কোর্সটিকায়, ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৯ম অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে– অম্ল ক্ষার ও লবণ। এখানে এই অধ্যায়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এখানে, এই অধ্যায় আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে একটি ক্লাস। ক্লাসটিতে এই অধ্যায়টি সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাসটি করলে অম্ল ক্ষার ও লবণ অধ্যায়ে তোমাদের যেসকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমস্যা হয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড়লে অনুসন্ধানী পাঠ বইটি তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৯ম অধ্যায় সমাধান
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে অম্ল বা অ্যাসিড, ক্ষার এবং লবণ রয়েছে। এসবের মধ্যে অনেক অ্যাসিড, ক্ষার এবং লবণ প্রাকৃতিকভাবেই (naturally) পাওয়া যায়। যেমন, লেবুর রস ও কমলাতে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, তেঁতুলে থাকে টারটারিক অ্যাসিড এবং দুধে থাকে ম্যালিক অ্যাসিড। একইভাবে চুনের পানি হচ্ছে ক্ষার । সমুদ্রের পানিতে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড যা পরিশোধিত করে আমরা খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহার করি। এইসব অল্প, ক্ষার ও লবণের রাসায়নিক ধর্ম ভিন্ন, কাজেই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।
অম্ল বা অ্যাসিড (Acid)
তোমরা নিশ্চয়ই কখনো না কখনো অ্যাসিডের নাম শুনেছ। অ্যাসিড হচ্ছে এমন এক ধরনের পদার্থ, যার জলীয় দ্রবণ টক স্বাদযুক্ত, এটি নীল লিটমাস পেপারকে লাল করতে পারে এবং ক্ষারকে প্রশমিত (neutralize) করতে পারে। লিটমাস পেপার হচ্ছে বিশেষ একধরনের কাগজ, যেখানে লাইকেন (lichen) নামক এক ধরনের গাছ থেকে প্রাপ্ত রং মেশানো হয়। কোনো দ্রবণ অ্যাসিডিক না ক্ষারীয় তা পরীক্ষা করতে লিটমাস পেপার ব্যবহার করা হয়। অম্লীয় বা অ্যাসিডিক দ্রবণ নীল লিটমাস পেপারকে লাল করে এবং ক্ষারীয় দ্রবণ লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে।
লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে । তোমার কাছে যদি একটি লাল ও একটি নীল রঙের লিটমাস পেপার থাকে তাহলে তুমি দেখবে যদি লেবুর রসে লাল লিটমাস পেপার ডুবানো হয় তাহলে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না, যার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে, যখন নীল লিটমাস পেপার লেবুর রসে ডুবানো হয়, তখন লিটমাসের সাথে লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ার ফলে কাগজের রঙের পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে যায়।
পাশের টেবিলে কয়েকটি অ্যাসিডের নামসহ সংকেত উল্লেখ করা হয়েছে। টেবিলে উল্লেখিত সবকটি অ্যাসিডের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে, সেটি হচ্ছে এই অ্যাসিডের সবগুলোর মধ্যেই এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু (H) আছে এবং এরা প্রত্যেকেই পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন তৈরি করে। কাজেই ২ আমরা বলতে পারি, অ্যাসিড হলো ঐ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যাদের মধ্যে এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং যারা পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে
ক্ষার (Base)
ক্ষার হচ্ছে এমন এক ধরনের পদার্থ যার জলীয় দ্রবণ তিক্ত স্বাদযুক্ত হয়, লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে এবং যা অ্যাসিডকে প্রশমিত (neutralize) করতে পারে।
চুনের পানি হচ্ছে এক ধরনের ক্ষার, এখানে রয়েছে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড। তোমার কাছে যদি একটি লাল ও একটি নীল রঙের লিটমাস পেপার থাকে তাহলে তুমি আবার একটি পরীক্ষা করে দেখতে পারবে ৷ তুমি যদি চুনের পানিতে নীল লিটমাস পেপার ডুবাও তুমি দেখবে তাহলে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না, যার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন হয় না।
অন্যদিকে, যদি লাল লিটমাস পেপার চুনের পানিতে ডুবানো হয়, তখন লিটমাসের সাথে চুনের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের বিক্রিয়ার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের পরিবর্তন হয়ে নীল হয়ে যায়।
এখানে চুনের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর মতো যে সকল রাসায়নিক পদার্থ লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে তাদেরকে আমরা কখনো কখনো ক্ষারক বলে থাকি কিছু ক্ষারক আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষারক আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয় না। যে সকল ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয়, তাদেরকে ক্ষার বলে।
সুতরাং, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড হচ্ছে ক্ষার জাতীয় ক্ষারক। অন্যদিকে, অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড হচ্ছে ক্ষারক কিন্তু যেহেতু পানিতে দ্রবীভূত হয় না তাই এটি ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়। অতএব, বলা যায় যে, “সকল ক্ষার ক্ষারক হলেও সকল ক্ষারক ক্ষার নয়”।
লবণ (salt)
দৈনন্দিন কথাবার্তায় লবণ বলতে আমরা সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) বা যে লবণ আমাদের খাওয়ার সময় ব্যবহার করে থাকি সেটা বুঝিয়ে থাকি, কিন্তু লবণ শব্দটি বিজ্ঞানে আর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। লবণ হচ্ছে একটি আয়নিক যৌগ যেখানে একটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন (ক্যাটায়ন) ও ঋণাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন (অ্যানায়ন) সংযুক্ত থাকে।
বিভিন্ন অ্যাসিড এবং ক্ষারের মধ্যে প্রশমন বা নিরপেক্ষকরণ (neutralization) বিক্রিয়ার ফলে নানা ধরনের লবণ এবং একই সাথে পানিও উৎপন্ন হয়। লবণ একটি নিরপেক্ষ পদার্থ যার জলীয় দ্রবণ লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন করে না।
সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) সবচেয়ে পরিচিত লবণের একটি উদাহরণ, এই লবণ খাদ্যে ব্যবহার ছাড়াও প্রতিদিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগে। তোমরা হয়তো জানো যে সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) রয়েছে এবং এই কারণে সমুদ্রের পানি নোনতা বা লবণাক্ত স্বাদযুক্ত হয়।
অ্যাসিডের ব্যবহার
1. ভিনেগার বা এসিটিক অ্যাসিড খাবার সংরক্ষণ করতে ব্যবহার করা হয়। এসিটিক অ্যাসিড কালি এবং রঙের জন্য দ্রাবক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
2. ফলমূল এবং সবজিতে যে সকল আযাসিড পাওয়া যায় তাদেরকে জৈব অ্যাসিড বলে। যেমন লেবু, কমলা এবং অন্যান্য সাইট্রাস (citrus) জাতীয় ফল এবং সবজিতে সাইট্রিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। খাদ্য শিল্পে কিছু কিছু নির্দিষ্ট খাবারের স্বাদ বাড়াতে এবং ক্ষতিকারক জীবাণুকে ধ্বংস করার জন্য সাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়।
জৈব অ্যাসিডের মধ্যে কোনো কোনোটি মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যেমন, এসকরবিক অ্যাসিডকে (ascorbic acid) আমরা ভিটামিন সি বলে থাকি, এর অভাবে মানবদেহে স্কার্ভি রোগ হয়ে থাকে।
3. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং শিল্প কারখানায় বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিডের ব্যবহার রয়েছে। টয়লেট পরিষ্কারের জন্য যে সমস্ত পরিষ্কারক ব্যবহার করা হয় তাতে অ্যাসিড থাকে। সোনার গহনা তৈরি করার সময় স্বর্ণকারগণ নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করে থাকেন।
এছাড়া, আ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সার উৎপাদনের জন্য নাইট্রিক অ্যাসিড প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খনি থেকে সোনার মতো মূল্যবান ধাতু আহরণে ও রকেটের জ্বালানির সাথে ব্যবহার করা হয়।
4. আমরা যে খাবার খাই তা হজম করার জন্য পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) রয়েছে। এছাড়া ইস্পাত তৈরির কারখানা, ঔষধ, চামড়া শিল্পেও HCl ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কোমল পানীয়তে অন্যতম উপাদান হিসেবে কার্বনিক অ্যাসিড ও অল্প পরিমাণ ফসফরিক অ্যাসিড থাকে।
যেসব অ্যাসিড প্রকৃতিতে প্রাপ্ত নানা রকম খনিজ পদার্থ থেকে তৈরি করা হয় তাদেরকে খনিজ অ্যাসিড (mineral acids) বলে। হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, ইত্যাদি হলো খনিজ অ্যাসিডের উদাহরণ। এই অ্যাসিডগুলো খাওয়ার উপযোগী নয় এবং এরা মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব অ্যাসিড আমাদের ত্বকে লাগলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়।
শিক্ষার্থীরা, উপরে ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী বই ৯ম অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে, এই অধ্যায়টিকে সহজভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো। সেই সাথে উপরে তোমাদের জন্য সমস্যা সমাধান ক্লাস দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যায় সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ও এই অধ্যায়ভিত্তিক সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post