৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোর্সটিকায় তোমাদের স্বাগতম। কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে ৮ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। তোমাদের জন্য আজকে আলোচনাকৃত বিষয়টি হচ্ছে– ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১২ অধ্যায় সমাধান। অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে চুম্বক। কোর্সটিকায় আজকে চুম্বক অধ্যায়ের উপর আলোচনা করা হবে।
আজকের আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে এই অধ্যায়ের উপর একটি ক্লাস। ক্লাসটি তোমাদের জন্য সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাসটি করলে তোমরা চুম্বক অধ্যায়টি সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারবে ও এই অধ্যায়ে থাকা প্রতিটি কনসেপ্ট সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবে। তোমরা যদি, ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড় তাহলে এই বইটি তোমাদের কাঠে সহজ হয়ে উঠবে।
৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১২ অধ্যায় সমাধান
আমরা প্রতিদিন নানাভাবে চুম্বক ব্যবহার করি। আমাদের টেলিফোনে কথা বলতে হয়, টেলিফোনের স্পিকারে চুম্বক রয়েছে, সেখানে চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে স্পিকারে শব্দ সৃষ্টি করা হয়। শুধু টেলিফোনের স্পিকার নয় রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এরকম সবকিছুর স্পিকারে চুম্বক থাকে।
আমরা যখন গরমের দিনে ফ্যান ব্যবহার করি তখন ফ্যানের মোটর ঘোরানোর জন্য চুম্বক ব্যবহার করতে হয়। শুধু ফ্যানে নয়, এসি, ফ্রিজ গাড়ি এরকম যত যন্ত্রপাতিতে যখনই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কোনো কিছু ঘোরাতে হয় তখনই চুম্বক ব্যবহার করতে হয়। আমরা প্রতিদিন যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি সেটি বৈদ্যুতিক বিশাল চুম্বককে তারের কুণ্ডলীর মাঝে প্রবল বেগে ঘোরাতে হয়।
পৃথিবী একটা বিশাল চুম্বক এবং এই চুম্বকটির চৌম্বক ক্ষেত্র সূর্য থেকে প্রবল বেগে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা চার্জ কণাগুলোকে পৃথিবীতে আঘাত করতে না দিয়ে প্রাণিজগতকে রক্ষা করে যাচ্ছে। অনুমান করা হয় যদি পৃথিবী এই চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীকে রক্ষা না করত তাহলে পৃথিবীতে হয়তো প্রাণের উদ্ভবই হতে পারত না। পৃথিবী হতো প্রাণহীন রুক্ষ পাথুরে একটা গ্রহ।
স্থায়ী চুম্বক
আমরা যারা সাধারণভাবে চুম্বক ব্যবহার করি তারা দুই ধরনের চুম্বক দেখে থাকি, এক ধরনের চুম্বক হচ্ছে স্থায়ী চুম্বক অর্থাৎ সেটি সব সময় চুম্বক, সব সময় লোহাকে আকর্ষণ করে। অন্য এক ধরনের চুম্বক হচ্ছে বৈদ্যুতিক চুম্বক এবং নাম দেখে বুঝতে পারছ বিদ্যুৎ প্রবাহ করে এই চুম্বক তৈরি করা হয়। তাই বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে এই ধরনের চুম্বকের চৌম্বকত্ব সরিয়ে ফেলা যায়। চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে আমাদের প্রাত্যহিক ব্যবহারের প্রযুক্তিতে বৈদ্যুতিক চুম্বকের ব্যবহার অনেক বেশি।
তোমরা যখন পরমাণুর গঠন নিয়ে পড়েছ তখন তোমরা জেনেছ যে পরমাণু তৈরি হয় ইলেকট্রন এবং প্রোটন দিয়ে, ইলেকট্রনের চার্জ নেগেটিভ এবং প্রোটনের চার্জ পজিটিভ ৷ শুধু তাই নয় বিপরীত চার্জ একে অপরকে আকর্ষণ করে এবং একই ধরনের চার্জ একে অপরকে বিকর্ষণ করে।
তোমাদের ভেতর যারা দুটি চুম্বক নিয়ে নাড়াচাড়া করার সুযোগ পেয়েছ নিশ্চিতভাবেই তারা লক্ষ করেছে যে চুম্বকের দুই পাশে দুটি মেরু, একটি উত্তর মেরু অন্যটি দক্ষিণ মেরু ৷ উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু একে অপরকে আকর্ষণ করে আবার উত্তর মেরু অপর উত্তর মেরুকে এবং দক্ষিণ মেরু অপর দক্ষিণ মেরুকে বিকর্ষণ করে। দেখতেই পাচ্ছ চার্জের সঙ্গে চুম্বকের মেরুর একটি মিল রয়েছে।
চুম্বকের মেরুগুলোকে পূর্ব-পশ্চিম নাম না দিয়ে উত্তর দক্ষিণ নাম দেওয়ার পিছনে একটি কারণ রয়েছে। একটু আগেই তোমাদের বলা হয়েছে পৃথিবী আসলে একটা বিশাল চুম্বক হিসেবে কাজ করে, সেজন্য কোনো চুম্বককে ঝুলিয়ে দিলেই পৃথিবীর এই বিশাল চুম্বকের আকর্ষণ সেটা উত্তর দক্ষিণ বরাবর ঝুলে থাকে।
চুম্বকের যে দিকটি উত্তর দিকে মুখ করে থাকে সেটাকে আমরা বলি উত্তর মেরু এবং যে দিকটি দক্ষিণ দিকে মুখ করে থাকে সেটাকে বলেই দক্ষিণ মেরু। যেহেতু আমরা জানি চুম্বকের আকর্ষণ হয় বিপরীতে মেরুতে তাই আমরা বলতে পারি, পৃথিবীর ভেতরকার চুম্বকটির দক্ষিণ মেরু হচ্ছে উত্তর দিকে এবং চুম্বকটির উত্তর মেরুটি হচ্ছে দক্ষিণ দিকে।
চুম্বকের সঙ্গে চুম্বকের আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের সঙ্গে চার্জের সঙ্গে চার্জের আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের একটা মিল আছে সত্যি কিন্তু অন্য একটি ব্যাপারে কিন্তু অনেক বড়ো একটা পার্থক্য রয়েছে। চার্জের বেলায় আমরা শুধু পজিটিভ চার্জ কিংবা নেগেটিভ চার্জের একটি গোলক, দণ্ড বা অন্য কিছু ঝুলিয়ে রাখতে পারি চুম্বকের বেলায় কিন্তু আমরা কখনোই শুধু উত্তর মেরু কিংবা শুধু দক্ষিণ মেরুর একটি চুম্বক তৈরি করে ঝুলিয়ে দিতে পারব না।
তোমরা যদি মনে করো একটা দণ্ড চুম্বকের মাঝখানে ভেঙে দুটি চুম্বক তৈরি করবে যার একটি হবে উত্তর মেরু অন্যটি দক্ষিণ মেরু তাহলে তোমরা অবাক হয়ে দেখবে আসলে সেটি না ঘটে দুটি পূর্ণ চুম্বক তৈরি হয়েছে, দুটোরই উত্তর ও দক্ষিণ মেরু রয়েছে। সেগুলো যদি আবার ভাঙ্গা হয় তাহলে দেখবে আবার সবকটি ভাঙা অংশই একটি করে পূর্নাঙ্গ চুম্বকে পরিণত হয়েছে যার এক মাথা হচ্ছে উত্তর মেরু আর অন্য মাথা হচ্ছে দক্ষিণ মেরু।
এভাবে একেবারে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা করে ফেললেও প্রত্যেকটি কণাই হবে একটি ছোট পূর্ণাঙ্গ চুম্বক যার একমাথা হবে উত্তর মেরু অন্য মাথা হবে দক্ষিণ মেরু ৷ চুম্বকের বেলায় কখনোই একটা মেরুকে আলাদা করে পাওয়া সম্ভব নয়।
নানা ধরনের যন্ত্রপাতি এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী চুম্বক তৈরি করা হয়। মানুষ অনেক প্রাচীন কাল থেকে প্রকৃতিতে পাওয়া এক ধরনের স্থায়ী চুম্বক দেখে এসেছে যেটাকে লোডস্টোন বলা হয়। এগুলো লোহার এক ধরনের আকরিক ৷ অনুমান করা হয় এই আকরিকের উপর বজ্রপাতের অবাক হয়ে যাবে যে একটি বজ্রপাতে যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি বের হয় সেটি দিয়ে ঢাকা শহরের মতো কয়েকটি শহরকে কয়েক মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব বিদ্যুৎ প্রবাহের সঙ্গে চৌম্বক ক্ষেত্রের একটা অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেটা একটু পরেই তোমরা জানতে পারবে।
প্রাচীনকালে মানুষেরা আবিষ্কার করেছিল যে চুম্বককে ঝুলিয়ে রাখা হলে সেটা উত্তর-দক্ষিণে ঝুলে থাকে। এই তথ্যটি ব্যবহার করে চীন দেশের নাবিকেরা প্রথম কম্পাস তৈরি করে দিক নির্ধারণ করা শুরু করেছিল প্রায় হাজার বছর আগে ।
তোমরা যারা চুম্বক নাড়াচাড়া করেছ তারা সবাই নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ একটি চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে। লোহা ছাড়াও চুম্বক নিকেল এবং কোবাল্টকে আকর্ষণ করে কিন্তু তামা, প্লাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়ামকে আকর্ষণ করে না। চুম্বক যে সকল পদার্থকে আকর্ষণ করতে পারে তাদের একটা বিশেষত্ব আছে এবং এরকম পদার্থকে চৌম্বকীয় পদার্থ বলে।
তোমাদের কাছে যদি একটা মোটামুটি শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার করে তুমি ইচ্ছা করলে অন্য একটা লোহা বা ইস্পাতের টুকরাকে একটা চুম্বকে পরিণত করতে পারবে সেটা করার জন্য লোহা বা ইস্পাতের টুকরার এক মাথায় স্থায়ী চুম্বকের এক মাথা স্পর্শ করে টেনে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।
তারপর স্থায়ী চুম্বকটি উপরে তুলে আবার আগের জায়গায় স্পর্শ করে টেনে নিতে হবে, অর্থাৎ ঘর্ষণটি সব সময়ই হতে হবে একমুখী ৷ এভাবে কমপক্ষে বিশবার একই দিকে চুম্বকের একই মাথা ব্যবহার করে ঘর্ষণ করতে পারলে মোটামুটি একটা কাজ চালানোর মতো স্থায়ী চুম্বক তৈরি করে নিতে পারবে।
বিদ্যুতের চুম্বক ক্রিয়া
আগের পরিচ্ছেদণ্ডলোতে চুম্বক নিয়ে অনেক কিছু বলা হয়েছে কিন্তু এখনো একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। সেটি হচ্ছে কেন বিশেষ কোনো কোনো পদার্থের চৌম্বক ধর্ম আছে অর্থাৎ সেগুলো চুম্বক দিয়ে আকর্ষিত হয় এবং তাদেরকে দিয়ে চুম্বক তৈরি করা যায়, যেমন–লোহা, কোবাল্ট বা নিকেল। আবার কেন কোনো কোনো পদার্থের চুম্বক ধর্ম নেই, যেমন-কাগজ, কাঠ বা প্লাস্টিক ।
আগের পরিচ্ছেদে আসলে কারণটির একটুখানি আভাস দেওয়া হয়েছে- বলা হয়েছে বিদ্যুৎ প্রবাহের সঙ্গে চুম্বকের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই অধ্যায়ে সেটাই ব্যাখ্যা করা হবে।
আমাদের মনে হতে পারে বিদ্যুৎ প্রবাহ আর চৌম্বকত্ব বুঝি পুরোপুরি আলাদা দুটি বিষয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ আলাদা বিষয় মনে হতেই পারে। কিন্তু জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল নামে একজন বিজ্ঞানী 1865 সালে দেখেছিলেন দুটি আসলে একই বিষয় এবং সেই থেকে বিদ্যুৎ আর চুম্বক আর আলাদা বিষয় নয়।
সেটা নাম হয়েছে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিজম বা বিদ্যুৎ চৌম্বকত্ব। কারণটি খুব সহজ, বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে সেটি তার পাশে একটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। একটি স্থির চার্জ যেভাবে তার চারপাশে বিদ্যুৎক্ষেত্র তৈরি করে বিদ্যুৎ প্রবাহও ঠিক সেভাবে তার চারপাশে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, অর্থাৎ চৌম্বকত্ব বলে আলাদা কিছু নেই, বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য চৌম্বকত্ব তৈরি হয়। আর বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে চার্জের প্রবাহ–তোমরা সবাই জানো আমাদের পরিচিত বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় সেখানে ইলেকট্রনের প্রবাহ হয়।
তোমাদের মনে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যদি বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণেই চৌম্বকত্ব তৈরি হয় তাহলে স্থায়ী চুম্বক দণ্ডের ভেতর চৌম্বকত্ব কোথা থেকে আসে? তার ভেতরে তো কোনো বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে না! তোমরা জেনে নিশ্চয়ই অবাক হবে যে, পরমাণুর গঠনের সময় তোমরা যখন পড়েছ, পরমাণুর কেন্দ্র নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে সেই ঘূর্ণন হচ্ছে এক ধরনের চার্জের প্রবাহ বা বিদ্যুৎ প্রবাহ-সেখান থেকেই চৌম্বক ক্ষেত্র তেরি হয়।
শুধু তাই নয় পরমাণুর প্রত্যেকটা ইলেকট্রনকেও একটা অতি ক্ষুদ্র চুম্বক হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। কাজেই সহজ করে বলা যেতে পারে প্রত্যেকটা পরমাণুর জন্য তার ইলেকট্রনগুলো চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ সবগুলো পরমাণু একটি করে অতি ক্ষুদ্র চুম্বক। সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চু্ম্বকগুলো মিলে যখন একটা শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে আমরা সেটাকে বলি স্থায়ী চুম্বক।
উপরে ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১২ অধ্যায় সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে এই অধ্যায়ের উপর একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। ক্লাসটিতে, এই অধ্যায়ে থাকা প্রতিটি কনসেপ্ট আলোচনা করা হয়েছে যাতে তোমরা এই অধ্যায়টি সহজে বুঝতে পারো। এই অধ্যায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জনের জন্য ও এই অধ্যায়ে থাকা সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাসটি পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post