৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ১৩শ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : পৃথিবী নামের আমাদের এ গ্রহটিতে রয়েছে মোট ১৯৫টি দেশ। দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত। এগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম হলেও, আজকের বিশ্বে কোনো দেশের পক্ষেই অন্যের সহযোগিতা ছাড়া একা চলা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমন কি রাজনৈতিক দিক দিয়েও দেশগুলো একে অপরের উপর কমবেশি নির্ভরশীল। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিজেদের উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের পরস্পরের সহযোগিতা নিতে হয়। যেমন একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশের খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।
৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ১৩শ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সংস্থা-১: প্যারিসে সদর দপ্তর। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১৯৫টি রাষ্ট্র।
সংস্থা-২: ১৯৪৮ সালের ৭ই এপ্রিল গঠিত হয়। জেনেভা শহরে সদর দপ্তর অবস্থিত।
ক. UNFPA কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে?
খ. বাংলাদেশে UNDP এর কার্যক্রম ব্যাখ্যা কর।
গ. বাংলাদেশে সংস্থা-২ এর কার্যক্রম ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘সংস্থা-১’ বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে’—বিশ্লেষণ করো।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. UNFPA বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
খ. UNDP ১৯৬৫ সালে গঠিত হয়। বিশ্ব থেকে দারির্দ্য দূরীকরণ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নে সহায়তা করা UNDP-এর প্রধান কাজ। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে UNDP-এর সহায়তা করে আসছে। বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ, গ্রামাঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, পরিবেশের উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাহায্য ও সহযোগিতা করছে।
গ. সংস্থা-২ হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল এটি গঠিত হয় এবং সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এর সদর দপ্তর। বাংলাদেশেও এই সংস্থাটি নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি দূর করতে সাহায্য করছে। শিশুদের ৬টি ঘাতক রোগ (হাম, ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, যক্ষ্মা, পোলিও ও হুপিংকাশি) প্রতিরোধেও সংস্থাটি অবদান রাখছে। এ ছাড়া দেশ থেকে ম্যালেরিয়া দূরীকরণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্যও এই সংস্থাটি কাজ করছে। তা ছাড়া কলেরা ও ডাইরিয়া নিয়ন্ত্রণেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবদান উলেস্নখযোগ্য।
সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সংস্থাটির অবদান অনস্বীকার্য।
ঘ. সংস্থা-১ জাতিসংঘের ইউনেস্কো সংস্থাটিকে নির্দেশ করে।
ইউনেস্কোর প্রধান লক্ষ্য হলো শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সহযোগিতা সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২৭ অক্টোবর ইউনেস্কোতে যোগ দেয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার ইউনেস্কো কমিশন গঠন করে। সদস্যপদ লাভ করার পর থেকেই সংস্থাটি বাংলাদেশে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তবে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সংস্থাটির ভূমিকা অনন্য। ইউনেস্কোর উদ্যোগেই আমাদের ভাষা শহিদ দিবস ২১ ফেব্রম্নয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সুন্দরবন ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ ও নওগাঁর পাহাড়পুর বা সোমপুর বৌদ্ধবিহার) ইত্যাদি সংরক্ষণেও সংস্থাটি সহায়তা করছে।
উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি, ইউনেস্কো বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
পিয়াল টিভিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে বাংলায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার দেখে বিস্মিত হয়। সে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হওয়ায় এই কার্যক্রম চলছে। একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাভাষাকে এই মর্যাদাদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তার স্কুলে ঐ সংস্থার সহযোগিতায় একটি বিজ্ঞান গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি একটি ইন্টারনেট ক্লাবও গঠন করা হয়েছে।
ক. UNDP এর প্রধান কাজ কী?
খ. বিশ্ব খাদ্য সংস্থা কেন গঠন করা হয়?
গ. পিয়ালের বিদ্যালয়ে কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পিয়ালের বিদ্যালয়ের কার্যাবলির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে উক্ত সংস্থার ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিশ্ব থেকে দারির্দ্য দূরীকরণ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নে সহায়তা করা UNDP-এর প্রধান কাজ।
খ. বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ১৯৪৫ সালে গঠিত হয়। ১৮৭টি দেশ এর সদস্য। রোমে এর সদর দপ্তর। ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূরীকরণের মাধ্যমে বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিশ্ব খাদ্য সংস্থা গঠন করা হয়। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সারা বিশ্বে ক্ষুধার বিরুদ্ধে কাজ করছে।
গ. পিয়ালের বিদ্যালয়ে যে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা রয়েছে তা হলো ‘ইউনেস্কো’।
ইউনেস্কো জাতিসংঘের একটি সামাজিক সংস্থা। পুরো নাম ‘দি ইউনাইটেড নেশন্স এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক এ্যান্ড কালচারাল অরগানাইজেশন’ অর্থাৎ জাতিসংঘ শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা। ১৯৪৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত এবং এর সদরদপ্তর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। ইউনিস্কোর প্রধান লক্ষ্য হলো শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সহযোগিতা সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বর্তমানে ইউনেস্কোর সদস্য রাষ্ট্র ১৮৯টি। পিয়ালের বিদ্যালয়ে একটি বিজ্ঞান গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা এবং ইন্টারনেট ক্লাব গঠন ইউনেস্কোর শিক্ষা, বিজ্ঞান ও যোগাযোগ এই কাজগুলোর অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে এটি নিঃসন্দেহে বোঝা যায় ইউনেস্কোর সহযোগিতায় পিয়ালের বিদ্যালয়ে উক্ত কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে।
ঘ. উক্ত সংস্থাটি হলো ইউনেস্কো, যা বাংলাদেশে শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ইউনেস্কোতে যোগ দেয়ার পর থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে এ সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবসকে এ সংস্থা ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাছাড়া সুন্দরবন, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদ ইত্যাদি সংরক্ষণে সহায়তার মাধ্যমে এ সংস্থা বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় সহযোগিতা করছে।
একইভাবে এ সংস্থা পিয়ালের বিদ্যালয়ে একটি বিজ্ঞান গবেষণাগার স্থাপন করেছে। এর প্রেক্ষিতে ঐ বিদ্যালয়ে গঠিত হয়েছে একটি ইন্টারনেট ক্লাব। এর ফলশ্রুতিতে পিয়ালের বিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের নানা শাখায় প্রভূত উন্নতি লাভ করবে।
সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে একটি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইউনেস্কো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সীমান্ত নিয়ে ‘ক’ ও ‘খ’ রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছিল। ‘ক’ রাষ্ট্র তার সামরিক বাহিনী নিয়ে ‘খ’ রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে আগ্রাসি তৎপরতা চালায়। ‘খ’ রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সাহায্য চাইলে বিবাদমান রাষ্ট্রের বিরোধ মীমাংসায় সংস্থাটি এগিয়ে এসে সমাধান করে দেয়। এই সংস্থাটি বিশ্ব থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা নিরসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করছে।
ক. ইউনেস্কোর মূল কাজের ক্ষেত্র কয়টি?
খ. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কোনটি? এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘ক’ ও ‘খ’ রাষ্ট্রের বিবাদ মীমাংসায় কোন সংস্থাটি কাজ করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বিশ্ব শান্তি রক্ষায় উক্ত সংস্থাটি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে—এই প্রস্তাবনার পক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল—৪: নিচের ছকটি লক্ষ্য করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ক. শুরুতে জাতিসংঘের সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
খ. অছি-পরিষদ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. ছকের ‘ক’ সংস্থাটির মূল লক্ষ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ছকের ‘খ’ সংস্থাটির ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৫: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সংস্থা-১ : প্যারিসে সদর দপ্তর। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১৮৯টি রাষ্ট্র।
সংস্থা-২ : ১৯৪৮ সালের ৭ই এপ্রিল গঠিত হয়। জেনেভা শহরে সদর দপ্তর অবস্থিত।
ক. জাতিসংঘ কত সালে গঠিত হয়?
খ. “ভেটো ক্ষমতা” বলতে কী বোঝায়?
গ. বাংলাদেশে “সংস্থা-২” এর কার্যক্রম ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সংস্থা-১” বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে—বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের মূল বই থেকে ৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ১৩শ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post