ১ ও ২ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এবং, এই সেশনের নাম হচ্ছে — যন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন ইনপুটে লজিকের সমন্বয়। আলোচনা শেষে, যন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন ইনপুটে লজিকের সমন্বয় সেশনের সমস্যা সমাধান ও বইয়ে দেওয়া কাজগুলো সম্পর্কে একটি ক্লাসে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
যন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন ইনপুটে লজিকের সমন্বয় সেশনটি এখানে সহজ ও বিস্তরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে তোমরা পেয়ে যাচ্ছো সমস্যা সমাধান ক্লাস। যেখানে, তোমাদের মূল পড়াসহ বইয়ে দেওয়া কাজগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ের প্রতিটি সেশন সমাধানসহ এভাবে পড়লে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল প্রযুক্তি বই সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
৮ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি ৪র্থ অধ্যায় সেশন ১ ও ২
সপ্তম শ্রেণিতে আমরা জেনেছিলাম কম্পিউটার বাইনারি সংখ্যা অর্থাৎ ০ আর ১ ছাড়া আর কোনো ডিজিট বা অঙ্ক বুঝতে পারে না। আচ্ছা আমরা যখন সংখ্যা গণনা করি, প্রাথমিকভাবে মোট কয়টি ডিজিট গুণতে পারি বল তো? আমরা কিন্তু ০ থেকে ৯ পর্যন্ত মোট ১০টি ডিজিট গুণতে পারি।
বাকিসব সংখ্যাকে ০ থেকে ৯ এর মাধ্যমেই প্রকাশ করা হয়। এই ১০ টি ডিজিট দিয়ে সব সংখ্যা আমরা কেন প্রকাশ করি? কারণ মানুষ যখন গণনা করা শুরু করেছিল, হাতের ১০ আঙুলের কারণে যেকোনো কিছু ১০ সংখ্যা বিশিষ্ট তথা ডেসিম্যাল (Decimal) পদ্ধতি দিয়ে গণনা শুরু করেছিল।
তার মানে আমাদের দুই হাতে ১০টি আঙুলের পরিবর্তে যদি আরও কম বেশি আঙুল থাকত, তাহলে আমাদের ডিজিট সংখ্যাও কিন্তু পাল্টে যেত। এবারে একটু কম্পিউটারের কথা ভাবা যাক। কম্পিউটার তো ০ আর ১ অর্থাৎ দুই সংখ্যা বিশিষ্ট বাইনারি (Binary) সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর কারণ কি তাহলে?
কারণ কম্পিউটার বা যেকোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে চিন্তা করা হয় ডিভাইসটি আমি চালু করতে পারি অথবা বন্ধ করতে পারি। অর্থাৎ আমার কাছে অপশন দুটি।
১. ডিভাইস বন্ধ=০
২. ডিভাইস চালু=১
এই কারণে ০ আর ১ অর্থাৎ দুই সংখ্যা বিশিষ্ট পদ্ধতি বা বাইনারি পদ্ধতি চালু হয়।
কম্পিউটারে যতরকম তথ্য জমা রাখা হয়, সবকিছু বাইনারি সংখ্যা হিসেবে জমা থাকে। আবার কম্পিউটার যতরকম হিসাবনিকাশ করে অর্থাৎ যোগ, বিয়োগ, গুণ ভাগ ইত্যাদি সবই বাইনারি সংখ্যাতেই করে থাকে।
এখন কম্পিউটার তো যেকোনো সংখ্যাকে ০ আর ১ দিয়ে উপস্থাপন করতে চাইবে। কিন্তু আমরা তো যেকোনো সংখ্যাকে ০ থেকে ৯ দিয়ে প্রকাশ করতে অভ্যস্ত। তাই হঠাৎ করে চোখের সামনে ০১১১০০০১১০ এমন একটা সংখ্যা দেখলে আমরা তো বুঝতে পারি না এর অর্থ কি।
তবে খুব সহজেই চাইলে ডেসিম্যাল থেকে বাইনারি এবং বাইনারি থেকে ডেসিম্যাল রূপান্তর করা সম্ভব। আমরা ৮ম শ্রেণির গণিত বইয়ে বাইনারি সংখ্যা ও এর বিভিন্ন গাণিতিক অপারেশন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারব।
আমরা এর আগে সপ্তম শ্রেণিতে প্রবাহচিত্র সম্পর্কে জানার সময় ইনপুট ও আউটপুট সম্পর্কে জেনেছিলাম। সপ্তম শ্রেণিতে আমরা রোবট দিয়ে আগুন নেভানোর উদাহরণ দেখেছিলাম। আমাদের রোবট প্রথমে ক্যামেরা দিয়ে আগুন শনাক্ত করেছিল। এটি ছিল ইনপুট। এরপর রোবটটি পানি ঢেলেছিল, এই পানি ঢালা ছিল আউটপুট।
অর্থাৎ একটি ইনপুটের জন্য আমরা একটি আউটপুট পেয়েছিলাম। এটাকে আমরা লিখতে পারি,
আগুন শনাক্ত → পানি ঢালা
তার মানে, আগুন শনাক্ত হবার উপর পানি ঢালা নির্ভরশীল। যদি আগুন শনাক্ত হয়, তাহলে রোবট পানি ঢালবে। যদি আগুন শনাক্ত না হয়, রোবট কিন্তু পানি ঢালবে না।
আবার একটি নেতিবাচক বা বিপরীত ঘটনাকেও আমরা প্রকাশ করতে পারি লজিকাল নট (Logical NOT) দিয়ে।
¬ চিহ্ন দিয়ে লজিকাল নট বুঝানো হয়।
তাহলে আমরা রোবটটির জন্য এটাও লিখতে পারি,
আগুন শনাক্ত →¬ পানি ঢালা
অর্থাৎ আগুন শনাক্ত না হলে, রোবট পানি ঢালবে না।
আবার আমরা চাইলে চলকের মাধ্যমেও এটি উপস্থাপন করতে পারি।
আমরা যদি লেখি,
ক=আগুন শনাক্ত
খ=পানি ঢালা
তাহলে লিখতে পারি,
ক → খ
¬ ক → ¬খ
যখন একটি ইনপুট বা আউটপুট ঘটে, সেটিকে আমরা ১ দিয়ে প্রকাশ করতে পারি।
আবার যখন ইনপুট বা আউটপুট না ঘটে, সেটিকে ০ দিয়ে প্রকাশ করা যায়।
এভাবে ইনপুট ও আউটপুটের বিভিন্ন পরিণতিকে ১ ও ০ এর মাধ্যমে একটি টেবিলে প্রকাশ করা যায়। এই টেবিল সবসময় আমাদের সত্য জানিয়ে দেয়, তাই একে ট্রুথ টেবিল (Truth Table) বলা হয়।
একটি ইনপুট গ (একটি সুইচ) এবং আউটপুট ঘ (একটি বাতি) এর জন্য চিন্তা করি–
গ → ¬ ঘ
¬ গ → ঘ
এবারে আমরা যদি রোবট দিয়ে আগুন শনাক্ত হলে পানি ঢালার উদাহরণের কথা আবার ভাবি।
যদি,
ক=আগুন শনাক্ত
খ=পানি ঢালা
তাহলে,
ক → খ
¬ ক → ¬ খ
কিন্তু এমন যদি হয় দুটি ইনপুট ক ও খ আছে, যাদের উপর আউটপুট গ নির্ভরশীল ?
ধরি,
ক=১ম ইনপুট (প্রথম সুইচ)
খ=২য় ইনপুট (দ্বিতীয় সুইচ)
গ=আউটপুট (একটি বাতি)
যদি আমরা চাই দুটি সুইচ একসাথে জ্বালালে তখনই কেবল বাতি জ্বলবে। অর্থাৎ, দুইটি ইনপুট সচল হলেই কেবল আউটপুট পাব, এমন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় লজিকাল এন্ড (Logical AND), যাকে ^ চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
এক্ষেত্রে নিচের মত ঘটনা ঘটবে–
ক ^ খ → গ
ক ^¬ খ →¬ গ
¬ ক ^ খ →¬ গ
¬ ক ^¬ খ →¬ গ
লক্ষ্য করেছো, একটি ইনপুট সচল না হলেই আউটপুট আর সচল হতে পারছে না।
আবার যদি আমরা চাই দুটি সুইচ থাকবে, কিন্তু অন্তত একটি সুইচ সচল হলেই বাতি জ্বলে উঠবে। অর্থাৎ, দুটি ‘ইনপুটের যেকোনো একটি ইনপুট সচল হলেই আউটপুট পাব, এমন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় লজিকাল অর (Logical OR), যাকে । চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে নিচের মত ঘটনা ঘটবে —
ক | খ → গ
ক | ¬ খ → গ
¬ ক | খ → গ
¬ ক | ¬ খ →¬ গ
লক্ষ্য করেছো, শুধুমাত্র দুটি ইনপুটই অচল থাকলে তখন আউটপুট সচল হতে পারছে না। এছাড়া অন্য সবসময়ই আউটপুট সচল হচ্ছে।
আমরা যখন ২টি ইনপুট নিয়ে কাজ করছি, তখন সবসময় মোট ৪টি সম্ভাব্য ঘটনা পাচ্ছি। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? আসলে আমাদের কাছে প্রতিটি ইনপুটের জন্য দুটিই সম্ভাব্য মান আছে। আমরা হয় ইনপুটের মান পাব ০ অথবা ১।
কয়েকটি ইনপুটের জন্য মোট সম্ভাব্য ঘটনার সংখ্যা হয়=(মোট ইনপুট) ^ মোট সম্ভাব্য মান
তাহলে আমাদের ২টি ইনপুটের জন্য মোট সম্ভাব্য ঘটনা=২ ^ ২=৪টি
একইভাবে ইনপুট যদি আমরা ৩টি নিতাম, মোট সম্ভাব্য ঘটনা হতো=২ ^ ৩=৮টি
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post