ভূগোল ও পরিবেশ ৯ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি প্রধানত তিন ধরনের। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে ১ম ও ২য় পর্যায়ের এবং উন্নত বিশ্বে ২য় ও ৩য় পর্যায়ের কার্যাবলির প্রাধান্য দেখা যায়। শিল্প স্থাপনের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক উপাদানের অনুকূল পরিবেশের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশে শিল্প ও কলকারখানা গড়ে ওঠে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে পোশাক, সার, সিমেন্ট, কাগজ, বস্ত্র, সিরামিক, জাহাজ, চামড়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য সমান নয়। বিশ্বের যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের উপর আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য এবং সেই সঙ্গে উন্নয়ন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশের সঙ্গে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। তবে উন্নয়ন সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে অসম বাণিজ্যিক সম্পর্কের ব্যবধান কমতে পারে। চীন ও ভারতের সাথে বাংলাদেশে অসম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। অন্যদিকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রপ্তানি বাণিজ্যে এগিয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্য অনুকূলে।
ভূগোল ও পরিবেশ ৯ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : জাফর, অনিক ও কবির তিন বন্ধু। জাফর ধান ও গমের চাষাবাদ করে। অনিক ঢাকায় একটি বিস্কুটের কারখানার শ্রমিক। কবিরের একটি দোকান আছে যেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের খুচরা জিনিসপত্র বিক্রয় করেন।
ক. সম্পদ কাকে বলে?
খ. ইঞ্জিনের গাড়ি কী ধরনের শিল্পের অন্তর্গত? ব্যাখ্যা করো।
গ. জাফর কী ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অনিক ও কবিরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কি একই ধরনের? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ :
দৃশ্যকল্প-১ : আবির তার নিজ এলাকায় স্বল্প মূলধন নিয়ে । দেশীয় প্রজাতির কয়েকটি গাভী ক্রয় করে কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করে। সে তার আশেপাশের লোকজনের নিকট দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
দৃশ্যকল্প-২ : কানাডাপ্রবাসী মামুন সাহেব সম্প্রতি দেশে এসে প্রচুর মূলধন নিয়ে চট্টগ্রামে একটি জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপন করেন। তার কারখানায় অনেক শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে দেশের বেকারত্ব হ্রাসের প্রয়াস চালিয়েছেন।
ক. সম্পদ কাকে বলে?
খ. স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা অর্থনীতির মূল ভিত্তি— ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত আবিরের কার্যক্রমটি কোন শিল্পের ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত মামুন সাহেবের পদক্ষেপটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কী কী ভূমিকা রাখতে পারে? যুক্তিসহকারে বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : ফয়সালের বাবা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ফয়সাল লেখাপড়া শিখে এখন ঢাকার একটি ব্যাংকে চাকুরী করেন।
ক. সম্পদ কী?
খ. কম মূলধন নিয়ে কোন ধরনের শিল্প গড়ে উঠে— ব্যাখ্যা করো।
গ. ফয়সালের বাবার কাজ কোন পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত? উল্লেখ করো।
ঘ. উদ্দীপকে ফয়সাল ও তার বাবার অর্থনৈতিক কার্যাবলি কি একই পর্যায়ের? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি প্রদান করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : মি. জেড তার হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকেন। তার বাবা গ্রামের বাড়িতে কৃষিজ দ্রব্যাদি উৎপাদন করেন এবং তার ছোট ভাইয়ের ইস্পাত কারখানা রয়েছে। সেখানে লোহাশলাকা, পেরেক, টিনজাত দ্রব্যাদি তৈরি করা হয়।
ক. নবায়নযোগ্য সম্পদ কাকে বলে?
খ. শিল্প গড়ে ওঠার পেছনে জলবায়ুর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
গ. মি. জেড-এর বাবার পেশাটি কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভূক্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মি. জেড ও তার ছোট ভাইয়ের কর্মকাণ্ড কি একই পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড? যুক্তিসহ মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : জনাব মামুন সাহেব একজন সৎ মানুষ। তিনি প্রকৃতিকে ভালোবাসেন। তাই তিনি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে জীবনযাত্রা নির্বাহ করেন।
অপরপক্ষে, তাদের গ্রামের ছেলে রাজু ও সাজু দুই বন্ধু। রাজু একটি কারখানায় কাজ করে নতুন নতুন দ্রব্য তৈরি করে। বন্ধু সাজু আইন পেশায় নিয়োজিত।
ক. বাণিজ্য কাকে বলে?
খ. জলবায়ু কীভাবে বসবাস স্থাপনে সহায়তা করে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মামুন সাহেবের কাজ কোন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাজু ও সাজুর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের তুলনামুলক আলোচনা করো।
এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো
সম্পদ : বস্তুর কার্যকারিতাই সম্পদ। যা কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সামাজিক অবস্থায় ব্যবহার করা যায় তাই সম্পদ।
সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস : সম্পদকে প্রাথমিকভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- ১. প্রাকৃতিক সম্পদ, ২. মানব সম্পদ ও ৩. অর্থনৈতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সম্পদকে আবার নবায়নযোগ্য, অনবায়নযোগ্য ও অন্যান্য এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
সম্পদ সংরক্ষণ : সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ প্রাকৃতিক সম্পদের এমন ব্যবহার, যাতে ওই সম্পদ যথাসম্ভব অধিকসংখ্যক লোকের দীর্ঘ সময়ব্যাপী সর্বাধিক মঙ্গল নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়। সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সম্পদ ব্যবহারের উত্তম ব্যবস্থাপনা জরুরি।
অর্থনৈতিক কার্যাবলি : পণ্য সামগ্রী ও সেবাকার্যের উৎপাদন, বিনিময় এবং ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোনো মানবীয় আচরণের প্রকাশই অর্থনৈতিক কার্যাবলি। অর্থনৈতিক কার্যাবলি তিনভাগে বিভক্ত। যথা : প্রথম পর্যায়, দ্বিতীয় পর্যায় ও তৃতীয় পর্যায়।
অনুন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলি : সমগ্র পৃথিবীকে অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে ওপর উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত এই তিনভাগে ভাগ করা যায়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, চীন, ইতালি, জার্মান, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের শতকরা ৮০ ভাগের উপরে মানুষ দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। অপরদিকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশসমূহের শতকরা ৫০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভুটান, নেপাল, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, জাম্বিয়া ইত্যাদি দেশ এ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশে শিক্ষার হার, জীবনযাত্রার মান ও মাথা পিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম।
শিল্প গড়ে ওঠার নিয়ামক : প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ামকের ওপর ভিত্তি করে শিল্প গড়ে ওঠে। প্রাকৃতিক নিয়ামকগুলো হলো- ১. জলবায়ু, ২. শক্তি সম্পদের সান্নিধ্য ও ৩. কাঁচামালের সান্নিধ্য। অর্থনৈতিক নিয়ামকগুলো হলো- ১. মূলধন, ২. শ্রমিক সরবরাহ, ৩. বাজারের সান্নিধ্য, ৪. সুষ্ঠু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা, ৫. আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, ৬. সরকারি বিনিয়োগ নীতি, ৭. স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি।
শিল্পের শ্রেণিবিন্যাস : খনিজ, কৃষিজ, প্রাণিজ ও বনজ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে শিল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ১. ক্ষুদ্র শিল্প, ২. মাঝারি শিল্প ও ৩. বৃহৎ শিল্প।
আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য : পৃথিবীর কোনো দেশই সকল সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রটোকল মেনে তাদের জনগণের চাহিদা অনুসারে পণ্য আমদানি এবং উদ্বৃত্ত পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি করে থাকে। এটিকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বলে। যেমন : জাপান লৌহ ও ইস্পাতের তৈরি ভারী যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, মোটরগাড়ি, জাহাজ ও বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য রপ্তানি করে থাকে এবং এদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে আকরিক লোহা ও কয়লা আমদানি করে থাকে।
বাণিজ্যিক ভারসাম্য ও উন্নয়নের সম্পর্ক : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য সমান নয়। অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। বিশ্বের যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে ওপর আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য এবং সেই সঙ্গে উন্নয়ন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশের সাথে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিরাজ করে। তবে উন্নয়ন সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে অসম বাণিজ্যিক সম্পর্কের ব্যবধান কমতে পারে।
এছাড়াও এসএসসি অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে ভূগোল সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরগুলো ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post