৮ম শ্রেণি বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন : ভাস্কো-ডা-গামা, আল বুকার্ক প্রমুখের হাত ধরে বাংলায় পর্তুগিজ ও ইংরেজদের পাশাপাশি ফরাসি, ওলন্দাজ ও দিনেমাররা স্থায়ী কুঠি স্থাপন করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে থাকে। তবে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে ইংরেজরা অন্যান্য বহিঃশক্তির ওপর প্রাধান্য লাভ করে। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে বাংলায় তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে নবাবের দরবারে প্রভাব বিস্তারের মতো ক্ষমতা ভোগ করতে শুরু করে।
এ পর্যায়ে তারা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন তাকে পরাজিত করে বাংলার প্রকৃত শাসন ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। তাদের শাসন-শোষণে বাংলার জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাদের এই শোষণের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে ভারতের বিভিন্ন ব্যারাকে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহ দমাতে ১৮৫৮ সালের ২রা আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত-শাসন আইন পাস হয়।
ফলে ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতা ব্রিটিশ রাজের হাতে চলে যায়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সমগ্র ভারতবর্ষে সংঘটিত হলেও সর্বভারতীয় রাজনীতির নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত বাঙালিদের হাতে থাকেনি। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ কর্তৃক দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রচারের পর জনগণ হিন্দু-মুসলমান পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তবে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল হিসেবে ব্রিটিশদের অধীনতা থেকে মুক্তি লাভ করলেও ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্টের পর থেকে পূর্ব বাংলার জনগণকে নতুন করে আন্দোলন সংগ্রামে নামতে হয়।
৮ম শ্রেণি বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : জমিদার হাশেম আলীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সন্তানদ্বয়ের ওপর দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। তিনি তার নিজপুত্র খালেদের ওপর রাজস্ব আদায় ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব এবং সৎপুত্র সামাদের ওপর শাসন ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব ন্যস্ত করেন।
ক. বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসনের অবসান ঘটে কত সালে?
খ. উপনিবেশিক শাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? আলোচনা করো।
ঘ. “উক্ত ঐতিহাসিক ঘটনার ফল ছিল সুদূরপ্রসারী” – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
ক – উত্তর : বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসনের অবসান ঘটে ১৫৩৮ সালে।
►► অধ্যায় ১ : ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম
►► অধ্যায় ২ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
►► অধ্যায় ৩ : বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন
►► অধ্যায় ৪ : ঔপনিবেশিক যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য
►► অধ্যায় ৫ : সামাজিকীকরণ ও উন্নয়ন
খ – উত্তর : একটি দেশ যখন নিজ আধিপত্যবলে অন্য কোনো দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে তখন সেই শাসনকে উপনিবেশিক শাসন বলে। উপনিবেশিক শাসনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দখলদার শক্তি চিরস্থায়ীভাবে উপনিবেশ রাষ্ট্রে শাসন প্রতিষ্ঠা করতে আসে না, তারা যতদিন শাসক হিসেবে থাকে ততদিন সেই দেশের ধন-সম্পদ নিজ দেশে পাচার করে। তারপর যখন তাদের স্থার্থসিদ্ধি হয়ে যায় এবং জনগণও তাদের শাসনে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তখন তারা নিজ দেশে ফিরে যায়।
গ – উত্তর : উদ্দীপকের ঘটনাটি আমার পঠিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ এক অদ্রুত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ইতিহাসে লর্ড ক্লাইভের এ শাসনকেই দ্বৈত শাসন নামে অভিহিত করা হয়। দ্বৈত শাসনের অর্থ হলো দু’জনের শাসন। এ ব্যবস্থায় নিযামতি বা আইনশৃঙ্খলা ছিল বাংলার নবাবের হাতে। অন্যদিকে বাংলার রাজস্ব আদায়, দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার, জায়গা-জমি, বিবাদ মীমাংসা সম্পর্কিত বিচার কোম্পানির ওপর ন্যস্ত হয়।
বাংলার শাসনের দায়িতু দুটি পৃথক সংস্থার হাতে চলে যাওয়াই হচ্ছে দ্বৈত শাসন। তবে একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, দ্বৈত শাসনব্যবস্থা ছিল একটি “সাংবিধানিক মুখোশ”, প্রকৃতপক্ষে পূর্ণ ক্ষমতাই চলে যায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে।
ঘ – উত্তর : বাংলার ইতিহাসে দ্বৈত শাসনের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ক্লাইভের দ্বৈত শাসনে নবাবের হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। অর্থের জন্য নবাবকে কোম্পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো । অন্যদিকে, কোম্পানির হাতে প্রচুর টাকা ছিল, কিন্তু কোম্পানির স্বার্থপর কর্মচারীরা প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন থেকে যথারীতি বিরত থাকায় জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এই ব্যবস্থার ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজ বণিকদের একচেটিয়া প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈদেশিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য নবাবকে কোম্পানির সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়।
এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্লাইভ প্রবর্তিত এই ব্যবস্থা এতটাই চরম আকার ধারণ করে যে ১৭৭০ সালে বাংলায় মহাদুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ইতিহাসে যা ‘ছিয়ান্তরের মনন্তর’ নামে পরিচিত। এতে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয় এবং লক্ষ লক্ষ লোক মহামারিতে মৃত্যুবরণ করে। কোম্পানির কর্মচারীদের দুনীতির কারণে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দ্বৈতশাসন ছিল.একটি অদ্ভুত ও নির্মম শাসনব্যবস্থা এবং বাংলার মানুষের জন্য এটি ছিল অভিশাপস্বরূপ ৷
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাফিস টেলিভিশনে ইউরোপীয়দের আগমনের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখেছিল। ১৬৪৮ সালে ইউরোপের যুদ্ধরত বিভিন্ন দেশের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি হয়। এটি সম্পাদিত হওয়ার পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতি নতুন উদ্যোগে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। এদের অধিকাংশের লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষ এভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে ইউরোপের বণিকরা দেখল বাংলায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেই সবচেয়ে বেশি ফায়দা উসুল করা সম্ভব।
ক. নবাব সিরাজউদ্দৌলা কত বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন?
খ. ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্যের জন্য ভারতবর্ষ লক্ষ্য ছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চুক্তিটি কেন হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত পরিস্থিতির ফলে বাংলায় উপনিবেশিক শক্তির বিজয় ঘটে।’__ মতামত দাও ।
ক – উত্তর : নবাব সিরাজউদ্দৌলা ২২ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন।
খ – উত্তর : ভারতবর্ষ সম্পদ ও এশ্বর্ষে সমৃদ্ধশালী হওয়ায় ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্যের জন্য লক্ষ্য ছিল। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ ধনসম্পদে পরিপূর্ণ ছিল। আবার তার মধ্যে বাংলার সিল্ক ও অন্যান্য মিহি কাপড় এবং মসলা তাদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে। ভারতবর্ষের ধন-সম্পদের প্রতি লোভের কারণেই ইউরোপীয় বণিকদের নিকট ভারতবর্ষ বাণিজ্যের জন্য লক্ষ্য ছিল।
গ – উত্তর : উদ্দীপকের উল্লিখিত চুক্তিটি হলো ‘ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তি’ যা ইউরোপের যুদ্ধরত দেশগুলোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্পাদিত হয়েছিল। সতেরো শতকের শুরু থেকে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো নিজ স্বার্থরক্ষা ও বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের জন্য পরস্পরের সাথে ছন্দে লিপ্ত হয়। এই দ্বন্দের ফলে একসময় দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় যা প্রায় ৩০ বছর চলমান ছিল। দীর্ঘদিন ব্যাপি যুদ্ধের কারণে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো সংকটের মুখে পতিত হয়।
এই সংকটপূর্ণ অবস্থা দূর করার লক্ষ্যে ১৬৪৮ সালে ইউরোপের যুদ্ধরত দেশগুলোর মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিকে বলা হয় ‘ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তি’। এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতি নতুন উদ্যমে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে ।
উদ্দীপকের নাফিস টেলিভিশনে ইউরোপীয়দের আগমনের ওপর প্রামাণ্য চিত্র দেখেছিল। সে দেখেছিল ১৬৪৮ সালে ইউরোপের যুদ্ধরত বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়, যা ওয়েস্টফালিয়ার চুন্তিকে নির্দেশ করছে। আর উপরোল্লিখিত কারণেই ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তি হয়েছিল।
ঘ – উত্তর : উদ্দীপকে বর্ণিত পরিস্থিতির ফলে অর্থাৎ ওয়েস্টফালিয়ার চুত্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে বাংলায় ওপনিবেশিক শক্তির বিজয় ঘটে। সতেরো শতকের শুরু থেকে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো আধিপত্য বিস্তার ও স্বীয় স্বার্থ উদ্ধার প্রভৃতি কারণে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। দীর্ঘদিন ব্যাপী যুদ্ধের কারণে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো সংকটের মুখে পতিত হয়। অবশেষে ১৬৪৮ সালে ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তির মাধ্যমে ৩০ বছরব্যাপী যুদ্ধের অবসান হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে তারা নতুন উদ্যমে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। এদের অধিকাংশের লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষ । আবার তার মধ্যে বাংলার সিল্ক ও অন্যান্য মিহি কাপড় এবং মসলা ছিল তাদের প্রধান আকর্ষণ। বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রচুর মুনাফা দেখে ইউরোপীয় বণিকরা বাংলায় প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের কান প্রভাব বৃদ্ধির কারণে বাংলায় উপনিবেশিক শক্তির বিজয় ঘটে ।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তির কারণে ইউরোপের যুদ্ধরত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলাফলম্বর্প বাংলায় উপনিবেশিক শক্তির বিজয় ঘটে।
►► অধ্যায় ১ : ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম
►► অধ্যায় ২ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
►► অধ্যায় ৩ : বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন
►► অধ্যায় ৪ : ঔপনিবেশিক যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য
►► অধ্যায় ৫ : সামাজিকীকরণ ও উন্নয়ন
উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post