কোর্সটিকায়, ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ২য় অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে– শক্তি। এখানে এই অধ্যায়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এখানে, এই অধ্যায় আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে একটি ক্লাস। ক্লাসটিতে এই অধ্যায়টি সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাসটি করলে শক্তি অধ্যায়ে তোমাদের যেসকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমস্যা হয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড়লে অনুসন্ধানী পাঠ বইটি তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ২য় অধ্যায় সমাধান
আমরা সবাই দেখেছি বল প্রয়োগ করে একটি বস্তুকে ঠেলে সরিয়ে নেয়া যায়। কতটুকু বল প্রয়োগ করে কতটুকু সরানো হয়েছে তার উপর নির্ভর করে কতটুকু কাজ করা হয়েছে। ‘কাজ’ শব্দটি আমরা আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় সব সময় ব্যবহার করি, কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় কাজ শব্দটির একটা সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে। বল প্রয়োগ করে যদি বলের দিকে একটা বস্তুকে ঠেলে নেওয়া যায় শুধু তাহলে ধরে নেওয়া হয় যে কাজ করা হয়েছে।
কাজ ও শক্তি (Work and Energy)
মনে করো তুমি একটি ইট ধাক্কা দিয়ে 5 মিটার দূরে সরিয়ে নিয়েছ, তোমার বন্ধ সেই একই ইট একই পরিমাণ ধাক্কা দিয়ে 10 মিটার দূরে সরিয়ে নিয়েছে । দুজনেই একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করেছ, কিন্তু দুজনেই ‘ইট সরিয়েছ’ ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে, কাজেই দুজনের ‘কাজ’ হয়েছে দুরকম।
একইভাবে দুজনেই যদি ধাক্কা দিয়ে ইটটিকে সমান দূরত্বে সরাতে কিন্তু সরানোর জন্য ভিন্ন পরিমাণ বল প্রয়োগ করাতে তাহলেও কিন্তু কাজের পরিমাণ ভিন্ন হতো অন্যভাবে বলা যায় কাজের পরিমাণ বের করার জন্য বল এবং সরণ এই দুটি রাশি প্রয়োজন ৷ প্রথমত, একটি বস্তুতে ‘বল’ প্রয়োগ করতে হবে, এবং সেই বল প্রয়োগ করে বস্তুটির ‘সরণ’ ঘটতে হবে ৷ অর্থাৎ, গাণিতিকভাবে বলা যায় বল ও সরণের গুণফলই হলো কাজ।
কাজ করতে প্রয়োজন হয় শক্তির। আমরা সবাই শক্তি কথায় আমাদের শক্তি প্রয়োগ বা বল প্রয়োগ বলতে একই বিষয় বুঝিয়ে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি (Energy) শব্দটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। কাজ করার সামর্থ্যকে বলা হয় শক্তি । শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, এক ধরনের শক্তি কেবল অন্য ধরনের শক্তিতে বদলে যেতে পারে। বইয়ের ভাষায় একে বলে শক্তির নিত্যতা। আর এক শক্তি থেকে অন্য শক্তিতে বদলে যাওয়াকে বলে শক্তির রূপান্তর।
একটু আগে তোমাদের বল প্রয়োগ করে একটি ইট সরিয়ে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এই কাজের সামর্থ্য এসেছে তোমার হাত থেকে। তোমার হাতে এই শক্তি এসেছে তোমার দেহে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি থেকে। তোমার দেহে রাসায়নিক শক্তি এসেছে তোমার খাবার থেকে। খাবার হিসেবে তুমি ভাত বা রুটি খেয়ে থাকলে সেটি এসেছে ধানগাছ কিংবা গমগাছ থেকে। মাংস হলে এসেছে হাঁস, মুরগি কিংবা গরু-ছাগলের মতো কোনো প্রাণী থেকে। প্রাণীরাও বড়ো হয়েছে ঘাস, পাতা বা বিচালি খেয়ে।
ঘাস, পাতা কিংবা অন্যান্য গাছের শক্তি এসেছে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে । সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন হয় আলো, সেটি আসে সূর্য থেকে। সূর্য তার এই শক্তি পেয়ে থাকে ক্রমাগত চলমান ফিউশান নামের নিউক্লিয় বিক্রিয়া থেকে। এভাবে এক শক্তি থেকে অন্য শক্তির রূপান্তর হতেই থাকে।
শক্তি যেহেতু কাজেরই পরিমাণ, তাই এর এককও জুল।
বিভবশক্তি (Potential Energy)
আমরা ইতোমধ্যে শক্তির বিভিন্ন উদাহরণ দেখেছি। আমরা এটাও জেনেছি যে কাজ করার সামর্থ্য হচ্ছে শক্তি । কিছু শক্তি আছে যা কাজের মাধ্যমে সঞ্চয় করে রাখা যায়। একটা ইলাস্টিক কিংবা রাবার ব্যান্ড টেনে লম্বা করে ছেড়ে দিয়ে সেটা দিয়ে কিছু ছুড়ে দেওয়া যায়, গুলতিতে যা করা হয়।
স্প্রিং দিয়েও একই ধরনের কাজ করা যায়, তাকে টেনে লম্বা কিংবা চেপে সংকুচিত করে তার ভেতর শক্তি সঞ্চয় করে রাখা যায়। একটা স্প্রিং কিংবা রাবার ব্যান্ড নিজে নিজে লম্বা হয় না, বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে একে লম্বা করতে হয়। এই লম্বা করার প্রক্রিয়ায় যে কাজ করা হয় সেটি রাবার ব্যান্ড কিংবা স্প্রিঙের ভেতরে শক্তি হিসেবে জমা হয়ে থাকে।
কোনো একটা বস্তুকে তুমি যদি একটা টেবিলের উপর তুলে রাখতে চাও তবে তোমাকে সেটাকে টেনে উপরে তুলতে হবে, অর্থাৎ বস্তুটির ওপর বল প্রয়োগ করে সেটিকে টেবিলের উপরে তুলতে হবে। আমরা কাজের সংজ্ঞা থেকে জানি উপরের দিকে বল প্রয়োগ করে একটা বস্তুকে যখন উপরে নেওয়া হয় তখন সেখানে কাজ করা হয়।
এই বস্তুটাকে টেবিলের উপর তোলার পর তুমি যদি সেটাকে কিনারায় এনে ছেড়ে দাও তখন বস্তুটি নিজ থেকেই নিচে পড়ে যাবে, সেটিকে টেনে নামাতে হবে না। বস্তুটা যদি একটা স্প্রিংয়ের ওপর পড়ে তাহলে স্প্রিংটা চেপে ছোট হয়ে যাবে, একটু আগেই আমরা জেনেছি, স্প্রিং ছোট করতে (কিংবা লম্বা করতে) বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে কাজ করতে হয়। অর্থাৎ, উপর থেকে নিচে পড়ার সময় সময় বস্তুটির মাঝে কাজ করার মতো একটি সক্ষমতা বা শক্তি সৃষ্টি হয়েছে।
এই শক্তি কোথা থেকে এসেছে? শুরুতে বস্তুটার উপর ‘কাজ করে’ যখন উপরে তোলা হয়েছিল, তখন এ কাজটুকুই বস্তুটিতে শক্তি হিসেবে জমা হয়েছে। বস্তুটিকে টেবিলের কিনারায় এনে ছেড়ে দিলে সেটি অভিকর্ষ বলের কারণে নিচে এসে পড়বে। তোমরা জান অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলের উৎস হলো পৃথিবী, সেটি সবকিছুকে নিচের দিকে আকর্ষণ করে।
তাহলে, আমরা কিছু কিছু উদাহরণ থেকে জানতে পারলাম যে, বিশেষ বিশেষ বস্তুর ওপরে বল প্রয়োগ করে কাজ করলে, সেই কাজটুকু শক্তি হিসেবে জমিয়ে রাখা যায়। বিজ্ঞানের ভাষায় এই শক্তির সাধারণ নাম ‘বিভবশক্তি’। স্প্রিঙের ক্ষেত্রে এই শক্তি এসেছে বস্তুর ‘স্থিতিস্থাপক’ ধর্মের বিরুদ্ধে করা কাজ থেকে ৷ তাই এর নাম ”স্থিতিস্থাপক বিভব শক্তি’’। আবার, টেবিলে উঠিয়ে রাখা বস্তুর মাঝে শক্তি এসেছে ‘অভিকর্ষ’ বলের বিরুদ্ধে করা কাজ থেকে ৷ তাই এর নাম ‘অভিকর্ষজ বিভব শক্তি’।
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কোনো কিছুকে উপরে তোলা হলে তার মাঝে বিভবশক্তি জমা হয়, কিন্তু কতটুকু বিভবশক্তি জমা হয় সেটি কি বের করা সম্ভব? সেটা খুব কঠিন নয়, বস্তুটার উপরে যেটুকু কাজ করা হয় সেই কাজটুকুই বিভব শক্তি হিসেবে জমা হয়ে যায়। কাজের পরিমাপ কীভাবে করতে হয় এখন সেটাও আমরা জানি যেটুকু বল প্রয়োগ করেছি তার সঙ্গে যেটুকু উপরে তুলেছি সেই দুটো গুণ দিলেই কাজের পরিমাণ বের হয়ে যাবে।
প্রথমে বলের পরিমাণটা বের করা যাক বস্তুর ওজন আছে বলেই সবকিছু নিচে পড়তে থাকে, কাজেই বস্তুটার যেটুকু ওজন আমাদের ঠিক সেই পরিমাণ বল উপরের দিকে প্রয়োগ করা না হলে বস্তুটাকেটাকে উপরে তোলা যাবে না। আগের শ্রেণিতে ভর সম্পর্কে আলোচনা করার সময়ে তোমাদের বলা হয়েছিল যে বস্তুর ভরের উপর পৃথিবীর আকর্ষণটাই হচ্ছে ওজন অর্থাৎ যার ভর যত বেশি, তার ওজনও তত বেশি ।
গতিশক্তি (Keinetic Energy)
আমরা বল প্রয়োগ করে ইট ঠেলে সরিয়ে নেওয়ার উদাহরণে আরও একবার ফিরে যাই। কল্পনা করে নাও মেঝেতে m ভরের একটা ইট রয়েছে এবং F বল প্রয়োগ করে তুমি সেটাকে বলের দিকে S দূরত্বে সরিয়ে নিয়েছ। কাজেই বলতি W = FS পরিমাণ কাজ করেছে।
কিন্তু আমরা এতক্ষণে জেনে গেছি যদি কোনো বস্তুর উপরে কাজ করা হয় তাহলে সেখানে কাজটা শক্তি হিসেবে জমা হয়ে থাকে। কিন্তু ইটটাকে ঠেলে সরিয়ে নেওয়ার পর আমরা কিন্তু কোথাও শক্তি জমা হয়ে থাকার নিশানা দেখতে পাচ্ছি না! যদি মেঝেতে ঠেলে না নিয়ে h উচ্চতায় তুলে নিতাম তাহলে W কাজটা অন্তত mgh পরিমাণ অভিকর্ষজ বিভব শক্তি হিসেবে জমা হয়ে যেত।
একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে কাজটা আসলে বৃথা যায়নি, তুমি যখন ইটটাকে মেঝেতে ঘষে নিয়ে গেছ তখন ঘর্ষণের কারণে তাপ সৃষ্টি হয়েছে, হয়তো খানিকটা শব্দও তৈরি হয়েছে। কাজেই তুমি যে কাজ করেছ সেটি তাপ শক্তি কিংবা শব্দ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। শক্তির নিত্যতার কারণে সেটি কোনো না কোনো রূপে রূপান্তরিত হতেই হবে।
এবারে তুমি কল্পনা করে নাও কোনো একটি উপায়ে তুমি পুরোপুরি ঘর্ষণমুক্ত একটি মেঝে তৈরি করেছ, যে মেঝেতে একটা ইটকে ঠেলে নিতে কোনো ঘর্ষণ হয় না। এবারে তুমি যদি F বল প্রয়োগ করে m ভরের ইটটাকে S দূরত্বে নিয়ে যাও তাহলে তো তোমার করা কাজ কোনো তাপ কিংবা শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হবে না, তাহলে কাজ যে শক্তিটি তৈরি করবে সেটি আমরা কোথায় খুঁজে পাব?
একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে তুমি যখন বল প্রয়োগ করবে, তখন বস্তুটির ত্বরণ হবে এবং তার বেগ বাড়তে থাকবে। তুমি যখন ইটটাকে ছেড়ে দেবে সেটি থেমে না গিয়ে এই বেগে চলতে থাকবে।
একটি বস্তুর বেগের জন্য তার ভেতরে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তাকে বলে গতিশক্তি এবং আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে শক্তিটি সবচেয়ে বেশি দেখে অভ্যস্ত, সেটি সম্ভবত এই গতিশক্তি। যেমন- একটা ইটের উপর একটা হাতুড়ি রেখে দিলে ইটটার কিছুই হয় না। কিন্তু তুমি যদি হাতুড়িটা প্রবল বেগে নিচে নামিয়ে আন তাহলে ইটটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে।
স্থির হাতুড়ির মাঝে কোনো শক্তিই নেই কিন্তু গতিশীল হাতুড়ির মাঝে অনেক শক্তি। আমরা ইচ্ছে করলে বেগের জন্য যে গতিশক্তি তৈরি হয় তার পরিমাণটাও বের করে ফেলতে পারি। তার জন্য আমাদের জানতে হবে একটি ভরের উপর বল প্রয়োগ করা হলে তার কত ত্বরণ হয়।
আমরা যখন অভিকর্ষজ বিভব শক্তি বের করেছি তখন দেখেছি ওজন বা অভিকর্ষ বলের পরিমাণ হচ্ছে mg, যেখানে m হচ্ছে ভর এবং g হচ্ছে অভিকর্ষজ ত্বরণ। এটি শুধু অভিকর্ষ বল কিংবা অভিকর্ষ ত্বরণের জন্য সত্যি নয়, এটি সকল বল এবং সকল ত্বরণের জন্য সত্য।
শিক্ষার্থীরা, উপরে ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ২য় অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে, এই অধ্যায়টিকে সহজভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো। সেই সাথে উপরে তোমাদের জন্য সমস্যা সমাধান ক্লাস দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যায় সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ও এই অধ্যায়ভিত্তিক সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post