কোর্সটিকায়, ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৮ম অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে– রাসায়নিক বিক্রিয়া। এখানে এই অধ্যায়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এখানে, এই অধ্যায় আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে একটি ক্লাস। ক্লাসটিতে এই অধ্যায়টি সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাসটি করলে রাসায়নিক বিক্রিয়া অধ্যায়ে তোমাদের যেসকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমস্যা হয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড়লে অনুসন্ধানী পাঠ বইটি তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৮ম অধ্যায় সমাধান
আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে, লোহার জিনিসপত্রে মরিচা পড়লে, কোথাও কিছু আগুনে পুড়ে গেলে, কিংবা দেহে আমাদের খাদ্য পরিপাকের সময় আসলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে । এছাড়াও বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন নতুন পদার্থ তৈরি করে থাকেন।
এইসব নানা ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কখনো শক্তি উৎপন্ন হয়, কখনো আমাদের ব্যবহারের জিনিসপত্র তৈরি হয় আবার কখনো নতুন কোনো ঔষধ তৈরি করা হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া বোঝার জন্য আমাদের যে বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এই অধ্যায়ে সেই বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রতীক, সংকেত, যোজনী
আগের শ্রেণিতে তোমরা জেনেছ যে বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর সকল পদার্থকে তাদের গঠন অনুসারে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন, আর তা হচ্ছে মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ । বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত মোট 118টি মৌলিক পদার্থের (elements) সন্ধান পেয়েছেন। সাধারণত এইসব মৌলের পুরো নাম না লিখে ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের প্রথম একটি অথবা দুইটি অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে মৌলটিকে প্রকাশ করানো হয়। মৌলের পুরো নামের এ সংক্ষিপ্ত রূপকে প্রতীক বলা হয়। যেমন–হাইড্রোজেন (Hydrogen) এর প্রতীক হচ্ছে H, অক্সিজেন (Oxygen)-এর প্রতীক O, ইত্যাদি ।
আবার কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্ত রূপকে সংকেত দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কোনো অণুর সংকেত থেকে এতে বিদ্যমান পরমাণুগুলোর সংখ্যা বোঝা যায়। যেমন-হাইড্রোজেন অণুর সংকেত H2, অর্থাৎ হাইড্রোজেন অণুতে দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু রয়েছে, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণুর সংকেত HCl অর্থাৎ হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণুতে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি ক্লোরিন পরমাণু রয়েছে, ইত্যাদি।
কোনো যৌগের সংকেত লেখার জন্য সেই যৌগের মৌলগুলোর যোজনী সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে এবং যোজনীর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কীভাবে একটি মৌলের পরমাণু অন্য মৌলের পরমাণুর সাথে যুক্ত হবে।
আরও সহজভাবে বোঝার জন্য আমরা মৌলিক পদার্থের যোজনীকে একেকটি হাতের সাথে তুলনা করতে পারি। যে মৌলের যতগুলো হাত তার যোজনী হবে তত। যেমন- হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন উভয়ের যোজনী এক, তাই উভয়কে আমরা এক হাতবিশিষ্ট মৌল হিসেবে কল্পনা করতে পারি।
অর্থাৎ একটি হাইড্রোজেন পরমাণু তার একটি হাত দিয়ে ক্লোরিন পরমাণুর একটি হাতকে ধরে রাখবে। তাই হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন দিয়ে গঠিত হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংকেত হচ্ছে HCl. অক্সিজেনের যোজনী দুই, কাজেই আমরা কল্পনা করতে পারি অক্সিজেনের একটি পরমাণুর দুইটি হাত রয়েছে যার মাধ্যমে অক্সিজেন একযোজী বা এক হাতবিশিষ্ট দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হতে পারে ।
রাসায়নিক সমীকরণ
একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায়, যে পদার্থগুলো বিক্রিয়া করে সেগুলোর অণুগুলোর ভেতর যে বন্ধন থাকে সেগুলো ভেঙে নতুন পদার্থ গঠিত হয় এবং উৎপন্ন পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে নতুন বন্ধন তৈরি হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া বর্ণনা করার সময় আমরা রাসায়নিক সমীকরণ দিয়ে এই বিক্রিয়াকে প্রকাশ করি।
একটি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুইটি অংশে ভাগ করা যায়, এক অংশে বিক্রিয়ক এবং অন্য অংশে বিক্রিয়ার ফলে নবগঠিত পদার্থ থাকে । সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করার সময় বিক্রিয়কগুলো সমীকরণের বাম দিকে থাকে এবং একটি তীর চিহ্ন দিয়ে ডানদিকে বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন নতুন পদার্থগুলো দেখানো হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণু তৈরি বা ধ্বংস করা যায় না, শুধু তাদের পুনর্বিন্যাস ঘটে । অতএব, বিক্রিয়ার আগে বিক্রিয়কগুলোতে যে পরমাণুগুলো যতগুলো করে থাকে, বিক্রিয়ার পর উৎপন্ন পদার্থেও ঠিক সেই পরমাণুগুলো ততগুলো করে থাকে। কাজেই এই আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়ক এবং উৎপন্ন পদার্থকে প্রতীক, সংকেত ও কিছু গাণিতিক চিহ্ন ব্যবহার করে সংক্ষেপে প্রকাশ করাকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়া ও রাসায়নিক পরিবর্তন
রাসায়নিক পরিবর্তন বলতে বোঝানো হয় এক বা একাধিক পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন এক বা একাধিক পদার্থে পরিবর্তিত হওয়া । রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় বিক্রিয়কের অণু-পরমাণুগুলো নতুনভাবে বিন্যস্ত হয়, যে কারণে এই নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। রাসায়নিক পরিবর্তনে প্রায় সময়েই শক্তি বিনিময় হয়ে থাকে, কখনো তাপ সৃষ্টি হয় কখনো তাপ শোষিত হয়, যার ফলে বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থের তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়।
রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে যে নতুন পদার্থ তৈরি হয় প্রায় সময়েই সেগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম ভিন্ন এবং এই পরিবর্তন সাধারণত অপ্রত্যাবতী (irreversible) ৷ রাসায়নিক বিক্রিয়া নানাভাবে সংগঠিত হতে পারে। এখানে সংক্ষেপে সংযোজন, দহন, প্রতিস্থাপন এবং বিযোজন বিক্রিয়া আলোচনা করা হলো।
সংযোজন বিক্রিয়া (Addition reaction):
সংযোজন বিক্রিয়া হচ্ছে এমন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যেখানে দুই বা ততোধিক বিক্রিয়ক (reactant) একত্রিত হয়ে নতুন একটি বিক্রিয়াজাত পদার্থ (product) তৈরি করে। ল্যাবরেটরির নিরাপদ পরিবেশে একটি টেস্ট টিউবে লোহার গুঁড়া এবং সালফার পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে দুটি বিক্রিয়ক (আয়রন এবং সালফার) একত্রিত হয়ে বিক্রিয়াজাত পদার্থ ফেরাস সালফাইড তৈরি হয়। টেস্ট টিউব থেকে যে বস্তু পাওয়া যায় সেটি দেখতে গাঢ় ধূসর বর্ণের, এখানে
হালকা হলুদ রঙের সালফার বা লোহার (আয়রন) গুঁড়া কোনোটিই দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ, এখানে আয়রন ও সালফার একে অপরের সাথে মিলে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থ ফেরাস সালফাইড (FeS) তৈরি করেছে।
Fe + S → FeS
দহন বিক্রিয়া (combustion reaction) :
দহন বিক্রিয়া হলো এমন এক ধরনের বিক্রিয়া যেখানে কোনো পদার্থ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আলো এবং তাপ উৎপন্ন করে। দহন বিক্রিয়ায় অবশ্যই অক্সিজেন (O2) থাকতে হবে, যেখানে অক্সিজেন একটি বিক্রিয়ক হিসেবে কাজ করে। তোমরা তোমাদের চারপাশে সব সময়েই দহন প্রক্রিয়ার অনেক উদাহরণ দেখেছ, মোমবাতির জ্বলন, চুলার আগুন বা গাড়ির ইঞ্জিন চলা এগুলো সবই দহন বিক্রিয়ার উদাহরণ।
তোমরা যদি অন্ধকার ঘরে একটা মোমবাতি জ্বালাও তাহলে দেখবে তার আলোতে ঘর আলোকিত হয়ে উঠেছে, আলোর শিখার কাছে হাত নিলে তার তাপটাও অনুভব করবে। মোমটিকে ভালো করে লক্ষ করলে দেখবে মোমের কিছু অংশ গলে নিচে গড়িয়ে পড়ে ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বেঁধে গেলেও বেশিরভাগ উৎপন্ন তাপে বাষ্পীভূত হয়ে যাচ্ছে। এই বাষ্পীভূত মোম দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করছে যার ফলে তাপ ও আলোকশক্তি উৎপন্ন হচ্ছে।
মোমের পরিবর্তে যদি কখনো সালফার বা গন্ধককে উত্তপ্ত করা হয় তাহলেও তোমরা দেখতে পাবে যে, প্রথমে সালফার গলে যাবে; তারপর সেখানে নীল আগুনের শিখা দেখা যাবে। তাপ দেওয়ার ফলে একসময় সালফার (S) বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস তৈরি করতে শুরু করবে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর
শক্তির বিভিন্ন রূপ রয়েছে, যেমন– তাপ শক্তি, আলোক শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি, স্থিতি শক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, শব্দ শক্তি ইত্যাদি। তোমরা এর মাঝে জেনে গেছ যে শক্তিকে সৃষ্টি কিংবা ধ্বংস করা যায় না, এটিকে কেবল এক ধরনের শক্তি থেকে অন্য ধরনের শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। এখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো :
তাপশক্তি
আমরা আমাদের চারপাশে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি তাপ শক্তিতে রূপান্তর দেখে অভ্যস্ত। যে কোন দহন প্রক্রিয়া হচ্ছে এর উদাহরণ। মোমবাতি কিংবা চুলায় এভাবে তাপ উৎপন্ন করা হয়, এমনকি আমাদের শরীরেও এভাবে তাপ শক্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে। গাড়ির ইঞ্জিনেও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে তাপ শক্তির সৃষ্টি হয় সেই শক্তি দিয়ে গাড়িকে চলমান করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে রাসায়নিক বিক্রিয়াতে বিপরীত প্রক্রিয়াও ঘটে থাকে যেখানে তাপ শক্তি গ্রহণ করে বিক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। যেমন বেকিং সোডার মাঝে লেবুর রস দেওয়া হলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বুদবুদ আকারে বের হয়ে আসে, তখন এই বিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাপ নিয়ে নেওয়ার কারণে মিশ্রণের তাপমাত্রা কমে যায়।
আলোক শক্তি
মোমবাতির শিখায় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ শক্তি সৃষ্টি করে সেই তাপ শক্তি থেকে আলোক শক্তি সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে কোন তাপ শক্তি সৃষ্টি না করে সরাসরি আলোক শক্তি সৃষ্টি করা যায়। তার সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হচ্ছে জোনাকি পোকা, সেটি তার শরীরে লুসিফেরিন নামক রাসায়নিক পদার্থ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আলো সৃষ্টি করে।
বিদ্যুৎ শক্তি
আমরা ব্যাটারিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে বিদ্যুৎ শক্তি পেয়ে থাকি। সাধারণ শুষ্ক কোষে জিঙ্ক, এমোনিয়াম ক্লোরাইড এবং ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইডের বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি হয়ে থাকে। লিথিয়াম আয়ন জাতীয় রিচার্জ করার উপযোগী ব্যাটারিতে এর বিপরীত প্রক্রিয়াটি ঘটানো হয়, যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ করে বিপরীত রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ শক্তি সৃষ্টি করার উপযোগী করে রাখা হয়।
শিক্ষার্থীরা, উপরে ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৮ম অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে, এই অধ্যায়টিকে সহজভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো। সেই সাথে উপরে তোমাদের জন্য সমস্যা সমাধান ক্লাস দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যায় সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ও এই অধ্যায়ভিত্তিক সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post