৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ১২শ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া সব বস্তুকেই প্রাকৃতিক সম্পদ বলা হয়। মানুষ প্রকৃতি থেকেই এসব সম্পদ আহরণ করে। এর ফলে মানুষের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের অগ্রগতি ঘটে। প্রাকৃতিক সম্পদ পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করলে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।
প্রকৃতির মধ্যে নানা মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। যেমন পানি, বায়ু, মাটি, গাছপালা, জীবজন্তু, ফসল, খনিজ দ্রব্য ইত্যাদি। এসব প্রাকৃতিক বস্তুকে মানুষ নিজেদের চাহিদা মতো রূপান্তরিত করে ও কাজে লাগায়।
৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ১২শ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
খালিদ তার বন্ধুদের নিয়ে ঘোড়াশালে একটি শিল্প কারখানা দেখতে এসেছে। সে এ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার দেখতে পায়। একইসঙ্গে এ শিল্পের উৎপাদিত পণ্য দেশে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকার কথা জানতে পারে।
ক. কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাট শিল্পের যাত্রা শুরু হয়?
খ. বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানিমুখী শিল্পটি বর্ণনা কর।
গ. খালিদের দেখা শিল্পটির পরিচয় ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘খালিদের অভিজ্ঞতায় কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির সাথে শিল্পায়নের সম্পর্ক ফুটে উঠেছে।’—এর যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নারায়ণগঞ্জের আদমজী পাটকলের মাধ্যমে পাট শিল্পের যাত্রা শুরু হয়।
খ. বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানিমুখী শিল্পটি হচ্ছে পোশাক শিল্প।
বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে দেশে তিন হাজারেরও অধিক পোশাক শিল্প ইউনিট রয়েছে। এতে ৪০ লাখের অধিক শ্রমিক কাজ করছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ তৈরি পোশাক থেকে ৮০৯০ মার্কিন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।
গ. উদ্দীপকের খালিদের দেখা শিল্পটি ঘোড়াশালের বিখ্যাত রাসায়নিক সার উৎপাদন কারখানা।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেই রাসায়নিক সার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৬১ সালে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক সার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে এখন ৬টি ইউরিয়া ও একটি টিএসপি সার কারখানা চালু আছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, খালিদ তার বন্ধুদের নিয়ে ঘোড়াশালে একটি শিল্প-কারখানা দেখতে গিয়েছিল। সে এ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার দেখতে পায় এবং উৎপাদিত পণ্যটি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
ঘ. খালিদের অভিজ্ঞতায় কৃষকদের আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে শিল্পোন্নয়নের সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। উক্তিটি যথার্থ।
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত দ্রুত শিল্পায়ন ঘটছে। কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থাও এখন শিল্পায়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। শিল্প ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক এখন অধিক ফসল ফলাচ্ছে। নিজের চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত ফসল বাজারে বিক্রি করে অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারছে। শিল্প ও প্রযুক্তির ব্যবহারে অর্থাৎ শিল্পায়নের উত্তরোত্তর উন্নতির ফলে বর্তমানে কৃষকের জীবন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছল ও নিরাপদ।
উদ্দীপকে রতনের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণেও আমরা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারি যে, তার দেখা শিল্প-কারখানাটি ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা যা তার অভিজ্ঞতায় উল্লিখিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অন্যান্য কারখানার মতো ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানাও বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে শিল্পায়নের সাথে কৃষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়টিকে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।
সুতরাং স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, ‘ খালিদের অভিজ্ঞতায় কৃষকদের আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে শিল্পায়নের সম্পর্ক ফুটে উঠেছে’।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মাহিরা তার বাবার সাথে ভোলা শহরের রাস্তা ধরে হাটছিল। হঠাৎ ভিড় দেখে কাছে গিয়ে দেখল একটি টিউবওয়েল দিয়ে পানি পড়ছে। একটি ছেলে ম্যাচের কাঠিতে আগুন ধরিয়ে টিউবওয়েলের কাছে ধরার সাথে সাথেই সেখানে আগুন জ্বলে ওঠে। মাহিরার প্রশ্নের জবাবে বাবা বললেন, মাটির নিচ থেকে এক ধরনের বায়বীয় পদার্থ পানির সাথে মিশেছে বলেই এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বললেন উক্ত বায়বীয় পদার্থটি গৃহস্থালি ও কলকারখানার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ক. বাংলাদেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ কোনটি?
খ. খনিজসম্পদের সাথে জীবিকা অর্জনের সম্পর্ক বর্ণনা কর।
গ. ‘মাহিরার দেখা সম্পদটি শিল্প উন্নয়নে সহায়ক।’ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত সম্পদের প্রাচুর্যই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়ক—এ বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি দাও।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ মাটি।
খ. খনিজসম্পদের সাথে জীবিকা অর্জনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, কারণ খনিজসম্পদ বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ভিত্তি তৈরি করে। খনিজ তেল, গ্যাস, কয়লা, পাথর, বালু এবং অন্যান্য খনিজসম্পদ উত্তোলন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। খনিজসম্পদ-নির্ভর শিল্প যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন, সিমেন্ট কারখানা, ইস্পাত শিল্প, এবং নির্মাণ শিল্পে অনেক মানুষ কাজের সুযোগ পান।
এ ছাড়া খনিজসম্পদ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। ফলে খনিজসম্পদ শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নেই নয়, মানুষের জীবিকা অর্জন ও জীবনমান উন্নত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ. নাদিয়ার দেখা প্রাকৃতিক সম্পদটি হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস, যা শিল্প উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
খনিজ সম্পদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। সাধারণত বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না, শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানা ধরনের শিল্পোৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে; যেমন: সার শিল্পে, এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ব্যবহৃত হয় এ গ্যাস যা উদ্দীপকের মধ্যেও আলোচিত হয়েছে। আমাদের দেশের বনাঞ্চলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বর্তমানে জ্বালানির প্রয়োজনে প্রাকৃতিক গ্যাসের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের জাতীয় জীবনে খনিজ সম্পদ হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের নাদিয়ার দেখা বায়বীয় পদার্থটি ছিল বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ গ্যাস। এটি গৃহস্থালির কাজে এবং শিল্প-কারখানায় এদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় বলে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
ঘ. গ্যাস সম্পদের প্রাচুর্যই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়ক।
বাংলাদেশের মাটির নিচে রয়েছে নানা মূল্যবান খনিজ সম্পদ। গ্যাস সম্পদ তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে গৃহস্থালিসহ কলকারখানার নানা শিল্প উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই গ্যাস। বিশেষ করে রান্নাবান্না ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে এর ব্যবহার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। উদ্দীপকে নাদিয়ার বাবার কথায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। আর প্রাকৃতিক গ্যাস হিসেবে প্রধানত মিথেন গ্যাসের ব্যবহার বেশি। তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হচ্ছে বাংলাদেশের সার কারখানাগুলো। কেননা সেখানে গ্যাস থেকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উৎপন্ন হয় ইউরিয়া সার। এই ইউরিয়া সার বর্তমানে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বরং গ্রামীণ সমাজের পরিবর্তনের মূলে এই উৎপাদন ব্যবস্থা কাজ করছে।
সামগ্রিক আলোচনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, উক্ত প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কাজেই বাংলাদেশের ভূঅভ্যন্তরে এ সম্পদটির প্রাচুর্য থাকায় আমরা যত বেশি পরিমাণে তা উত্তোলনপূর্বক তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব, আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নও ততই গতিশীল হবে।
সুতরাং উক্ত সম্পদ তথা গ্যাস সম্পদের প্রাচুর্য দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়ক।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সালেহা বাংলাদেশের এমন একটি শিল্প কারখানায় কাজ করছে যেখানে অধিকাংশ শমিকই নারী। এ শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
ক. বাংলাদেশের মোট ভূভাগের কতভাগ বনভূমি?
খ. বর্তমানে ঔষধ শিল্পকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্প বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত শিল্পটি সম্পর্কে বর্ণনা কর।
ঘ. ‘উক্ত শিল্পটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে নারী সমাজের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।’—উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
জামান কয়েকটি শিল্পকারখানা পরিদর্শন করার জন্য নারায়ণগঞ্জ গিয়েছে। একটি কারখানায় সে কার্পেট, ব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রী দেখে। অন্য আরেকটি কারখানায় সে অনেকগুলো নারীকে কাজ করতে দেখে। সে জানতে পারে এ কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ক. ২০১১-২০১২ অর্থবছরে কী পরিমাণ সিমেন্ট উৎপাদন করা হয়?
খ. মৎস্য সম্পদের সাথে জীবিকা অর্জনের সম্পর্ক বর্ণনা কর।
গ. বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পগুলোর ভূমিকা আলোচনা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উক্ত শিল্পগুলোই যথেষ্ট? যুক্তি দেখাও।
সৃজনশীল—৫: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মধুপুর স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি কারখানা পরিদর্শন করে। কারখানাটিতে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত উপকরণগুলো ব্যবহার করেই উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়।
ক. প্রাকৃতিক সম্পদ কী?
খ. জীববৈচিত্র্য বলতে কী বোঝায়?
গ. মধুপুর স্কুলের শিক্ষার্থীদের দেখা কারখানাটি বাংলাদেশের কোন শিল্পকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উক্ত শিল্পের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের মূল বই থেকে ৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ১২শ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post