৮ম শ্রেণির শারীরিক শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর : মানবদেহকে ঘিরে প্রতিনিয়ত যেসব সমস্যার উদ্ভব হয়, সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সেসব সমস্যার সমাধান করতে হয়। এজন্য দৈহিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিষয়ক জ্ঞানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে স্পট ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ, মানবশরীর যেসব প্রতিক্ল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য যথাসময়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
মানুষের জীবন ধ্বংসের জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। সচেতন মানবসমাজ তার মোকাবিলা করে সেসব রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। ঘাতক ব্যাধি এইডস বর্তমানে সারা বিশ্বে আশত্কাজনকভাবে বিস্তার লাভ করে চলেছে।
এইডস রোগের কোনো প্রতিষেধক বা সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে এমন ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। অকালমৃত্যুই এইডস রোগীর শেষ পরিণতি। তাই এইচআইভি ও এইডস কী, কীভাবে এ রোগ সংক্রমিত হয়, এ রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কী প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও সকলকে সচেতন করা প্রয়োজন।
৮ম শ্রেণির শারীরিক শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর
১. এইডস সর্বপ্রথম কত সালে শনাক্ত হয়?
ক. ১৯৮০
খ. ১৯৮১
গ. ১৯৮২
ঘ. ১৯৮৩
২. এইচআইভি কী?
ক. রোগ
খ. ভাইরাস
গ. ব্যাকটেরিয়া
ঘ. আয়োডিন
৩. সর্বপ্রথম এইডস শনাক্ত হয় কোন দেশে?
ক. আমেরিকা
খ. ভিয়েতনাম
গ. ভারত
ঘ. কম্বোডিয়া
৪. এইডস প্রতিরোধে সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূণূ কোনটি?
ক. চিকিৎসকদের এইডস সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান
খ. এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া
গ. এইডস সম্পর্কে সকলকে সচেতনতা করা
ঘ. এইডস আক্রান্ত লোকদের চিহ্নিত করা
৫. এইডস আক্রান্ত মায়েদের শিশুর এইডস হতে পারে ও
i. মায়ের দুধ পান করলে
ii. মায়ের শ্বাস- প্রশ্বাসের মাধ্যমে
iii. মায়ের রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
৬. এইডস এর ক্ষেত্রে
i. এর নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই
ii. এটি একটি নিরব ঘাতক
iii. সঠিক নিয়মে ঔষধ খেলে এটি ভালো হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৭ ও ৮ নং প্রশ্ন উত্তর দাও:
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আকাশের জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে তৎক্ষণাৎ অপরিচিত একজনের রক্ত আকাশকে দেওয়া হয়। সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পর আকাশ এক রোগে আক্রান্ত হয়। এতে তার একটানা জ্বর, কাশি এবং লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
৭. আকাশ নিচের কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছে?
ক. ক্যান্সার
খ নিউমোনিয়া
গ. এইডস
ঘ. জন্ডিস
৮. আকাশের রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণ-
i. সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া
ii. পরীক্ষা ছাড়া রক্ত গ্রহণ
iii. রোগটি সম্পর্কে অসচেতনতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৯ ও ১০ নং প্রশ্ন উত্তর দাও:
করিম একটি ফার্মে চাকরি করেন। দুই মাস ধরে তার জ্বর এবং কাশি থাকায় তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী জামান তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার করিমের রক্ত পরীক্ষা করে জামানকে জানায় করিম এইডস রোগে আক্রান্ত। ভয়ে জামান করিমকে ডাক্তারখানায় রেখে করিমের বাড়ি খবর দেয়। খবর শুনে করিমের বাড়ির সবাই করিমের সঙ্গে মেন যেন আচরণ করতে থাকে। এতে করিম মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে।
৯. জামানের এরূপ আচরন পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন কোনটি?
ক. রোগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা
খ. আবেগ প্রশমনের ব্যবস্থা করা
গ. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা
ঘ. এইডস ঝুঁকি এড়িয়ে চলা
১০. করিমের এই মানসিক অবস্থার জন্য দায়ী-
i. পরিবারের অসহযোগিতা
ii. ভাগ্যের নির্মম পরিহাস
iii. ওরাগটি ছাড়ানোর ভয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. তরল পদার্থের আদান- প্রদানের মাধ্যমেই এইডস ছড়ায়- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বর্তমান বিশ্বে যে কয়েকটি ধাতক ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তার মধ্যে এইডস অন্যতম। এটি এইচআইভি ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক রোগ। এইচআইভি ভাইরাসমানবদেহের কয়েকটি তরল পদার্থ যেমন, রক্ত, বীর্য, মায়ের বুকের দুধে থাকে। ফলে মানবদেহের এ তরল পদার্থগুলোর আদান- প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারবে।
যেমন, এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত কোনো ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালোন করলে, আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সুচ বা সিরিঞ্জ অন্যকোনো ব্যক্তি ব্যবহার করলে, আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ সন্তান পান করলে, অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলনের ফলে এইচআইভি ভাইরাস স্থানান্তরিত হয়, অর্থাৎ এইডস ছড়ায়।
২. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি কীভাবে এইডস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যাখ্যা কর?
উত্তর: বর্তমান বিশ্বে যে কয়েকটি ধাতক ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তার মধ্যে এইডস অন্যতম। এইডস রোগের ভাইরাস অপরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ করা, অনৈতিক, অনিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রিক শারীরিক সম্পর্ক করা এবং শিশুকে এইডসে আক্রান্ত মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে বিস্তার করে থাকে। অজ্ঞতা ও অসচেতনতাই এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। তাছাড়া অনেতিক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন কোনো সমাজ অনুমোদন করে ন। সামাজিকভাবে এগুলো অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ।
তাই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যায়। এ উদ্দেশ্যে র্যালির আয়োজন, পত্রিকায় প্রচার, ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ব্যবহার, নাটক ও সংগীত প্রভৃতি কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। বন্যার ফেস্টুন, পোস্টার একই রঙের পোষাক প্রভৃতিতে সজ্জিত হয়ে স্লোগান সহকারে র্যালিতে অংশ নিলে তা সহজেই দর্শকের নজর কাড়ে এবং এইডস বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এভাবে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে এইডস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা সম্ভব।
৩. কিশোর- কিশোরীদের সচেতনতাই এইডস প্রতিরোধ করতে পারে- মতামত দাও।
উত্তর: এইচআইভি আক্রান্তের অর্ধেকই কিশোর- কিশোরী। যেহেতু প্রতিকারবিহীন এইডসের পরিণতি ভয়াবহ। তাই আমি মনে করি কিশোর- কিশোরীদের সচেতনতাই পারে তা প্রতিরোধ করতে। তাদের যেসব সচেতনতা প্রতিরোধ করতে পারে সেগুলো হল- ১. ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিহার: কিশোর- কিশোরীদের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণগুলো পরিহার করতে হবে। ২. আবেগ প্রশমন: প্রধানত কৌতূহল ও আবেগের বশবর্তী হয়ে কিশোর- কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে।
তাই বড়দের সাথে বিশেষ করে মা-বাবার সাথে খোলামেলা কথা বলে সহজে আবেগ প্রশমিত ও কৌতূহহল দূর করতে হবে। ৩. ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান: ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য ‘না’ বলার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার যুক্তি দেখাতে হবেএবং প্রস্তাবের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে হবে। ৪. ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চলা: কিশোর-কিশোরীরা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে মাদকাশক্ত হতে দূর থাকতে পারে এবং অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে পারে।
৪. এইডস আক্রান্ত রোগীর সমস্যা মানে পরিবারেরই সমস্যা- মতামত দাও।
উত্তর: এইডস আক্রান্ত রোগীর সমস্যা মানে পরিবারেরই সমস্যা এ ধারণাটি সঠিক। কারণ- এইডস একটি মরণঘাতী রোগ। এইচ আক্রান্ত ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় তাকে স্থানীয় লোকজন, পাড়া- প্রতিবেশী এড়িয়ে চলে। সে ও তার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি কমৃরত থাকলে কাত বা চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তার চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে পরিবারে আর্থিক অনটন দেখা দেয়। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলে তার সন্তানরা এতিম হয়ে অবহেলা-অনাদরে বড় হতে থাকে, এমনকি অর্থভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সমস্যা মানে পরিবারেরই সমস্যা।
৫. এইডসের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধই উত্তম- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এইডস হলো এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমনের সর্বশেষ পর্যায়। এটি এমন একটি রোগ যার প্রতিষেধক বা সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে এমন ঔষধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এ রোগের শেষ প্ররিণত মৃত্যু। তাই এইডস এর প্রভাব মোকাবেলায় প্রয়োজন উত্তম প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
যেমন: অপরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ না করা, অন্যের ব্রবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার না করা, অন্যের ব্লেড বা রেজার ব্যবহার না করা, অনৈতিক, অনিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রত শারীরিক সম্পর্ক না করা ইত্যাদি। উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলো পালনের মাধ্যমে এইডস থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। তাই বলা যায়, এইডসের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধই উত্তম।
উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে শারীরিক শিক্ষা প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post