কোর্সটিকায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। তোমাদের জন্য আজকে ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বই ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে। বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের এই অধ্যায়টি নাম হচ্ছে– শরীর নামের অবিশ্বাস্য যন্ত্র। এখানে শরীর নামের অবিশ্বাস্য যন্ত্র অধ্যায় আলোচনার পাশাপাশি অধ্যায়ে থাকা কাজগুলো সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
আলোচনা শেষে তোমরা শরীর নামের অবিশ্বাস্য যন্ত্র অধ্যায় সমাধান PDF পেয়ে যাবে। এই অধ্যায়ে দেওয়া কঠিন বিষয়গুলোকে পিডিএফে সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে এই অধ্যায়ে যেসকল কাজ দেওয়া হয়েছে সেসকল কাজের সমাধানও তোমরা পিডিএফে পেয়ে যাবে। ৯ম শ্রেণি বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে পড়লে বিজ্ঞান অনুশীলন বইটি তোমাদের কাছে সহজ হতে সহজতর হয়ে উঠবে।
৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বই ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান
একটি যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ যেমন আলাদা আলাদা ভাবে বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে একটি সামগ্রিক কাজ সম্পাদন করে তেমনি আমাদের মানব শরীরকেও একটি বড়ো যন্ত্রের সাথে তুলনা করা যায়। মানবশরীরের বিভিন্ন সিস্টেম বা তন্ত্র নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে আমাদের পুরো শরীর নামের সিস্টেমটিকে সচল রাখে। এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা তন্ত্র নিয়ে আলোচনা করব।
✎ চলো একটি মজার কাজ দিয়ে শুরু করা যাক।
✎ আগে নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে বুঝে নাও, যে নির্দেশনা ভালোভাবে বুঝে মাথায় গেঁথে নিতে পারবে সে এইবার ভালো করবে।
✎ শিক্ষক তোমাদেরকে কিছু নির্দেশনা দেবেন, তোমাদেরকে সেটার বিপরীত কাজটা করতে হবে। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের অবস্থানে থেকেই- শিক্ষক বসতে বললে দাঁড়াবে, দাঁড়াতে বললে বসবে। সামনে তাকাতে বললে পিছনে ঘুরে তাকাবে। এভাবে যে নির্দেশনা মেনে সবচেয়ে বেশিক্ষণ টিকে থাকবে সে বা তারা বিজয়ী।
✎ তোমাদের কেমন লাগল বলো তো? এইযে তোমরা এতসব ক্রিয়াকলাপ করলে তার মধ্যে যারা সমন্বয় করতে পেরেছো তাই আজ বিজয়ী হয়েছো। এই সমন্বয়ের কাজটাই করে মস্তিষ্ক। তাই বলে যারা হেরে গেছো তাদের মস্তিষ্ক সবসময় ঠিকভাবে সমন্বয় করে না এমনটা ভাবা কিন্তু বোকামি!
✎ মস্তিষ্কের গঠন পড়ে তোমরা জেনেছ, আমাদের দেহের সব ধরনের সংবেদন ও উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং তা পরিবহণের মাধ্যমে উদ্দীপনা অনুসারে উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করে স্নায়ুটিস্যু। এই স্নায়ুটিস্যু ‘নিউরন’ দিয়ে গঠিত যা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যক্রমের একক।
✎ চলো এবার তাহলে নিউরনের গঠন ও কীভাবে কাজ করতে সে সম্পর্কে একটু ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।
✎ অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের ‘নিউরনের গঠন ও কাজ অংশ ভালো করে পড়ে নাও।
✎ এবার তোমার বিজ্ঞান খাতায় নিউরনের ছবি এঁকে এর বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করো।
✎ হঠাৎ করে আঙ্গুলে সুচ ফুটলে অথবা হাতে গরম কিছু পড়লে তুমি দ্রুত হাতটি উদ্দীপনার স্থান থেকে সরিয়ে নাও। এমন ঘটনার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই তোমার রয়েছে। কিন্তু তুমি কি জানো এইযে চট করে হাত সরিয়ে ফেলো তা তুমি নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে সরাও না। এটা আপনা আপনিই হয়! তুমি চাইলেই আচমকা গরম লাগা স্থানে হাতটা আরও ঠেসে ধরে রাখতে পারবে না।
✎ এই ক্রিয়ার একটা নাম আছে, ‘প্রতিবর্তী ক্রিয়া’। আমরা চাইলেও প্রতিবর্তীক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
✎ চলো প্রতিবর্তী ক্রিয়া সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে।
✎ স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কে তো অনেক কিছু জানলে । এখন নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছো স্নায়ুতন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটলে কী ঘটতে পারে? পাশের সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করে নিচে একটা তালিকা তৈরি করে ফেলো।
✎ তোমরা যে তালিকা তৈরি করেছো তার সঙ্গে এবার অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে লেখা বিভিন্ন স্নায়বিক বৈকল্যজনিত রোগের উপসর্গের সাথে তোমাদের অনুমান মিলিয়ে দেখো তো।
✎ স্নায়ুবিক রোগের পাশাপাশি অন্য কী কী দীর্ঘমেয়াদি রোগ সাধারণত দেখা যায় তার একটা তালিকা তৈরি করে ফেলো-
✎ তালিকায় নিশ্চয়ই ‘ডায়াবেটিস’ রোগটির নাম এসেছে।
✎ শিক্ষকের নির্দেশে দলে ভাগ হয়ে অথবা একক কাজ হিসেবে পরিবারে বা পরিচিতদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত করে এই রোগের উপসর্গগুলোর তালিকা করে লিখবে।
✎ স্থানীয় কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে তোমরা ডায়াবেটিস কেনো হয় এবং এই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় কী তা জেনে নিয়ে লিখবে।
✎ স্থানীয় ডাক্তারের কাছ থেকে এবং ডায়াবেটিস রোগীর কাছ থেকে তোমরা কয়েকটি শব্দ শুনে থাকবে, ‘গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন’ এই দুটি শব্দ ডায়াবেটিসের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ইনসুলিন এক প্রকার প্রাণরস বা হরমোন যা শরীরে শর্করা (গ্লুকোজ) পরিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। অগ্ন্যাশয়ে যদি প্রয়োজন মতো ইনসুলিন তৈরি না হয় তবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্থায়ীভাবে বেড়ে যায়, প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ নির্গত হয়। এই অবস্থাকে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস মেলিটাস বলে।
✎ ডায়াবেটিস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার আগে ‘হরমোন’ সম্পর্কে আরেকটু ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।
✎ মানবদেহের জৈবিক কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হরমোনের বিশেষ ভূমিকা আছে। সুস্থ দেহে চাহিদা অনুসারে গ্রন্থি থেকে অবিরত ধারায় হরমোন নিঃসৃত হয়। তবে প্রয়োজন অপেক্ষা কম অথবা বেশি পরিমাণ হরমোন নিঃসৃত হলে শরীরে নানারকম অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
✎ প্রাণরস বা হরমোনজনিত কী কী অস্বাভাবিকতা হতে পারে তা অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে জোড়ায় বসে পড়ো।
✎ এবার শিক্ষকের নির্দেশে দলে ভাগ হয়ে যাও, প্রত্যেকটা দল হরমোনজনিত অস্বাভাবিকতা বা রোগ (অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি সম্পর্কিত প্রচলিত রোগগুলো) থেকে বাঁচতে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য যেসব সুঅভ্যাস চর্চা প্রয়োজন তার তালিকা করবে ও অন্যদের সচেতন করে তোলার জন্য পোস্টার/ ব্যানার/ফেস্টুন/প্ল্যাকার্ড/কমিক্স বই তৈরি করবে।
✎ তোমাদের প্রত্যেকের কাজে যে বিষয়গুলো অবশ্যই থাকবে- ১. রোগটা কেনো হয় ২. রোগের লক্ষণ ৩. রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ৪. প্রতিরোধের উপায়।
✎ রক্ত জীবনীশক্তির মূল। রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্তি দেহের সর্বত্র প্রবাহিত হয় এবং কোষে অক্সিজেন ও খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে। ফলে দেহের সব কোষ সজীব এবং সক্রিয় থাকে। যে তন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও অংশে রক্ত চলাচল করে, তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। মানবদেহে রক্তপ্রবাহ কেবল হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালিগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, কখনো এর বাইরে আসে না।
✎ আরও অনেক কিছু জানার আগে চলো, হৃৎস্পন্দন শুনে নেওয়া যাক। যদি সম্ভব হয় তাহলে স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে নিজেদের ও পাশের বন্ধুর হৃৎস্পন্দন শোনার চেষ্টা করো। আর যদি এই স্টেথোস্কোপ না পাওয়া যায় তাহলে বন্ধুর বুকে আলতো করে কান পেতে শোনো তো! অনেকেই বলে এটা জীবনের শব্দ! তাই নয়কি!
✎ এইযে, হৃদপিণ্ডের শব্দ তোমরা শুনলে এটি রক্তসংবহনতন্ত্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। হৃদপিণ্ডের গঠন ও কীভাবে কাজ করে তা এবার অনুসন্ধানী পাঠ থেকে একটু বিস্তারিত জেনে নাও।
✎ ‘হৃদপিণ্ডের গঠন ও এর মধ্য দিয়ে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি’ পড়ে নাও ভালোভাবে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করো।
✎ শিক্ষকের নির্দেশে দলে ভাগ হয়ে যাও। পরের সেশনে তোমরা সংবহনতন্ত্রের মডেল বানাবে। তাই আলোচনা করে কী কী উপকরণ লাগবে কীভাবে বানাবে তার একটি পরিকল্পনা আজকেই নিয়ে ফেলতে হবে।
✎ তোমাদের দলের কোনো একজন সদস্যের খাতায় পরিকল্পনার ছক কেটে নাও, উপকরণের তালিকা তৈরি করো। বরাবরের মতো, সহজলভ্য, কমদামী ও পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিস ব্যবহার করে কাজটি করতে হবে।
তোমাদের জন্য কাজ-১:
✎ তিনটি গ্লাস নাও (কাচ/প্লাস্টিকের স্বচ্ছ গ্লাস হলে ভালো হয়) গ্লাস গুলোকে পরপর পাশাপাশি রাখো ১ম ও ওয় গ্লাস অর্ধেকটা পানিপূর্ণ করে তাতে আলাদা আলাদা দু রঙের খাবারের রঙ অথবা জলরঙ মিশাও। এবার দুটি টিস্যু কাগজ অথবা সুতিকাপড় নিচের ছবির মতো করে ভাঁজ করে ১ম গ্লাসে এক প্রান্ত রেখে আরেক প্রান্ত ২য় গ্লাসে এবং আরেকটা টিস্যু কাগজ/কাপড়ের একপ্রান্ত ৩য় গ্লাসের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে অন্যপ্রান্ত ২য় বা মাঝের গ্লাসে রেখে দাও বেশ কিছুক্ষণ সময়ের জন্য।
✎ কয়েক ঘণ্টা পর কী পর্যবেক্ষণ করলে তা খাতায় লিখে রাখো।
✎ গতকাল বাড়ির কাজ হিসেবে যে পরীক্ষণটি করেছ সেটার পর্যবেক্ষণ ক্লাসে আলোচনা করো। এর সাথে রক্ত পরিবহণের কোনো সম্পর্ক আছে কী?
✎ অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে “রক্তবাহিকা” অংশ পড়ে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করো।
✎ তুমি নিশ্চয়ই কৈশিক জালিকার সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছো! তাহলে অন্য দু ধরনের রক্তবাহিকা- ধমনি ও শিরা কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে হৃদপিণ্ডের মডেল তৈরি করা প্রয়োজন।
✎ এবার দলে বসে হৃদপিণ্ড ও রক্তসংবহনতন্ত্রের মডেল বানিয়ে ফেলো।
✎ মডেল বানানো শেষে প্রত্যেকটা দল তাদের মডেল উপস্থাপন করো এবং হৃদপিণ্ড কীভাবে কাজ করে, ধমনী ও শিরা কীভাবে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত হৃদপিণ্ড-ফুসফুস-সারা দেহে ছড়িয়ে দেয় তা ব্যাখ্যা করো।
✎ অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, লিউকেমিয়া, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি রক্তসংবহনতন্ত্রের রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার-প্রতিরোধ সম্পর্কে জোড়ায় বসে পড়ে নাও।
তোমাদের জন্য কাজ-২:
✎ রোগীর প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে আমরা অনেক ওষুধ ব্যবহার করে থাকি। এই ওষুধগুলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নেয়া হয় কি না, কী কী ধরনের ওষুধ নেয়া হয়, সেই বিষয়ে তোমরা তোমাদের পরিবার বা কোন ফার্মেসির কর্মীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের তথ্যর উপর জোর দিতে হবে।
✎ ৫ বা ৬ জনের দলে ভাগ হয়ে এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য একটি সমীক্ষা করা। সেজন্য প্রশ্নপত্র/প্রশ্নমালা বানিয়ে ফেলো তোমাদের খাতায়/নোটবইয়ে।
উপরে ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বই ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলো। শরীর নামের অবিশ্বাস্য যন্ত্র অধ্যায়টি সম্পর্কে তোমরা যাতে সহজে বুঝতে পার তার জন্য এই অধ্যায়টি তোমাদের সামনে সহজভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি আমরা দিচ্ছি সমস্যা সমাধান পিডিএফ। এই অধ্যায়ে দেওয়া কঠিন বিষয়গুলো আলোচনার পাশাপাশি বাড়ির কাজের সমাধানগুলো তোমরা সেখানে পেয়ে যাবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post