৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় অধ্যায় : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। প্রায় হাজার মাইলের ভৌগোলিক দূরত্ব, ভাষা ও সংস্কৃতিসহ সকল বিষয়ে অমিল থাকা সত্বেও শুধু ধর্মীয় মিলের কারণে পূর্ববাংলাকে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ করা হয়।
এই নতুন রাষ্ট্র পূর্ববাংলার মানুষের জীবনে কোনো মুক্তির স্বাদ আনতে পারেনি। শাসকের হাত বদল হয়ে পূর্ববাংলার জনগণ নতুন আরেকটি ভিনদেশি শাসক দ্বারা শাসিত হতে থাকে । পরে অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতীক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা পরিপূর্ণভাবে বিদেশি শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করি। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাসের পথ অনেক ঘটনাবহুল।
আজ আমরা কোর্সটিকায় বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি সৃজনশীল প্রশ্ন আলোচনা করবো। এই বিষয়ের অন্যান্য অধ্যায়গুলো নিয়ে প্রশ্ন ও সাজেশান্স পেতে নিচে দেয়া লিংকগুলোতে ক্লিক করো। পাশপাশি এখান থেকে PDF ফাইল ডাউনলোড করে পরবর্তী সময়ে অধ্যয়নের জন্য তোমার মোবাইল বা কম্পিউটারে প্রশ্নগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে পারো।
৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
হিশাম ও পারিশা ঈদের ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে গেল। তারা মামার কাছে স্থানীয় বিখ্যাত নিদর্শনগুলো দেখার বায়না ধরল। মামা তাদেরকে মসলিনের জন্য বিখ্যাত স্থানটি ঘুরতে নিয়ে গেলেন। তারা সেখানকার প্রাচীন বিভিন্ন ইমারতের স্থাপত্য ও নকশা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। মামা তাদেরকে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্থান হতে প্রাপ্ত পুরাকীর্তিগুলির নিদর্শন দেখাতে নিয়ে যান যাতে তারা অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি কোথায় অবস্থিত?
খ. প্রত্নতত্ত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. তারা যে স্থানটি পরিদর্শন করে সেটির ঐতিহ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মামা তাদের কোথায় নিলে তারা ঐতিহ্য সচেতন হতে পারবে তা পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মতামতসহ ব্যাখ্যা কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি অবস্থিত।
খ. প্রত্নতত্ত্ব হল এমন একটি বিজ্ঞান যা প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস অধ্যয়নের জন্য পুরাকীর্তি, ধ্বংসাবশেষ, প্রাচীন বস্তু, স্থাপত্যকলা এবং জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে। এটি মূলত অতীতের মানুষের জীবনধারা, তাদের ব্যবহার্য সামগ্রী এবং স্থাপত্যকীর্তি নিয়ে গবেষণা করে। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা মাটির নিচে বা জলের তলায় লুকিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে সেগুলোর মাধ্যমে প্রাচীন সমাজের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেন।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্থানটি ঢাকার নিকটবর্তী সোনারগাঁও, যা মসলিনের জন্য বিখ্যাত।
সোনারগাঁও একসময় বাংলার প্রাচীন রাজধানী ছিল এবং এটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতীক। মসলিন, যা সারা বিশ্বে বিখ্যাত ছিল, এই অঞ্চলেই তৈরি হতো। সোনারগাঁওয়ের কারিগরেরা তাদের নিপুণ দক্ষতায় সূক্ষ্ম ও নরম মসলিন কাপড় তৈরি করতেন, যা তখনকার সময় রাজকীয় পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
এছাড়া সোনারগাঁওয়ে প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার রয়েছে। এখানকার পানাম নগর ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর চমৎকার উদাহরণ, যেখানে রয়েছে সুন্দর নকশা করা প্রাচীন ইমারত। সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে বিভিন্ন পুরাকীর্তি, শিল্পকর্ম ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে, যা অতীতের গৌরবময় ইতিহাসকে তুলে ধরে।
সুতরাং, সোনারগাঁও মসলিনের ঐতিহ্য ও বাংলার প্রাচীন সভ্যতার প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ. মামা যদি তাদের জাদুঘরে নিয়ে যান, তবে তারা ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে।
পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বলা যায়, জাদুঘর হলো একটি এমন স্থান, যেখানে জাতির অতীত ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সংরক্ষিত থাকে। এখানে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক দলিল, শিল্পকর্ম এবং কারুশিল্পের নমুনা প্রদর্শন করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অতীতের গৌরব সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ায় এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
যেমন, সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে গেলে তারা মসলিনের মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম এবং বাংলার সমৃদ্ধ কারুশিল্পের নমুনা দেখতে পাবে। পাশাপাশি, ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে গেলে তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, এবং প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে জানতে পারবে।
এ ধরনের স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে তারা অতীতের ঐতিহ্যকে বুঝতে শিখবে এবং তা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে। সুতরাং, মামা যদি তাদের জাদুঘরে নিয়ে যান, তবে তা তাদের ঐতিহ্য সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হতে সহায়তা করবে।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
গ্রীষ্মের ছুটিতে মিশকাত তার বাবার সাথে সুলতানি আমলে প্রতিষ্ঠিত বাংলার রাজধানীতে বেড়াতে যায়। ঐ এলাকা ও তার আশেপাশের ইমারতগুলো দেখতে তাদের দু’দিন লেগেছিল। সব ইমারত দেখার পর ছেলের এক প্রশ্নের জবাবে বাবা বললেন, “এ ইমারতগুলো তৈরি করেছিলেন স্থানীয় জমিদার ও ব্যবসায়ীরা।” তিনি আরও বললেন, “এ সকল স্থাপত্য নিদর্শন সংরক্ষণ করতে না পারলে আমাদের অতীত ঐতিহ্যের একটি অংশ চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।”
ক. বাহাদুর শাহ পার্ক কে তৈরি করেন?
খ. প্রত্নসম্পদ বলতে কী বোঝায়?
গ. মিশকাতের দেখা এলাকাটির স্থাপত্যরীতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত মিশকাতের বাবার শেষোক্ত বাক্যটির সাথে তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাহাদুর শাহ পার্ক নওয়াব আবদুল গণি তৈরি করেন।
খ. প্রত্নসম্পদ বলতে সাধারণত পুরনো স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম, মূর্তি বা ভাস্কর্য, অলংকার, প্রাচীন আমলের মুদ্রা, পুরনো মূল্যবান আসবাবপত্র ইত্যাদিকে বোঝায়। যার মাধ্যমে প্রাচীন মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, সংস্কার, রুচি বা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।
গ. মিশকাতের দেখা এলাকাটি হলো পানামনগর যা ইউরোপীয় এবং মোঘল স্থাপত্যরীতির মিশেলে তৈরি।
উদ্দীপকে গ্রীষ্মের ছুটিতে মিশকাত তার বাবার সাথে সুলতানি আমলে প্রতিষ্ঠিত বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও বেড়াতে যায়। সে ঐ এলাকা ও তার আশপাশের ইমারতগুলো দেখে। অর্থাৎ মিশকাতের দেখা এলাকাটি পানামনগর নির্দেশ করে। ঊনিশ শতকে ধনী ব্যবসায়ীদের অনেকে বসবাসের জন্য এ এলাকাটি বেছে নেন। স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই ভবনগুলোতে ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়। তবে এদের নির্মাণকলায় মোঘল স্থাপত্যেরও প্রভাব আছে। যার প্রমাণ অট্টালিকাগুলো সাজানো হয়েছিল রঙিন মোজাইকে।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত মিশকাতের বাবার শেষোক্ত বাক্যটি হলো “এ সকল স্থাপত্য নিদর্শন সংরক্ষণ করতে না পারলে আমাদের অতীত ঐতিহ্যের একটি অংশ চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।” মিশকাতের বাবার উক্তিটির সাথে আমি একমত।
আমাদের দেশে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন রয়েছে। এ সকল প্রত্ননিদর্শন বিভিন্ন যুগের মানুষের তৈরি। এছাড়া তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদিও পাওয়া যায় এসব প্রত্ননিদর্শনে। বাংলাদেশে জাতীয় জাদুঘরে বাংলার নবাব, জমিদার ও ইংরেজ শাসনামলের বেশ কিছু প্রত্নসম্পদ রয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক জাদুঘর ও সংগ্রহশালায়ও রয়েছে জমিদারদের ব্যবহৃত নানা ধরনের পোশাক, ঢাল-তলোয়ার, সিংহাসনসহ নানা দ্রব্যাদি। এছাড়া কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িতে স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিজড়ানো নানা জিনিস এবং আলোকচিত্র।
কিন্তু আমরা যদি এসব প্রত্ন সম্পদ রক্ষা করতে না পারি তাহলে আমরা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারব না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরাও আমাদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে না। কালের বিবর্তনে ইতিহাস ও ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে যাবে। তাই আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের প্রত্ন সম্পদগুলো রক্ষা করতে হবে।
ঔপনিবেশিক যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
শিক্ষাসফরে ‘ক’ স্কুলের শিক্ষার্থীরা সোনারগাঁও এ যায়। সেখানে তারা অনেক স্থাপত্য নিদর্শন দেখতে পায়। এগুলোর জীর্ণ দশা দেখে তারা অনুভব করে ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষার স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর সংস্কার প্রয়োজন।
ক. রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি কোথায় অবস্থিত?
খ. প্রত্নসম্পদ বলতে কী বোঝায়?
গ. ‘ক’ স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভ্রমণকৃত এলাকার স্থাপত্যরীতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উক্ত স্থাপত্য নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ ও সংস্কার করা উচিত।”—বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
গ্রীষ্মের ছুটিতে মামার সাথে অহনা ঢাকার বাইরের বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শন দেখতে গিয়েছিল। ঈদের ছুটিতে গিয়েছিল ঢাকার শাহবাগে একটি জাদুঘরে। অহনার মামা বললেন, ‘এসব প্রত্নসম্পদ রক্ষা করতে না পারলে আমরা আমাদের অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলব’।
ক. ‘প্রত্ন’ অর্থ কী?
খ. উত্তরা গণভবন বলতে কী বোঝ?
গ. ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় অহনার দেখা জাদুঘরটির ভূমিকা উল্লেখ কর।
ঘ. অহনার মামার উক্তিটির সাথে তুমি কি একমত? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের মূল বই থেকে ৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post