কোর্সটিকায়, ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে– তরঙ্গ ও শব্দ। এখানে এই অধ্যায়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এখানে, এই অধ্যায় আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে একটি ক্লাস। ক্লাসটিতে এই অধ্যায়টি সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাসটি করলে তরঙ্গ ও শব্দ অধ্যায়ে তোমাদের যেসকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমস্যা হয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড়লে অনুসন্ধানী পাঠ বইটি তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান
আগের শ্রেণিতে আমরা একটি বিশেষ ধরনের গতির কথা জেনেছিলাম, সেটার নাম পর্যাবৃত্ত গতি (Periodic Motion), যেখানে গতিশীল বস্তুটি একই স্থানে বারবার ফিরে এসে তার গতির পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। সুতায় বেঁধে একটা পাথরকে ডানে-বাঁয়ে দুলতে দিলে সেটি হবে পর্যাবৃত্ত গতির একটি উদাহরণ, কারণ পাথরটা যেখান থেকে শুরু করে আবার সেখানে বারবার ফিরে আসে।
সরল স্পন্দন গতি
যদি ঘর্ষণ বা অন্য কোনোভাবে শক্তি ক্ষয় না হতো তাহলে পাথরটা অনন্ত কাল একইভাবে দুলতে থাকত এই ধরনের গতিতে পাথরটির গতির পুনরাবৃত্তি হতে থাকে কারণ পাথরটির শক্তি ক্রমাগত বিভবশক্তি থেকে গতিশক্তি এবং গতিশক্তি থেকে বিভবশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে। প্রথমে পাথরটি ঝুলিয়ে দেয়ার পর সেটি স্থির অবস্থায় ছিল, এটাকে সাম্য অবস্থা বলে সাম্য অবস্থায় পাথরটির মাঝে বিভবশক্তি বা গতিশক্তি কোনোটাই নেই।
এখন পাথরটিকে টেনে একপাশে একটু সরিয়ে নিলে সেটি একটু উপরে উঠে যায় বলে তার ভেতরে বিভবশক্তি সৃষ্টি হয়। এবারে পাথরটি ছেড়ে দিলে সুতা দিয়ে বাধা বলে সরাসরি নিচে নামতে পারে না, তাই সামনের দিকে এগিয়ে সর্বনিম্ন স্থানে পৌঁছাতে চায়, তখন বিভব শক্তি কমে সেটি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে।
যখন সেটি সবচেয়ে নিচে নেমে আসে অর্থাৎ পূর্বের সাম্য অবস্থার অবস্থানে আসে তখন তার ভেতরে কোনো বিভব শক্তি থাকে না, কিন্তু পুরো শক্তিটাই গতি শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কারণে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে যেতে থাকে। যেহেতু এখন পাথরটির মাঝে গতিশক্তি সৃষ্টি হয়েছে আমরা এখন আর এই অবস্থানকে সাম্য অবস্থা বলতে পারব না।
এই গতিশক্তির কারণে পাথরটি অন্যপাশে উপরে উঠতে থাকে এবং ধীরে ধীরে তার গতিশক্তি কমতে থাকে। যখন এটি তার সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায় তখন সেটি থেমে যায় বলে তার ভেতরে আর কোনো গতিশক্তি থাকে না, পুরোটাই বিভব শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
পাথরটা তখন দিক পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে উল্টোদিকে গতিশীল হতে থাকে এবং এভাবে পুরো গতিচক্রের পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, অর্থাৎ বিভব শক্তি এবং গতি শক্তির মাঝে শক্তির রূপান্তর হতে থাকে। এই ধরনের গতিকে সরল স্পন্দন গতি (Simple Harmonic Motion) বলে। পৃথিবীতে যত ধরনের গতি আছে তাদের ভেতর এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গতির মাঝে একটি ।
একইভাবে একটা স্প্রিংয়ের সঙ্গে একটা ভর যুক্ত করে সেটাকে নিচে টেনে ছেড়ে দিলে যখন সেটা উপর-নিচ করতে থাকে, সেটিও এই সরল স্পন্দন গতির উদাহরণ ৷ স্প্রিংটিকে তার সাম্য অবস্থা থেকে টেনে লম্বা করে যখন ভরটিকে সবচেয়ে নিচের অবস্থানে নামিয়ে আনা হয় তখন তার ভেতরে একটা বিভব শক্তির সৃষ্টি হয়।
ভরটিকে ছেড়ে দিলে এই বিভব শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে এবং আগের উদাহরণের মতো গতিশক্তিটি সর্বোচ্চ মানে পৌঁছানোর পর পুরোটাই বিভবশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। স্প্রিংটি যখন তার সাম্য অবস্থা থেকে প্রসারিত এবং সংকুচিত হয়, এই দুই অবস্থাতেই তার ভেতরে বিভব শক্তির সৃষ্টি হয়। এভাবে ছবিতে দেখানো উপায়ে ভরটি বিভব শক্তি এবং গতি শক্তির মাঝে রূপান্তরিত হয়ে স্পন্দিত হতে থাকে।
তরঙ্গের ধারণা
তোমরা সবাই পানিতে ঢেউ সৃষ্টি হতে দেখেছ। পুকুরের পানিতে একটা ঢিল ছুড়লে যেখানে ঢিলটি পড়ে সেই বিন্দু থেকে বৃত্তাকারে একটি তরঙ্গ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নদী দিয়ে একটা লঞ্চ গেলে তার ঢেউ নদী অতিক্রম করে একটু পরে তীরে এসে আঘাত করে।
কোথাও একটা দড়ি বেঁধে দড়ির অন্য মাথায় একটা ঝাঁকুনি দিলে দড়ির একটা ঢেউকে দড়ি বেয়ে যেতে দেখবে। একটা লম্বা স্প্রিং টান টান করে রেখে তার এক মাথা খানিকটা সংকুচিত করে ছেড়ে দিলে তুমি সেই সংকোচনকে স্প্রিংয়ের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখবে।
এর সবগুলোই এক ধরনের তরঙ্গ, এবং প্রতিটি উদাহরণের বেলায় আমরা দেখেছি কোনো এক ধরনের শক্তি প্রয়োগ করে একটি তরঙ্গ সৃষ্টি করা হয় এবং সেই তরঙ্গটি একটি মাধ্যমের ভেতর দিয়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে সেই শক্তিটুকু বহন করে নিয়ে যায়। তবে তরঙ্গের বেলায় যেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটি হচ্ছে, যদিও মাধ্যমটি তরঙ্গের মাধ্যমে শক্তিকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু
এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমটি কিন্তু তার স্থান পরিবর্তন করছে না। আমাদের উদাহরণের দড়ি, পানি কিংবা স্প্রিং কোনোটাই কিন্তু নিজের জায়গা ছেড়ে যাচ্ছে না অথচ তার ভেতর দিয়ে তরঙ্গের স্পন্দন আরেক মাথায় পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা সবাই শব্দের কথা জানি, শব্দ আমরা চোখে দেখতে পাই না কিন্তু সেটিও আসলে এক ধরনের তরঙ্গ এবং সেটিও বাতাসকে মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করে একস্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছায়, কিন্তু বাতাস তার স্থান পরিবর্তন করে না।
তরঙ্গ ও সরল স্পন্দন গতি
তোমরা যারা পুকুরে ঢিল ছুড়ে পানিতে ঢেউ সৃষ্টি করেছ তারা তরঙ্গের মাধ্যমে শক্তি স্থানান্তরের বিষয়টা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে । পুকুরের পাড় থেকে আমরা যখন ঢিল ছুড়ে দেই, তখন ঢিলটি যেহেতু একটি গতিতে ছুটে যায় কাজেই তার একটি গতিশক্তি থাকে ।
এই শক্তি নিয়ে ঢিলটি যখন পানির পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে, তখন এ স্থানের পানির কণাগুলোতে সেই শক্তি স্থানান্তরিত হয়ে সেখানে একটা স্পন্দনের সৃষ্টি হয়। সেই স্পন্দনটি তার পাশের পানির কণাগুলোতে একটি স্পন্দন তৈরি করে, যেটি আবার তার পাশের কণাগুলোতে স্পন্দন তৈরি করে। এভাবে স্পন্দনটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং আমরা দেখতে পাই, কেন্দ্র থেকে বৃত্তের মতো একটি ঢেউ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।
যদি পুকুরে কোনো কচুরিপানা ভেসে থাকে তাহলে দেখবে তার নিচে দিয়ে ঢেউটি যাওয়ার সময় কচুরিপানাটি নিজের জায়গাতেই উপরে নিচে করেছে কিন্তু ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে আসেনি ৷ অর্থাৎ, মাধ্যম নিজে সরেনি, শুধু নিজের স্থানে স্পন্দিত হয়ে তরঙ্গটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে , অর্থাৎ শক্তিটি পৌঁছে দিয়েছে।
তোমরা এবারে নিশ্চয়ই তরঙ্গের সঙ্গে সরল স্পন্দন গতির সম্পর্কটা বুঝতে পারবে। যখন কোনো মাধ্যমের ভেতর দিয়ে একটি তরঙ্গ এগিয়ে যায় তখন তুমি যদি সেই মাধ্যমের কোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর দিকে তাকিয়ে থাকো তাহলে তুমি সেই বিন্দুটির একটি সরল স্পন্দন গতি হতে দেখবে।
মাধ্যমের একটি বিন্দুর সরল স্পন্দন গতি হওয়ার সময়ে সেটি তার পাশের বিন্দুতে সরল স্পন্দন গতি সৃষ্টি করে এবং এভাবে একটি তরঙ্গ এগিয়ে যায়। সরল স্পন্দন গতি তরঙ্গ নয় কিন্তু তরঙ্গের প্রত্যেকটা বিন্দু আলাদা আলাদাভাবে একটি করে সরল স্পন্দন গতি।
যদিও আমরা তরঙ্গের প্রবাহের বেলায় একটি মাধ্যমের কথা বলেছি, কিন্তু কিছু তরঙ্গ আছে যার প্রবাহের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। আলো সেরকম একটি তরঙ্গ, এবং আমরা জানি সূর্য থেকে আলো মহাকাশের ভেতর দিয়ে কোনো মাধ্যম ছাড়াই পৃথিবীতে পৌঁছে যায়। এই অধ্যায়ে আলোচনা করার সময়ে আমরা যে সকল তরঙ্গের মাধ্যমের প্রয়োজন হয় শুধু সেই সকল তরঙ্গের মাঝে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।
তরঙ্গের প্রকারভেদ
তরঙ্গের ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ যে, এখানে মাধ্যম তার নিজের অবস্থানে থেকেই কম্পনের মাধ্যমে শক্তিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়। মাধ্যমের কণাগুলোর দুভাবে কম্পন হতে পারে। লম্বা একটা স্প্রিঙের একপ্রান্ত কোনো একটা জায়গায় শক্ত করে আটকে নিয়ে অন্য প্রান্তটি নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে সামনে পিছনে করলে তুমি দেখবে সংকোচন ও প্রসারণের একটি তরঙ্গ স্প্রিঙের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
এই সংকোচন ও প্রসারণ হচ্ছে স্প্রিঙের স্পন্দন। একটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে দেখো, এখানে তরঙ্গটি যেদিকে গেছে, স্প্রিঙের স্পন্দন বা কম্পনও সেই রেখা বরাবরই হয়েছে। এই ধরনের তরঙ্গকে ‘অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ’ (longitudinal wave) বলা হয়। স্প্রিঙের তরঙ্গের মতো শব্দও একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ, বাতাসে প্রসারণ ও সংকোচন করে শব্দ এগিয়ে যায়।
আবার মোটামুটিভাবে লম্বা একটা দড়ির একপ্রান্ত যদি কঠিন কোনো কিছুতে টানটান করে অন্যপ্রান্ত নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে উপরে নিচে কর তাহলে কী হবে? এবারেও তুমি একটা তরঙ্গকে দড়ির ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখবে। তবে এবারে দড়িটি ঢেউয়ের মতো উপরে উঠে এবং নিচে নেমে তরঙ্গটিকে এগিয়ে নেবে।
একটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে দেখো, এখানে তরঙ্গটি যেদিকে গেছে, দড়িটির স্পন্দন বা কম্পন হয়েছে তার সাথে লম্ব ভাবে। এই ধরনের তরঙ্গকে ‘অনুপ্রস্থ তরঙ্গ’ বা (transverse wave) বলা হয়। পানির ঢেউ একটি অনুপ্রস্থ তরঙ্গ। আমরা আলো দেখতে পেলেও আলোর তরঙ্গটি দেখতে পাই না, সেটিও একধরনের অনুপ্রস্থ তরঙ্গ। তোমাদের আশপাশের যে নানা ধরনের তরঙ্গ রয়েছে তুমি কি তাদের ভেতর থেকে অনুপ্রস্থ আর অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গগুলো আলাদা করতে পারবে?
শিক্ষার্থীরা, উপরে ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে, এই অধ্যায়টিকে সহজভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো। সেই সাথে উপরে তোমাদের জন্য সমস্যা সমাধান ক্লাস দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যায় সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ও এই অধ্যায়ভিত্তিক সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post