৯ম অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : হাজি মুহম্মদ মহসিন ১৭৩২ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮০৩ সালে তাঁর একমাত্র বোনের মৃত্যু হলে নিঃসন্তান বোনের বিশাল সম্পত্তির মালিক হন তিনি। তিনি ১৮০৬ সালে একটি ফান্ড গঠন করে তাঁর সব অর্থ শিক্ষা বিস্তার, চিকিৎসা এবং দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করেন। এই দানশীল ও বিদ্যানুরাগী মহাপুরুষ ১৮১২ সালের ২৯ নভেম্বর হুগলীতে মৃত্যুবরণ করেন।
৯ম অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : তুলশীপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ভূস্বামী ও বিদেশি বেনিয়া গোষ্ঠীর অত্যাচারে জর্জরিত। ঐ এলাকার মুসলিম সমাজ ধর্মীয় কুসংস্কারেও নিমজ্জিত। আনিছ সাহেব এ অত্যাচার বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এলাকার মানুষকে শান্তি ও সঠিক পথে পরিচালনার জন্য তিনি “শান্তি সংঘ” নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। আনিছ সাহেবের ডাকে সাধারণ মানুষ দলে দলে “শান্তি সংঘে” যোগদান করে। তারা বিদেশি বেনিয়া ও স্থানীয় ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সাধারণ মানুষকে দুর্বল করার জন্য বেনিয়ারা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। বহু চেষ্টা করেও আনিছ সাহেবের দল বেনিয়া গোষ্ঠীর শক্তির কাছে পরাজিত হয়।
ক. মজনু শাহ কোন আন্দোলনের নেতা ছিলেন?
খ. হাজী শরীয়তউল্লাহ্ ফরজের ওপর গুরুত্ব দেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. আনিছ সাহেবের কর্মকাণ্ডে ইতিহাসের কোন নেতার কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দেশের স্বাধীনতা অর্জনে উক্ত নেতার কর্মকাণ্ড কি বাঙালিকে কোনোরূপ প্রেরণা যুগিয়েছে? তোমার মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : সোনাপুর গ্রামের মুসলমান সমাজের মেয়েরা অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। লেখাপড়া করা মেয়েদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তাদের রাখা হতো গৃহবন্দী করে। তখন ঐ গ্রামেরই মেয়ে ফাতিমা নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া করে নারী মুক্তি আন্দোলনের কথা তার লিখনীতে তুলে ধরেছেন। নারীদের করুণ দশা থেকে মুক্তিদান এবং নারীশিক্ষার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বালিকা বিদ্যালয়।
ক. ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন কে?
খ. বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের ফাতিমার চরিত্রের সাথে তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন মহীয়সী নারীর মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, বর্তমান নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে উক্ত নারীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ? যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : সামিনা একদিন শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে তার বড় ভাই অভিনীত ‘নীল দর্পণ’ নাটকটি দেখতে যায়। নাটকটি দেখে তার পাঠ্যবইয়ের বর্ণিত ঘটনার মিল পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে।
ক. ‘পদ্মরাগ’ ও ‘মতিচূর’ গ্রন্থদ্বয়ের লেখক কে?
খ. কীভাবে বাংলায় নবজাগরণ ঘটে?
গ. উপরে বর্ণিত ঘটনাটির সাথে ব্রিটিশ ভারতের কোন বিদ্রোহের ঘটনার ইঙ্গিত পাও? কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটি ঘটে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলায় চিরতরে নীল চাষ বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় – বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : সুলতানা বেগমের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত আছে নার্গিস। স্বামী পরিত্যক্তা নার্গিস জীবনে বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তার বেদনার্ত জীবনের কথা শুনে সুলতানা বেগম ভাবলেন, মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া ছাড়া মুক্তি নেই। সেই লক্ষ্যে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং বয়স্ক মহিলাদের জন্য একটি হাতের কাজ শেখানোর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কয়েক বছরের মধ্যেই চমৎকার সাফল্য দেখতে পান।
ক. ১৮৯০ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন কে?
খ. বাংলায় নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটে কীভাবে?
গ. সুলতানা বেগমের কাজের সাথে কোন সংস্কারকের কাজের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘নার্গিসের মতো বঞ্চিত নারীদের কল্যাণে সুলতানা বেগমের মতো মহীয়সীদের প্রয়োজন যুগে যুগেই রয়েছে’— উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : বিশ্বের ইতিহাসে যুগে যুগে অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু উপমহাদেশে আঠারো শতকের একটি যুদ্ধ আজও প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে প্রতিনিয়ত নাড়া দেয়। ভাগীরথী নদীর তীরে সংঘটিত এই যুদ্ধ ছিল বাংলার ভাগ্য নির্ধারণের যুদ্ধ। সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতার জন্য এ যুদ্ধে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার মহান অধিপতি চরমভাবে পরাজিত হয়, জয় হয় বিশ্বাসঘাতকদের। ধীরে ধীরে এদেশে শুরু হয় ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন । এ আমলে একটি ধর্মীয় আন্দোলন কৃষক আন্দোলনে রূপ নেয়।
ক. বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয় কত সালে?
খ. ফরায়েজি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
গ. উদ্দীপকে কোন যুদ্ধের ইঙ্গিত করা হয়েছে? যুদ্ধের ফলাফল ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত আন্দোলনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো
ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন : বাংলার ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন ছিল একটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে এই আন্দোলনের শুরু। এর আগে নবাব মীরকাশিম ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসীদের সাহায্য চান। এই ডাকে সাড়া দিয়ে ফকির-সন্ন্যাসীরা নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীরকাশিম পালিয়ে গেলেও ফকির সন্ন্যাসীরা তাদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। নবাবকে সাহায্য করার কারণে ইংরেজরা তাদের গতিবিধির প্রতি কড়া নজর রাখতে থাকে।
তিতুমীরের বিদ্রোহ : মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উত্তর ভারত ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে যখন ওয়াহাবি আন্দোলনের জোয়ার চলছে; তখন পশ্চিমবঙ্গে বারাসাত অঞ্চলে এই আন্দোলন তিতুমীরের নেতৃত্বে প্রবল আকার ধারন করে।
উনিশ শতকে ভারতবর্ষে মুসলমান সমাজে এক ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। বাংলায় তার দুটি ধারা প্রবহমান ছিল। যার একটি ওয়াহাবি বা মুহাম্মদীয়া আন্দোলন, অপরটি ফরায়েজি আন্দোলন নামে খ্যাত। উভয় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় সামাজিক কুসংস্কার দূর করে মুসলিম সম্প্রদায়কে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের সঠিক পথ নির্দেশ করা। বাংলার ওয়াহাবিরা তিতুমীরের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিলেন।
নীল বিদ্রোহ : অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে চতুর ইংরেজ নীলকর সাহেবরা বাংলার গ্রামাঞ্চলে শুধু ব্যবসায়ীরূপে নয় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এক অভিনব অত্যাচারী জমিদাররূপেও আত্মপ্রকাশ করে। এরা এতটাই নিষ্ঠুর
আর বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে অবাধ্য নীলচাষিকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। শেষ পর্যন্ত দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নীলচাষিরা ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রচণ্ড বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। গ্রামে-গ্রামে কৃষকরা সংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। এসব বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয় নীলচাষিরাই।
শেষ পর্যন্ত বাংলার সংগ্রামী কৃষকদের জয় হয়। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ইন্ডিগো কমিশন বা নীল কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে নীল চাষকে কৃষকদের ‘ইচ্ছাধীন’ বলে ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া ইন্ডিগো কন্ট্রাক্ট বাতিল হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নীল বিদ্রোহের অবসান হয়। পরবর্তীকালে নীলের বিকল্প কৃত্রিম নীল আবিষ্কৃত হওয়ায় ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে এদেশের নীলচাষ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
ফরায়েজি আন্দোলন : ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তউল্লাহ বৃহত্তর ফরিদপুরের মাদারীপুর জেলার শাসশাইল গ্রামে ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘ বিশ বছর মক্কায় অবস্থান করেন। সেখানে তিনি ইসলাম ধর্মের ওপর লেখাপড়া করে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
দেশে ফিরে তিনি বুঝতে পারেন যে বাংলার মুসলমানরা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তাদের মধ্যে অনৈসলামিক রীতিনীতি, কুসংস্কার, অনাচার প্রবেশ করেছে। ইসলাম ধর্মকে কুসংস্কার আর এসব অনৈসলামিক অনাচারমুক্ত করতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। এই প্রতিজ্ঞার বশবর্তী হয়ে তিনি উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার মুসলমানদের মধ্যে এক ধর্র্মীয়-সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। হাজী শরীয়তউল্লাহর এই ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের নামই ‘ফরায়েজি আন্দোলন’।
SSC শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post