কোর্সটিকায়, ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী ১ম অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে– গতির কথা। এখানে এই অধ্যায়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এখানে, এই অধ্যায় আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে একটি ক্লাস। ক্লাসটিতে এই অধ্যায়টি সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাসটি করলে গতির কথা অধ্যায়ে তোমাদের যেসকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমস্যা হয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড়লে অনুসন্ধানী পাঠ বইটি তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী ১ম অধ্যায় সমাধান
কোনো বস্তুর গতি বলতে আমরা সময়ের সাথে বস্তুটির অবস্থানের পরিবর্তন বুঝিয়ে থাকি। নানাভাবে অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে- দ্রুত কিংবা ধীর, সরল অথবা বক্র, সম বা অসম ইত্যাদি। গতি যেরকমই হয়ে থাকুক, সেটি ব্যাখ্যা করতে হলে সময়ের সঙ্গে আমাদের বস্তুটির অবস্থান (position) সুনির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করতে হয়। সেটি করার জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি স্থির বিন্দুর, যার সাপেক্ষে আমরা অবস্থান পরিমাপ করব।
তোমরা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছ প্রকৃত স্থিরবিন্দু পাওয়া সহজ নয়, পৃথিবীতে একটি বিন্দুকে আমরা স্থির ধরে নিতে পারি কিন্তু পৃথিবীটা শুধু যে নিজের অক্ষে ঘুরছে তা নয়, সেটি সূর্যকে ঘিরেও ঘুরছে। আমাদের পুরো সৌরজগৎ আবার আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্র ঘিরে ঘুরছে এবং পুরো গ্যালাক্সিটিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণের কারণে ছুটে চলছে।
দূরত্ব ও সরণ (Distance and Displacement) :
আমাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য আমরা আমাদের আশপাশের কোনো একটি বিন্দুকে স্থির ধরে নিয়ে তার সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থান পরিমাপ করতে পারি। এই বিন্দুটিকে বলা হয় প্রসঙ্গ বিন্দু, এবং এই প্রসঙ্গ বিন্দুটি যে কাঠামোর অংশ তাকে বলা হয় প্রসঙ্গ কাঠামো শুধু তাই নয় প্রয়োজনে আমরা চলমান একটি কাঠামোকেও প্রসঙ্গ কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করতে পারি তোমরা নবম শ্রেণিতে আপেক্ষিক সূত্র পড়ার সময় সেটি দেখতে পাবে।
প্রসঙ্গ বিন্দু নির্দিষ্ট করা হলে আমরা তার সাপেক্ষে একটি বস্তুর অবস্থান পরিমাপ করতে পারব। ধরা যাক একটা মাঠে একটা খুঁটির সঙ্গে একটা ছাগল বেঁধে রাখা আছে, এখানে খুঁটিটি হচ্ছে প্রসঙ্গ বিন্দু। যদি বলা হয় ছাগলটি খুঁটি থেকে দুই মিটার দূরে বসে আছে তাহলে কিন্তু ছাগলটি ঠিক কোথায় আছে তুমি বলতে পারবে না।
কারণ ছাগলটি খুঁটি থেকে দুই মিটার দূরে যে কোনো দিকে থাকতে পারে! যদি বলা হয় ছাগলটি খুঁটি থেকে দক্ষিণ দিকে দুই মিটার দূরে বসে আছে তাহলে প্রসঙ্গ বিন্দুর সাপেক্ষে ছাগলটি কোথায় আছে তুমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবে । অর্থাৎ একটি বস্তুর অবস্থান জানতে হলে বস্তুটি প্রসঙ্গ বিন্দুর সাপেক্ষে একই সঙ্গে কোন ‘দিকে’ এবং কত “দূরে’ আছে দুটিই জানতে হবে।
একটি বস্তুর গতি সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে বস্তুর অবস্থান ছাড়াও দূরত্ব (Distance) ও সরণ (Displacementt) এই দুটি রাশি বলতে কী বোঝানো হয় সেটি বুঝতে হবে। চলমান বস্তুর বেলায় একটি বস্তু যেটুকু জায়গা অতিক্রম করে তার দৈর্ঘ্যের পরিমাণ হচ্ছে দূরত্ব । সেটি সরল রেখায় হতে পারে আবার আঁকাবাঁকাও হতে পারে। দূরত্বের একটা পরিমাণ আছে কিন্তু কোনো দিক নেই।
অন্যদিকে বিজ্ঞানের ভাষায় সরণ হচ্ছে একটি বস্তু আগের অবস্থান থেকে নতুন অবস্থানে মোট কতটুকু সরে গেছে তার পরিমাপ। তুমি যদি উত্তর দিকে 10 কিলোমিটার গিয়ে আবার দক্ষিণ দিকে 5 কিলোমিটার ফিরে আস তাহলে সব মিলিয়ে তুমি 15 কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছ কিন্তু তোমার সরণ হয়েছে উত্তর দিকে মাত্র 5 কিলোমিটার । সরণের বেলায় সব সময় দিক নির্দিষ্ট করে দিতে হয়। নিচের ছবিতে কয়েকটা দূরত্ব এবং সেই একই দূরত্বে জন্য সরণের পরিমাপের উদাহরণ দেওয়া হলো।
দ্রুতি ও বেগ (Speed and Velocity)
তোমার আশপাশে তাকালেই দেখবে পথে-ঘাটে গাড়ি, বাস, সাইকেল কিংবা পথচারী চলছে। সবাই কিন্তু একইভাবে চলছে না, কেউ অনেক দ্রুত, কেউ একটু ধীরে, যেটি বোঝানোর জন্য আমরা বলে থাকি কারও বেগ বেশি কিংবা কারও বেগ কম। কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় বেগ কথাটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে এবং বেগ ছাড়া দ্রুতি নামেও একটি রাশি রয়েছে।
প্রথমে দ্রুতি বলতে কী বোঝানো হয় সেটি বলা যাক। আমরা এইমাত্র দূরত্ব এবং সরণ এই দুটি রাশির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, একক সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব হচ্ছে দ্রুতি। অর্থাৎ কোনো বস্তু যদি t সময়ে d দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে তার দ্রুতি হচ্ছে : v=d/t
যেহেতু দূরত্বের কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই তাই দ্রুতিরও কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই, শুধু পরিমাণ আছে।
» একটি বস্তু কতটুকু জায়গা অতিক্রম করল, তাকে বলে ‘দূরত্ব’ । দূরত্ব মাপতে আমরা ব্যবহার করি ইঞ্চি, ফুট, সেন্টিমিটার, মিটার ইত্যাদি
» একটি বস্তু কোন দিকে কতদূর গেল, তাকে বলে ‘সরণ’। সরণ বোঝাতে আমরা ব্যবহার করি, উত্তর দিকে দুই কিলোমিটার, ডানদিকে পাঁচ ফুট, ওপরদিকে তিন সেন্টিমিটার, সামনের দিকে সাত মিটার ইত্যাদি
তবে এখানে মনে রাখতে হবে এই দ্রুতিটি হচ্ছে পুরো সময়ের একটি গড় দ্রুতি, আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক দ্রুতি জানি না। বিশেষ অবস্থায় বস্তুটি যদি সম-দ্রুতিতে যায় শুধু তাহলে তার গড় দ্রুতির পরিমাণ আর তাৎক্ষণিক দ্রুতির মান সমান হবে।
আমরা যদি দ্রুতির ব্যাপারটা ঠিকভাবে বুঝে থাকি তাহলে এবারে খুব সহজেই বেগ বলতে কী বোঝায় সেটি বুঝে যাব। একটা চলন্ত বস্তুর দ্রুতির সাথে সঙ্গে সঙ্গে যদি তার দিকটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় তাহলে সেটাকে বলে বেগ। অর্থাৎ “একটি নির্দিষ্ট দিকে’ একক সময়ে একটা বস্তু যেটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে সেটা হচ্ছে তার বেগ।
কাজেই কোনো কিছুর বেগ বের করতে হলে তার পরিমাণের সঙ্গে সঙ্গে দিকটাও বের করে নিতে হয়। যদি আমরা শুধু সরল রেখায় গতি নিয়ে মাথা ঘামাই তাহলে বেগ আর দ্রুতির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, তখন বেগের পরিমাণটাকে আমরা বলব দ্রুতি।
মনে রেখ দ্রুতির বেলায় যেরকম বলেছিলাম, আমরা যদি অতিক্রান্ত দূরত্বকে সময় দিয়ে ভাগ করে যে দ্রুতি বের করি সেটা হচ্ছে ঐ সময়ের গড় দ্রুতি, বেগের বেলাতেও সেটা সত্যি । আমরা যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট দিকে ধাবমান একটি বস্তুর সরণকে সময় দিয়ে বেগ বের করি তাহলে আমরা কিন্তু বস্তুটির তাৎক্ষণিক বেগ বের করি না, আমরা তার ওই সময়ের গড় বেগ বের করি। শুধু বস্তুটি যদি সমবেগে যায় তাহলে তার তাৎক্ষণিক বেগ আর গড় বেগের মান সমান হবে।
মনে রেখো কোন বস্তু যখন গতিশীল অবস্থায় দিক পরিবর্তন করে তখন তার গড় নেওয়া হলে সেটির পরিমাণ আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে পারে। ধরা যাক একটি বস্তু চলমান থেকে যেখান থেকে শুরু করেছিল ঠিক সেখানে ফিরে এসেছে, তাহলে বস্তুটির মোট সরণের মান শূন্য। কাজেই মোট সরণকে মোট সময় দিয়ে ভাগ করে গড় বেগ বের করা হলে তার পরিমাণ হবে শূন্য, যদিও চলমান অবস্থায় বস্তুটির বেগ কখনোই শূন্য ছিল না!
ত্বরণ ও মন্দন (Acceleration and Deceleration)
তোমাদের চারপাশে অনেক ধরনের গতি দেখেছ, কোনটা সোজা যাচ্ছে, কোনটা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, কোনটা বৃত্তাকারে ঘুরছে আবার কোনটা সামনে পিছনে কিংবা উপরে নিচে দুলছে। আপাতত এদের ভেতরে সবচেয়ে সহজ যে গতি- যেখানে কিছু একটা সরল রেখায় যাচ্ছে–আমরা তার মাঝে আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।
তোমরা এর মাঝে জেনে গেছ এই সরল রেখার গতিতে দ্রুতি আর বেগের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, এবং যেহেতু সরল রেখায় যাচ্ছে তাই দিকটিও একেবারে সুনির্দিষ্ট, সেজন্য আমরা যখন বেগের কথা বলব তখন আলাদাভাবে আর আমাদের বেগের দিকটি উল্লেখ করারও কোনো প্রয়োজন নেই।
গতিশীল বস্তুর বেগ বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়া একটি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। তোমরা নিশ্চিতভাবেই সাইকেল, গাড়ি, বাস কিংবা ট্রেনে উঠেছ যেখানে স্থির অবস্থা থেকে বেগ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে, কিংবা উল্টোটা ঘটেছে, অর্থাৎ বেগ ধীরে ধীরে কমে এসেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেগ বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে ত্বরণ এবং কমে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে মন্দন।
অবস্থানের পরিবর্তন মাপতে আমরা ‘সরণ’ ব্যবহার করেছি। আবার সেই সরণ দ্রুত না ধীরে ঘটছে, সেটি মাপতে গিয়ে আমরা ‘বেগ’ পেয়েছি। ঠিক একইভাবে বেগের পরিবর্তন কি দ্রুত হচ্ছে না ধীরে হচ্ছে, এটি পরিমাপ করতে গিয়ে আমরা ত্বরণ এবং মন্দন পেয়েছি। অর্থাৎ একক সময়ে বেগের পরিবর্তন হচ্ছে ত্বরণ। যদি প্রথমে কোনো একটা বস্তুর বেগ থাকে u এবং t সময় পরে তার বেগ হয় v তাহলে বেগের পরিবর্তন হচ্ছে v-u এবং তার ত্বরণ a হবে,
a = (v – u)/t
বেগ সম্পর্কে বলতে হলে যেরকম তার পরিমাণ এবং দিক দুটিই নির্দিষ্ট করে দিতে হয় ঠিক সেরকম ত্বরণের বেলাতেও তার পরিমাণ এবং দিক দুটিই নির্দিষ্ট করে দিতে হয়।
শিক্ষার্থীরা, উপরে ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী ১ম অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে, এই অধ্যায়টিকে সহজভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো। সেই সাথে উপরে তোমাদের জন্য সমস্যা সমাধান ক্লাস দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যায় সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ও এই অধ্যায়ভিত্তিক সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post