৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোর্সটিকায় তোমাদের স্বাগতম। কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে ৮ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। তোমাদের জন্য আজকে আলোচনাকৃত বিষয়টি হচ্ছে– ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১৪ অধ্যায় সমাধান। অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে রসায়নের ব্যবহার। কোর্সটিকায় আজকে দৈনন্দিন জীবনে রসায়নের ব্যবহার অধ্যায়ের উপর আলোচনা করা হবে।
আজকের আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে এই অধ্যায়ের উপর একটি ক্লাস। ক্লাসটি তোমাদের জন্য সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাসটি করলে তোমরা দৈনন্দিন জীবনে রসায়নের ব্যবহার অধ্যায়টি সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারবে ও এই অধ্যায়ে থাকা প্রতিটি কনসেপ্ট সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবে। তোমরা যদি, ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড় তাহলে এই বইটি তোমাদের কাঠে সহজ হয়ে উঠবে।
৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১৪ অধ্যায় সমাধান
তোমরা আগের কয়েকটি অধ্যায়ে বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা রসায়নের প্রাথমিক একটি ধারণা পেয়েছ। তোমরা যখন রসায়ন সম্পর্কে আর জানবে তখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর গুরুত্ব দেখে বিস্মিত হবে। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায়, আমরা খাবারকে ঠিক রাখার জন্য ফুড প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করি।
অন্যদিকে, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সামগ্রী অনেক সময় খাবারকে অনিরাপদ করে তোলে। এছাড়া নিরাপদ পানীয়, বিভিন্ন পরিষ্কারক প্রসাধন সামগ্রীসহ আরও অনেক কিছুতে রসায়নের অনেক প্রয়োগ রয়েছে। তোমরা জানো যে, মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের সার ব্যবহার করে থাকি।
এই সারও নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা তৈরি । আবার শিল্প কারখানা থেকে যে সকল বর্জ্য তৈরি হয়, তা অনেক সময় পরিবেশকে দূষিত করে। এই শিল্প বর্জ্যও রাসায়নিক পদার্থ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের ভূমিকা রয়েছে। এই সকল রাসায়নিক পদার্থ কীভাবে প্রস্তুত করা হয়, তাদের বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার কী এবং সেগুলো আমাদের জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলে এই অধ্যায়ে সেই বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে।
গৃহস্থালির রসায়ন
রসায়ন তোমার দৈনন্দিন জীবনের একটি বড়ো অংশ। যেমন–খাবার, বাতাস, পানি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, পরিষ্কার করার রাসায়নিক এবং যা কিছু আমরা দেখতে বা স্পর্শ করতে পারি, এমন প্রতিটি বস্তুতে রসায়ন বা রসায়নের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যাবে। আমরা যদি খাবারের কথা বলি তাহলে দেখবে সেখানেও রসায়নের অনেক বড়ো ভূমিকা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে এই অধ্যায়ে খাবার লবণ, বেকিং সোডা ও ভিনেগার এই তিনটি খাদ্য সামগ্রীর রসায়ন নিয়ে আলোচনা করা হবে।
খাদ্য সামগ্রীর রসায়ন (Food Chemistry)
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি, আমাদের প্রতিটি খাদ্য পণ্যের পিছনে রসায়নের ভূমিকা অভাবনীয়। চলো সেগুলো সম্পর্কে জেনে আসি।
ক. খাবার লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl):
আমরা জানি যে সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে খাবার লবণ (NaCl) থাকে, সঙ্গে খুবই সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড সহ অন্যান্য কিছু লবণ থাকে। আমাদের দেশে আমরা সমুদ্রের পানি থেকে খাবার লবণ সংগ্রহ করে থাকি ৷ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সমুদ্র উপকূলের লবণচাষিরা বিভিন্ন আকৃতির জমির চারপাশে বাঁধ তৈরি করে একপাশ খানিকটা খুলে রাখে ৷
সমুদ্রের জোয়ারের সময় যখন পানি ঐ জায়গায় প্রবেশ করে, তখন পানি প্রবেশের মুখ বন্ধ করে জোয়ারের পানি আটকে রাখা হয়। সূর্যের তাপে এ জায়গার পানি বাষ্পীভূত হয়ে গেলে লবণ দেখতে পাওয়া যায়। লবণ চাষের মাধ্যমে পাওয়া লবণকে শিল্প কারখানায় পরিশোধিত করে খাওয়ার উপযোগী লবণে পরিণত করা হয়।
সোডিয়াম ক্লোরাইডের (NaCl) ব্যবহার:
সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্য লবণের খাদ্য সংক্রান্ত ব্যবহার ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। নিচে লবণের কিছু ব্যবহারের কথা বলা হলো :
1. লবণ দীর্ঘদিন ধরে খাবারের স্বাদ বের করে আনার জন্য ব্যবহার করা হয়।
2. খাবার সংরক্ষণের কাজে লবণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন–নোনা ইলিশ ।
3. রান্না করার সময় পানির তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য লবণ ব্যবহার করা হয়।
4. ডায়রিয়া হলে মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। এই পানিশূন্যতা দূর করার জন্য খাবার স্যালাইন খাওয়ানো হয়। আর খাবার স্যালাইন বানানোর অন্যতম উপাদান হচ্ছে লবণ।
5. শীতপ্রধান দেশে রাস্তায় জমে থাকা বরফ গলিয়ে ফেলার জন্য লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
6. ট্যানারি শিল্পে সংগৃহীত পশুর চামড়া প্রাথমিকভাবে রক্ষা করার জন্য লবণ ব্যবহার করা হয়।
7. লবণ ব্লিচিং, মৃৎপাত্র, সাবান এবং ক্লোরিন উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয়। রাসায়নিক শিল্পে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) যৌগ প্রস্তুত করার জন্য লবণ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, অন্যান্য শিল্প কারখানায়ও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে
খ. ভিনেগার:
ভিনেগার হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিড এর একটি জলীয় দ্রবণ। ভিনেগারে 5-10% অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে। বিভিন্ন ফলের রস থেকে ভিনেগার তৈরি করা হয়, তাই বাজারে নানা ধরনের ভিনেগার পাওয়া যায়। খাদ্য সামগ্রী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং গৃহস্থালি কাজে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
ভিনেগারের ব্যবহার:
1. খাদ্য সংরক্ষণে ভিনেগারের ভূমিকা রয়েছে। আচার ঠিক রাখতে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। যদি আচার তৈরিতে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড যখন আচারে দেওয়া হয়, তখন সেখান থেকে ত্যাগকৃত মন ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ফলে খাবার দীর্ঘদিন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
2. খাবারের স্বাদ এবং ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
3. আয়না, কাচ কিংবা টেবিল পরিষ্কার করতে, রান্নাঘর কিংবা বাথরুম দুর্গন্ধমুক্ত করতে এবং গৃহস্থালি কাপড়, কার্পেট কিংবা সোফায় দাগ দূর করতে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
4. চুল, ত্বক কিংবা পরিশ্রান্ত পায়ের পাতা সতেজ করতে ভিনেগারের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
5. বাগানের আগাছা দূর করার জন্যও ভিনেগার ব্যবহার করা যায়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার রসায়ন
আমাদের সুস্থ থাকতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। আমাদের শরীর এবং চারপাশের সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে মনও ভালো থাকে৷ এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিষ্কারক ব্যবহার করে থাকি। আমাদের শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রসাধনী সাবান ব্যবহার করি।
কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করার জন্য কাপড় কাচা সাবান বা সোডা ব্যবহার করি। জীবাণুনাশক হিসেবে ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া 80-95% ইথানল বা আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল করোনাভাইরাসের মতো অতি সংক্রামক জীবাণু ধংস করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ঘরের জানালার কাচ বা অন্যান্য কাচদ্রব্য পরিষ্কারের কাজে গ্লাস ক্লিনার ব্যবহার করা হয়। টয়লেট পরিষ্কার করার জন্য টয়লেট ক্লিনার ব্যবহার করা হয়। এগুলো সবই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়, অর্থাৎ পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার জন্য রসায়নের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি সামগ্রী সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
ক. কাপড় কাচা সোডা সোডিয়াম কার্বনেট হচ্ছে সোডা অ্যাস, এই সোডা অ্যাসের একটি অণুর সঙ্গে দশ অণু পানি রাসায়নিকভাবে যুক্ত হলে তাকে কাপড় কাচা সোডা বা ওয়াশিং সোডা বলা হয়। সেজন্য কাপড় কাচা সোডার রাসায়নিক নাম হচ্ছে সোডিয়াম কার্বনেট ডেকা হাইড্রেট ৷ কাপড় কাচা সোডা কাপড় থেকে দুর্গন্ধ দূর করতে, দাগ সরাতে এবং পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয়।
খ. টয়লেট ক্লিনার টয়লেট ক্লিনারের মূল উপাদান হচ্ছে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড। এর সঙ্গে কিছু পরিমাণ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট (NaOCl) মিশ্রিত থাকে৷ টয়লেট, বেসিন এবং কমোডে চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় পদার্থ, বিভিন্ন রঙ জাতীয় জৈব ও অজৈব পদার্থ এবং বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকে৷ বেসিন, কমোড ইত্যাদি পরিষ্কার করার জন্য এই টয়লেট ক্লিনার ব্যবহার করা হয়।
টয়লেট ক্লিনার দারা পরিষ্কার করার কৌশল: টয়লেট ক্লিনারে বিদ্যমান সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট (NaOCl) পানির সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড (HOCl) এবং সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) উৎপন্ন করে।
সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্ষারধর্মী হওয়ার কারণে চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় পদার্থকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড (HOCl) ভেঙে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) ও জায়মান অক্সিজেন [O]] উৎপন্ন করে। (তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে লিখে [O] জায়মান অক্সিজেনকে বোঝানো হয়)
কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে রসায়ন
কৃষি এবং শিল্প ক্ষেত্রে রসায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ উভয় ক্ষেত্রেই রসায়ন নতুন নতুন উদ্ভাবন করে আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য সচেষ্ট রয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ফসল উৎপাদনে একটি অনেক বড়ো ভূমিকা রেখেছে। এই সার ফসলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং তাদের ফলন বহুগুণে বৃদ্ধি করে। সারের পাশাপাশি রাসায়নিক কীটনাশক ফসলকে কীটপতঙ্গ, রোগ এবং আগাছা থেকে রক্ষা করে।
রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মাটিকে বিশ্লেষণ করে কোন মাটিতে কোন ফসল ফলানো সম্ভব এবং তার জন্য কোন ধরনের সার কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে সে ব্যাপারে কৃষকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। রসায়নের সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন কৃষিজাত ফসল ও ফলমূল সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় এবং খাবারের রসায়ন দিয়ে কৃষিজাত খাদ্যের পুষ্টিগুণ নির্ণয় করা হয়।
উপরে ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ১৪ অধ্যায় সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে এই অধ্যায়ের উপর একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। ক্লাসটিতে, এই অধ্যায়ে থাকা প্রতিটি কনসেপ্ট আলোচনা করা হয়েছে যাতে তোমরা এই অধ্যায়টি সহজে বুঝতে পারো। এই অধ্যায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জনের জন্য ও এই অধ্যায়ে থাকা সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাসটি পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post